তীব্র গালাগালি আর ঘৃণা’র কথা মাথায় রেখেই লিখতে বসেছি।
নিশ্চয় সমসাময়িক বিষয় নিয়েই লিখব, অবশ্যয় যুদ্ধ অপরাধী, শিবির এবং চলমান শিবির-বিরোধী আন্দোলন আমার লেখার বিষয় হবে।
১০ বছর ঢাকায় আছি, সেশন জটের কল্যানে ৭ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাবর কেটেছি। সামসুন্নাহার আন্দোলন করেছি, সনি (বুয়েট) আন্দোলনে ছিলাম। শাহবাগে দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্রীর আন্দোলনে না থাকলেও কাছ থেকে দেখেছি- কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে এবারের মত আন্দোলন দেখিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল করতাম।
একটা হলের সহ সভাপতিও ছিলাম। এটা বলার কারন হল আপনারা যারা লেখাটা পড়ছেন তাদের মাইন্ড সেট আপটাকে একটু গোলমেলে করা – এই আর কি। সরকারী দলের ছাত্র সংগঠন করার সুবাদে এর কদর্য ও সৌন্দর্য – দুটো রূপের সাথেই আমি পরিচিত। কথাটা সেটা না, কথা হল চলমান আন্দোলন নিয়ে, যেটা আমি সরকারী ছাত্র সংগঠন করার সময়েও অনুভব করেছি । আমাদের সময়ে যতগুলো আন্দোলনের সৃষ্টি হয়েছিলো তার প্রায় প্রত্যেকটির রূপকার ছিল বামপন্থীরা ছাত্ররা। যারা সারা বছরই লোকের অভাবে মিছিল করতে পারেনা তারাই দেখেছি কিভাবে কিভাবে আন্দোলন জমিয়ে দিত সাধারণ ছাত্রদের নিয়ে! আরও দেখেছি- প্রত্যেকটা আন্দোলনের ৪ দিনের মাথায় ছিনতাই হয়ে যাওয়ার পর আন্দোলন বাদ দিয়ে কিভাবে আবার লালচোখে ক্লাসে ফিরত ! আমার কিছু বন্ধু ছিল যারা ফ্রন্ট ও ইউনিয়নের- তাদের সাথে এখন ও আমার যোগাযোগ হয়, আজো আমাকে ফেসবুকে আমন্ত্রন জানালো শাহবাগে আসার জন্য।
আসি শিবির প্রসঙ্গে।
ক্যাম্পাসে ওদের চেনা যেতনা, তবে কিছুদিন পর পর কেমন যেন বেরিয়ে পড়ত ওরা ওরা শিবির করে। বলতে বাধা নেই সেই পার্থক্যটা বা নির্ণায়ক ছিল তাদের আচরনে ও কর্ম তৎপরতায় এবং নিঃসন্দেহে সেটা পজিটিভ। আমার সাথে একজনের পরিচয় ছিল, যে আমাকে পরীক্ষার আগে একগাদা নোট দিয়ে বলত মধুতে যাও সমস্যা নেই- এইগুলোতে সুযোগ পেলে চোখ বুলিও। মজার ঘটনা হল সেদিন নয়াপল্টনে দেখা অনেকদিন পর, এখন সে জামাতের মহানগরের কোন পদে আছে ! আমি যতটুকু বুঝি শিবির এবং ছাত্র ইউনিয়ন বা ফ্রন্ট- এদের মধ্যে গুনগত কোন পার্থক্য নেই। দুটি দলই মেধার চর্চা করে, দুটো দলই ভীষণ রকমের সংগঠন তৎপর শুধু আদর্শগত দিক দিয়ে দুই জন দুই মেরুর। বর্তমান শাহবাগের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যেহেতু এই দুই পক্ষ মুখোমুখি সেই কারনে একটু বর্ণনা দিলাম আর কি?
আন্দোলন প্রসঙ্গে ।
বিচার বিষয়ে আমার মতামত একটু ভিন্ন রকমের। জেনসাইডের বিচার হওয়া উচিত, দালাল দেরও বিচার হওয়া উচিত। কিন্তু... ...
(কি ভড়কে যাবেন নাকি এবার... ?? ) ... কিন্তু সেটা নিশ্চয় যে গুলি করেছে তার আগে... আর যদি তাকে না পাওয়া যায় তাহলে যে বন্দুক এগিয়ে দিয়েছিল তার । আমরা করছি পরের টা। ৪১ বছর ধরে মুক্তিযোদ্ধারা শুধু জামায়াতের বিচারের জন্যই ঘৃণা পুশে রেখেছে বলে মনে হয়, পাক আর্মির জন্য কি এততুকু ঘৃণা ছিলনা? অবশ্যই ছিল এবং এখনও আছে। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী প্রত্যেকটা সরকারের সেই দায় আছে। সিমলা চুক্তির কথা বলে আর লাভ কি? ৭৪ এ পাকিস্থানে ও আই সি সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু আর ভুটটো'র গলা জড়া জড়ি সেই বিখ্যাত ছবি দেখে ৩ বছরের সদ্য পুরনো বীভৎস স্মৃতি গুলকি মুক্তিযোদ্ধাদের বা শহীদ পরিবারের বুকটা মুচড়িয়ে দেয়নি ?
