somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

স্বপ্ন নগরীর খুঁজে একটি কবিতার বই

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ভোর ৪:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আশির দশকে বইমেলা অনেকেই চিনতো না। বইপ্রেমীরাই বইমেলায় যেতেন সেই সময়। প্রতিবছর প্রায় প্রতিদিন , বইমেলায় যাওয়া হত আমার । কবি লেখকদের আড্ডায় বসতাম তাদের কথা শুনতাম । বাংলা একাডেমীর মঞ্চে আলোচনা হতো ,গান হতো । একুশে ফেব্রুয়ারির ভোর থেকে কবিতা পড়া এসব কিছুর মধ্যেই ছিলাম জড়িত ।
একুশে ফেব্রুয়ারির মঞ্চে কবিতা পড়ে একশ টাকা পেতাম, কি যে ভালো লাগতো কবিতা পড়ার জন্য টাকা পেয়ে । এটা মনে হয় আমার একটা বুদ্ধিভিত্তিক ইনকাম । কবিতা পত্রিকায় ছাপার জন্যও টাকা পেতাম।

আমার প্রথম বই বের হয় সাতাশি সনে তখন বইটি নিজেই বিক্রি করেছিলাম । এক হাজার কপি ছাপা হতো তখন বই। মেলা শেষে তিনশ কপি ছিল তার মানে সাতশ কপি মেলায় বিক্রি হয়েছিল।
আমি একজন নতুন কবি হিসেবে এতগুলো বই বিক্রি হওয়ায় খুবই আনন্দ পেয়েছিলাম । আমি সেসময় খুব প্রচার বিমুখ ছিলাম। বইমেলার স্টলে আমি একাই ছিলাম এক বিকালে। একজন এসে জিজ্ঞেস করলেন, আপনাদের প্রকাশনী থেকে নতুন কি কি বই আসছে ? আমি আমার বইয়ের নামটি ছাড়া বাকিদের নাম এবং বইয়ের নাম বলে দিলাম সাংবাদিককে ।
আমারও একটা বই আসছে এবং সাংবাদিকের হাতে ক্যামেরা ছিল হয়তো আমার ছবিও তুলে নিত । আরো ভালো প্রচার পেতাম পত্রিকার পাতায়। কিন্তু নিজের প্রচার নিজে করব এরকম কোন ধারণাই ছিল না । বরং নিজের বইয়ের নামটিও বলিনি তখন। প্রচার দিতে হয় এতে যেন আমার লজ্জা ছিল। প্রকাশক খুব আগ্রহ দেখিয়েছিলেন বইয়ে আমার ছবি ছাপাতে। সেটাও আমি করতে দেই নাই। তখন লেখকের ছবি ছাপানোর চল শুরু হয়েছিল।

পরদিন যখন বইয়ের খবর গুলো দেখলাম পত্রিকার পাতায় তখন বোকার মত চেয়ে দেখলাম, আমার বইয়ের খবর নাই। খবর আসলে মানুষ তো জানত আমার নাম। তখন মানুষ পত্রিকা পড়েই নতুন বই কিনতে আসত। না আমি নিজেই আমার প্রচার বন্ধ করে রাখলাম। আসলে প্রচার নিয়ে তখন এই ভাবনাই ছিলনা আমার মধ্যে। তারপরও যখন প্রকাশক সাতশ কপি বই বিক্রির খবর জানালেন, তখন ভালই লেগেছিল । এবং এটাও মনে আছে যে অনেকে লাইন দিয়ে থাকতেন অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য । শব্দ আমি তখন খুঁজে পেতাম না কি লিখব বইয়ে অটোগ্রাফে লিখার। আমি বলতাম আমি কেন অটোগ্রাফ দিব? বই হাতে পাঠক বলতেন, চিনি আপনাকে। কবিতা পরতে দেখেছি মঞ্চে ।
তারজন্য এই নতুন কবির লেখা কবিতার বই তারা কিনতে আসতেন। খুব অবাক হতাম। আমার এখনও ধারনা রয়ে গেছে। পাঠক আমার লেখা নিজেই খুঁজে পড়বেন। ভালোলাগা থেকে। ঢাক ঢোল বাজিয়ে প্রচার আমি তেমন করতে পারি না।
প্রথম কবিতার বই অনেক ভালোবাসার কিন্তু আমি হয়তো বই প্রকাশের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না তখন। বইটা প্রকাশিত হয়েছিল প্রকাশকের আগ্রহে।
আমার কবিতার বই সেই বইয়ের নাম ছিল স্বপ্ন নগরীর খোঁজে। একটি কবিতাও ছিল বইয়ে এই নামে।
স্বপ্ন নগরীর খোঁজে
চল, চলে যাই
এই ঘাতক যন্ত্রের শহর ছেড়ে
এই ধাতব যন্ত্রের শহর ছেড়ে
এই পাশবিকতার শহর ছেড়ে
দূরে নীলকাশের প্রান্তে

