somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রঙিন দুনিয়া

১২ ই মার্চ, ২০২২ ভোর ৪:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১৮৫৭ সনে সম-মজুরি, কর্ম ঘণ্টা, কার্যক্ষেত্রের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকরা। আর্ন্তজাতিক নারী দিবসের প্রথম অধ্যায়টি তখন তৈরি হয়।
তাদের পরনে কি বেগুনি রঙের পোশাক ছিল তখন, মনে হয় না। সে সময়ে কালো আর সাদা পোশাকই পরিধান করত বেশি।
বেগম রোকেয়া নারী শিক্ষার জন্য ঘরে ঘরে গিয়ে মেয়েদের শিক্ষা দানের জন্য স্কুলে পাঠানোর আবেদন করতেন। অনেক পরিবার বাড়ি ঘুরে মাত্র পাঁচটি ছাত্রী পেয়েছিলেন। বেগম রোকেয়া প্রগতির জন্য পথে নেমে একা অনেক দূর হেঁটেছিলেন। উনাকে সাহায্য করার চেয়ে বিরোধীতার জন্যই বেশি মানুষ ছিল সে সময়ে।
শিক্ষা দেয়ার জন্য মেয়ে পাওয়ার জন্য ঘরে ঘরে যাওয়ার জন্য তিনি কি বেগুনি রঙ শাড়ি পরতেন। যতদূর জানি বেগম রোকেয়া সাদা শাড়ি পরতেন। এই সব রঙ কোন ব্যাপার না। ব্যাপার ছিল যে উদ্দেশ্য নিয়ে নারীরা এগিয়ে এসেছিলেন। সেই আসল বিষয়টাই অনেকে জানেন না। কিন্তু রঙের কাপড় এবং সংশ্লিষ্ট সব বস্তু গুলোর কোন অবদান নাই এই বিভিন্ন বিষয়ে দিবস পালনের সাথে।
আজকাল এক ধারনা হয়েছে, সব কিছুকে বানিজ্যিক ভিত্তিতে দেখা। যে কোন দিবস উপলক্ষে নানা রঙের কাপড়, ফুল, চকলেট, টেডি বিয়ার, হৃদয় আকৃতির কত কিছু যে আইকন তৈরি হয়েছে যা একটুও জরুরী নয়। কিন্তু এই সবই জরুরী এবং প্রাধান্য পায় বেশি, দিবসের প্রয়োজন বা কারণ বোঝার চেয়ে।
নারী দিবসে বেগুনি রঙের পোশাক পরা যেন জরুরী হয়ে গেছে এখন।
নারীরা যখন কাজের জন্য মাঠে নামেন তখন পোশাকের রঙ বাছাই করেন না। যে দুখানা কাপড় আছে তাই পরেই কাজে যান। রঙ কোন বিষয় ছিল না, কোন দিবসে।
এবার দেখছি ফেসবুক ভর্তি বেগুনি রঙের পোশাকের ছবি, নারী দিবস উপলক্ষে বেগুনী রঙের কাপড় পরা ছবির সমাহার।
একটা বিষয় ভালো লাগল নারীদের চেয়ে পুরুষরা পরিবারের নারীদের ছবি দিয়ে তাদের সম্মান জানাচ্ছেন। আশা করি তাদের ব্যাক্তিগত জীবনে পরিবারে, নারীরা সমঅধিকার পান এবং ছবিগুলো শুধু অন্যদের দেখানোর জন্য নয়। এবং যারা এমন ছবি দিয়েছেন, কিছু লিখেছেন, তাদের দেখে অন্যরাও কিছুটা শিখবেন নারীদের মর্যাদা দেওয়ার বিষয়ে।
নারীরা সুন্দর করে সেজেগুজে নিজেকে দেখাবে। এটাও এক ধরনের বানিজ্যিক চাহিদা হয়ে গেছে। নানা রকম প্রসাধন মেখে আসল চেহারা গোপন করে সুন্দর সাজে নিজেকে সাজিয়ে যত প্রচার করা হয় তত নারীর আকর্ষণ এবং প্রচার হয়। লাইক, কমেন্ট এবং ভাইরাল হয়। আজকাল খুব জনপ্রিয় হয়েছে ফটোশপ ছবি। পার্লারে না গিয়েও কিছু ক্লিকের মাধ্যমে সাজিয়ে নতুন করে ফেলা যায় মুখ।
যখন সাজ পোশাক, মেকআপে নিজেকে নানান ভঙ্গিমায় প্রচার করার অবস্থান তুঙ্গে।
তখন কতিপয় নারী আবার নিজেকে নিজের মতন করে দেখানোর জন্য আন্দোলনে মেতেছেন। তারা প্রত্যাখ্যান করেছেন রঙের প্রলেপ নিজেদের মুখে। তারা কোন প্রয়োজন দেখেন না হাত, বগল, পায়ের লোম সেভ করে মশৃণ করা, অন্যকে দেখানোর জন্য। বরং প্রাকৃতিক ভাবে এই সব কাটাকাটি না করে নিজের সময় এবং অর্থের অপচয় করা থেকে বিরত থাকতে পছন্দ করছেন।
