ছেলেবেলায় বড় হবার বাসনা প্রচন্ডভাবে কাজ করতো। মনে হত, বড় হওয়া মানে মাগরিবের আজানের আগে ঘরে ফেরার তাড়া থাকবে না, সন্ধ্যায় পড়তে বসা লাগবে না, রাত দশটার ভেতর ঘুমোতে যেতে হবে না এবং সবচে’ বড় ব্যাপার হল, বাবা-মায়ের বাঁধা-নিষেধ-নিয়ম বড় হলে ততটা প্রভাব ফেলবে না। যত খুশী খেলনা গাড়ি, পিস্তল কেনা যাবে। এদিক যাওয়া যাবে না, ঐদিক যাওয়া যাবে না, দূরে যাওয়া যাবে না, এমনটা শুনতে হবে না।
এখন সারা রাত জাগলেও বা সারাদিন বাইরে কাটালেও কেউ কিছুই বলার নেই। এখন আর কিছু কিনতে ইচ্ছে করে না। বড় হয়ে গেছি বোধহয়।
বাবা মারা গেছেন সেই ‘৯৮ তে। মা বেঁচে আছেন বটবৃক্ষের ছায়ার মতই। মনের ভেতর অজানা আশংকা কাজ করে এখন। বাসা থেকে ফোন আসলেই চমকে উঠি। বড় হওয়ার কুফল বোধহয় এগুলো। দুশ্চিন্তা, কঠিন ভাবনা মনে ঘোরে।
কচ্ছপের মত শক্ত আবরণ নিয়ে ঘুরি। ভেতরে প্রচন্ড ঝড় চলে, তা মাঝে মধ্যে নিজেও টের পাই না। রাতে ঘুমানোর আগে মনে মনে ভাবি আর বলি, “আমি আর বড় হতে চাই না। এই জটিল বাস্তবতা থেকে মুক্তি চাই। বিকেলে কাদামাটি মেখে মায়ের ধমক খেতে চাই। বিছানায় শুয়ে বাবার মশারি টানানো দেখতে চাই। আবার বাবা মায়ের মাঝে ঘুমোতে চাই।”