চল, চলে যাই
সবুজ বনানীর শ্যামল ছায়ায়
চল, চলে যাই
দূরে বহু দূরে কোন শান্তির নগরে

এখানে সারাক্ষণ
প্রতিরোধ প্রতিশোধ
হিংসা হানাহানি
খুন রাহাজানি

এখানে
ফিসফাস ঘুসঘাস
মৃত্যুর নীল নকশার প্রস্তুতি
বিপ্লব হরতাল
প্রতিবাদে ব্যস্ত নগরী
এখানে কোন নিরাপত্তা নেই
নিশ্চয়তা নেই আহত হই
খুন হই ধর্ষিতা হই
এখানে মৃত্যুর পরোয়ানা।

প্রতিমুহূর্তে বুলেট কেড়ে নিতে পারে জীবন
ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হতে পারে তাজা প্রাণ
তাই চল, চলে যাই
কোন স্বপ্ন নগরীর খোঁজে
কি যাবে না?
তাহলে
জীবনের ভয়কে তাড়াতে হবে
তবে তাই চল
চল তাড়িয়ে দেই
জীবনের অনিশ্চয়তা
সবুজ এই দিক থেকে ।
১২/১২ / ৮৫

এই কবিতাটি লেখা হয়েছিল সময়ের প্রয়োজনে অবস্থার মধ্যে থেকে। অনেক পত্রিকায় কবিতাটি ছাপা হয়েছিল সে সময়। অনেক পত্রিকায়, মৃত্যুর পরোয়ানা ট্রাকের চাকায় পিষ্ট এই শব্দগুলো মুছে দিয়েছিল কবিতা থেকে, পত্রিকার পাতায় ছেপেছিল যদিও ।
তাদের তো চাকরি বাঁচিয়ে কাজ করতে হতো।
আসলে স্বাধীন বাংলাদেশ অনেক রকম বিপরীত রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু থেকেই চলে এসেছে আর তার ফসল সাধারণ মানুষ অশান্তি পেয়েছে। নানা রকম ভাবে বদলে গেছে মানুষের চিন্তা ভাবনা ভিন্ন ধারায় শুরু থেকেই।

নিরানব্বই সনে আবার বইটির দ্বিতীয় মুদ্রন হয়েছিল।
তখন আমার অনুমতি ছাড়াই ছবি দিয়ে দিয়েছিল প্রকাশক।



আরেকটি কবিতা ছিল
প্রতিদিন শবমেহের

কিসের গন্ধ!
কস্তুরী
কোত্থেকে আসে?
সবুজাভ কিশোরী তোমার গায়ে ?
অরণ্য বালিকা তুমি
খেলছিলে আমলকি বনে
ধূলিমাটি দিয়ে ফুলের রেনু তুলে

