লেখাপড়া শেষে চাকুরি করাই যাদের মুখ্য উদ্দেশ্য কিংবা যারা ধরে নিয়েছে যে, চাকুরি তাদেরকে করতেই হবে; তা না হলে প্রথমত: সংসার জীবন শুরু করা যাবেনা । দ্বিতীয়ত: তার ভালোবাসার কোন মানুষ যদি থেকে থাকে, একটা সময় পর সেও চলে যাবে কিংবা তাকে ধরে রাখা যাবেনা; কারণ জীবন তো আর ক্যাম্পাস কিংবা লেকের পাড়ে বসে দশ টাকার বাদাম ভাজা খেয়ে চলবে না; সংসার এবং বেঁচে থাকার জন্য টাকা দরকার । তৃতীয়ত: আমাদের নিম্ন এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবা-মায়েরা এখনো ছেলেমেয়েদেরকে লেখাপড়া শেখায় এই ভেবে যে, তাদের সন্তানেরা লেখাপড়া শেষে একদিন চাকুরি করবে, সংসারের হাল ধরবে, আর্থিক স্বচ্ছলতা আনবে - এটা বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলের নিম্ন এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবা-মায়ের কমন ভাবনা । তাই, সন্তানকে লেখাপড়া শেখানোর পাশাপাশি এ ধারণাটাও তাদের মাথায় ঢুকিয়ে দিতে তারা সব সময় তৎপর থাকে । এসব মা বাবার হয়ত অনেকেরই ধারণা নেই বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার কথা, চাকুরির বাজারের কথা, রাজনৈতিক প্রভাব বা লেজুড়বৃত্তিসহ আরো অনেক কিছুর কথা ।
এত কিছুর পরও এ অফিস সে অফিস ঘুরে, মানুষের বাঁকা কথা শুনে এবং জুতোর সুখতলা ক্ষয় করে একদিন ছোটখাটো একটা চাকুরি হয়ত অনেকেই পায় । তারপর শুরু হয় তার প্রাথমিক কর্ম জীবন । ধরে নিলাম লেখাপড়ায় সে খুব ভাল ছিলো এবং তার সব পরীক্ষার রেজাল্টও ভাল; কিন্তু কর্ম জীবনে এসে সে, যে কাজের দায়িত্ব পেলো তা একেবারেই নতুন মানে এর উপর তার কোন পূর্ব অভিজ্ঞতাই নেই । তাহলে ঐ কাজটি সে কিভাবে করবে ? না, ভয় পাবার কিছু নেই, কারণ সেও একদিন ঐ কাজে দক্ষ হয়ে যাবে । তবে এর জন্য অবশ্যই তাকে ধৈর্য্য ধরতে হবে; বুদ্ধি খাটিয়ে, কৌশলে পুরানোদের কাছ থেকে কাজ শিখতে হবে । কারণ অফিসের অভিজ্ঞ পুরানো কর্ম চারিরা তাকে কাজ শেখাতে খুব কমই সহায়তা করবে । কেন এরকম করবে, সে ব্যাখ্যা অবশ্য ভিন্ন ।
যাইহোক, ধরে নিলাম নতুন কর্মচারিটিও একদিন ঠিকঠাক তার কাজ শিখে নিলো । কিন্তু কাজ শিখে নিলেই কি পরবর্তিতে সে তার কাজের প্রতি দায়িত্বশীল হতে পারবে ? মোটেই না, কারণ আমি দেখেছি অনেক অভিজ্ঞ মানুষকেও কাজে ফাকি দিতে । তারা ইচ্ছেকৃতভাবে কাজকে ফেলে রাখে, কারণে অকারণে ছুটি কাটায়, সময় মত অফিসে আসেনা ইত্যাদি ইত্যাদি । অথচ এই ছেলেমেয়েটিই হয়ত একটা চাকুরির জন্য একদিন বিভিন্ন অফিসে অফিসে ধর্ণা দিয়েছে । তাহলে এখন কাজ পাওয়ার পরও কেন সে কাজের প্রতি দায়িত্বশীল না ? এখানে কারণ হিসেবে প্রথমেই বলা যায়, বয়সের দোষ মানে পেশাদারিত্বের অভাব ।
তাহলে এখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসতে পারে, একজন মানুষের মধ্যে তার কাজের ক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব আসে কখন এবং কিভাবে ? বয়সটাকে এখানে মুখ্য হিসেবে ধরলেও আমি মনে করি আরো কিছু ব্যাপার আছে এখানে । যেমন কেউ যদি মনে করে, আমাকে আমার কাজের অভিজ্ঞতা এবং দায়িত্বশীলতা দেখিয়েই আমার পদোন্নতি করতে হবে, তখন সে নিজেকে সেই ভাবেই প্রস্তুত করবে এবং তার মধ্যে অচিরেই পেশাদারিত্ব আসবে । এ ছাড়া এমন কিছু কাজ আছে যেগুলোতে মেধার চেয়ে কায়িক শ্রমই বেশি লাগে, যা একটা সময় পর কারোরই বয়স এবং শরীর কোনটাই সাপোর্ট করেনা এবং এটা যদি কর্মজীবনে কেউ উপলব্ধি করতে পারে, তাহলে অবশ্যই উচ্চ পদের কথা চিন্তা করে নিজেকে সেভাবে তৈরী করবে এবং তার মধ্যে তখন পেশাদারিত্ব আসতে বাধ্য হবে । অন্যথায় কাজের প্রতি দায়িত্বশীল না হয়ে কেউ যদি উচ্চ পদের আশা করে তাহলে তাকে মালিক পক্ষ অথবা সমকক্ষ কাউকে তৈলমর্দন করেই তা অর্জন করতে হবে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০৯