somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের বিনোদন চ্যানেলগুলো নামে মাত্র বিনোদন চ্যানেল কাজে খবরের চ্যানেল

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




দিন দিন বেড়েই চলেছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সংখ্যা। নির্মাতারা একের পর এক নাটক নির্মাণ করলেও সেই তুলনায় দর্শক নেই। প্রচারে আসার আগে বিনোদন চ্যানেলের শর্ত পূরণ করে লাইসেন্স গ্রহণ করলেও চ্যানেল কর্তৃপক্ষ বিনোদনকে প্রায় বাদ রেখেই অনুষ্ঠান প্রচার করছেন। বিনোদন চ্যানেলেগুলোতে প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০ ঘন্টা সংবাদ প্রচার হয়, তার সাথে যুক্ত আছে অধিক পরিমানে বিজ্ঞাপন প্রচার। বিনোদন চ্যানেলে সংবাদ প্রচার ও মাত্রাতিরিক্ত বিজ্ঞাপনরে জন্য দর্শক দেশিয় চ্যানেল থেকে আগ্রহ হারিয়ে বিদেশি চ্যানেলের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। উত্তরণের জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন প্রকার উদ্যোগ।


বর্তমান টেলিভশিন নাটক নিয়ে আপনার অভিমত কি?


আমি টেলিভিশন নাটকের বর্তমান মান নিয়ে সন্তুষ্ট। বাংলা নাটক আগের তুলনায় এখন অনেক ভালো হচ্ছে। মূল সমস্যা হচ্ছে নাটকের সংখ্যা অনেক বেশি হচ্ছে। নাটকের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে খারাপ নাটকের সংখ্যা বেড়ে গেছে, তারমানে এই না যে বাংলা নাটকের মান খারাপ হচ্ছে। আপনি দেখেন, পশ্চিমবঙ্গের সেই ইউটপিয়ান নাটক মানে যে নাটকের গল্পের বিশ্বাসযোগ্যতা নেই, অদ্ভুত ধরণের কিছু ঘটনা এমন কি নারীদের ছোট করার প্রবণতা তাদের নাটকেই বেশি দেখা যায়। হিংসা করা, ছোট করা এগুলো আমি মনে করি যে মানুষের মানসিকতা নষ্ট করে ফেলছে। কিন্তু বাংলাদেশের নাটকের সবচেয়ে ভালো দিক যেটা সেটা হচ্ছে আমাদের এখানে জীবন ঘনিষ্ট নাটক তৈরী হয়। যারা একটু ভালো নাটক পছন্দ করেন, তারা সেগুলোই পছন্দ করেন।


বর্তমানে টেলিভিশন নাটকে ভালো চিত্রনাট্যের অভাব আছে, আপনি কি মনে করেন?


নাটকে ভালো চিত্রনাট্যের অভাব সব সময়ই ছিলো। কিন্তু বর্তমানে এর অভাব আরো বেশি, এর কারন বাজেট। ভালো চিত্রনাট্যের জন্য ভালো লেখকদের ধারণ করার আর্থিক অবস্থা নির্মাতাদের নেই। আরো যে সমস্যাগুলো আছে তা হলো ইদানিংকালে কিছু এজেন্সি এসেছে, তারা নিজেদের পছন্দমত এবং চ্যানেলের কিছু কিছু লোক আছে যাদের সাহায্যে তারা মানহীন নির্মাতা দিয়ে নাটক নির্মাণ করছে। এতে নাটকের যে একটা প্রকৃত অনুভুতি ছিলো সে অনুভুতিটা সংকুচিত হয়ে গেছে ফলে প্রকৃত নির্মাতা যারা তারা পেছনে চলে গেছে, অন্যদিকে বাজেটের সমস্যার জন্য কম খরচের নাটক তৈরি হচ্ছে। তাই ইদানিং এক ধরণের জুসি নাটক তৈরি হচ্ছে এবং চ্যানেলও এসবের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। ভালো নাটক হয় না, এই দোষটা দিতে গেলে সর্ব প্রথমে চ্যানেলের উপর দিতে হয়, কারণ নাটকের মান নিয়ন্ত্রণ হলো চ্যানেলের হাতে। আমি যদি একটা খারাপ নাটক নির্মাণ করি তাহলে কেন সেটা চ্যানেল কিনবে, কেন সেটা প্রচার করবে? আর যারা বলেন আমাদের দেশে ভালো নাটক হয়না, আমি বলবো- না এটা ঠিক না, কারণ তারা ভালো নাটকগুলো দেখেন না।


আমাদের টেলিভিশন নাটকে দর্শক কমে যাওয়ার কি কারণ বলে আপনার মনে হয়?


