somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

ফেব্রুয়ারির শেষ সময়টা

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফেব্রুয়ারির এই শেষ সময় কয়েকটা বছর ভয়ানক সব ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশ । বিডিআর হত্যা কান্ড তার মধ্যে অন্যতম । রাত গভীরে অপেক্ষা করছিলাম, বইমেলায় খবর দেখার জন্য । তখন অনলাইন পোর্টালে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল পাওয়া যেত। আমার অন্তরীপ উপন্যাস বইটা প্রকাশ পেয়েছে তাই আগ্রহ ছিল বইমেলায়, বইটা উন্মোচনের খবর পাওয়ার জন্য । কিন্তু হঠাৎ করে দেখলাম একটা ব্রেকিং নিউজ বুঝতে পারিনি কিছুই তখন রাত প্রায় ভোর হয়ে আসছিল তাই ঘুমাতে গেলাম। কয়েক ঘন্টা পর, ঘুম থেকে উঠে জানলাম ভয়াবহ সব খবর বিডিআরের । দুদিন ধরে চলছিল সেখানে এক রহস্যময় ঘটনা কিছুই জানা যায় না বিশ্বাস অবিশ্বাস, পক্ষে বিপক্ষ নানা রকম খবর। দিনে দিনে প্রচার পায় কতজন সাহসী সন্তানকে হত্যা করেছে কিছু বিপথগামী । ড্রেনের ভিতর ফেলে দিয়েছে সাহসী সৈনিকদের মেরে। সাতান্নজন সৈনিকের লাশ । ঘরের ভিতর ঢুকে অত্যাচার, পৈশাচিক কাজকর্ম ।
কারা করতে পারে দেশে মানুষের উপর এমন অমানুষিক নির্যাতন।
তারও আগে সাতাশে ফেব্রুয়ারি দুই হাজার চারে বইমেলার সামনে সন্ধ্যাবেলা হুমায়ুন আজাদের উপরে আক্রমণ হয়। রক্তাক্ত করা হয় কোপিয়ে। একটা মানুষ জানাতে পারবেন না নিজের মতামত। নিজের ইচ্ছার কথা, বিশ্বাসের কথা একটা মানুষ স্বাধীন ভাবে বলতে পারবে না । কলমের ভাষার সাথে রক্তাক্ত আক্রমণ তাদের মাথায় খেলে, মেরে ফেলা, কোপিয়ে মারা হত্যা ।
কারা করতে পারে নিকৃষ্ট শ্রেণীর এমন কাজ কুটিল স্বার্থন্বেসী, দেশ ভালো না বাসা মানুষ ছাড়া।
তের সালে সামু ব্লগের ব্লগার রাজীব হায়দার দিয়ে শুরু হয় মুক্ত চিন্তার মানুষকে শেষ করে দেয়ার চিন্তা আরো জোড়েসরে। অনেকে এই নিজের ভাবনা প্রকাশের জন্য জীবন দিয়েছেন।
ছাব্বিশ ফেব্রুয়ারি দুই হাজার পনের বইমেলায় গিয়েছিলাম আর সাতাশ তারিখ সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের সেই জায়গাতে অভিজিৎ রায়কে চাপাতি দিয়া কোপায় সাথে উনার স্ত্রীকেও আহত করেছিল। আক্রমণ করা হলো ভরপুর মানুষের সম্মুখে। কি ভয়ানক সাহস হয়েছিল তাদের ।
অভিজিৎ রায় বিজ্ঞান, নাস্তিকতা এবং ধর্মবিশ্বাস নিয়ে লিখেতেন। একটি বই লিখেছিলন যৌথ ভাবে ড. মিজান রহমানের সাথে। ড. মিজান রহমান বিশিষ্ট গণিতজ্ঞ কার্লটন ইউনিভার্সিটি গণিতের শিক্ষক ছিলেন। উনাকেও চিনতাম। লেখালেখির সাথে জড়িয়ে ছিলেন শেষ বয়সে প্রচন্ড জ্ঞানী মানুষ । তাদের ধারণায় তারা যদি বলেন ঈশ্বর নেই অথবা বিজ্ঞানের আলোকে জীবন দর্শন ব্যাখ্যা করেন তার মানে তো এই নয় যে তাদের হত্যা করে ফেলতে হবে। তাদের ধারণা প্রচারের জন্য হামলা করতে হবে মেরে ফেলতে হবে এরকম কোন কারণ দেখি না । অভিজিৎ রায়ের বই প্রচার করার জন্য প্রকাশ করার জন্য জাগ্রতী প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে হত্যা করা হয় । প্রকাশক যে কোনো বই প্রকাশ করতে পারে পাঠক সে বই কিভাবে নিবে সেটা পাঠকের ইচ্ছা।
