পর্ব- ১
কাল নিরবধি প্রবহমান। নদীর স্রোতের মতোই তা বহমান। জলের জলত্বই যেমন তার ধর্ম, আগুনের অগ্নিত্বই যেমন তার ধর্ম ঠিক তেমনি গতিশীলতাই কালের ধর্ম। অখণ্ড সময় বা কালের সমষ্টিকেই আমরা বলি মহাকাল। এই মহাকালের ঘূর্ণাবর্তে অনেক সৃষ্টিই ম্লান হয়ে যায় কালের গর্ভে । আবার অনেক সৃষ্টিই টিকে থাকে। সৃষ্টির অমোঘ নিয়মে হারিয়ে যায় ব্যক্তিসত্ত্বা কেবল টিকে থাকে ব্যক্তির সৃষ্টিশীল কর্ম। এই জন্ম এবং হারিয়ে যাওয়ার খেলা প্রাগৈতিহাসিক কাল ধরে চলে আসছে। ক্ষণ জীবনের অধিকারী হয়ে অনেকেই ঠাঁয় করে নিয়েছে ইতিহাসের সোনার পাতায়। নিজের সৃষ্টিশীল কর্মের মাধ্যমে মহাকালের বিমূর্ত পাতায় ব্যক্তিমানসও বেঁচে থাকে শতাব্দীর পর শতাব্দী।
সংস্কৃতির মধ্য দিয়েই আমরা বেঁচে থাকি, বেঁচে থাকতে চাই। তবে সুস্থ সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে আমরা যেমন সুস্থভাবে বেঁচে থাকি তেমনি অপসংস্কৃতির মধ্য দিয়েও চলে আমাদের আত্মার তথা অস্তিত্বের নিরন্তর পীড়ন। ভাইরাস যেমন খালি চোখে দেখা যায় না তেমনি অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশও সহসাই আমরা অনুভব করতে পারি না। এই সংস্কৃতিরই এক বিরাট শাখা, সৃষ্টিশীল শাখা সাহিত্য। যেখানে মানুষ সুস্থ হওয়ার, ভালভাবে বেঁচে থাকার মন্ত্রনা পায়।
বিশ্বজোড়া সংস্কৃতির মিথস্ক্রিয়ার ঘটনা ঘটে চলছে নিত্য। সৃষ্টিশীল ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমেও সংস্কৃতির পরিবর্তন আসতে পারে, পরিবর্তন আসতে পারে সামাজিক অবকাঠামোর, নীতি-নৈতিকতার। এই পরিবর্তনের ছোঁয়া বহমান নদীর বাক পরিবর্তনের মতই। নদী যেমন কখনো সোজা পথে চলতে পারে না তেমনি সাহিত্যের ধারাও কখনো সোজা পথে চলে নি। সৃষ্টিশীল সাহিত্যিকদের পরশে কখনো কখনো সে গতিপথের পরিবর্তন হয়েছে। যাদের মাধ্যমে সাহিত্যে তথা কাব্যে নতুন ধারার সৃষ্টি হয় বা নতুন গতিপথের সঞ্চার হয় তাদের আমরা বলি প্রধান সাহিত্যিক। প্রশান্ত মৃধাও বর্তমান সময়ের অন্যতম প্রধান কথাসাহিত্যিক।
বর্তমান বাংলা কথাসাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম প্রশান্ত মৃধা।

১৯৭১ সালের ২০ নভেম্বর বাঘেরহাট জেলার কচুয়া মহকুমার অন্তর্গত মঘিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গত ২০০০ সালে ‘কুহকবিভ্রম’ গল্পগ্রন্থ দিয়ে বাংলা ছোটগল্পের ভুবনে রাজকীয়ভাবে প্রবেশ করেন। এরপর ধীর গতিতে প্রকাশ হতে থাকে তাঁর অপরাপর গল্পগ্রন্থ- ‘১৩ ও অবশিষ্ট ছয়’, ‘আরও দূর জন্ম জন্মান্তর’, ‘বইঠার টান’, ‘করুণার পরিজন’, ‘মিঠে আশার অন্ধকার’ প্রভৃতি।
শিশুতোষ গল্প বা কিশোর গল্প লেখার ক্ষেত্রেও তিনি মোটেও পিছিয়ে নন। প্রমথ চৌধুরী তাঁর 'সাহিত্যে খেলা' প্রবন্ধে জগৎ বিখ্যাত ভাস্কর রোদ্যার সৃষ্টিশীলতা সম্পর্কে বলেছিলেন- ‘‘যিনি গড়তে জানেন, তিনি শিবও গড়তে পারেন, বাঁদরও গড়তে পারেন। আমার কেন যেন মনে হয় আজ এই কথাটি সুপ্রিয় কথাসাহিত্যিক প্রশান্ত মৃধার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কেননা গল্প রচনায় তিনি যেমন সিদ্ধহসস্থ তেমনি সিদ্ধহস্ত উপন্যাস বা প্রবন্ধ রচনাতেও।
হাঁটি হাঁটি পা পা করে বাংলা সাহিত্যে তাঁর প্রবেশ। নিজের মেধা, প্রজ্ঞা আর নিটোল সৃষ্টিশীলতা দিয়েই তিনি বর্তমানে বাংলা সাহিত্যে অন্যতম প্রধান স্থান দখল করে নিয়েছেন। তাঁর গল্পের বর্ণনাভঙ্গিতে রয়েছে নিজস্ব স্টাইল। ভাষার ক্ষেত্রেও রয়েছে অবিশ্বাস্য সরলীকরণ। প্রতিটি বাক্যবিন্যাসে তাঁর মুন্সিয়ানা চোখে পড়ার মতো।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



