somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শীতের সকাল

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কুয়াশা মোড়া শীতের সকাল!
চোখ বুজলেই মনের পর্দায় ভেসে ওঠে একটি দৃশ্য। হাড় কনকনে শীতে জবুথবু একটি গ্রামের ভোর। কুয়াশা ঢাকা কিষান বাড়ির উঠোনের একপ্রান্তে গনগনে জলন্ত উনুন। সে আগুনের আঁচে উনুনের ধার ঘেষে বসে আছে বাড়ির ছেলেবুড়ো সকলে।হাসিখুশী কিষানী বৌটির সুনিপুন হাতের পটুতায় ঢাকনা ঢাকা হাড়ির উপরে, একরতি কাপড়ের ভাজে ভাজে উঠছে আতপচালের গুড়ো ঢাকা, নতুন খেঁজুর গুড় আর নারকেল কোরা দেওয়া ছোট বাটি।নামছে গরম ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠা হয়ে একেকবার একেকজনের পাতে । এ ছবি পরম মমতার, স্নেহ ও ভালোবাসার এবং পাবিরাবিক অটুট বাঁধনের এক চিরায়ত গ্রামবাংলার চিরচেনা শীতকালীন ছবি।


মোড়ের চা দোকান ঘিরে ভোর হতেই জমতে থাকে জটলা।সবার গায়েই যার যার সাধ্যমত শীতের চাদর, সোয়েটার, কিংবা ছেড়াখোড়া কাঁথাকানি! গল্পে গল্পে একের পর এক খালি হয় চা'য়ের কাপ! জমে ওঠে আড্ডা! চিরাচরিত গ্রাম-বাংলার এই তো শীত ঋতু!

শৈশবে আমার শীতের এক আলাদা অনুভূতি ছিল। কুয়াশায় আচ্ছন্ন শীতের সকাল! মুখ খুললেই ধোঁয়া বের হওয়া দেখে অবাক হয়ে যাওয়া। ভাপা, চিতুই, পাটিসাপটা, পুলি, কুলি নানা ধরনের পিঠা । ঘুম ভাঙ্গলেও বিছানা ছেড়ে উঠতে মন না চাওয়া । তুলে রাখা তোরঙ্গের লেপ কাঁথা কম্বলের সে এক দারুন মজা। রোদে দেওয়া ওম। তুলোর ফাঁকে ঢুকে থাকা রোদের গন্ধ। সন্ধ্যাকাশে দিগন্ত জুড়ে সারি বেঁধে উড়ে চলা অতিথি পাখির দল। কিচির-মিচির শব্দ শীতের প্রকৃতিকে করে তুলতো অন্যন্য।


যদিও নগর জীবনে শীতের আবেদন আলাদা তবে গ্রামে যেন প্রতি পদক্ষেপে আলাদা করে অনুভব করা যায় শীত ঋতুর তাৎপর্য্য। বাংলার পথে-প্রান্তরে, মাঠেঘাটে তাকালেই চোখে পড়ে খেজুরগাছের আগায় ঝুলছে ছোট্ট রসের হাড়ি।কোথাও গাছ থেকে রস নামানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন গাছিরা। আর ফসলের মাঠজুড়ে সোনালি আভায় সকাল সন্ধ্যা জমে হিম হিম কুয়াশা। শীতে জ্বাল দেওয়া গরম রস বা কাঁচা রস দুই এর স্বাদই অতুলনীয়! আর রসে ভেজানো রসের পিঠার তো জুড়িই নেই কোনো।


শুস্ক এ ঋতুতে এ সময়টা শুকিয়ে আসে খাল বিলের পানি। কোথাও হাঁটুজল, কোথাও বা খটখটে চর জাগে। আর তাই গ্রামের দূরন্ত কিশোর-কিশোরীরা মেতে ওঠে অল্প পানিতে মাছ ধরার উৎসবে। সেইসঙ্গে খাবারের খোঁজে খাল-বিল আর মাঠে-ঘাটে ঝাঁকে ঝাঁকে নামে সাদা বকের ঝাঁক। ঝাঁকে ঝাঁকে সাদাফুলের মত বসে থাকা বকের শুভ্রতা সেও এক অপরূপা দৃশ্য।


গ্রামও শহরের হাঁট বাজারগুলোতে সব্জীপসারীর ডালায় ডালায় থরে থরে সাজানো শীতের সব্জী ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা, শালগম, ওলকপি, গাজর, টমেটো চোখ জুড়ায়, মন ভরায়।

শীতের আরেক স্বর্গীয় সৌন্দর্য্য বিরাজ করে সরিষা ক্ষেতে। মাঠের পর মাঠ জুড়ে ফুটে থাকা হলুদ সরিষার ফুল যেন বিছিয়ে রাখে হলুদ ফুলেল চাদর।আর সেই ফুলকলিদের উপর উড়ে চলা রঙ্গিন প্রজাপতি আর মৌমাছিদের মেলা মন হরন করে।


মটরশুঁটি আর সবুজ ঘাসের ডগায় ঝুলে থাকে শিশির বিন্দু। সকালের রোদের আলোকচ্ছটার নানা রঙ ছড়ায় তাতে হীরক দ্যুতি। একসময় সেই রঙিন জলমোতি টুপ করে ঝরে পড়ে মাটির কোলে।
পৃথিবীর যেখানেই যাই না কেনো সে সৌন্দর্য্যের তুলনা হয়না বুঝি আর কিছুর সাথেই এই মর্ত্যলোকে!


মনে পড়ে যায় কবিগুরুর অসাধারণ সেই কবিতার লাইনগুলি—
বহু দিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে—
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে—
দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শীষের উপরে
একটি শিশির বিন্দু।


তবে এই অপরুপ শীতের সৌন্দর্য্য অনুভবে ও উপভোগে ভুলে যাওয়া যায়না সেইসব ছিন্নমূল মানুষদের কথা। একটুকরো শীতের কাপড় বা মাথা গোঁজার ঠাই নেই যাদের তাদের জীবনে শীত আনন্দের নয়, অভিশাপের আর তাই যে যার সাধ্যমত কাছের দরিদ্র মানুষটির প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই ও পৃথিবীকে করে তুলি সুন্দর ও মঙ্গলময়।

২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×