আমি বলছিলাম বিচারের কথা, চীনপন্থী নেতারা বললেন ২ কুকুরের মারামারি, ভাসানিও এর মধ্যে ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে শুধুমাত্র আওয়ামীলীগের হটকারিতার জন্য তিনি চুপ হয়ে রইলেন, আজকের দিলিপ বড়ুয়া তো সে দলেরই লোক। তবুও তারা ভাল, কিছুটা হলেও ভালো জামাত অবশ্য সেটুকুও নয়। জামায়াত ৭৪ এ নয়, ৭৯ তে নয়, ৮২ তে নয়, ৮৮ তে নয় , ৯১ তে নয় এমনকি সদ্দপ্রয়াত জাহানারা ইমামের সেই ঐতিহাসিক গনরায় না ভোলা আওয়ামীলীগের ৯৬ তেও নয়- জামায়াত যুদ্ধাপরাধী হল ২০০৯ এ। এও এক আশ্চর্য বিষয় বাংলাদেশের ইতিহাসে। কারন, স্পষ্ট। আজ যদি জামায়াত ইনু-মেনন এর মত ব্যক্তি সর্বস্ব দল হত তাহলে নিশ্চয় তারা যুদ্ধাপরাধী হতনা এ কথা নিশ্চিত বলতে পারি, বাজি ধরে বলতে পারি।
আজকের আন্দোলন অনেকের চোখ খুলে দিয়েছে, অনেকেই এখন বিশ্বাস করেন এই বিষয়টা নিয়ে আওয়ামীলীগ রাজনীতি করেছে, সেটা ৭৪ এও সেটা ২০১৩ তেও, সুতরাং আর নয়, এর একটা বিহিত হওয়া উচিত।
আমি একমত... তবে ... ... এখানেও একটা কিন্তু আছে... ... ... (আবারও ভড়কে দিলাম!!!) সেটা হল রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয় বিচার হোক কৃত কর্মের উপর ভিত্তি করে। আদর্শিক পরাজয়ে হিংসাত্মক হওয়া বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মধ্যে পড়েনা। আজকে যারা আন্দোলন করছে তাদের মাথায় এটাও থাকা উচিত যে আমাদের ফেলানিও কাটা তারে ঝুলে থাকে প্রায়, আমার ভাই সিমান্তে নির্যাতিত হয় এই সময়েও, আমার ভাই পাখির মত মরে যায় প্রায়ই সিমান্তের ধেনো জমিতে, যারা আন্দোলন করছে তাদের মনে রাখা উচিত এই দশকেও আমার বাংলার নাম না জানা অনেক নদীকে হত্যা করা হয়েছে ফারাক্কার মাধ্যমে। যারা আন্দোলন করছে তাদের এটাও মনে রাখা উচিত ১৬ কোটি মানুষের স্বপ্নকে কিভাবে দুঃস্বপ্ন করে দেয় মাত্র একজন আবুল... তাদের মনে রাখা উচিত আমার বাবার পেনশনের টাকা কিভাবে মেরে খেয়েছে ভণ্ড দরবেশ? ভুলে যাওয়া উচিত নয় এই ফেব্রুয়ারির ব্যাথাতুর দুটি হত্যাযজ্ঞ, বি ডি আর-সাগর রুনি! এইগুলো একটাও ৪০ বছরের পুরনো ইস্যু নয়, এগুলোর পেপার কাটিং জোগাড় করতে শুধু মাত্র সংগ্রাম পত্রিকার অফিসে না ঘুরলেও হবে।
... পারবেন এই উচ্চারন গুলো শাহবাগে করতে? কোনদিনও ও ও ও নয়, আপনারা এটা করবেন না কারন আপনাদের দেশ প্রেমের মধ্যে নির্ণায়ক শুধু কাদের মোল্লা যার নাম আপনি ৫ বছর আগেও শোনেন নি। গোলাম আজম-নিজামির বাইরে কোন রাজাকার ছিল কিনা আমি সত্যিই জানতাম না। ইদানিং প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই এর নাম ও শুনছি।
এই দেশপ্রেম শুধু ঘৃণার উদ্রেক করছে, ভালবাসার নয়।
ভাবতে আশ্চর্য লাগে, শুধুমাত্র ছাত্রদল ছাড়া আর সমস্ত প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনই নাকি আপনাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। তীব্র ঘৃণা নিয়ে জানতে ইচ্ছে করছে- প্রয়োজনে ছাত্রলীগ কেও তাহলে প্রগতিশীল হিসেবে মেনে নিলেন? আর আমরা হলাম গিয়ে অশিক্ষিত গেয়ো প্রজা, পান্তা ভাত খাই মাঠে কাজ করি- এইত?