এই নারীরা মনে করেন নারীদের এই সাজ পোশাকের পিছনে ছুটা আর কিছু নয় বিজ্ঞপনে পন্য সামগ্রীর প্রচার এবং কোন কোন ব্যাণ্ডকে মিলিয়নার, বিলিয়নার করে তোলা। আজকাল দেখা যায় যে যে কোন নায়িকা, গায়িকা একটু প্রচার পেলেই তার নামে প্রসাধনী সামগ্রি চলে আসছে বাজারে। ভক্তরা সেই ব্যাণ্ড কিনছেন পছন্দের নায়িকা গায়িকার নামে। প্রসাধনীর গুণগত মান যাই হোক। নিজের স্কিনের সাথে যাক বা না যাক ভালোবাসার মানুষের নামের জিনিসটি কিনতে হবে।
বাজারে যখন নানা রকম ব্রাণ্ডের ব্রার ভীড় তখন অনেক নারীরা ব্রা পরা ছেড়ে দিয়েছেন। স্বাভাবিক থাকার জন্য।
ব্রার সাহায্যে নিজের উন্নত বক্ষ দেখানোর জন্য তাদের কোন আগ্রহ নেই। বরং বুকে চেপে ধরে থাকা ব্রা না পরে তারা সুস্থ ভাবে শ্বাস নিতে পছন্দ করেন।
মেক আপ করার জন্য কত ধরনের জিনিস যে একটার উপর আরেকটা দিয়ে নিজের আসল চেহারার ভোল পাল্টানো যায় তার হিসাব আমার জানা নেই। তবে শুধু মুখ নয়, চোখের মনির রঙ বদল ল্যান্সের মাধ্যমে, চোখের পাপড়ি লম্বা করা আঠা দিয়ে আলগা পাপড়ি লাগিয়ে, আঙ্গুলের নখে লম্বা নখ এবং আলগা চুল পরে কি ভাবে যে নারীরা এই সব ভাড় বহন করে সারাদিন থাকেন কে জানে।
কয়েক বছর আগে একটা খবর দেখে ছিলাম। স্বামী খুব সুন্দরী এক মহিলাকে বিয়ে করার পরে যখন বাচ্চা হয় তাদের, দেখা যায় বাচ্চার চেহারা একদম অসুন্দর । তখন জানতে পারা যায় বাচ্চার চেহারার মতনই মায়ের আসল চেহারা ছিল। মা প্লাস্টিক সার্জারি করে বদলে ছিল নিজের চেহারা।
প্লাস্টিক সার্জারির কথা আসায় মনে পরল জাপানের এক মেয়ে নিজের শরীরটাকে বারবি ডলের মতন করে ফেলে ছিল প্লাস্টিক সার্জারির কাটা ছেড়া করে।
আমার চেনা এক কিশোরী মেয়ে কী সুন্দর মায়াবী চেহারার ছিল হঠাৎ তাকে অনেক দিন পরে দেখে চিনতেই পারলাম না। চোখ নাক ঠোঁট, স্তন থেকে শরীরের কত কিছু বদলে ফেলে হয়ে উঠেছে একদমই অচেনা।
এইসব অপারেশন গুলো খুবই ব্যায় বহুল কিন্তু যখন পৃথিবীতে বহু মানুষ খেতে পায় না ভালো করে একবেলা তখন নিজের শরীর, মুখ বদলে নেয়ার মতন অপ্রয়োজনীয় ব্যায় বহুল অপারশেন যারা করে তারা মনে হয় এই পৃথিবী সম্পর্কে কোন ধারনাই রাখে না নিজের জন্মগত চেহারা, শরীর নিজের পছন্দে বদলে ফেলা ছাড়া।
আসলে এত ভোগ বিলাসের কোন কি প্রয়োজন আছে আমাদের।
সেজেগুজে সুন্দরী মেয়ে হয়ে উঠে যখন ছবি দেয় তখন পুরুষরা আবার খুব পছন্দ করে উৎসাহ দেয়। জন্মগত চেহারা বদলে ফেলার জন্য নারীরাও তাই ব্যাস্ত হয়। এ যেন সামাজিক নিয়ম। মেয়ে দেখতে গেলে ফর্ষা, সুন্দরী চাওয়া হয় সে জন্য স্কিনের স্বাভাবিক সেলগুলোকে ধ্বংস করা, ব্লিচ দেয়া ক্রীম মেয়েরা ব্যবহার করে। যাতে ফর্সা ধবধবে হয়ে উঠতে পারে। স্কিনের সতেজ মেলানিনিন গুলো মরে গেলেও ক্ষতি নাই ফর্সা হয়ে পাত্র পক্ষের মন জয় তো করা যাবে।
মেয়েরাই যে শুধু সাজ, মেকাপ করার জন্য দায়ী তা কিন্তু নয়। সমাজ যেমন চায় তাদের দেখতে, তেমনই হয়ে উঠে তারা সামাজিক প্রয়োজনে। দু চারজন এর থেকে ব্যাতিক্রমি হতে পারে।
সাজ না করে বিয়ে তে বা পার্টিতে কেউ আসলে তার কিন্তু খবর আছে। নানা ভাবে তাকে উপেক্ষা, ব্যাঙ্গ শুনতে হয়।
অনেক অফিস কর্মচারীকে আজকাল নির্দেশ দেওয়া হয় পোশাক এবং মেকআপের জন্য। সঠিক ভাবে কাজ করার চেয়ে সেজে নিজেকে প্রদর্শণ করা যদি অফিসের ডেকরামে থাকে তা হলে সেখানে কেমন কাজ হয় তা নিয়ে সন্দিহান হতে হয়।
স্বাভাবিক জীবন যাপন চেহারা সুরুত আচরণ সব ভালোলাগে আমার দেখানো রঙের প্রলেপের চেয়ে এবং দেখানো জ্ঞানের চেয়ে।


ছবি অর্ন্তজাল
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০২২ ভোর ৪:১৫
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×