কুরবানীর কয়েকদিন আগের ঘটনা। বাঙালীর চিরায়ত অভ্যাস- গরু কাটা হবে, ফ্রিজ পরিষ্কার করে জায়গা রাখা উচিত। আমার আম্মুও তার বাইরে না। তো ফ্রিজ পরিষ্কার করতে গিয়ে আম্মু আবিষ্কার করল টসটসে দুইটি টমেটো, দেখে মনে হবে একটু আগেই গাছ থেকে ছিঁড়ে এনে রাখা হয়েছে। কিন্তু টমোটোর সিজন ননা হওয়ার বাসায় গত ছয় মাসেও কোন টমেটো কেনা হয়নি। টমেটো দুটো দেখে ভাবছিলাম কি পরিমান প্রিজারভেটিভ দিলে এমন অবস্থা হয়।
"আরে ভাই! এইসব তো হয়েই থাকে, এতো মাথা ঘামানোর কি আছে? খাইলে খান; না খাইলে কিনেন ক্যান? কেউ তো জোর করে দিয়ে যাচ্ছে না।" স্বাভাবিক মনে হচ্ছে তাই না? আসলে ভেজাল খেতে খেতে আমরাই ভেজাল হয়ে গেছি। এখন তো স্বপ্ন দেখতে গেলে স্বপ্নেও ভেজাল দেখি। প্রিজারভেটিভ মারা স্বপ্ন। দেখি কিন্তু বাস্তবে রূপ দিতে যত অনীহা, অলসতা। করারই বা কি আছে! শরীরে কোন অংশে পচন ধরলে সেই অংশ কেটে বাদ দেয়া যায়। পুরো শরীরেই যদি পচন ধরে বাদ দেব কি? নাবলক শিশুগুলোকে বাদ দিয়ে বাকিসব মানুষকে যদি গ্রেনেড গিয়ে উড়িয়ে দেয়া যেত ত্হলে এই শিশুগুলো হয়ত আগামী পৃথিবীকে নতুন করে সাজাতে পারতো।
এখানেও ঝামেলা থেকে যাচ্ছে। যেমন ধরুন আমার আম্মু! সে দুনিয়ার কোন রাজনীতি বোঝেন না, না বোঝেন কোন লাভ ক্ষতি। তার মাথার মধ্যে সবসময় ঘুরে আমি কি করছি না করছি; কি খাচ্ছি, কোথায় যাচ্ছি। তিনি কোন দুর্নীতিতে নেই। শেয়ার বাজারের হিসাব রাখেন না, সোনালী ব্যাংকে কি হল সে খবরও জানেন না, সাগর-রুনী কে সে চেনেনই না। রামপালের নাম তিনি কখনও শোনেনই নাই। তাকে গ্রেনেড মেরে উড়িয়ে দেব কোন যুক্তিতে। আর আমাদের দেশে এমন মা অথবা বোনের সংখ্যাই বেশী।
সেদিক দিয়ে দুর্নীতিগ্রস্থ হচ্ছে ঘরের পুরুষরা, যারা অর্থের প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বেড়িয়ে ভরনপোষনের তাল রাখতে না পেরে যুক্ত হচ্ছে অসৎ পথে। চারপাশের মানুষ যখন বেআইনী কাজ করে তখন ত্দের সাথে থাকতে থাকতে বেআইনটাই আইন হয়ে দাড়ায়।
তারমানে এই নয় যে দেশে শুধু পুরুষরাই দুর্নীতিগ্রস্থ। শুধু এটা ঠিক যে পুরুষের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা অনেক কম। আমাদের মেয়েরা বেশিরভাগ সময়ই ঘরের বাইরে না যেতে যেতে তাদের মাঝে নিজেদের আচরন সম্পর্কে একটা সচেতনতা তৈরী হয়েছে। একজন পুরুষের থেকে একজন মহিলা নিজের সম্ভ্রম, নিজের সম্মান টিকিয়ে রাখতে অনেক বেশি সচেতন। আমাদের অনেক বোনেরা আজ ঘরের বাইরে কাজ করছে। তারপরেও 'সততা' নামক শব্দটা মেয়েরাই এখনও বাচিয়ে রেখেছে। আমি বিশ্বাস করি দেশে বা সমাজে যদি কখনও বিশাল পরিবর্তন আসে তবে সেটা মেয়েদের দিয়েই সম্ভব। নারীর ক্ষমতায়ন এক্ষেত্রে অবশ্যই দরকার। নারীত্ব নিয়ে হাজারও উপমা দেয়া যায়, লেখা যায় হাজারো কবিতা। আবার সেই নারীরাই সমাজের মূল থেকে সমাজ ব্যবস্থাটাকে ঢেলে সাজাতে পারে যদি তারা চায়।
জগতের সকল নারী তাদের প্রাপ্য সম্মান পাক সেই প্রার্থনাই করি। কোন বোন যেন একদলা মাংসপিন্ড হয়ে না থাকে। তাদের যেন মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়, নারী হিসেবে নয়। নারী নামক শব্দটাই সমাজ থেকে চলে যাক।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৬