সমরেশ মজুমদারের ‘গর্ভধারীনি’ প্রথম পড়েছিলাম ২০১৩ তে। তখন শুধু দার্জিলিং নামটাই পরিচিত ছিল। তাও ভাসাভাসা। কিন্তু ঘুম, সান্দাকফু, ফালুট, চ্যাংথাপু এ আবার কি! ‘ঘুম’! এ কেমন নাম? এখানকার মানুষরা কি সারাদিন ঘুমিয়েই থাকে বলে এমন নাম। ফালুটই বা কেমন? ফেলুদার সাথে কোনভাবে সম্পর্কিত নাকি? সদ্য কলেজে ভর্তি হওয়া কিশোর মনে উৎসাহের কোন কমতি নেই। কিন্তু তখন তো আর এত বড় বড় ট্রাভেল কমিউনিটির সাথে সংযুক্ত ছিলাম না, এতো দুর্গম কোন যায়গায় যে মানুষ ভ্রমনে যেতে পারে সে বিষয়েও কোন ধারনা ছিল না। তাই গুগল ঘেটেঘুটে যেটুকু জানতে পারলাম সেই নিয়েই সন্তুষ্ট হতে হয়েছিল। ‘ঘুম’ পৃথিবীর সর্বোচ্চ রেল স্টেশন যেখানে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের টয় ট্রেনে করে যেতে হয়, পথে দেখা হয় ৩৬০ ডিগ্রী মোড় নেয়া বাতাসিয়া লুপের সাথে। আবার সান্দাকফু! এখান থেকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অহংকার এভারেস্ট, লোৎসে, মাকালু, কাঞ্চনজঙ্ঘা, কুম্ভকর্ণ, পান্দিম সবগুলোকে একসাথে দেখা যায়। এ তো স্বপ্ন! হা কলেজ পড়ুয়া একটি ছেলের কাছে এসব স্বচোখে দেখা নিতান্তই স্বপ্ন ছাড়া আর কি?
২০১৬র শেষের দিকে আবার একদিন চোখে পড়ে সেলফের কর্ণারে পড়ে থাকা ঘুনে খাওয়া ‘গর্ভধারীনি’র দিকে। সে রাতে একবারেই শেষ করে ফেলেছিলাম। ধুলো জমা সময়ের স্মৃতির উপর কে জানি রীতিমত শাবল, গাঁইতি চালাচ্ছে। ততদিনে পাহাড়ে চড়ারও বেশ অভিজ্ঞতা ঝুলিতে জমা হয়েছে। এবার আর উচ্চতাপ্রেমী মনকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছিলাম না। এখনও মনে দগদগ করে যখন পড়েছিলাম-
“প্রথমে কালোয় নীলে মিশেল আকাশটার বুকে ফুটে ওঠে একটি বিন্দু। সেখানে নজর যেতে না যেতেই তার রং হয় টকটকে লাল। একচোখা ডাইনীর মত ক্ষানিক স্থির থেকে হঠাৎ সেটা সঙ্গী তৈরী করে নেয় বেশ কিছুটা দূরে। তারপর দুই থেকে তিন এমনি করে সংখা বাড়ে। আর সেই সঙ্গে রংয়ের চেহারা বদলে যায়। লাল ক্রমশ হালকা হতে শুরু করে। তখনও অন্ধকারের পর্দাটা টাঙানো। যা ছিল বিন্দুতে তা গড়িয়ে পড়ে তালুতে। লাল, পাতলা নীল একসময় কাঁচা সোনায় পরিনত হয়। সেই মূহুর্তে অন্ধকার উধাও। একশ আশি ডিগ্রীতে সূর্যদেব প্রকাশিত হবার মুহূর্তে বিন্দুগুলো এক একটি চূড়ো হয়ে যায়- মাকালু, এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, নেৎসে, নুপটসে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অহংকার প্রায় পাশাপাশি উদ্ধত অথচ সুন্দর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সেদিকে তাকালে মায়ালুরা পর্যন্ত পরস্পরের অস্তিত্ব ভুলে যায়। এরপর- বিয়ের কনের সাজ খুলে ফেলে ক্রমশ সাদা একটা চাদর ওদের গায়ে জড়িয়ে নেয়। ক্রমশ এই মেঘেদের আড়ালে আবডালে হঠাৎ উকি মারা ছাড়া মাকালু, এভারেস্টের কিছুই করার থাকে না। পৃথিবীর দৃষ্টিতে কতটা কু আছে তা বোধহয় ঈশ্বর জানেন, তাই মেঘগুলো সেই কু দৃষ্টি থেকে ঢেকে রাখে।”
