somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আহ ! কি টেইস্ট !

০৬ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ৭:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ম্যাঁও , ছবি নেট ।

গেরামে মাঝেমধ্যে যাওয়া হয় এতে করে মনে হয় আয়ু বাড়ে। শহরের মতন ডিজেল পোড়া হাওয়া নেই। মানুষের হইচই ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ অত নেই। যানবাহনের হর্ণ নেই ! এক এই হর্ণের চোদনে কর্ণের রফাদফা ! এরপর তো আছে নেতাদের ভাষণ ! পাতি নেতাদের উৎপাত ! উফফ ! শহুরে জীবন পুরা জ্বালাময়ী। এসব থেকে বাঁচতে দুই তিন দিনের জন্য গ্রামে থাকি যদিও গ্রাম না উহাকে উপশহর বলা চলে।

সে যাই হোক বিকালের মরা রোদে বাসা থেকে বের হলাম গ্রামের মাথায় একটা মুদি দোকান। নাম দাম্মাম স্টোর। দীর্ঘদিন আরব থাকার ফসল এই দোকান। সেখানে চা বিস্কুট থেকে সব আছে। টিভি আছে ওতে হিন্দি গান চলে ! গেল সপ্তাহে দেখেছি বিকালে ভালো মানুষ জমায়েত হয়। ক্রিকেট খেলার সময় পুরা হইচই বেঁচাকেনা বাড়ে। চা, সিগারেট এইসব আর কি ! মানে একটা অন্যরকম ভালো লাগা। সবচেয়ে বড় কথা সবাই আন্তরিক। যা শহরে মিস করি। শহরে বেশির ভাগ ফেইক সম্পর্ক ! হাই হ্যালো দরকার ছাড়া কেউ কারো কাছে যায়না তেমন। খোঁয়াড় বন্দী প্রাণীর মতন। বিশ্রী রোবটিক জীবন !

সে যাই হোক দূরে নদী। যার বুক দিয়ে ভটভট শব্দ করে ট্রলার যায়। এক সময় প্রায়ই নদীতে গোসল করতাম। এখন নদীর পানি প্রায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দুই পাড়ে ইটের খোলা আর একটা সিমেন্ট কারখানা হওয়াতে । একদিকে যেমন গ্রামের মানুষের কর্মসংস্থান হইছে অন্য দিকে লোকসান হইছে ! এই যে নদীতে মাছ নেই বললেই চলে ! নদীর পানি মুখে দেয়ার চেয়ে বিষ গুলিয়ে খাওয়া ভালো ! এদিকে সরকার প্রশাসনের কারো কোন মাথা ব্যথা নাই তাজ্জব ! অবশ্য টাকার বান্ডিল পাইলে সব হালায় চুপ ! ইহা এই দেশে প্রতিষ্ঠিত সত্য !

সে যাই হোক আমি যাওয়ার পর দেখি দু একজন পরিচিত মুখ বসে আছে। আদাব সালাম বিনিময়ের পর একজন কইল " এই ভাইয়েরে চা দাও আর লগে কাচ্চা বিস্কুট ! " আমি আরে না না বলে নিষেধ করলাম। কারণ বললাম বিকালে চা খেলে রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। এরচেয়ে ভালো আপনারা নেন আমি বসি। একজন বলে বসল, দূর মিয়া ! খালি মুখে বইবা ! আমগো একটা ইজ্জত আছে না ! শহরে কে এমন কইরা কইব ?

টিভিতে দেখি খবর হচ্ছে । ইদানীং সবাই খবরে ঢুকে গেছে। বিষয় রাশিয়া ইউক্রেন। খবরে দেখাচ্ছে পোল্যান্ড সীমান্তে লাখ লাখ মানুষ ! এক বড় ভাই তা দেইখা কইল, " আহ ! মানুষ মানুষরে এমন কষ্ট দেয় ? নিজের গুছানো সংসার ফেলে ছন্নছাড়া জীবন বেছে নিচ্ছে ! "

আমি কইলাম কি আর করা এর নাম যুদ্ধ ! এর মধ্যে পরিচিত বন্ধু বান্ধব চলে আসছে  মানে এখন পুরা ভরা মজলিস ! একজন কইল, " আহ !  দাদার কাছে হুনছি ৭১ এ এমন কইরা মানুষ ঘর-সংসার, পোষা প্রাণী ছাইড়া পালাইছে ! এখন চক্ষে দেখতাছি। দুনিয়াডার কি যে হইয়া গেলো ? "

