somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

ফ্রিদা কাহলো এক ব্যতিক্রমী মানুষ

০৮ ই জুলাই, ২০২০ সকাল ১০:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পর্ব দুই
গতিপথ---------
দুই বছর সময় সোজা শটান বিছানার সাথে লেপটে থাকতে হলো ফ্রিদাকে। অদ্ভুত নিঃসঙ্গ সময়। পনের বছরের কিশোরী যখন রঙের পাখা মেলে কেবল উড়তে শুরু করল। তখনই চারপাশের সব আটকে গেল বন্ধ চার দেয়ালের মাঝে।
বিছানা থেকে উঠে বসার মতন অবস্থা ছিলনা শরীরের। এই ভয়ানক শারীরিক যন্ত্রনা সাথে কিছু করতে না পারার মনো যন্ত্রনা থেকে
এ সময় ফ্রিদা ছবি আঁকতে শুরু করে। ইচ্ছে ছিল ডাক্তার হওয়ার বিছানায় থাকা জীবনে সে ইচ্ছে থেমে যায়। বিছানার একা থাকার জীবনগুলো রঙতুলিতে ধরে রাখার চেষ্টা করে। যেন নিজের জীবনের ডায়রি লিখে যাচ্ছে আঁকার মাধ্যমে। ছোট ছোট ক্যানভাসে শরীরের যন্ত্রনাগুলো মেলে ধরে নিজের মতন। বিছানায় শুয়ে আঁকে নিজের প্রতিকৃতি। বিছানার উপর চিৎ হয়ে শুয়ে নিজেকে দেখার জন্য বিছানার উপর,ঘরের সিলিংয়ে লাগিয়ে নেয় আয়না। শুয়ে শুয়ে ছবি আঁকার এক নতুন জীবন শুরু করে সময় কাটানোর জন্য ফ্রিদা। নদীর গতিপথের মতন ভাগ্য যেন নিজে হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে যায় ফ্রিদাকে তার গন্তব্যে।



দুবছরের ক্লান্তিকর বিছানার জীবন থেকে উঠে বসে এক সময়, শরীরে অসহ্য যন্ত্রনা নিয়ে। নতুন করে শিশুর মতন আবার চলতে ফিরতে শিখে।
এ সময় নিজের আঁকা ছয়টি ছবি নিয়ে ফ্রিডা একদিন দিয়াগোর সামনে হাজির হয়। দিয়াগো তখন উঁচু একটি জায়গায় ভাস্কর্য তৈরি করছিল। নিজের স্বভাবসুলভ চপলতা এবং অধিকার নিয়ে ফ্রিদা দিয়াগোকে বাধ্য করে নিজের কাজ ফেলে উপর থেকে দ্রুত নেমে ওর ছবিগুলো দেখে কিছু বলার জন্য। ফ্রিদা বলে, দেখ আমার ছবিগুলো ভালো করে তারপর সঠিক মন্তব্য করো। আমাকে খুশি করার জন্য কিছু বলতে হবে না। আমার এখন আর কিছু করার উপায় নেই। এই ছবি এঁকে জীবন চালাতে পারব কিনা বলো। একজন মানুষের খড়কুটো ধরে বেঁচে থাকার মতন ফ্রিদা ছবি এঁকে সময় কাটানোর সাথে জীবন যাপন করতে চায়। কিন্তু তার ছবি কে পাত্তা দিবে কে বলবে এগুলো কিছু হয়েছে। যেহেতু দিয়াগা খুব ভালো জানে ছবির ব্যাপারে তাই বড় আশা করে নিজের কাজের যোগ্যতা যাচাই করতে আসে ফ্রিদা দিয়াগোর কাছে।



