ICUতে পাশাপাশি দুইটা মহিলা ভর্তি হয়েছে
বারো নাম্বার বেডে যে মহিলা অচেতন অবস্হায় আছে তাকে গ্রাম থেকে ছেলে নিয়ে এসেছে পাঁচ দিন আগে
ছেলে কৃষক , প্রথম যেদিন আসে ঔষধ কেনার টাকা ই ছিল না
পরের দিন তার ছোটভাই ফসল কিংবা জমি বিক্রি করে টাকা নিয়ে এসেছে
দুই ভাই ICU এর দরজায় গত পাঁচ দিন ধরে বসে আছে কখন মায়ের জ্ঞান ফিরবে
ডাক্তার ,নার্স , আয়া যে ই বের হচ্ছে মায়ের কথা জিগ্যেস করতেছে ,
ময়লা কাপড় দেখে ডাক্তার ঢুকতে দিচ্ছে না ICU নোংড়া হয়ে যাবে ভেবে
তাতে দুই ভাইয়ের কোন দুঃখ নাই উপরে আল্লাহ নিচে ডাক্তারে উপর তাদের পূর্ণ আস্হা আছে
নিশ্চই ডাক্তার চিকিত্সার কোন ত্রুটি করবে না
ডাক্তার , যখন যে ঔষধ আনতে বলছে দ্রুত তারা এনে দিচ্ছে
এক সময় সকলের চেস্টা বিফলে যায়
মা তাদের কাঁদিয়ে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে
চোখের জল মুছতে মুছতে মায়ের লাশ নিয়ে দুই ভাই গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়
তের নাম্বার বেডে যে মহিলা অচেতন হয়ে শুয়ে আছে তার ভাগ্যটা অপয়া তের এর মতই
শহরেই বাসা , তাকে নিয়ে এসেছে তার মেয়ে
ছেলে ও আছে ,কিছুদিন আগে লন্ডন থেকে এসেছে
টাকা আছে তাই লোকের অভাব নাই
ICUএর দরজায় আত্নীয় স্বজনের ভির লেগেই থাকে
আরামপ্রিয় ছেলে মাঝে মধ্যে এসে মাকে দেখে রুটিন ওয়ার্ক করে যাচ্ছে
টাকা পয়সা যখন যা লাগছে দিয়ে যাচ্ছে
হাসপাতালে তাদের একটা পিকনিক পিকনিক ভাব
আত্নীয় স্বজনদের বাসা থেকে ভাল ভাল খাবার আসতেছে
রোগীর অবস্হা যেমন ই থাক সাথে যারা আছে তাদের কোন অসুবিধা হচ্ছে না
সবাই অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে কখন রোগী মারা যাবে
এর মধ্যে ICU এর বারান্দায় ছোটখাটো একটা বৈঠক হয়ে গেছে মৃত্যুর পর কুলখানিতে কয়টা গরু লাগবে ,গরু গুলা ইন্ডিয়ান না দেশি হবে ইত্যাদি ইত্যাদি
উপরে দুইটা ঘটনা ICU এর বেডে শুয়ে থাকা দুই মায়ের
এক বিন্দু মিথ্যা বলছি না
প্রথম মা কত সৌভাগ্যবান তাকে বাঁচাতে ছেলেদের চেস্টা আন্তরিকতার কোন অভাব ছিল না
তার পরও মাকে বাঁচাতে পারেনি
দ্বিতীয় মা এতোটাই দূর্ভাগা যে মৃত্যুর আগে প্রায় অচেতন অবস্হায় ছেলের এমন কর্মকান্ড দেখে যেতে হচ্ছে