কিন্তু বই প্রকাশের জন্য প্রকাশক কে মেরে ফেলতে হবে, লেখককে কোপাতে হবে, এই ধরনের নিকৃষ্ট ধারণা যারা পোষণ করে তাদেরকে কি বলা যায়। যে কোন প্রয়োজনেই হোক এই সব ধ্যান ধারনা নিয়ে যারা মানুষ মেরে নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করতে চায় তাদের ভাবনা বদল করতে হবে। যুক্তি দিয়ে কথা বলতে হবে। খুন খারাবী হত্যা ঘটিয়ে নয়। বই যদি অপছন্দ হয় তা প্রচার বন্ধর জন্য আদালতে মামলা করা যায়। প্রচার বন্ধের আবেদন জানানো যায়। বইটির বিরুদ্ধে লেখালেখি করা যায় যুক্তি দিয়ে। কাউকে শেষ করার মতন রক্তারক্তি কোন সমাধান নয়।
দেশে স্বাধীনভাবে কথা বলার বই প্রকাশ করার কোন সুযোগ নেই এখন খুন হত্যা ঐরকম কিছু হচ্ছে না কিন্তু তাই বলে তাদের প্রচার-প্রচারণা থেমে আছে তা না বরং সুযোগ পেলেই যে কারোর উপর আবার হামলা করতে পারে, ভিতরে ভিতরে তারা সে প্রস্তুতি নিয়ে থাকে ।
এই যে মানুষকে হামলা করার মত মানসিকতা এটা কোনভাবেই মানবিক নয় । এটা কোন ভাবেই মানা যায় না । কারো সাথে মতানৈক্য হতে পারে তার মানে এই নয় তাকে মেরে ফেলতে হবে।
নিকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে রইল অনেক মুত্যু বাংলাদেশের ইতিহাসে। না বললে না মনে করলেও এই ঘটনাগুলো রয়ে যাবে কলঙ্কময় সময় হয়ে।
পনেরো সালে অনেক বছর পরে বইমেলায় ছিলাম। আমার বই প্রকাশ হয়নি সেবার কিন্তু প্রায় প্রতিদিন বই মেলায় যেতাম।অনেক নতুন মানুষের ভীড়ে, অনেক বদলে যাওয়া বইমেলায়, দু চারজন পরিচিত মানুষের সাথে দেখা হয়ে যেত।
বিকেল সময়টা বেশ কয়েকদিন বই মেলায় কাটিয়েছি । একদিন উত্তরা থেকে সিএনজিতে আমি আর আমার বন্ধু মিলে গিয়েছিলাম বইমেলায়। সেই প্রথম অনেক বছর পরে সিএনজিতে ঢাকার রাস্তায়। অদ্ভুত লাগছিল অনেক বছর পরে চারপাশে একটা খাঁচায় জেলখানার ভিতরে যেন বন্দি হয়ে চলছি। সাথে রাস্তাও যেন এক বন্দিশালা, দুইপাশের বড় বড় বাসের মাঝে আটকে থাকা। এছাড়া ধোঁয়া, একদম নাকে মুখে ঢুকে যাচ্ছিল। তখন মাস্ক পরার প্রচলন ছিল না। আমরা শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছিলাম ধোঁয়া থেকে বাঁচতে। বইমেলার খাবারের দোকান মাথার উপরে পলাশ ফুলের গাছ, লাল হয়েছিল ফুলে ফুলে। অনেকটা সময় বসে ছিলাম আমরা সেখানে আরো বন্ধু-বান্ধবের সাথে ।