এসব কথার মাঝে গ্রামের সন্ধ্যা নেমে আসল। দূরের গ্রামের বাতি গুলিকে যেন কোন জ্বল জ্বল করা নক্ষত্র মনে হতে লাগলো । পাশে জমিন থেকে ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ ভেসে আসছে। শহরে এসব কি আছে ? জোনাক জ্বলা সন্ধ্যা কতদিন দেখি না ! যাক এখন সবাই যার যার মতন ব্যাখ্যা দিয়ে যাচ্ছে। একজন মজার ছলে কইয়া বসল আমরিকান হালার পুতেরা কবে রোহিঙ্গা অইব ? তাইলে দুই চাইরটারে আমার ক্ষেতে লাগায় দিতাম ! সবাই উহা শুনে সে কি হাসি !

আমি কইলাম, আচ্ছা মুড়ি চানাচুর মাখা হলে ভালো হয় । একজন কইল চায়ের পয়সা আমার । আমি কইলাম ডান। আড্ডা জমে গেছে। এমন সময় একজন ক্রেতা দোকানে আসলো। সদাই চাইল ১০ টাকার তেল, পাঁচটা পিয়াজ আর পাঁচশ গ্রাম মসুর ডাল। আমি অবাক হইলাম !

দোকানের ককর্মচারী একটা ছোট পলিথিনে তেল আর অন্য পলিথিন ব্যাগে ডাল এবং পিয়াজ দিয়ে দিল। আমি খুব আগ্রহ নিয়ে দেখলাম ছোট পলিথিনের ভেতর সোয়াবিন তেল ! শহরে কি হয় এমন লেনদেন ? দেখা হয় নাই ।
আমার বাল্যবন্ধু কাস্টমার যাওয়ার পর কইল, এই বাল ! যুদ্ধ হইলেই সব কিছুর দাম বাড়ে ! সামনে আইতাছে রোজা ! আবার বাড়বে একচোট ! পাবলিক কি ঘাস খেয়ে থাকবে ? আমি কইলাম উন্নয়ন খাইবো ! 

তয় একটা জিনিস এর দাম কমছে ? আমার বাল্যবন্ধু কইল কিসের ? আমি কইলাম, সোনার ! সবাই সে কি হাসি ! আমি কইলাম হাসির কথা না। পেপারে দেইখেন ভরী প্রতি ৩/৪ হাজার কমছে। কইয়াই বন্ধুরে খোঁচা দিলাম সোনার দাম কিন্তু বাজারে কম বিয়ার চান্স নিতে পারছ ! উলটা আমারে কইল " তুই কর আগে । " আমি কইলাম শীত গেছেগা এহন দরকার নাই। ফ্যান চলে মাথার উপরে যা গরম ! বন্ধু কইল এমন কইরা একসময় আসল সোনার অভিশাপে মরবা ! আমি কইলাম ঘটনা হাছা ! অন্যরা হাসছে আর মজা নিচ্ছে । মাঝারি সাইজের একটা বোলে মুড়ি, চানাচুর, সরিষার তেল, কাঁচা মরিচ, ধনিয়া পাতা, পিয়াজ কুচি, টমেটো আর সামান্য আদা দিয়ে মাখানো হইছে। আহ ! কি টেইস্ট !

এমন সময় আবার খবর এসে গেছে টিভিতে। যিনি খবর পড়ছেন তার বয়স আনুমানিক প্রায় ২৭/২৮ বছর হবে। রুপ যৌবন ঠিকড়ে পড়ছে ! এত কড়া মেক আপ আর শাড়িটা একটা কায়দা করে ব্লাউজের উপরে পড়া। মানে একটা খাই খাই ভাব ! এসব অবশ্য আমার ভেতরকার কথা। সবাই খবর গিলছে লগে ঐ সুন্দরী খবর পাঠিকা কে তা চোখ মুখ দেখে বেশ বুঝা যায় । আসলে সত্যি বলতে কি এখন টিভির চ্যানেল মালিক সবাই ব্যবসা ভালো জানে আর নারী কে কিভাবে সে ব্যবসার হাতিয়ার বানাবে সে কৌশল আরও ভালো জানে !