আমাদের প্রচারের যে এক ধরণের নিয়ম এখানে সৃষ্টি হয়েছে সেটা একটা কারণ হতে পারে। তবে আমি যেটাকে প্রধান কারণ মনে করি সেটা হলো বিনোদন চ্যানেলগুলো নামে বিনোদন চ্যানেল, কাজে হলো খবরের চ্যানেল। এবং আমরা দেখি যে, পিক আওয়ারে আমাদের বিনোদন চ্যানেলগুলোতে সংবাদ প্রচার হয়। প্রায় আধা ঘন্টা থেকে পঁয়চাল্লিশ মিনিট এমনকি এক ঘন্টাও সংবাদ প্রচার হয়। যখন আমি একটা চ্যানেলকে বিনোদন চ্যানেল বলছি, সেখানে খবর প্রচারের আমি কোন কারণ দেখি না। সংবাদের জন্যে সম্পূর্ণ আলাদা চ্যানেল থাকা উচিত এবং আছে। আমরা যদি পশ্চিমবঙ্গের দিকে দেখি সেখানে বিনোদন চ্যানেলে কোন খবর প্রচার হয় না। এবং তারা প্রতি ঘন্টায় নাটক প্রচার করে যাচ্ছে, গানের অনুষ্ঠান প্রচার করছে অথবা রিয়ালিটি শো করছে। সেখানে কোন ঘোষণা নেই, একটা শেষ হচ্ছে আবার একটা শুরু হচ্ছে। দর্শক মনে রাখছে যে এই সময়ে এই নাটক প্রচার হবে, সময়ের কোন হেরফের হয় না। আর আমাদের এখানে শুরু হওয়ার কোন সময় নেই, শেষ হওয়ারও কোন সময় নেই। কারণ একটা খবর শুরু হলে কতক্ষণ চলবে কেউ বলতে পারে না। একটা নাটকের টাইটেল দেখানোর সাথে সাথে বিজ্ঞাপনে শুরু হচ্ছে। সংবাদের কারণে একটা নাটকের শেষের পাঁচ মিনিট এক ঘন্টা পরে দেখাচ্ছে। এসব কারণে আমাদের নাটক থেকে মানুষের বিচ্যুতি ঘটছে, মানুষের মনসংযোগের বিচ্যুতি ঘটছে। টানা ১০-১৫ মিনিটের বিজ্ঞাপনের জন্যে দর্শক আর সে চ্যানেলে ফিরে আসে না, দর্শকের মনেও থাকে না সে কোন চ্যানেলে কোন নাটকটি দেখছিলো। এসব কারণে এখন যে বিরতিহীন নাটকগুলো হচ্ছে, সেগুলো কিন্তু দর্শক ঠিকই দেখছে। তারমানে দর্শক কিন্তু ঠিকই বোঝে। কিন্তু আমরা তার মনসংযোগে বিচ্ছেদ ঘটাচ্ছি। যেখানে পশ্চিমবঙ্গের নাটকগুলো একটা নিয়মের ভেতর আছে, আমরা নেই। ওদের কিন্তু বিশেষ দিনে বা পূজোর সময় আমাদের মত বাঁধন হারা অনুষ্ঠান হয়না, তারা জানে দর্শককে বিরক্ত না করেও কিভাবে বিশেষ দিনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা যায়। আর আমরা সকাল থেকে শুরু করে রাত দুইটা পর্যন্ত মেলা করলাম একটা মৃত্যু দিবসে। সব কিছুই একটা সীমার মধ্যে থাকে। আমাদের কোন সীমা নেই।


এগুলো দেখভাল করা কাদের দায়িত্ব?