১৯২৮ সালে ফ্রিডা একজন শিল্পীর বিচারকের চোখে, একজন শিল্পী হিসেবে কর্মজীবনের জন্য কাজগুলো যথেষ্ট প্রতিভা আছে কিনা তা বিচার করতে চেয়েছিল।
দিয়াগো অবাক চোখে এক নতুন শিল্পীর ছবি দেখে এবং সম্ভাবনার আলো দেখতে পায়। দিয়াগো ছবির সৌন্দর্যে অভিভূত হয়ে দেখেছিল, একটি অস্বাভাবিক শক্তি, চরিত্রের সুনির্দিষ্ট চিত্রায়ন এবং সত্যিকারের তীব্রতা, অভিব্যক্তি একটি মৌলিক সততা এবং নিজস্ব শিল্পসম্মত ব্যক্তিত্ব। একজন শিল্পীর চোখে স্পষ্ট ধরা পরেছিল, মেয়েটি একজন খাঁটি শিল্পী।
দিয়াগো শুধু বলেছিল, তুমি এঁকে জীবন ধারন করতে পারো কি না পারো তা বড় কথা নয় তবে তুমি ছবি আঁকা বন্ধ করো না।
এর পর দিয়াগো ফ্রিদার বাসায় আসে এবং ওর আঁকা আরো ছবি দেখে মুগ্ধ হয়। ছবি আঁকার অসীম সম্ভাবনা দেখতে পায় ফ্রিদার মাঝে কখনো তেমন ভাবে ছবি আঁকা শিখেনি কিন্তু কী অদ্ভুত ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে ছবির ভাষা। এক একটি ছবি যেন এক একটা গল্প বলে যাচ্ছে।
ফ্রিদার ছবি আঁকা চলল প্রবল উৎসাহে । অসুস্থ মেয়েটি জীবনের কাছে পরাজিত না হয়ে যা করতে পারে তার হাত ধরে উঠে দাঁড়াবার চেষ্ট করল।
ফ্রিদার শৈশবটা অন্যরকম ছিল আর সাধারন সবার চেয়ে কিন্তু শৈশবের আনন্দ উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত না হয়ে বরঞ্চ আরো বেশী সুন্দর ভাবে শৈশব উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছিল। বাবার উৎসাহে বিভিন্ন রকম কাজ করে। বাবার বন্ধু ফার্নান্দেজের কাছে স্কেচ করা শিখে নোটবুক ভর্তি করত স্কেচ এঁকে। এছাড়া ১৯২৫ সালে, পরিবারকে সাহায্য করার জন্য স্কুলের পাশাপাশি কাজ করতে শুরু করে, ফার্নান্দেজের স্টেনোগ্রাফার হিসাবে । মায়ের ভাবনা ছিল ছেলে না থাকার । ফ্রিদা আয় করে তখন থেকে সংসারে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয়।
আঁকায় নিজস্ব প্রতিভা এবং শিল্পকে পেশা হিসেবে নেয়ার ভাবনা সে সময় ছিল না। কিন্তু দূর্ঘটনায় বিছানায় পরে থাকা সময়ে সেই স্কেচ করা এবং আঁকা সামনে চলে আসে। যা তাকে আজকের ফ্রিদায় পরিনত করেছে। আমাদের মাঝে এখনো স্বমহিমায় নিজের প্রভাব বিস্তার করছে, একজন আঁকিয়ে হিসাবে।