এভাবেই সমরেশ মজুমদার আমার মাথায় স্বপ্ন বুনে দিয়ে জয়িতাকে নির্বাসিত করেছিলেন ঘুমন্ত বুদ্ধের কোলে। কিন্তু ভালোবাসার জয়িতা তো আর হারিয়ে যেতে পারে না। স্বপ্নবীজের অঙ্কুরোদগম হবে জয়িতার ভালোবাসায়। সারাদিন মাথার মধ্যে ঘুরছে হিমালয় পর্বতমালা, আর জয়িতজর সেই আকাশের দিকে যাত্রা করা রাস্তা। আর ভাবছি কি করে দেখা পাওয়া সেই স্বপ্নের। একে তো দেশের বাইরে ভ্রমনের পূর্ব কোন অভিজ্ঞতা নেই। তার উপর ‘কত না জানি খরচ?’ এর চিন্তা।
ঘুমন্ত বুদ্ধের কোলে, জয়িতার খোঁজেপরিচিত কয়েকজনের পরামর্শ, উপদেশ আর অন্তর্জালের সহায়তায় মোটামুটি একটা পরিকল্পনা দাঁড় করিয়ে ফেললাম। সে পরিকল্পনা দেখে নিজেরই মাথায় হাত। শুধুমাত্র গাইডের খরচই দেখি ৬ দিনে ৪৮০০ রুপি। এর উপর থাকা খাওয়া মিলিয়ে কোনভাবেই ১০-১২ হাজার রুপির নিচে এ স্বপ্ন পূরণ সম্ভব নয়। একটা দল পেলে কিছুটা খরচ হয়ত কমানো যেতো।
যা হবার হবে আগে ভিসা তো করি। প্রজেক্ট সাবমিশনের ডেট তখনও পেন্ডিং। কনফার্ম টিকেট দিয়ে ভিসা করার জো নেই। ই-টোকেনই ভরসা। দালাল ধরে ই-টোকেন নিয়ে পাসপোর্ট জমা দিয়ে আসলাম কোন ঝামেলা ছাড়াই। এরপর থেকেই শুরু হলো মনের সাথে মনের দ্বিধা। প্রশ্ন একটাই- ভিসা কি পাবো? রাতে ঘুম নেই, খাওয়া নেই। গুটিগুটি পায়ে এগোচ্ছিলাম স্বপ্নপূরনের রাস্তায়। নির্ধারিত দিনে গুলশানের ভিসা অফিসে গিয়ে দেখি ইয়া লম্বা লাইন। প্রায় শ চারেক মানুষের লাইন ঠেলে যখন পাসপোর্ট হাতে পেলাম নীল-গোলাপী ভিসার মাঝেই যেন দেখতে পেলাম চকচক করছে এভারেস্ট চূঁড়ো।
এবার পরিকল্পনার পালা। কাউকে না পেলে একাই যাচ্ছি। তবুও যাচ্ছি। এমন একটা বদ্ধমূল ধারনা নিয়েই শুরু হল সহযোদ্ধার খোঁজাখুজি। নিরাশ হতে হয়নি। এরমধ্যে পাওয়া গেল এক স্কুলের এক বন্ধুকে। বাকি সানি আর রিয়াদ ভাই তাদের শিমলা-মানালী ভ্রমন বাতিল করে যুক্ত হবেন বললেন। তবে তারা কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি এসে যোগ দিবেন। এরমধ্যে তৌফিক ভাই জানিয়ে রাখলেন যদি ছুটি পান তবে যোগ হবেন। কোনভাবেই কারো থেকে নিশ্চিন্ত হতে পারছিলাম না। এদিকে প্রজেক্ট সাবমিশনের ডেট দিয়ে দিয়েছে ৩ মে, ২০১৭। তার মানে ৪ মে থেকে মুক্ত।
শেষমেষ সবকিছু সৃষ্টিকর্তার হাতে ছেড়ে দিয়ে ৪ তারিখ রাতেই রওনা দেব বলে মনস্থির করলাম। অবশেষে সেই কাঙ্খিত যাত্রারঘুমন্ত বুদ্ধের কোলে, জয়িতার খোঁজে দিন এসে গেল। টিকেট করা নেই। একটু আগে ভাগেই রওনা দিতে হয়। তার উপর বৃহস্পতিবার। টিকেট পাই কিনা কে জানে! আবার বাবা অত চিন্তা নেই। টিকেট না পেলে ট্রাকে চেপে বসব ভেবে নিয়েই গাবতলীর দিকে রওনা দিলাম। মালিবাগ-মগবাজারের বিখ্যাত রাস্তা পেরিয়ে গাবতলী পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা ৭ টা বেজে গেল। ৯ টার মাঝেই বুড়িমাড়ির সব বাস মোটামুটি ছেড়ে যায়। টিকেট নেই কোথাও। যা দু-একটা আছে তাও শেষেরগুলো। ১২ ঘন্টার জার্নিতে আর আস্ত থাকা লাগবে না। শেষমেষ ‘শুভ বসুন্ধরা’র ৮০০ টাকার এসি বাসে চেপে বসলাম। বাস ছাড়ল ন’টা পাঁচে। বাস ছাড়ার পড়েই একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, ‘শেষ পর্যন্ত!’