এটা অবশ্যই সরকারের দায়িত্ব, সরকারের এটা দেখা দরকার। যাদের বিনোদন চ্যানেল তারা শুধু বিনোদনই প্রচার করবে। আর একটা সমস্যার কথা বলা যায়, ভিডিও চ্যানেল নামে প্রত্যেকটা ক্যাবল অপারেটরের একটা করে চ্যানেল দেখা যায়। ২৪ ঘন্টা এই চ্যানেলগুলোতে হিন্দি সিনেমা দেখাচ্ছে। কে এগুলোর অনুমতি দিয়েছে, কে এগুলোর সেন্সর দিয়েছে, কিভাবে এগুলো চলছে আমিও জানতে চাই! যেখানে সারা দেশে একটা আন্দোলন চলছে বিদেশি সিনেমা প্রচার নিয়ে সেখানে ২৪ ঘন্টা কি করে ওই চ্যানেলগুলোতে হিন্দি সিনেমা চলে। ভারতীয় চ্যানেলগুলোকে আমরা ওপেন ডোর করে দিয়েছি কিন্তু এখন পর্যন্ত কলকাতায় বাংলাদেশের একটা চ্যানেলও দেখানো হয়না। এটা তো সরকারের একটা দায়িত্ব যে, আমরা ওদের অনুষ্ঠান দেখি তাহলে ওরা কেন আমাদের অনুষ্ঠান দেখবে না? কি কারণে দেখছে না সেটা খুঁজে বের করা দরকার। এবং সেটার একটা সমাধন করা উচিত। ভারতে আমাদের বিজ্ঞাপন চলে যাচ্ছে সেখানে আর্থিকভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এই সমস্যা সমাধান হলে আমাদের বিজ্ঞাপন ওদের ওখানে যায় না। ওদের অনুষ্ঠান আমরা নিয়মিত দেখার কারণই বিজ্ঞাপনগুলো ওদের ওখানে চলে যাচ্ছে। ওদের বিজ্ঞাপন কিন্তু আমাদের এখানে আসে না কারণ আমাদের অনুষ্ঠান ওরা দেখে না। দুই দিকের মানুষই কিন্তু বাঙালি তাহলে কেন ওরা আমাদের চ্যানেল দেখবে না? কারণ তাদেরকে দেখতে দেয়া হয়না। কলকাতার দর্শকরা কিন্তু আমাদের অনুষ্ঠান দেখার জন্যে অস্থির হয়ে থাকে, কিন্তু দেখানো হয়না।

চ্যানেলগুলোর দাবি বিজ্ঞাপনের রেট অনেক কম হওয়ায় বিজ্ঞাপনের সংখ্যা বেড়ে যায়।

চ্যানেলগুলো ভালো অনুষ্ঠান প্রচার করুক। মানহীন ১০০টা নাটক না করে ১০টা ভালো নাটক করুক। দেখেন বিজ্ঞাপনের রেট বাড়ে কিনা! আপনারা নি¤œ মানের হাজারটা নাটক করলে ওই নি¤œ মানের কম রেটের বিজ্ঞাপনই পাবেন। আমার স্পষ্ট কথা, কোয়ানটিটি না বাড়িয়ে কোয়ালিটি বাড়ালে অবশ্যই বিজ্ঞাপনের রেট বাড়বে। অত্যন্ত দুর্বল বাজেটে প্রচুর নাটক নির্মাণ না করে বেশি বাজেটে ভালো নাটক নির্মাণ করলে এই সমস্যার সমাধান হবে।


অনেকে মতামত দিচ্ছেন যে ভারতীয় চ্যানেলগুলো বন্ধ করে দিতে, এটা কি বাধ্য করা না?


বন্ধ করার প্রয়োজন নেই, পে চ্যানেল করলেই হয়। যদি আমাদের চেয়ে বিদেশি নাটক ভালোই হয় তাহলে টাকা দিয়ে দেখতে হবে। আর নির্দিষ্ট টাকা দিয়ে যে ক্যাবল লাইন নেয়া আছে, সেটা দিয়ে আপনাকে বাংলাদেশের চ্যানেল দেখতে হবে। আর বাইরেরগুলো পে-চ্যানেল থাকবে। তাহলেই এটা অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। যেমন সিগারেট যেন মানুষ কম খায় বা না খায় তাই এটার দাম প্রতিবছর বাড়ানো হচ্ছে। সরকার চায় জনগণ সিগারেট যেন না খায়। আবার তামাক থেকে সরকার যে ট্যাক্স পায় সেটাও অনেক বেশি। ব্যাপরটা দুই দিকে থেকেই ভালো। তাই পে-চ্যানেল থাকলে মানুষ নিজের দেশেরটা বেশি দেখবে আর বাইরেরগুলো কম দেখবে। এটাও দুই দিক থেকে ভালো। আর গড়পত্তন সব চ্যানেল তো আমার দরকার নেই, যেটা আমার প্রয়োজন সেটাই আমি দেখবো। যেমন খেলার চ্যানেল ওপেন থাকবে, এটা সব ধরনের মানুষ দেখে। এরকম কমন চ্যানেলগুলো ওপেন করা যেতে পারে। কিন্তু নিজস্ব চ্যানেলগুলোর মান বজায় রাখতে তার প্রচারের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা থাকা উচিত।

দৈনিক ঢাকার ডাক/বিনোদন/ঈদ আয়োজন
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৪৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×