হতে পারে, অনুমান মিথ্যে নয়। আমরা পান্তা ভাত খাই কিন্তু কাস্তে বুঝি, হাল বুঝি, ফসল বুঝি কিন্তু মেঘ দেখে কাস্তে ফেলে দিয়ে টুপ করে নৌকায় ওঠা বুঝিনা।
একটু উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম।
আপনারা আন্দোলন করেন। দোয়া করি আমরা যা পারিনি আপনারা সেটা করে দেখাবেন।
পরিশেষে বলব, তাহরির স্কয়ার এর নাম অনুসারে শাহবাগ স্কয়ার করাটা ঠিক হয়নি। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রেরনা মুসলিম ব্রাদারহুড থেকে নেবেন- এটা আশাতীত। আবার যদি ১/১১ আসে তাহলে একটা জিনিস প্রমান হবে। দিলিপ মেনন সহ আপনার পূর্বপুরুষেরা দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার হন কিনা। শুধু এই জায়গাটাতে নিজামি-মুজাহিদ দেখিয়ে দিয়েছেন। আমি ইতোমধ্যে জানি সাম্যের বড়ুয়া কয়েকটি ফ্লাট প্লট বাগিয়েছেন আর মেনন তো প্রতি বৎসর শুনেছি ভিকারুন নেসা থেকে ভিক্ষা নেন।
পরিশেষে গনমাধ্যম প্রসঙ্গ-
চারুকলায় পড়েছি তো ! ছবি আঁকায় পরিপ্রেক্ষিত (পারস্পেক্তিভ) বলে একটা বিষয় আছে। সেখানে, বার্ডস আই ভিউ নামে একটা শব্দ আছে যার মানে হল পাখির চোখে দেখা- মানে ক্যামেরা গুলো বারডেমের ছাদ থেকে ধরলে শাহবাগ মোড়টা দেখতে এখন যেমন লাগে বিষয়টা ওইটাই। কৈশোর উত্তীর্ণ শিবির কর্মীর বুকে দুইটা গুলি, ওটা ক্যামেরায় আসেনা, কিন্তু ছেলেটার বীভৎস উপড়ে নেওয়া চোখের কোটর? সেটা তুলতে বারডেমের ছাদে ওঠা লাগেনা। অথবা বি এন পির মিছিলে ক্যামেরার ট্রাই পডের ঠ্যাঙ এত ছোট থাকে যে তাতে শুধু ফখরুলের থুঁতনি ওঠে, তার পিছনের মানুষগুলো ওঠেনা। গণমাধ্যমকে বলছি, ট্রাই পডের ঠ্যাঙ তিনটা যদি সমান না থাকে ক্যামেরা কিন্তু শুধু হাত দিয়ে ঠেলে বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারবেন না, ক্যামেরা পড়ে যেতে বাধ্য। হিসেব টা মনে রাখবেন। সারাদিন গণতন্ত্রীদের লাইভ কাস্ট করবেন কিন্তু ভেতরে পুশে রাখবেন সতিনের মন- তা হবেনা।
স্বাধীনতার ওই একটি বছরের কলঙ্ক বাদ দিলে জামায়াতের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে পরিবর্তন এসেছে অনেক। শুধুমাত্র রাজনৈতিক হানা হানিতে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে নিহতের সংখ্যা কোন অংশেই যুদ্ধের চেয়ে কম না, আর এই বিরাট অংশের অপঘাতে জামায়াতের পেশাদারিত্বের প্রয়োগ সামান্যই। জাসদের গন বাহিনি, লীগের রক্ষীবাহিনী, মেনননের সর্বহারা, সমকালীন ছাত্রলীগ- মানুষ মারার পেশাদারিত্বে এরা পাকি দের চেয়ে কম কি? এ বিষয়ে আন্দোলনকারীরা কিছু বলবেন?
পোস্ট শেষ। আন্দোলন কারীদের প্রতি শুভেচ্ছা রইল। আশাকরি আপনাদের আন্দোলনের মধ্য দিয়েই যুদ্ধাপরাধী ইস্যুটার মৃত্যু হবে। এটা নিয়ে রাজনীতি বন্ধ হোক। আগামীর বাংলাদেশ গড়ে উঠুক মুক্তমনা বিভিন্ন মতের ও অমতের একতায়।
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।