একদিন সন্ধ্যাবেলা দেখা হয়ে যায় মুকুল নামের এক ছোট ভাইয়ের সাথে। যে বর্তমানে ইংল্যান্ডে থাকে কত বছর পরে দেখা ঠিক আমরা চিনতে পারি। বুলগেরিয়া থেকে পড়াশোনা করে ডাক্তার হয়েছে কিন্তু এখন সারাটা সময় নাটক নিয়ে আছে। দেশী এবং বিদেশী নাটকের একটা সংযোগ সে তৈরি করছে।
একদিন আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম একা পাস দিয়ে যেতে যেতে নির্মলেন্দু গুণ থেমে গেলেন, তুমি এখানে, দেশের বাইরে থাকো না নেত্রকোনার টানে দাদার সেই মায়াময় কথা, ভালো আছো, কবে আসছো। অবাক হলাম দাদা এতদিন পরে আমাকে চিনতে পারলেন, এক পলক দেখায়। আমরা খানিক কথা বললাম।
দাদার ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্য উনাকে নিয়ে অনেকে হাঁটছিল। তারা সবাই উনাকে তাড়া দিচ্ছিল। এভাবেই মাঝে মধ্যে দেখা হয়ে গেল পরিচিত অনেকের সাথে। আসলাম সানী, নিউ ইয়র্কে থাকা পূরবী বসু, জ্যাতি বসু, রেজাউদ্দিন স্ট্যালিন।
একদিন নতুন অঙ্গন বই মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হাঁটছিলাম। পেছন থেকে একটা মেয়ে দৌড়ে এসে বলল আপনাকে ডাকে। জার্নিম্যান স্টলের ভিতরে ছিল মিমি। অনেক আন্তরিকতা ভালোবাসায় অস্থির হয়ে ওঠা ওর আমাকে দেখে। এমনি অসংখ্য মানুষের সাথে হঠাৎ হঠাৎ দেখা হয়ে যেত। প্রতিদিন ঘুরতে যেতাম। আর নতুন অনেক কিছুর সংযোগ দেখতাম। পুরাতন অনেক কিছুর অভাব বোধ করতাম।
আমার বইগুলো যখন প্রকাশ হয় আমি কখনোই বইমেলায় যেতে পারিনি প্রথম বইটি প্রকাশের সময় ছাড়া । শেষ বইটি বের হয় ২০২০ সে বছর যাওয়ার প্ল্যান করলাম টিকিট কাটলাম তাও যাওয়া হলো না । করোনার ভয়াবহতা শুরু হয়ে গেল ।সেই সময় সরকারি ভাবে এদেশের মানুষকে দেশ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছিল। হঠাৎ আসা আতংকিত সময় কি করে আর দেশের দিকে পা বাড়াই কোন সাহসে।
করোনা কালীন সময়েও বইমেলা ভালোই চলেছিল প্রকাশক জানিয়েছিলেন ভালই বিক্রি হয়েছে আমার বই। আমি না থাকার পরও।

আর আমার বইমেলায় যাওয়া হয়নি। জানিনা আবার কবে যাবো হয়তো কখনো আর যাওয়াই হবে না ঠিক সময় মিলিয়ে যাওয়াটাও একটা সমস্যা । এবছর বইমেলায় সবাই বলছে বই মেলা বই বিক্রির চেয়ে সেলফি আর প্রচার-প্রচারণা বেশি চলছে ।বইমেলা হোক বই প্রকাশিত হোক । ভালো মন্দর বিচার করবে পাঠক । আমরা অনেকেই নিজেদের পাঠক তৈরি করতে পারিনি এটা আমাদেরই ব্যর্থতা । বেশিরভাগ মানুষ যে বিশ্বাস অস্তিত্ব নিয়ে থাকে তার থেকে দূরে সাহিত্য রচনা করলে যা হয়তো অনেক পাঠককে টানে না। আবার কিছু পাঠক আছেন, যারা অন্যরকম কিছু লেখা খুঁজে তারা হয়তো খুঁজে পাবেন সেই লেখক। যাদের মানসিক সমস্বয় হবে লেখা এবং পড়ার মধ্যে। আমার বইয়ের খবর কেউ পেয়ে পড়বে আমার অনুরাগী হয়ে উঠবে লেখার মাধ্যমে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:১৯
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×