আর একদিন পর বসন্ত বাংলাদেশে। কত ফুল ফুটবে, পাখির গান ভালোবাসা, কেকিলের গান আহা। এখানে বসন্ত আসার অপেক্ষা আরো দুমাস চলবে। কিন্তু প্রকৃতি আনন্দ বিতরণ করছে এবার। গত কয়েকদিন ধরে বসন্তের হাওয়া বইছে। গত সপ্তাহ পুরো দুই ডিজিটের ঘরে থাকল উত্তাপ। গাছ গুলো ভুল করে পাতা মেলে দেয়ার চিন্তা করছে যেন। বসন্তের আগে আগে কিছু গাছের ডাল লাল টুকটুকে রঙ ধারন করে। কিছু হয় অসম্ভব সবুজ, হলুদ। তাদের সেই সুন্দর রঙে রঙ্গিন হয়ে উঠতে দেখছি।
সাধারনত এই সময়ে ডুবে থাকি দুই ডিজিটের ফ্রিজিং ঠান্ডায়। এবছর তেমন শীতল আবহাওয়ার সাথে দেখাই হলো না। হলো না মন মতন বরফে গড়াগড়ি করা।
বরফ গলা নদীতে উঠানে এখন অনেক নদীর প্রবাহ বইছে। হাঁটতে গেলে সতর্ক থাকতে হয় চোরা গুপ্তা বরফ শুয়ে থাকে জলের নিচে পিছলে পরে হাত পা ভাঙ্গার সম্ভাবনা। আবার কোথাও কাদায় পা আটকে যায়।
নভেম্বর থেকে গুমড়ো মুখো হয়ে থাকা আকাশও হাসছে তুমুল রোদের আলো ঝরিয়ে। মনে হয় যেন চৈত্রের খরা পরবে কদিনের মধ্যেই। ফালগুনের মিষ্টি বাতাস। শীত নেই। খুব উপভোগ করছি।
যদিও বাতাসে ভাসছে নানা রকম ভাইরাস। মানুষের মাঝে গেলেই নানা ভাবে আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছি। এ নিয়ে তিনবার এ বছরের মধ্যে ঠান্ডায় গলা বসে ঘরঘর শব্দ করছে। অথচ আমি চাইছিলাম কিছু কবিতা আবৃত্তি করতে। অথচ এমন হয়েছে গলার অবস্থা কথা বললেই লোকে হাসবে। (যে কোন অন্য রকম কিছুতে হাসাটাই তো আবার আমাদের জাতিয় স্বভাব।)
পরিবারের ছোট বড় সবাই আক্রান্ত। কিছুদিন হাসপাতাল জরুরী বিভাগ থেকে অবস্থান সব কিছু করতে হলো। এ অবস্থা শুধু আমার নয়, বন্ধু আত্মিয় পরিজন যাদের সাথে কথা হচ্ছে সবার পরিবারে এই অবস্থা চলছে।
একজন ভালো হচ্ছে আরেকজন অসুস্থ হচ্ছে। আবার ঘুরে প্রথমজন অসুস্থ্য হচ্ছে। অনেকের এখন আবার কোভিডও হচ্ছে। কেন যেন মনে হচ্ছে প্রকৃতির বদলে যাওয়ার সাথে সাথে কোভিডের বদলে যাওয়া নানা ভাইরাস প্রখর নয় কিন্তু ভিতরে ভিতরে আমাদের ক্ষয় করার চেষ্টা করছে।
আমি আবার ঔষধ নয় প্রাকিতিক নিরাময় পছন্দ করি তাই কি পুরো সারছেনা কে জানে। প্রকৃতিই বলতে পারে এসব কারসাজির কথা।
যেহেতু শীত কম এবছর তাই আশংকা করছি কীট পতঙ্গ ভয়াবহ রকম হবে এবার। এই শীতের মধ্যেও দু একদিন মশা এবং নানা পতঙ্গ উড়তে দেখেছি জানালার বাইরে। ওরা নিজেদের দক্ষতা বাড়িয়ে নিচ্ছে। তাপ মাত্রা বেশি থাকার জন্য বেঁচে আছে পোকামাকড়ের বাবা মা, লার্ভ থেকে নতুন করে জন্ম নেয়ার অপেক্ষা করতে হবে না দু মাস বসন্ত আসার পরে।
আগে ক্ষেতি জমিতে কৃষকরা কীটনাশাক ব্যবহার করত। আমরা খুব সুন্দর দাগ এবং পোকা ছাড়া টসটসে সবজী, ফল পেতাম আর বড় খুশি হয়ে খেতাম। কিন্তু কীটনাশকের বিষ ঢুকে যেত আমাদের শরীরে সেটা জানতাম না। এখন কীটনাশক ব্যবহার নিষিদ্ধ। । ফসলে থাকে পোকা বা নানা রকম দাগ কালো। যা দেখতে ভালোলাগে না আমাদের। কারন আমরা এখন মেকআপ দেয়া সাজানো চেহারা দেখে অভ্যস্থ। মেক আপের নিচে যে মেছতা বা ফ্রিকেল বা রিংকেল থাকে তা দেখতে পছন্দ করি না। যদিও বিষুদ্ধতায় কীটনাশক ব্যবহার করা ছাড়া সবজি, ফল অতুলনীয় একটু দাগ থাকার পরও কিন্তু তাদের অবহেলা করি, মনের আনন্দে। যেমন বাতিল করি সাজবিহীন সাধারন দেখতে মানুষকেও। কিন্তু সাজানো রঙ করা মুখের মতন খাবার টসটসে দাগবিহীন ফল ফসলও ফ্রেস নয় দোষ ছাড়া নয়। ভিতরের এই বিষয়গুলো ভেবেই দেখি না।