প্রেম এবং বিয়ে
দিয়াগোর সাথে নতুন করে পরিচয় নতুন শিল্পী স্বত্তা নিয়ে। দিয়াগোর সাথে কাজের মাধ্যমে সময় কাটানোর মাঝে দুজনের মধ্যে গভীর আকর্ষণ অনুভব হয়। তারা একে অপরের কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে। একে অপরকে অদেখায় অন্যকে মিস করে। দুজনের এক সাথে সময় কাটানোর সময়গুলো দারুণ আনন্দময় হয়ে যায় এমনটা উপলব্ধি করে।
এই সময় দিয়াগোর সাথে চলতে চলতে দিয়াগোর সাথে, প্রেমময় অনুভবে জড়ায় ফ্রিদা।
এই সময় দিয়াগো ফ্রিদার বাড়িতে আসত তার ছবি দেখার জন্য। সাধারন একটি ঘর ছবির উজ্জ্বলতায় কেমন অসাধারন হয়ে উঠেছে যা দিয়াগোকে ভীষণ ভাবে নাড়া দিত। ফ্রিদার কাজের প্রতি ওর আগ্রহ বাড়ে। সাথে ফ্রিদার প্রতিও। এক সাথে চলতে চলতে উভয়ই অনুরক্ত হয়ে পরল ভীষণ রকম একে অপরের।
রিভেরা প্রথমে ফ্রিদাকে চিনতে পারেনি, এই সেই মেয়েটি যে স্কুলে মুরাল আঁকার সময় তাকে বিরক্ত করত। কিন্তু কয়েক বছর পরে দেখা সেই ছোট মেয়েটির কর্ম দক্ষতা এবং প্রাপ্ত বয়স্ক ফ্রিদা তখন অন্য রূপে তার কাছে ধরা দেয়। রিভেরা বলে,
"ফ্রিদা ইতিমধ্যে আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে।"
অপর দিকে দিয়াগো ফ্রিদার চেয়ে অনেক বয়সে বড় আগে বিয়ে হয়েছিল তারপরও ফ্যিদার ম্যাচিউরিটির সাথে কর্মের সাথে নিজেকে অনেক বেশি সামঞ্জস্য খুঁজে পায়। দুজন দুজনের প্রতি কাজের মাঝে আকৃষ্ট হতে থাকে।
হয়তো ফ্রিদা যখন ছোট ছিল স্কুলে দিয়াগো কাজ করতে আসত তখনও লোকটার অসাধারন ছবি আঁকা এবং সে সময়ে মেক্সিকোর একজন বিখ্যাত শিল্পী হিসাবে তার জন্য ফ্রিদার মনে নিজের অজান্তে কোন ভালোবাসা তৈরি হয়েছিল। যদিও তাদের বয়সের সামঞ্জস্য ছিল না। দিয়াগো বিবাহিত ছিল। কিন্তু ভাগ্য যেন চক্রাকারে দুজনকে এক করার চরকা কাটতে লাগল। দিয়াগোর স্ত্রীর সাথে ডিভোর্স হয়ে যায়।
অদ্ভুত শিল্পস্বত্তার একজন মানুষ দেখতে যদিও কদাকার বয়সে অনেক বড় অপর দিকে ফ্রিদা ছোটখাট এবং বয়সে অনেক ছোট হওয়ার পরও তাদের মানসিক বোঝাপড়ার বয়স যেন এক জায়গায়। ফ্রিডার আগে দু একটা প্রেমের সম্পর্ক থাকার পর এবার সে বুঝতে পারে দিয়াগোর মতন একজন মানুষকেই সে পাশে চায় সঙ্গী হিসাবে। যার সাথে চলায় কাজে কথা বলায় আনন্দ। অনবদ্য আকর্ষণ অনুভব করে।
ফ্রিদা চঞ্চলমতি এবং সাথে নিজের শারীরিক দূর্বলতা ছাপিয়ে সুন্দর ভাবে জীবন যাপন করতে চায়। প্রতিষ্ঠিত করতে চায় নিজেকে।
ফ্রিদা নিজেকে পরিশীলিত হয়ে সুন্দর সঙ্গী হওয়ার প্রতিশ্রুতি করে নিজের মনে। দিয়াগোর সাথে মনের ভীষণ রকম মিল খুঁজে পায় যা অনেক বেশি মানসিক সাম্য, কাজের চিন্তা ব্যাপকতা সব কিছুর সাথে সমান সমান।
ফ্রিদা ডায়রিতে লিখে।”আমি তোমাকে বলতে চাই আমি খুব ভালো ব্যবহার করব। আমার আগে কোন প্রেমিক ছিল না। ভালোবাসার মানুষ ছিল না। এবং আমি মেক্সিকো কে খুব ভালোবাসি আগে এত ভালোবাসি নাই। এত্ত আদরে জড়িয়ে থাকি তোমার সাথে। দিয়াগো তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তুমি আমার হৃদয়। ফ্রিদা কাহলো।

