somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রতিবাদের মিছিলে আমি এক আগন্তুক(এক আজব কিসিমের প্রেমের গল্প)

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৫:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্যে ৪০ বছরের হাজার হাজার মানুষের মনের গহীনে জমা হওয়া ক্ষোভ সেদিন প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোবে রুপ নিয়েছিল।আর আমি আগন্তুক হয়ে সে মিছিলে সামিল হই।অজস্র অচেনা প্রতিবাদী মুখের ভিড়ে তোমাকে খুঁজে বেড়িয়েছিলাম,অনেক্ষন।অতঃপর তুমি এসে দাঁড়ালে,আমার সামনে। তীব্র অলোকছটা যেমন আমাদের চোখের উপর পড়লে আমরা খানিকের জন্যে অন্ধকার দেখি আমার মনে হলো ঠিক তেমনি তোমার মুখোমুখি হয়ে আমিও যেন চোখে সরষে ফুল দেখেছিলাম।না আমি তোমার রুপে আমার দৃষ্টি হারাইনি,আমি তোমার নীল কামিজের লেবাসে আর কপালের কালো টিপেও মুগ্ধ হইনি,আমি নিজেকে হারিয়েছিলাম তোমার বুকের ভেতরে লালন করা ভীশন সাহসী নারীকে।সেই নারী যে কিনা পারিবারিক সব বঞ্চনার ভয়কে উপেক্ষা করে গন মানুষের মিছিলে যোগ দেয়ার দূর্লভ সাহস বুকে ধারন করে।
আমারও তখন চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছিলো-
পরিচয়ে আমি বাঙ্গালী-
আমার আছে ইতিহাস গর্বের
কখনোই আমি ভয় করি নাকো উদ্দত কোনো খর্গের
শত্রুর সাথে লড়াই করেছি,স্বপ্নের সাথে বাস
অস্ত্রেও শান দিয়েছি যেমন,শষ্য করেছি চাষ
একই হাতে বাজিয়েছি বাঁশি গলায় পরেছি ফাঁস
আপোষ করিনি কখনোই আমি এই হলো ইতিহাস.........

আমি পারিনি তোমাদের সেই মিছিলে শ্লোগান দিতে কিংবা রাস্তায় বসে হাত উচিয়ে নিজের উপস্থিতি আর সমর্থন জানাতে।আমার চোখ বার বার তোমার দিকে এসে আটকে যাচ্ছিলো।
আমি আর দশটা সাধারন মানুষের মতো মসজিদের আজানের সাথে সাথে মিছিল থেকে সরে পড়লাম নামাজ পড়বো বলে।নামাজ শেষে যখন আবার তোমাকে খুঁজে পেতে চাইলাম বিদায় জানাবার জন্যে তখন আর তোমাকে খুঁজে পেলাম না তুমি মিছিলে মিশে গিয়েছিলে।
আমি তোমাকে সেই মিছিলেই হারিয়ে ফেলেছি।আর কখনোই খুঁজে পাইনি।হয়তো পাবো না কোনোদিনও।
হেলাল হাফিজের সেই কবিতাটা বার বার মনে হচ্ছিলো......

এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
মিছিলের সব হাত
কন্ঠ
পা এক নয় ।
সেখানে সংসারী থাকে, সংসার বিরাগী থাকে,
কেউ আসে রাজপথে সাজাতে সংসার ।
কেউ আসে জ্বালিয়ে বা জ্বালাতে সংসার
শাশ্বত শান্তির যারা তারাও যুদ্ধে আসে
অবশ্য আসতে হয় মাঝে মধ্যে
অস্তিত্বের প্রগাঢ় আহ্বানে,
কেউ আবার যুদ্ধবাজ হয়ে যায় মোহরের প্রিয় প্রলোভনে
কোনো কোনো প্রেম আছে প্রেমিককে খুনী হতে হয়.....................
আমি হতাশ মনে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম কিন্তু তখনই মুঠোফোনে তোমার নাম্বার ভেসে উঠলো।তুমি আমাকে আহবান জানালে তোমার সাথে রাজপথে ঘুরে বেড়াবার জন্যে।আমিও নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না।আমিও তোমার সাথে হেঁটে বেড়ালোম মিছিলে মিছিলে পরিপূর্ণ প্রেসক্লাব প্রঙ্গনের সামনের রাজপথে।
তারপর শত বছরের পুরোনো এক হাসপাতালের নির্জন করিডরে তুমি আর তোমার সহযোদ্ধাদের সাথে একান্ত কিছু আলোচনা শেষে তোমাকে নিয়ে একসাথে রওনা দিলাম তোমার বাড়ীর দিকে।
পথে যেতে যেতে বার বার ইচ্ছে করছিলো তোমার হাতটা ধরতে।কিন্তু সাহসের অভাবে আমার আর তোমার হাত ধরাটা হলো না।
আমি একটু কৌশলে তোমাকে জিজ্ঞাস করলাম আমার প্রতি তোমার ভালোলাগাকে শতাংশে প্রকাশ করবার জন্যে।
তুমি যে উত্তর দিলে তাতে আমি পরিষ্কার বুঝতে পারলাম আমার জন্যে তোমার কোনো ভালো লাগা নেই।নেই কোনো মনের টান।
এরপর আমাকেই বুকের সবটুকু সাহস জড় করে তোমাকে বলতে বাধ্য হলাম-আমি আর তোমার উত্তরের জন্যে অপেক্ষা করতে পারছি না।জানি আমি একটু অধৈর্যের পরিচয় দিয়েছিলাম।কিন্তু তুমি যখন বল্লে যে তুমি আমাকে ভালোবাসোনি আর সেটাই তোমার কাছে এখন সস্তির ব্যাপার তখন আমার মনে আর কোনো দুঃখবোধ অবশিষ্ট রইলো না......
আমিও তোমাকে শেষবারের মতো জানান দিলাম-
I don't believe in taking right decision I take decisions and make them right.
আজ থেকে আবার আমি আমার অগোছালো জীবনটাকে নিয়ে আগের মতো ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম।তুমিও তোমার শৌল্পিক জীবন নিয়ে ব্যাস্ত থাকবে।তবুও মনের ভেতরে চাপা কষ্টগুলো একটু একটু করে গভীর রাতে আমার অবস অনুভূতির দেয়ালে পরিবেষ্টিত বদ্ধ কামরায় একা একা পরিচিত কিছু কবিতার লাইনের মধ্যে দিয়ে সুখ খুঁজে নিতে চাইবে.........

আমাকে দুঃখের শ্লোক কে শোনাবে?
কে দেখাবে আমাকে দুঃখের চিহ্ন কী এমন,
দুঃখ তো আমার সেই জন্ম থেকে জীবনের
একমাত্র মৌলিক কাহিনী।

আমার শৈশব বলে কিছু নেই
আমার কৈশোর বলে কিছু নেই,
আছে শুধু বিষাদের গহীন বিস্তার।
দুঃখ তো আমার হাত–হাতের আঙুন–আঙুলের নখ
দুঃখের নিখুঁত চিত্র এ কবির আপাদমস্তক।

আমার দুঃখ আছে কিন্তু আমি দুখী নই,
দুঃখ তো সুখের মতো নীচ নয়, যে আমাকে দুঃখ দেবে।
আমার একেকটি দুঃখ একেকটি দেশলাই কাঠির মতন,
অবয়ব সাজিয়েছে ভয়ঙ্কর সুন্দরের কালো কালো অগ্নিতিলকে,
পাঁজরের নাম করে ওসব সংগোপনে
সাজিয়ে রেখেছি আমি সেফ্‌টি-ম্যাচের মতো বুকে.........
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×