somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুপার লাইট স্পীড!

০২ রা অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৪:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এতদিনে প্রায় সবারই ব্যাপারটা জানা হয়ে গিয়েছে – “একদল নিউট্রিনো আলোর চেয়েও দ্রুত গতিতে চলেছে”। অর্থাৎ ফোটনের চেয়েও তারা দ্রুত! এ বিষয়ে উন্মাদ তন্ময় সুন্দর এক পোস্টও দিয়েছিলেন । যারা আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও সময় কিংবা সুযোগের অভাবে পুরো ব্যাপারটা ভাল করে লক্ষ্য করতে পারেননি মূলতঃ তাদের জন্যই একটু ভিন্ন আঙ্গিকে এই পোস্ট।

গবেষণার ফল যদি আন্তর্জাতিকভাবে বৈজ্ঞানিক মহলে সর্বস্বীকৃত হয় তবে বুঝতেই পারছেন পদার্থবিদ্যার জগতে কত বড় আলোড়ন তৈরী হবে।

যাহোক মূল আলোচনায় যাই। নিউট্রিনোরা তিন ভাই। ইলেক্ট্রন-নিউট্রিনো, মিউওন-নিউট্রিনো আর টাও-নিউট্রিনো। প্রত্যেকের আবার অ্যান্টি-পার্টিকেল রয়েছে। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত Martin Lewis Perl আর তার সহকর্মীদের গবেষণায় ফার্মিল্যাবে DONUT experiment এ “টাও” মৌল কণা আবিষ্কৃত হয়। তখন থেকেই টাও-নিউট্রিনোর কথা ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিলো। অবশেষে ২০০০ সালে এই ডনাট কলাবরেশানেই টাও-নিউট্রিনো আবিষ্কৃত হয়। এর ফলে স্ট্যান্ডার্ড মডেলের আর একটি মাত্র মৌল কণা বাকী রইলো – সেই বিখ্যাত হিগস্ বোসন।

কিন্তু বিষয় এই টাও-নিউট্রিনোকে নিয়ে নয়, তার ভাই মিউওন-নিউট্রিনোকে নিয়ে। ১৯৪০ সালে এর কথা প্রথম ভাবা হয়। আর ১৯৬২ সালে Leon Max Lederman, Melvin Schwartz আর Jack Steinberger এটা আবিষ্কার করেন। এর জন্য ২৬ বছর পর ১৯৮৮ সালে তারা নোবেল জেতেন। আসলে সার্বিকভাবে বলতে গেলে পরীক্ষাটা সব নিউট্রিনোকে নিয়েই। কেননা মিউওন-নিউট্রিনো বদলে গিয়েই টাও-নিউট্রিনো হয়েছিলো। আর তাতেও বড় গোলযোগ বেধে ছিলো। কেননা স্ট্যান্ডার্ড মডেল মতে নিউট্রিনোরা ভর শুন্য। কিন্তু এই ট্র্যান্সফর্মেশানের জন্য তার ভর থাকা জরুরী।

গত ২০০৬ এর অগাস্ট থেকে, CERN থেকে প্রায় ৭৩৩ কি.মি. দূরে ইটালীর গ্রান সাসো পর্বতের তলায় গ্রান সাসো (Laboratori Nazionali del Gran Sasso) ল্যাবোরেটরীর দিকে মিউওন-নিউট্রিনো পাঠানো শুরু হয়।

CERN এর সুপার প্রোটন সিনকোট্রন (SPS) থেকে 400 GeV মাত্রার একটা প্রোটন বীম দিয়ে একটা গ্রাফাইট টার্গেটকে আঘাত করা হোত। ফলে প্রচুর kaons আর pions তৈরী হোত। কিন্তু এরা খুবই ক্ষণস্থায়ী। তাই চলতে চলতেই এরা মিউওন আর মিউওন-নিউট্রিনোতে রূপান্তরিত হোত। বৈজ্ঞানিক Bruno Pontecorvo কোয়ান্টাম মেকানিকসের একটা এফেক্টের কথা বলেছিলেন – নিউট্রিনো অসিলেশান। যদিও তার জন্ম ইটালীতে, তবে তাকে ভাবা হয় সোভিয়েত এজেন্ট হিসেবে। উনি ১৯৫০ এ তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে যোগ দেন।

এই Neutrino Oscillation এর জন্য এক নিউট্রিনো অন্যটায় রূপান্তর হতে পারে।

‘৮০’র দশকেই নিউট্রিনোর গতিবেগ মাপা হয়। পরে ফার্মিল্যাবে দুটি ডিটেক্টর দিয়ে MINOS পরীক্ষাতে মিউওন অসিলেশান কনফার্ম হয়। তখনই দেখা গিয়েছিলো ৩ GeV নিউট্রিনোদের গতিবেগ আলোর চেয়ে অত্যন্ত সামান্য হলেও বেশি। যাহোক সেগুলোকে নানা রকম কঠিন অংকে ফেলে সুরাহা হয়েছিলো।

গ্রান সাসোর হল সিতে OPERA (Oscillation Project with Emulsion-tRacking Apparatus) অবস্থিত। এটা CERN থেকে আসা নিউট্রিনো ট্র্যাক করে। এখান থেকেই গত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১১ সেই দুনিয়া কাপানো ঘোষণা দেয়া হয় – CERN থেকে আসা নিউট্রিনোরা হিসেবের আগেই এসে পৌছাচ্ছে। আলোর গতিতে চললেও যে সময় লাগার কথা, তার ৬০ ন্যানো সেকেন্ড আগেই তারা পৌছাচ্ছে – অর্থাৎ সেই বহুল আলোচিত সুপার লাইট স্পীড প্রত্যক্ষ্য করা গিয়েছে। ১৭ GeV আর ২৮ GeV, দুই শক্তিমাত্রার নিউট্রিনোদের ক্ষেত্রেই একই ব্যাপার ধরা পড়েছে।

এখন পর্যন্ত কোন যান্ত্রিক ত্রুটি বা গণনা জনিত ভুল ধরা পড়েনি। বৈজ্ঞানিকেরা মোটামুটি এটাকেই সত্য বলে ধরে নিতে পারেন।

হয়তো সূচিত হলো নতুন যুগের পদার্থ বিদ্যার।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৫:৫০
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×