আমার বব্ধু রাসেল। যখনকার কথা বলছি তখন ঘরে ঘরে কম্পিউটার অত ছিল না বিশেষ করে যে এলাকায় আমার আস্তানা।
সবচেয়ে বড় খুশি এইজন্য ছিলাম যে, কম্পিউটার আসাতে চিলেকোঠায় রাসেলের নতুন আস্তানা হলো। আমাদের অবাধে আড্ডা দেয়ার নতুন জায়গা হলো। সপ্তাহে একবার দুইবার ওর ওখানে আড্ডা আর বাড়তি বিনোদন কম্পিউটারে রবিন্দ্র, নজরুল থেকে শুরু করে সাকিরা, জেলো, পিটবুল, ব্রিটনী, লতা, কিশোর, আর ডি বর্মন, এ আর রাহমান, আদনান সামি, আশা, সুমন, অঞ্জন, নচিকেতা আরো কত নামি-দামি গুণী জন কেউ বাদ যেতো না। সব চলত। তাস, কম্পিউটারে দাবা সংগে টমেটো মরিচ দিয়ে ঝাল করে মুড়ি আর কোক। এমনও রাত গেছে সারা রাইত আড্ডা দিতে দিতে ফর্সা ভোর দেখেছি চোখ ঢলে ঢলে। আহ! কি দিন ছিল। এখনো মনে হলে চোখে জল জমে।
তো একবার কি হলো আমরা চার পাঁচ বন্ধু মিলে টাইটানিক ছবি দেখতে রাসেলের আস্তানায় গেলাম। এই বন্ধুদের মাঝে একজন আবার দুই দিন তাবলীগ জামাতে সময় দিয়ে এসেছে। যাই হোক সবাই ওর বিছানার উপরে গাদাগাদি হয়ে বসে ছবি দেখছি। আর মাঝেমাঝে এই দৃশ্য সেই দৃশ্য দেখে হাসাহাসি নানান জোকস কমেন্টস করছি। আমি বিরক্তির সংগে বললাম " বাল! এমনে ছবি দেখা হয়? সুমন বলল, তা কেমনে হয় শুনি? ছবি বোদ্ধা!
আমি কইলাম হালারপুত! এই যে পায়রা কইতরের মতন তুই বাক-বাকুম করেই যাচ্ছিস। এসব বন্ধ কর ছবি শেষ হোক তারপর কথা আড্ডা হবে প্লিজ চুপ কর।
রাসেলের কড়া নির্দেশ বিড়ি গাঞ্জা খাইলে বাইরে এখানে নট এলাউড! তো ছবি চলছে আমরা সকলে সুন্দরী সেক্সি কেট উইন্সলেটকে যার যার নিজের মতন ভেবে চলেছি। মোস্তফা মন্তব্য করেই বসল, শালায় মাল একখান!
রাসেল বলে বসল, খাড়ায় গেছে ? সকলে একসাথে হাসি। মোস্তফার মুখটা লজ্জায় লাল দেশি টমেটো! এখনো মনে হলে হাসি পায়।
যেই কেটের ছবি আঁকার দৃশ্য এলো দেখি শাহিন বলছে একটু টেনে দে। সবাই এক সাথে তাকালাম। শাহিন যা বুঝবার বুঝে গেল। সিনেমা এগুচ্ছে। যেই গাড়ির দৃশ্য এলো অমনি রাজু চিল্লান দিয়া কইল " কোপা মামা কোপা! একদম সেলাই এর কাম কইরা দে ! "
শাহিন আবার কইল একটু টেনে দে। এইবার আমি উঠে পজ দিলাম। তারপর চেয়ার টেনে কম্পিউটার পিছনে রেখে সামনে বসলাম। সবাই এক লগে চিল্লান দিল যেন কারেন্ট চলে গেছে! সে সময় খুব লোডশেডিং হতো।
সে যাই হোক আমি শাহিনের দিকে তাকিয়ে বললাম " এই তোরে কে লইয়া আইছে? শাহিন কইল, মোস্তাফা। আমি কইলাম দুইটা বাইরে যা! ছবি দেখা লাগব না। সবাই কইল বেশী হইয়া গেল না। আমি এবার লেকচার মারা শুরু করলাম।
সিনেমা কি? ইহা একটি বাণিজ্য! এর সাথে বহু মানুষের পেট জড়িত মেধা জড়িত। এখন টাইটানিক জাহাজ কেমনে ডুবে গেছে জানি সকলে। তার উপর এই ছবি। সেখানে রোমান্স আনা হয়েছে কারণ ইহা বানিজ্যিক ছবি। আর রোমান্সে সেক্স থাকবে না তা কি হয়!
সেক্স জীবনের বিশাল ফ্যাক্টর ! জুইত মতো এই কাম করতে না পারলে বউ লাত্থি দিয়া খাটের থেকে নীচে ফেলে দিবে অথবা কোন তাগড়া ষাঁড় এর লগে তলে তলে টেম্পু চালাবে।
মোস্তফা, শাহিন রে কইলাম এর উপর প্রচুর ডকোমেন্ট্রি ফিল্ম আছে পুস্তক আছে ঐসব দেখ আর পড় যেয়ে। এহন টাইটানিক দেখা লাগব না। যা বাইরে যা।বালের কথা খালি টেনে দে টেনে দে ছবি দেখার মুডটাই মাটি কইরা দিল। মনে হয় দুগ্ধ শিশু বা মাতা পিতার সনে ছবি দেখতে আইছি!
রাসেল বলল, যা তো মামা ছাদে যাইয়া দুইটা মাইরা আয় মানে বিড়িতে টান। কুল হ। আমি কইলাম ওকে, তোরা দেখ আমি যাই।টেনে ছিঁড়ে যেমনে খুশী অমনে। আমি পরে দেখে নিব।
সবাই কইল দূর ব্যাটা, এত মাইন্ড করলে চলে। আয়তো বাছা বুকে আয়। আর প্লিজ ছবিটা চালু কর। সে যাই হোক সব রাগ গোসসা পানি হয়ে গেল। ছবি দেখলাম। ছবি শেষে অনেক রাত অবদি আড্ডা চলল। কি ভাবছেন মজমা খতম!
না, মেরে দোস্ত পিকচার আভি নয়া হ্যায়! ছয় মাস পর শাহিনের বাসায় কম্পিউটার এলো। পরে আমরা যেই দোকান থেকে ডিভিডি ক্যাসেট নেই সেখান থেকে খবর পেলাম শাহিন সাহেব মাঝেমধ্যে তিন নিয়া দেখে ! তখন বলে না, টেনে দে!
রাসেল এখন ইউ এস এ এসাইলাম করে আছে ওর ছোট ভাইকে দিন দুপুরে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে সামান্য তুচ্ছ কারণে। টিভি তে রিপোর্ট ও দেখানো হয়েছে কিন্তু আসামি দের কেউ ধরা পরেনি উল্টো জামিন নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওদের হুমকি ধমকির কারণে মামলার কিছুই হয়নি। ছয় মাস ওরা গ্রামের বাড়ি ছিল। এখন সে মামলা শেষ! কে লড়বে? কে চালাবে? ওর মা একা !
আমরা বন্ধুরা এখন যে যার মতন ব্যস্ত ! কেউ আর সাহস করি না যে এসব ক্যাডার রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে যাই। ইহাই জীবন ইহাই বাস্তব চরম সত্য! দুঃখিত! রাসেল পারলে মাফ করে দিছ। ভালো থাকিছ। আমি আবারও আরেকটা ফর্সা ভোর দেখার আশায় চোখ ঢলে যাই....
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০২১ ভোর ৪:১০