ঘরঘরে গলায় কবিতা আবৃত্তি করতে পারছি না। কিন্তু বসন্ত বাতাসে সই গো বলে গান গাইছি খোলা মাঠে বাতাসকে শুনিয়ে, রোদের আলোয় নেচে। ফুল ফুটুক বা না ফুটুক বসন্ত আবহাওয়া যখন পেয়েছি তাকে উপভোগ না করি কি ভাবে। যখন বসন্ত আসবে তখন আরো উপভোগ করব, অনন্দে।
আর যখন ঘরে আসছি, তখন শুনছি, এখানে ওখানে আক্রমণ, শুটিং, চুড়ি, ডাকাতি অপহরনের খবর। বিশ্ব জুড়ে নানারকম যুদ্ধের খবর। ঘরোয়া থেকে আর্ন্তজাতিক সবখানেই চলছে নানারকম মারামারি। টিভি চালিয়ে সুখের কোন নাটক সিনেমা, গান শুনতে, দেখতে চাইলেও নিচের ব্রেকিং নিউজে দেখাতেই থাকে কতরকম ভয়াবহ ঘটনা মানুষ ঘটাচ্ছে প্রতিদিন। এই দুইহাজার চব্বিশ সালেও মানুষ মারামারি করতেই পছন্দ করে।
রোহিংগাদের মেরে তাড়িয়ে দেয়া সেনারা এখন মুক্তিকামী রোহিঙ্গার আক্রমণে বাংলাদেশেই এসে আশ্রয় নিচ্ছে। সাথে গোলা পরছে বাংলাদেশে যা ভালোলাগছে না শুনতে।
হামাস কি করতে চেয়েছিল আর কি হচ্ছে এতগুলো মানুষের মৃত্যুর উপর দাঁড়িয়ে আছে রক্তে হাত রাঙিয়ে। আর কতকাল চলবে এই যুদ্ধ। উসকে দেয়া নেতানিয়াহুও নিজের বিজয় না দেখে থামবে না এই গো ধরে আছে।
টেনশন চলছে তাইওয়ান চীনের মধ্যে। আর ইউক্রেন দখল করার চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে রাশিয়া তিন বছর হয়ে গেল। কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান। শুধু বাস্তুহারা উদবাস্ত সাজানো সংসারের মানুষ। যাদের এই যুদ্ধের সাথে কোন লেনদেন নাই। যারা নিজেদের নিয়ে সুখি ছিল তাদের হারাতে হচ্ছে প্রিয় জন, যুদ্ধের কারণে।
এক সময় ভাবতাম এখন আমরা সভ্য সমাজে বাস করি। এইসব যুদ্ধ দেখে এখন আর তা ভাবার সুযোগ পাই না। নেতারাই যখন নিজেদের যুদ্ধবাজ প্রমাণ করায় ব্যস্ত তখন আমরা আর সুসভ্য নাগরিক হবো কিভাবে।
আমেরিকার ভোট প্রস্তুতি চলছে, এত অপরাধে অভিযুক্ত ডোনাল্ড ট্রাম্প টপাটপ জয় পেয়ে যাচ্ছে । এদিকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মনে রাখতে পারছেন না সব ঠিকঠাক এমন একটা খবর জোড় চলছে। তাতেও কিছু যায় আসে না উনি সেটা মেনে নিবেন না বরং তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে আমি ভালো আছি এই প্রমাণেই ব্যস্ত। একবার প্রেসিডেন্ট হয়েছে বয়সের কারণে হলেও অবসরে গেলে সমস্যা নাই কিন্তু শখ বড় আবারো লিডার হওয়ার।
আমেরিকার জনসংখ্যা প্রায় তেত্রিশ কোটি। তারমধ্যে এই দুইজন ছাড়া প্রেসিডেন্ট হওয়ার মতন যোগ্য প্রার্থী নাই ভাবতে অবাক লাগে। থাকলে নিশ্চয়ই তাদের নাম আসত সবার আগে ।
এই সব শোনা দেখার চেয়ে টিভি বন্ধ থাক। বাইরের আলোক উজ্জ্বল দিন দেখি। আর গান গাই বসন্ত বাতাসে সই গো বসন্ত বাতাসে তোমার বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে সখি বসন্ত বাতাসে।..........
আপনাদের কার কেমন বসন্ত আবহাওয়া এখন
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ২:৪৬