দিয়াগোর সাথে প্রেমের সম্পর্কের অল্প দিনের মধ্যেই দিয়াগো ফ্রিদাকে বিয়ে করতে চাইল। ফ্রিদার বাবা তখন বেশ আর্থিক কষ্টে দিনপাত করছেন। ফ্রিদার চিকিৎসার খরচও প্রচুর তবুও তিনি বললেন। আমার মেয়ে অসুন্দর কিন্তু বুদ্ধিমতি। সে সারা জীবন অসুস্থই থাকবে এসব যদি মেনে নিতে পারো তবে আমার মেয়েকে বিয়ে করার অনুমতি তোমাকে দিচ্ছি।
হাতি আর ঘুঘুর মধ্যে বিয়ে হয়েছে বলে ফ্রিদার মা মনে করতেন। কারণ ফ্রিদা ছিল ছোটখাট দেখতে আর মাত্র বিশ বছরের একটি মেয়ে আর দিয়াগোর সে সময়ে চল্লিশের উপরে বয়স। বিশাল ওজন আর আকৃতির এক মানুষ।
চেহারা শারীরিক আকৃতি দেখে মানুষ বিচার করাটা সর্বত্র পৃথিবী জুড়ে। মেক্সিকোয় তার প্রচলন যথেষ্ট। ফ্রিদার মা দিয়াগোকে কখনো পছন্দ করেন নাই। স্বাভাবিক একটি বিয়ের সৌন্দর্য উনার চোখে পরে নাই এই অসম বয়সী দুজনের এক সাথে ঘর বাঁধার স্বপ্নের মাঝে।খুবই অপছন্দের একটি কাজ হচ্ছে এমনটাই তিনি মনে করেছেন নিয়ম মতন ভেবে।
কিন্তু তাদের দুজনের ভালোবাসা আর অনুভূতি ছিল প্রবল। ফ্রিদার জীবনের আনন্দময় সময় ছিল দিয়াগোর সাথে প্রেম এবং বিয়ে। বয়স, চেহারা মানুষের ভাবনা এ সব কিছু ছাপিয়ে নিজের পছন্দ মতন মানসিক একটি সমন্বয় পাওয়া এবং তাকে গ্রহণ করার মধ্যে ফ্রিদার কোন দ্বিধা ছিল না। বরং সে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ছিল নিজের পছন্দ, আবেগ এবং মনের সমতা পাওয়ার বিষয়ে।
শিল্পী দিয়েগো রিভেরা সে সময় একজন প্রতিভাধর শিল্পী, সব দিকেই তার গুরুত্ব অনেক। অনেক চেনাজানা তার নিজেও অনেক নামী মানুষ । ব্যাক্তিগত চরিত্রের মধ্যে দিয়াগো নারী সঙ্গ খুব পছন্দ করত। সে সময়ে বিখ্যাত হওয়ার জন্য বা তার ব্যক্তিগত আকর্ষণ, কথা বলা, চালচলন, হাস্যরস করা যে কোন কারণেই হোক নারীরাও দিয়াগোর পাশে থাকতে পছন্দ করত । দিয়াগো ছিল বহুগামী এক মানুষ।
দিয়াগো রিভেরা তিন বছর বয়সে আঁকতে শুরু করে এবং বাড়ির দেয়াল এবং আসবাব ভর্তি করে ছবি আঁকত। তাঁর বাবা-মা তাঁর আঁকাআঁকির কারণে এতটাই হতাশ হয়েছিলেন যে তারা দেয়ালে ক্যানভাস এবং চকবোর্ড লাগিয়ে রেখেছিল দেয়াল রক্ষার জন্য। অথচ দেয়ালের ছবি আঁকাটাই শেষ পর্যন্ত রিভেরোর জন্য নিজসতা এবং বিখ্যাত হওয়ার কারণ। দেয়াল অংকন, মুরাল করেই আনন্দ পেত, পেশা হিসাবে জীবিকা নির্বাহ করতো এবং বিখ্যাতও হয়েছিল।

ফ্রিদার আলাদা বৈশিষ্ট্য , বিশেষ করে আঁকার ক্ষমতা দিয়াগোকে মুগ্ধ করে, বিশেষ আকর্ষণ অনুভব করে। নারী পরিবেষ্টেত দিয়াগো সম্পর্কে জেনে শুনেই ফ্রিদা, দিয়াগোর প্রতি ঝুঁকে পরে।
ফ্রান্সে থাকাকালীন সময়ে দিয়াগো আর্টিস্ট অ্যাঞ্জেলিনা বেলোফর সাথে সম্পর্কে জড়ায় এবং তাকে বিয়ে করে। তাদের একটি ছেলে ছিল যে শিশু বয়সে মারা যায়। এরপর দিয়াগো বিয়ে করে দ্বিতীয়বার গায়াদালাপে মেরিনকে । তাদের দুটি কন্যা সন্তান ছিল। কিছুদিন পর মেক্সিকোতে ফিরে এসে ফ্রিদার সাথে সম্পর্ক হয়ে যায় দিয়াগোর। তখনোও সে বিবাহিত ছিল। মেরিনকে ডিভোর্সর পরই তাদের বিয়ে হয়।
রিভেরা এবং ফ্রিদার বিয়ে হয় ২১ ই আগস্ট ১৯২৯ সনে । দিয়াগো রিভারো ৪২ বছর এবং ফ্রিদা তখন ২২ বছর বয়স ।
মেক্সিকো ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে এই দম্পতির বিয়ের খবর প্রচার হয়। এবং মিডিয়া সেই সময়ও তাদের প্রতি চোখ রাখে। মেক্সিকোতে বিবাহের ধারাবাহিক ভাবে মিডিয়া মনোযোগের বিষয় হবে, "দিয়াগো এবং ফ্রিদা" এই হিসাবে বর্ণনা করা হয়।



