থরঃ-
নর্স মিথলজির সবচেয়ে বিখ্যাত দেবতাদের মধ্যে থর একজন। তার নামের অর্থ বজ্রধ্বনি। তিনি একাধারে বজ্র, বিদ্যুৎ, ঝড়, ওক গাছ, শারীরিক শক্তি, মানবজাতির সুরক্ষা এবং পবিত্রকরণ অনুষ্ঠান, আরোগ্য ও উর্বরতার দেবতা। মেঘের গর্জনের এ দেবতা বিখ্যাত হয়ে আছেন তার যোদ্ধা পরিচিতির জন্য। দৈত্যদের আক্রমণ থেকে এসির দেবতাদের রক্ষা করার দায়িত্ব খুব ভালোভাবেই পালন করেন তিনি।
নর্স পুরাণে থর হলেন একজন হাতুড়িধারী দেবতা। জার্মানিক পুরাণ ও প্যাগানিজমে থরের অনুরূপ দেবতার নাম নাম পাওয়া যায়। তারা হল- ইংরেজিতে Þunor এবং জার্মান ভাষায় Donar (রুনিক লিপিতে þonar)। শব্দটির উৎস সাধারণ জার্মানিক *Þunraz শব্দটি, যার অর্থ “ঝড়”।
শারীরিক সামর্থ্য ও সাহসের দিক থেকে থর অন্য প্রায় সবার উপরে রয়েছেন। সাথে যুক্ত হয়েছে তার অসাধারণ হাতিয়ার এক হাতুড়ি। এর নাম মিওনির বা বজ্রপাত।
ভাইকিং যুগেও থর খুব জনপ্রিয় দেবতা ছিলেন। সেই সময় স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় খ্রিস্টধর্ম প্রচারের কাজ চলছিল। সেই অবস্থাতেও থরের প্রতীক হাতুড়ি “জলনির” মানুষ গর্বের সঙ্গে ধারণ করত এবং থরের নর্স প্যাগান ব্যক্তিগত নামটির বহুল ব্যবহার তাঁর জনপ্রিয়তার পরিচয় বহন করছে। আধুনিক যুগেও সারা জার্মানিক অঞ্চলের লোককথায় থরের উল্লেখ পাওয়া যায়। বিভিন্ন স্থাননামে থরের উল্লেখ আছে। “থার্সডে” (বৃহস্পতিবার) কথাটি “থর’স ডে” বা “থরের দিন” কথাটি থেকে এসেছে। প্যাগান যুগ থেকে প্রচলিত থরের নামাঙ্কিত নামগুলির প্রচলন এখনও আছে।
নর্স পুরাণে স্ক্যান্ডিনেভিয়ার প্রচলিত পুরাণকথায় থর সম্পর্কে আরও অনেক গল্প ও তথ্য আছে। এই সূত্র থেকে থরের চোদ্দোটি নাম পাওয়া যায়। জানা যায়, তিনি সোনালি চুলবিশিষ্ট দেবী সিফের স্বামী এবং জটুন ও জার্নসাজার প্রেমিক। তাঁর চোখদুটিকে ভয়ানক বলা হয়েছে। তাঁর মাথার চুল ও দাড়ির রং লাল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। থরের ঔরসে সিফের গর্ভে তিনি এক দেবী (সম্ভবত ভালকিরি) ব্রুনরের জন্ম দেন। জার্নসাজার গর্ভে জন্ম নেন থরের সন্তান মাগনি। তিনি মনিরও পিতা, তবে মনির মায়ের নাম জানা যায় না। দেবতা উল্লর তাঁর সৎপিতা। একই সূত্র থেকে জানা যায় তিনি ওডিন ও পৃথিবী দেবী জোরগিনের সন্তান। ওডিনের সূত্রে থরের অনেকগুলি ভাই আছে। থরের দুই পরিচারক জালফি ও রোস্কভা। তিনি দুই ছাগলে টানা গাড়িতে ভ্রমণ করেন। তাঁর তিনটি বাসস্থান। থর হাতে ধরে থাকেন জলনির নামে একটি পাহাড়-ভাঙা হাতুড়ি। তিনি বেল্ট ও লোহার হাতমোজা পরে থাকেন। তাঁর গ্রিনারভোল নামে এক কর্মচারী আছে। থর জরমুনগান্ডার নামে এক বিশাল সাপের দ্বারা ভয়ংকর যুদ্ধে তাঁর শত্রুদের হত্যা করে থাকেন।
হলিউডের কল্যাণে থর ও আরেক দেবতা লোকির দ্বন্দ্বের কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু থরের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো সাগরের এক সাপ। ইয়রমুনগার্ড নামের এ বিশালকায় ড্রাগন মিডগার্ড বা মানবসভ্যতাকে পেঁচিয়ে রয়েছে। মিথলজি অনুযায়ী থর ও ইয়রমুনগার্ডের মধ্যে দুইবার বড় যুদ্ধ হয়। দ্বিতীয় যুদ্ধে তারা একে অন্যকে হত্যা করেন। এর মধ্য দিয়ে ধ্বংস হয়ে যায় মহাবিশ্ব।
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন বাংলা ব্লগ
মিথ সম্পর্কে আরও তথ্য আমার ব্লগে
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:১২