সাঁই সাঁই করে বাস ছুটে চলেছে যাদুর শহরকে ছেড়ে। যমুনা সেতু পাড়ি দেই রাত একটার দিকে। এখানে বেশ পুরোনো স্মৃতি বিজড়িত আমার। ক্লাস এইটে পড়ুয়া দুইটি ছেলে জাতীয় স্কাউট জাম্বুরীর নিরাপত্তা উপেক্ষা করে পালিয়ে গিয়েছিল যমুনা সেতু দেখবে বলে। ১৪ বছরের সেই বালকদ্বয় বাড়ি থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে জনশুণ্য সেই শীতের রাতে হাটছিল যমুনা সেতুর টোল পয়েন্ট থেকে কড্ডার মোড়ের উদ্দেশ্যে। হাতে সম্বল ৯০ আর ৯০ মোট ১৮০ টাকা, খেতে হবে রাতে, ফিরতে হবে ঢাকায়। ফিরেছিলামও রাত দুটোয়। চুপিচুপি চোরের মত এসেই ক্যাম্প ঘুমিয়ে পড়ছিলাম। এটাই বোধহয় জীবনের প্রথম মনে রাখার মত অ্যাডভেঞ্চার ছিলো আমার। সে গল্প করব আর একদিন। তবে আট বছর পরে আবার সেই যমুনা সেতু, আবার সেই কড্ডার মোড়। তবে উদ্দেশ্য আরো বহুদূর, লক্ষ্য স্বপ্ন পূরণ
মনের মাঝে তিলেতিলে গড়ে ওঠা স্বপ্ন, মস্তিষ্কের প্রতিটি নিউরনে জমাট বাঁধা হিমালয়ের হাতছানি। কখন আসবে সেই ক্ষন যখন ভোরের টাটকা আলো কাঞ্চনজঙ্ঘারর উপর প্রজ্জলিত হয়ে, প্রতিফলিত হয়ে স্তব্ধ করে দেবে হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দন! যাত্রাপথে বাস বিরতি দিয়েছিল সিরাগঞ্জের হাটিকুমরুলে। সারাদিনের উৎকন্ঠায় খেতেই যে ভুলে গিয়েছিলাম এই প্রথম পেট জানান দিচ্ছিল। কিন্তু খাওয়া কি আর হয়! তাও কোনমতে দুইখানা রুটি আর একটা ডিম পেটে চালান করে দিয়ে বাসে উঠে শুভ্র চূড়োর স্বপ্নে বিভোর হয় ঘুমিয়ে পড়লাম।
ঘুম ভাঙে সকালে ৬ টার দিকে তীব্র ঝাঁকুনিতে। এতো বাজে রাস্তাও যে আছে বুড়িমাড়ির মত ব্যস্ত স্থলবন্দরে আছে তা কে জানত! বাস ছুটে চলেছে ভোরের আবছা অন্ধকার ভেদ করে। আর আমি বসে বসে প্রহর গুনছি কখন পৌঁছাবো, কখন ওপারে যাবো, কখন দেখব সেই ভালোবাসার উজ্জল শুভ্র মুখখানা। এসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে সকাল ৮ টার দিকে পাটগ্রাম পেড়িয়ে বাস আমাদের নামিয়ে দিলো ‘শুভ বসুন্ধরা’র কাউন্টারে। খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছে। বাস থেকে নেমে খেতে রওনা দেব তখনই শুনতে পেলাম পেছন থেকে ডাকছে কেউ। এই সেই দালাল। দালাল দেখতে এমন হয় বুঝি। বলল, “আপনাদের পাসপোর্ট দিয়ে গিয়ে খেয়ে আসুন। আমি এদিকের কাজ গুছিয়ে রাখছি।” প্রথমবার একা একা বিদেশ ভ্রমন। নিজে থেকে ইমিগ্রেশনের ঝামেলা পোহাতে ইচ্ছে হলো না। ট্রাভেল ট্যাক্সের ৫০০ টাকা আর ঘুষ বাবদ ৩০০ মোট ৮০০ টাকা হাতে গুঁজে দিয়ে চললাম খেতে।