মশার কয়েল ধরানো হয়েছে। ইদানীং মশার উৎপাত বেড়ে গেছে। হাগতে গেলেও পশ্চাৎপদে কামড় দেয়। বড় হারামি ! গরীব রে সব হালায় চোদে ! যাওনা হিম্মত থাকলে রাজার বাড়ি ! আবার ঘুরেফিরে সেই রাশিয়া ইউক্রেন ! একজন কইল রাশিয়া কয়দিন লড়বো ? সব যেমনে একলা কইরা দিতাছে ?

আমি কইলাম পুতিন এর এখন পিছনে যাবার রাস্তা নাই হয় মরবে নয় মারবে ? আর ওসব নিষেধাজ্ঞা আসবে সে উহা জানে। ঘটনা হইলো তলেতলে যদি ম্যাঁও মিয়ারা মানে চীনারা আর আরবরা আশকারা দেয় তাইলে পুতিন আরও খেলবে ! আসলে এখানে আগুন নিয়ে খেলা হচ্ছে ন্যাটো আর মার্কিনী চাইছেনা এ আগুনে নিজেদের ঘর পুড়ে যাক ! তাই যত পারছে অর্থনৈতিক চাপ দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে এসব নিষেধাজ্ঞা দিয়ে। একজন কইল দুনিয়াডা শেষ অইয়া যাইব।এমন সময় আমার পাশে বসা জনৈক একজন ঠাস কইরা থাপ্পড় মাইরা কইল,  " বালের কয়েল ধরাইছত ব্যাডা ? মশা কেমনে কামড়ায় ?

তারপর এক সময় এ কথা সে কথা বলার পর আলোচনায় একটা ভাটা নেমে এলো। টিভির চ্যানেল ঘুরিয়ে দেয়া হলো এখন ভারতীয় একটা গানের চ্যানেল চলছে যাতে নায়িকার সেক্সি নাচ চলছে আর গান বাজছে হায় গরমি ! আস্তে আস্তে সবাই যে যার মতন উঠে আসলাম। আমার বাল্যবন্ধু ফিসফিস করে বলছে মামা ! গানের নায়িকা টা কে ? আমি কইলাম নায়িকা নাতো আইটেম গার্ল নুরাহ ফতেহ । বাল্যবন্ধুটি কইল, মামা ! গানের একটা নাচের স্টেপ দেখছত পুরা ঠাপাঠাপি ! দুইজনে তখন জোরে কইলাম,  হায় গরমি !



সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ৭:৩৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ, পাকিস্তানের ধর্মীয় জংগীবাদ ভারতের মুসলমানদের সাহায্য করছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৪০



এনসিপির জল্লাদরা, ফেইসবুক জেনারেলরা ও ৫/১০ জন ব্লগার মিলে ৭ সিষ্টার্সকে আলাদা করে দিবে বলে চীৎকার দিয়ে ভারতের মানুষজনকে অবজ্ঞা ও বিরক্ত করার ফলে ভারতের ২২ কোটী... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাস্থানের বিছিস্ট এনছিপি নেতা হাবদাল্লা।ভারতের সিস্টার না হলেও নিজেদের সিস্টারদের ..।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ২:১০



আপাতত সেভেন সিস্টার পৃথক না করতে পারলেও । সিক্স সিস্টার অত্যন্ত সফলতার সাথে সার্জারি করে পৃথক করে ফেলেছেন । এই কারণে আপনারা সবাই রাজুতে চলে আসুন। উনি অজাতিদের উদ্দেশ্যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গৃহবধূ থেকে প্রধানমন্ত্রী; অভিভাবক শূন্য হলো বাংলাদেশ |

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১২


খালেদা জিয়া। ইস্পাতসম বজ্রকঠিন দেশপ্রেমের নাম খালেদা জিয়া। যিনি ভালো বেসেছেন দেশকে, নিজের জীবনের চেয়েও দেশকে ভালো বেসেছেন। দেশের বাহিরে যার নেই কোন লুকানো সম্পদ। নেই বাড়ি, গাড়ি অথবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৪



ইয়ে মানে বছর শেষ। ২০২৫ সাল বিদায় নিচ্ছে । তা আপনার কাছে ২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি ?


আমার কাছে সেরা মশকরা হচ্ছে- এনসিপির জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করা।

আরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেগম খালেদা জিয়াঃ এক দৃঢ়চেতা, সাহসী অধ্যায়ের সমাপ্তি

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৭



প্রিয় ব্লগার,
আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়া আর আমাদের মাঝে নেই, ইন্না লিল্লাহি ওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

×