এখনো অমল ধবল তুমি
জানো না, কি পঙ্কিলে ডুবে যাবে
একটু পরেই।

সরল- ঘুমে বিভোর কস্তুরি -শিশু
তুমি বিকোও
মনির দামে।

এত স্বচ্ছ -পবিত্র তুমি
টােকা না পেতেই
ঝরে যাবে যেন, পাপড়ি ফুলের।

লোভী -লোভাতর চোখ তবু
দিলো না রেহাই
সবুজাভ কস্তুরী তোমায়-

ছিঁড়ে- খুঁড়ে, লুটে-পুটে খাবে
অমল-ধবল কস্তুরী গতর
শেয়াল শকুনে ।

শবমেহের সে সময়ে একটি আলোচিত নাম। যাকে পতিতালয়ে বিক্রি করে দিয়েছিল। যার বয়স ছিল অল্প এবং তাকে মৃত পাওয়া গিয়েছিল । আসলে কবিতা সময়ের উপরে লেখা হয়। অনেক সময় হয়তো সেই কবিতা পরে আর অন্যদের কাছে গুরুত্ব থাকেনা কিন্তু সেই সময়ের প্রয়োজনে তখন এমন কবিতা হয়ে ওঠে পারিপার্শ্বিকতার অবস্থার কারণে । সেই অবস্থা নিয়ে কবিতা লেখা হয়।
যেমন একুশে ফেব্রুয়ারি- আব্দুল গাফফার চৌধুরী

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি
ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু গড়ায়ে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি
আমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি ।

সেই সময়ে সেই অনুভুতিতে লিখেছিলেন তেমনি আসাদের শার্ট
শামসুর রাহমান

গুচ্ছ গুচ্ছ রক্তকরবীর মতো কিংবা সূর্যাস্তের
জ্বলন্ত মেঘের মতো আসাদের শার্ট
উড়ছে হাওয়ায় নীলিমায় ।

বোন তার ভায়ের অম্লান শার্টে দিয়েছে লাগিয়ে
নক্ষত্রের মতো কিছু বোতাম কখনো
হৃদয়ের সোনালী তন্তুর সূক্ষতায়
বর্ষীয়সী জননী সে-শার্ট
উঠোনের রৌদ্রে দিয়েছেন মেলে কতদিন স্নেহের বিন্যাসে ।
ডালীম গাছের মৃদু ছায়া আর রোদ্দুর- শোভিত
মায়ের উঠোন ছেড়ে এখন সে-শার্ট
শহরের প্রধান সড়কে
কারখানার চিমনি-চূড়োয়
গমগমে এভেন্যুর আনাচে কানাচে
উড়ছে, উড়ছে অবিরাম
আমাদের হৃদয়ের রৌদ্র-ঝলসিত প্রতিধ্বনিময় মাঠে,
চৈতন্যের প্রতিটি মোর্চায় ।

আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখন্ড বস্ত্র মানবিক ;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা ।

মাগো, ওরা বলে
আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ

“কুমড়ো ফুলে ফুলে
নুয়ে পরেছে লতাটা,
সজনে ডাঁটায়
ভরে গেছে গাছটা,
আর আমি
ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছি।
খোকা তুই কবে আসবি ?
কবে ছুটি?”
চিঠিটা তার পকেটে ছিল
ছেঁড়া আর রক্তে ভেজা।

“মাগো, ওরা বলে
সবার কথা কেড়ে নেবে।
তোমার কোলে শুয়ে
গল্প শুনতে দেবে না।
বলো, মা,
তাই কি হয়?
তাইতো আমার দেরি হচ্ছে।
তোমার জন্যে
কথার ঝুরি নিয়ে
তবেই না বাড়ি ফিরবো।