একটু সামনেই একটা হোটেলে খেতে বসেছি এমন সময় শামীম ভাইয়ের ফোন। সে নাকি আমাদের সাথে যাবে। সকালে রংপুর থেকে রওনা দিয়েছে। মিনিট বিশেকের মাঝে পৌছে যাবে। রংপুর! আর মাত্র বিশ মিনিট লাগবে আসতে। এসব খুব ভালো করেই জানা আছে। কম করে হলেও ৪০ মিনিটের আগে পৌছাতে পারবে না তা সে যত যাই বলুক। সেরকম প্রস্তুতি নিয়েই ধীর গতিতে খাওয়া দাওয়া পর্ব শেষ করে একটা টুথপেষ্ট কিনে দাঁত ব্রাশ করতে করতে বেসিনের সামনে দাড়িয়েছি। হঠাৎই সাইরাজের চিৎকার, “তোর ডিএসএলআর কই?” হুড়িমুড়ি করে দৌড়ে এসে দেখি আসলেই তো! আমার ক্যামেরার ব্যাগ কই? কিছুতেই বুঝতে পারছি না কোথায় গেল ব্যাগটা, এখানেই তো রেখেছিলাম। শুরুতেই এমন ধাক্কাটা মেনে নিতে পারছিলাম না। এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতে করতে মনে হলো একবার খাবার হোটেলে দেখে আসি। খেয়ে এসেছি সেই কখন, এখন গিয়ে কি আর পাওয়া যাবে যদি ফেলেও আসি। আমাকে অবাক করে দিয়ে, আমার ছোট মানসিকতাকে ভুল প্রমান করে হোটেলের মালিক দেখি সযত্নে আমার ক্যামেরার ব্যাগটা রেখে দিয়েছেন। হোটেল মালিকের উদারতা দেখে আমি অবিভূত। ভ্রমনের শুরুতেই এমন একটা ধাক্কা বেশ সতর্ক করে দিলো আমাকে, বিশেষত পাসপোর্টের ক্ষেত্রে।
সব আনুষ্ঠানিক কাজ শেষ করে অপেক্ষা করছি শামীম ভাইয়ের। সকাল নটা বেজে গেছে কিন্তু তার আর দেখা নেই। শেষ পর্যন্ত দালাল শিমুলকে রাজি করালাম যে আমরা ইমিগ্রেশনের লাইনে দাড়িয়ে পড়ি সে আসলে আমাদের লাইনে ঢুকিয়ে দেয়া যাবে। ততক্ষনে লাইন বেশ বড় হয়ে গেছে। প্রায় ৩০ জনের পিছনে দাড়িয়ে আছি আর মনে মনে সব ক্ষোভ শামীমের উপরে ঝাড়ছি।
ভীড় ঠেলে ঠুলে প্রায় ১০ টার দিকে যখন ইমিগ্রেশন বুথ থেকে মাত্র ৩ জন পিছনে আছি তখন পঞ্চাশোর্ধ এক বুড়ো ব্যক্তির সাথে লেগে গেল তুমুল ঝগড়া। সে দাঁড়িয়ে ছিলেন আমার পাশের লাইনে। কিন্তু আমাদের লাইনটা দ্রুত এগোচ্ছিল দেখে ফাঁকে এসে ঢুকে পড়তে চেয়েছিলেন। আমি বেশ ভদ্রভাবেই বলেছিলাম, “আঙ্কেল, আপনি তো পাশের লাইনে ছিলেন।” ভদ্রলোক আকাশ থেকে পড়লেন। তাকে এধরনের কথা তাও আমার বয়েসী কেউ বলতে পারেন এমনটা বোধহয় তিনি ভাবেননি কখনও। বেশ প্রতাপের সাথে বলে উঠলেন, ” আমি যে লাইনে ইচ্ছা দাঁড়াবো! কি করবে তুমি?” ফলাফল যা হওয়ার তাই হলো। এক কথা-দুই কথায় শেষ পর্যন্ত কর্তব্যরত পুলিশ এসে তাকে বের করে দিল।