বিয়ের পরই, ১৯২৯ সালের শেষের দিকে ফ্রিদা এবং রিভেরা মোরালেসের গ্রামীণ রাষ্ট্রের ক্যুরেনাকাতে চলে যায়। এ সময় কোরেস প্রাসাদের জন্য মূর্তি অঙ্কিত করার জন্য আমেরিকান রাষ্ট্রদূত ডউইট ডব্লু মোরোর দ্বারা কমিশন লাভ করে রিভারো। ১৯৩০ সালের শেষের দিকে, দুজনে আমেরিকার সানফ্রান্সিসকোতে চলে যায়। দিয়াগো রাষ্ট্রদূতের আমন্ত্রণে সেখানে মুরাল বানানোর কাজ নিয়ে। সানফ্রানসিস্কো স্টক এক্সচেঞ্জের লুনচিয়ান ক্লাব এবং ক্যালিফোর্নিয়ার স্কুল অব ফাইন আর্টসের জন্য মুরাল বানায় দিয়াগো রিভেরা।
সানফ্রান্সিসকোতে কাটানো সময়টা গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতার একটা সময় ছিল ফ্রিদার জন্য। সেখানে দিয়াগোর সেলিব্রেটি ইমেজ, ফ্রিদা খুব উপভোগ করছিল। এবং নিজেও অনেক বিখ্যাত মানুষের সংস্পর্শে আসার সুযোগ পেয়েছিল। ফ্রিদা সে সময় চার্লি চ্যাপলিন, লরেল হার্ডিদের মতন সেলিব্রেটির সাথে বন্ধু হয়েছিল। যদিও সে সময় প্রকাশ্যে নিজেকে একজন শিল্পী পরিচয় দেয়ার চেয়ে, দিয়াগো রিভেরার স্ত্রী হিসাবে পরিচিত করছিল। কিন্তু প্রথমবারের মতো চিত্রশিল্পী হিসাবে একটি প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয় ফ্রিদার আমেরিকায়। সান ফ্রান্সিসকো সোসাইটি অফ উইমেন আর্টিস্টের ষষ্ঠ বার্ষিক প্রদর্শনীতে আত্ম প্রতিকৃতির প্রথম ছবিটি প্রদর্শন করার সুযোগ আসে।



বছর ধরে আমেরিকা থাকার পর ফ্রিদা হোম সিক হয়ে পরে। মেক্সিকোয় ফিরার জন্য অস্থির হয়ে যায়। পরিচিত লোক সংস্কৃতি নিজস্ব জীবন যাপন ফ্রিদা খুব বেশি মিস করতে থাকে যদিও ফ্রিদার স্বাস্থ্যের জন্য আমেরিকার চিকিৎসা এবং চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ এবং ভালো চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ ছিল কিন্তু ফ্রিদা মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকে লম্বা সময়ের আমেরিকার জীবনে।
দিয়াগো ফিরতে চায় না। কিন্তু তাদের অর্থেরও দারুন ভাবে অভাব ছিল সে সময়। বন্ধুরা টিকেট কেটে দিলে তারা ফিরে আসে মেক্সিকো।
দিয়াগো এ সময় ডিপ্রেসনে ভুগতে শুরু করে, ওর ওজন কমতে শুরু করে। ফ্রিদা নিজের শরীরের চেয়েও দিয়াগোর শরীর নিয়ে বেশি চিন্তিত হয়ে পরে। কারণ ফ্রিদার জীবনের বেঁচে থাকার মাঝে দিয়াগোর উপস্থিতি বিশাল বিষয় ছিল। দিয়াগোর সাথে থাকার সময়টা আনন্দধারায় উচ্ছাসিত থাকত ফ্রিদা। কাজ এবং উচ্ছলতায় শারীরিক সব যন্ত্রনা ব্যাথা ভুলে উচ্ছেলতায় প্রাণ চাঞ্চলে চপলা হরিণী হয়ে উঠত।
বিয়ের পরের বছর ফ্রিদা প্রেগনেন্ট হয়। মাতৃত্বের স্বাদ পাওয়ার আকুল অপেক্ষা করতে থাকে আনন্দ নিয়ে। দিয়াগো তখন আমেরিকায় ছবির প্রর্দশনিতে ব্যস্ত। চরম সেই আশা মাতৃত্বের সাধ পাওয়ার সুযোগ ফ্রিদার হলো না। ওর বাচ্চাটি এ্যাবরশন হয়ে যায়। নতুন ধরনের কষ্ট যোগ হয় ফ্রিদার জীবনে।

চলবে……
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০২০ সকাল ১০:১৯
৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×