ল‍হ্মী মা,
রাগ করো না,
মাত্রতো আর ক’টা দিন।”
“পাগল ছেলে,”
মা পড়ে আর হাসে,
“তোর ওপরে রাগ ক’রতে পারি !”
নারিকেলের চিড়ে কোটে,
উড়কি ধানের মুড়কি ভাজে,
এটা-সেটা
আর কত কী !
তার খোকা যে বাড়ি ফিরবে
ক্লান্ত খোকা।
কুমড়ো ফুল
শুকিয়ে গেছে,
ঝরে পড়েছে ডাঁটা,
পুঁই লতাটা নেতানো
“খোকা এলি ?”
ঝাপসা চোখে মা তাকায়
উঠানে উঠানে
যেখানে খোকার শব
শকুনীরা ব্যবচ্ছেদ করে।

এখন
মা’র চোখে চৈত্রের রোদ
পুরিয়ে দেয় শকুনীদের।
তারপর
দাওয়ায় বসে
মা আবার ধান ভানে,
বিন্নি ধানের খই ভাজে,
খোকা তার
কখন আসে কখন আসে!

এখন
মার চোখে শিশির-ভোর
স্নেহের রোদে ভিটে ভরেছে।
অথবা

হুলিয়া
নির্মলেন্দু গুণ
আমি যখন বাড়িতে পৌঁছলুম তখন দুপুর,
আমার চতুর্দিকে চিকচিক করছে রোদ,
শোঁ শোঁ করছে হাওয়া।
আমার শরীরের ছায়া ঘুরতে ঘুরতে ছায়াহীন
একটি রেখায় এসে দাঁড়িয়েছে৷
কেউ চিনতে পারেনি আমাকে,
ট্রেনে সিগারেট জ্বালাতে গিয়ে একজনের কাছ থেকে
আগুন চেয়ে নিয়েছিলুম, একজন মহকুমা স্টেশনে উঠেই
আমাকে জাপটে ধরতে চেয়েছিল, একজন পেছন থেকে
কাঁধে হাত রেখে চিত্কার করে উঠেছিল; আমি সবাইকে
মানুষের সমিল চেহারার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছি৷
কেউ চিনতে পারেনি আমাকে, একজন রাজনৈতিক নেতা
তিনি কমিউনিস্ট ছিলেন, মুখোমুখি বসে দূর থেকে
বারবার চেয়ে দেখলেন- কিন্তু চিনতে পারলেন না৷
বারহাট্টায় নেমেই রফিজের স্টলে চা খেয়েছি,
অথচ কী আশ্চর্য, পুনর্বার চিনি দিতে এসেও
রফিজ আমাকে চিনলো না৷
দীর্ঘ পাঁচ বছর পর পরিবর্তনহীন গ্রামে ফিরছি আমি৷
সেই একই ভাঙাপথ, একই কালোমাটির আল ধরে
গ্রামে ফেরা, আমি কতদিন পর গ্রামে ফিরছি৷
আমি যখন গ্রামে পৌঁছলুম তখন দুপুর,
আমার চতুর্দিকে চিকচিক করছে রোদ,
শোঁ-শোঁ করছে হাওয়া৷
অনেক বদলে গেছে বাড়িটা,
টিনের চাল থেকে শুরু করে পুকুরের জল,
ফুলের বাগান থেকে শুরু করে গরুর গোয়াল;
চিহ্নমাত্র শৈশবের স্মৃতি যেন নেই কোনোখানে৷
পড়ার ঘরের বারান্দায় নুয়ে-পড়া বেলিফুলের গাছ থেকে
একটি লাউডুগী উত্তপ্ত দুপুরকে তার লকলকে জিভ দেখালো৷
স্বতঃস্ফূর্ত মুখের দাড়ির মতো বাড়িটির চতুর্দিকে ঘাস, জঙ্গল,
গর্ত, আগাছার গাঢ় বন গড়ে উঠেছে অনায়াসে; যেন সবখানেই