ততক্ষনে বেলা সাড়ে দশটা বেজে গেছে আর নানা উটকো ঝামেলায় আমার বেজে গেছে বারোটা। ইচ্ছে ছিল বর্ডার পার করেই সোজা চলে যাবো ডুয়ার্সে। সেটা বোধহয় আর হলো না। এর মধ্যে আমার ছবি তোলা শেষ এবং শামীমের আগমন। শামীম ভাই একের পর এক ফোন দিয়ে যাচ্ছেন যেন আমি তাকে ফেলে চলে না যাই, সে দু’মিনিটের মাঝেই সব শেষ করে আসছেন। এদিকে আমি ততক্ষনে গুটিগুটি পায়ে হেটো ইন্ডিয়ায় ঢুকে পড়েছি।
এপাশের দালাল মশাই বেশ ভালো। ১০০ টাকার বিনিময়ে সব কাজ নিজে থেকেই করিয়ে দিল। সাথে মে এর তাপদাহে ফ্যানের নিচে একখানা চেয়ারেরও ব্যাবস্থা করে দিয়েছে। দুই পাশের সব কাজ শেষ করে লেট কামার শামীমের জন্য বসে আছি তখনও শান্তি নেই। সেই পঞ্চাশোর্ধ ভদ্রলোক তখনও আমার পিছু ছাড়েননি। এপারে এসেও আমাকে সমানতালে হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন। আমি তার নাতির বয়েসী হয়েও কি করে তার সাথে তর্ক করতে পারলাম, আমাকে দেখে নিবেন। গায়ে লাগালাম না। গত কয়েক বছরের ভ্রমন অভিজ্ঞতায় এমন মানুষের কম সাক্ষাৎ তো আর পেলাম না।
আমাদের লেট কামার চাঁপাই ওরফে শামীম ভাই ইমিগ্রেশন শেষ করতে করতে আমার এবং ঘড়ি দুইটারই বারোটা বাজিয়ে ফেলেছেন। তড়িঘড়ি করে ডলার ভাঙিয়ে, একটা জীপ খুঁজে চড়ে বসলাম শিলিগুড়ির পথে। জীপ চলতে শুরু করল অনিমেষ, দীপাবলির ময়নাগুড়ি, তিস্তা ভেদ করে। দু পাশের চা বাগান আর ভুট্টার ক্ষেত, তিস্তার স্নিগ্ধতা সবকিছু রাস্তার মরীচিকা পড়া গরমকেও ভুলিয়ে দিচ্ছিল বারংবার। আর আমার চোখের সামনে শুধু ভেসে উঠছে কল্পনার তুলিতে আঁকা দীপাবলির মুখখানা; যে মুখখানা আমাকে প্রতিনিয়ত মেয়ে না হওয়ার আফসোসের যন্ত্রনায় বিদ্ধ করে। এই ময়নাগুড়ির পথ ধরেই তো সেই ভালোবাসার দীপাবলি সংগ্রাম করে গেছে সারাটি কৈশর। কিংবা এরই কোন চা বাগানে হয়ত অনিমেষ এসে লুকিয়ে ছিল নকশাল আন্দোলনে। এসব ভাবতে ভাবতেই ঝিমুনি এসে গিয়েছিল কিছুটা। চোখ খুলে দেখি ততক্ষনে শিলিগুড়ি পৌঁছে গেছি। তিনটা বেজে গেছে। জীপ থেকে নেমে ড্রাইভারের হাতে ২০০ রুপি গুজে দিয়ে চলেছি হোটেলের খোঁজে, পেটপুজো না করলেই নয়।
পরবর্তী পর্বঃ
জয়িতার-খোঁজেঃ-২
জয়িতার-খোঁজেঃ-৩
জয়িতার-খোঁজেঃ-৪
জয়িতার-খোঁজেঃ-৫
জয়িতার-খোঁজেঃ-৬
জয়িতার-খোঁজেঃ-৭
জয়িতার-খোঁজেঃ-৮
জয়িতার-খোঁজেঃ-৯
জয়িতার-খোঁজেঃ-১০
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:৩৩