সভ্যতাকে ব্যঙ্গ করে এখানে শাসন করছে গোঁয়ার প্রকৃতি৷
একটি শেয়াল একটি কুকুরের পাশে শুয়েছিল প্রায়,
আমাকে দেখেই পালালো একজন, একজন গন্ধ শুঁকে নিয়ে
আমাকে চিনতে চেষ্টা করলো- যেন পুলিশ-সমেত চেকার
তেজগাঁয় আমাকে চিনতে চেষ্টা করেছিল৷
হাঁটতে- হাঁটতে একটি গাছ দেখে থমকে দাঁড়ালাম,
অশোক গাছ, বাষট্টির ঝড়ে ভেঙ্গে যাওয়া অশোক,
একসময়ে কী ভীষণ ছায়া দিতো এই গাছটা;
অনায়াসে দুজন মানুষ মিশে থাকতে পারতো এর ছায়ায়৷
আমরা ভালোবাসার নামে একদিন সারারাত
এ-গাছের ছায়ায় লুকিয়ে ছিলুম৷
সেই বাসন্তী, আহা, সেই বাসন্তী এখন বিহারে,
ডাকাত স্বামীর ঘরে চার সন্তানের জননী হয়েছে৷
পুকুরের জলে শব্দ উঠলো মাছের, আবার জিভ দেখালো সাপ,
শান্ত-স্থির-বোকা গ্রামকে কাঁপিয়ে দিয়ে
একটি এরোপ্লেন তখন উড়ে গেলো পশ্চিমে৷
আমি বাড়ির পেছন থেকে দরোজায় টোকা দিয়ে
ডাকলুম, ‘মা’৷
বহুদিন যে-দরোজা খোলেনি,
বহুদিন যে দরোজায় কোন কণ্ঠস্বর ছিল না,
মরচে-পরা সেই দরোজা মুহূর্তেই ক্যাচক্যাচ শব্দ করে খুলে গেলো৷
বহুদিন চেষ্টা করেও যে গোয়েন্দা-বিভাগ আমাকে ধরতে পারেনি,

চৈত্রের উত্তপ্ত দুপুরে, অফুরন্ত হাওয়ার ভিতরে সেই আমি
কত সহজেই একটি আলিঙ্গনের কাছে বন্দী হয়ে গেলুম;
সেই আমি কত সহজেই মায়ের চোখে চোখ রেখে
একটি অবুঝ সন্তান হয়ে গেলুম৷
মা আমাকে ক্রন্দনসিক্ত একটি চুম্বনের মধ্যে
লুকিয়ে রেখে অনেক জঙ্গলের পথ অতিক্রম করে
পুকুরের জলে চাল ধুতে গেলেন; আমি ঘরের ভিতরে তাকালুম,
দেখলুম দুঘরের মাঝামাঝি যেখানে সিদ্ধিদাতা গণেশের ছবি ছিল,
সেখানে লেনিন, বাবার জমা-খরচের পাশে কার্ল মার্কস;
আলমিরার একটি ভাঙ্গা-কাঁচের অভাব পূরণ করছে
ক্রুপস্কায়ার ছেঁড়া ছবি৷
মা পুকুর থেকে ফিরছেন, সন্ধ্যায় মহকুমা শহর থেকে
ফিরবেন বাবা, তাঁর পিঠে সংসারের ব্যাগ ঝুলবে তেমনি৷
সেন বাড়ি থেকে খবর পেয়ে বৌদি আসবেন,
পুনর্বার বিয়ে করতে অনুরোধ করবেন আমাকে৷
খবর পেয়ে যশমাধব থেকে আসবে ন্যাপকর্মী ইয়াসিন,
তিন মাইল বিষ্টির পথ হেঁটে রসুলপুর থেকে আসবে আদিত্য৷
রাত্রে মারাত্মক অস্ত্র হাতে নিয়ে আমতলা থেকে আসবে আব্বাস৷
ওরা প্রত্যেকেই জিজ্ঞেস করবে ঢাকার খবর:
-আমাদের ভবিষ্যৎ কী?
-আইয়ুব খান এখন কোথায়?
–শেখ মুজিব কি ভুল করেছেন?
–আমার নামে কতদিন আর এরকম হুলিয়া ঝুলবে?
আমি কিছুই বলবো না৷
আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকা সারি সারি চোখের ভিতরে
বাংলার বিভিন্ন ভবিষ্যতকে চেয়ে চেয়ে দেখবো৷
উত্কণ্ঠিত চোখে চোখে নামবে কালো অন্ধকার, আমি চিত্কার করে
কণ্ঠ থেকে অক্ষম বাসনার জ্বালা মুছে নিয়ে বলবো:
‘আমি এসবের কিছুই জানি না,
আমি এসবের কিছুই বুঝি না৷

কবিতা গুলো এত্ত সুন্দর। এই কবিতা শুনে পড়ে বড় হওয়া। পুরো কবিতাই দিয়ে দিলাম। অনেকে হয় তো পড়েননি বা জানেন না নাম। পড়ে নেবেন।

এই সমস্ত অমর কবিতা একটা সময়ের প্রয়োজনে লেখা হয়েছিল। জাতিয় বা সমাজের প্রয়োজনে অনেক কবিতা লেখা হয়েছে হবে। শুধু প্রেম নয়। প্রেমের কবিতা নয়। প্রেমের কবিতাও বদলে যাচ্ছে প্রতিদিন সময়ের সাথে।

প্রেমের কবিতা শুধু লিখলে তো হয় না । প্রেম ও বদল হয়ে যাচ্ছে সময়ের সাথে সাথে । ষাট দশকে প্রেম ছিল চেয়ে দেখা, একটু লুকোচুরি, চিঠি লেখা। সত্তরের দশকে চিরকুট দেয়া-নেয়া। আশির দশকে হয়তো একটু রিক্সায় ঘোরাফেরা আর তা থেকে সময় সময় বদলেই যাচ্ছে। এখন কেউ আর চিঠি লেখে না। এখন প্রেমিকার জন্য সেভাবে অপেক্ষা করে না । টেক্সট, মেসেঞ্জারে প্রচুর কথা হয় সারাদিনই যোগাযোগ থাকে । এই আলোকে একটা কবিতা লিখেছিলাম ব্লুটুথ সংযোগ, যা তোমার সাথে আমাকে সবসময় সংযোগে রাখে। নতুন সময়ের কবিতা।
পুরনো দিনের কথা মনে হল স্মৃতির ভান্ডার থেকে কাব্য বইয়ের সাথে কিছু কথা বলা হলো।
আমার লেখালেখির সময়টা অনেক আগের ব্লগ বা ফেসবুকের তখন নাম গন্ধও ছিল না। ব্লগ নামে কিছু হবে কখনো এভাবে আমরা জড়িয়ে যাব। নিজের লেখা নিজেই প্রচার করব তখন জানার সুযোগই ছিল ন।
আপন মনে খাতার পাতায় তখন লিখে রাখতাম মনের ভাব কলমের কালিতে কখনো প্রচার হবে এমন কোন ভাবনা ছিল না মনে। লেখার আনন্দেই লিখতাম। তারপর যখন পত্রিকায় প্রচার হতো কি যে ভালো লাগতো সেই আনন্দ সময় গুলো মনে পড়ে গেল আজ।

হয়তো ভাববেন, পুরানো বইয়ের কথা লিখছি কেন? সব সময় নতুন বই প্রচার দিতে হয় কিন্তু বই তো কখনো পুরানো হয় না, যা লেখা হয়ে গেছে তা অনেকেরই পড়া হয়নি, অনেকের অজানা আমি তো পুরানো বই বারবার পড়ি। বই একটি সমৃদ্ধ সংগ্রহ ।

অন্যদের কবিতা গুলো, অনলাইন থেকে কপি করেছি।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:৪৬
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×