somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসমাপ্ত বৃত্ত

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১০:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক
বান্ধবীদের সাথে স্কুলে যাচ্ছিল শুক্লা।পথে সুব্রতর সাথে দেখা।সুব্রত নীল রঙের টি-শার্ট পড়েছিল।রৌদ্রোজ্জল দিন।সুব্রত বেশ লম্বা।আর দেখতেও সুন্দর।শুক্লাদের কাছে চলে আসে।শুক্লা সুব্রতর চোখে চোখ ফেলার চেষ্টা করে।কিন্তু পারেনা।
-দাদা কোথায় যাচ্ছ?
শুক্লা প্রশ্ন করে
-তোদের বাড়িতে।
সুব্রত উত্তর দিয়েই হন হন করে হেঁটে চলে যায়।বিষয়টা হজম করা শুক্লার জন্যে একটু কঠিনই হয়।রিমি আবার বিষয়টা নিয়ে বাঁকা মন্তব্যও করে।অন্য বান্ধবীরাও এ নিয়ে কটু কথা বলে।
-তুই গায়ে পড়ে কথা বলতে গেলি কেন?
সুচন্দা বলে।
-কেন কি হয়েছে?
শুক্লা জানতে চায়।শুক্লার কথার উত্তর দেয়না কেউ।শুক্লা মনে মনে ভাবে,সুব্রতদা খুব অহংকারী।এই যে ও সরল মনে প্রশ্ন করল আর তার জবাব ওর দিকে না তাকিয়েই দিয়ে দিল।ও কি দেখতে অসুন্দর?অবশ্য ওদের মধ্যে রিমিই সবচেয়ে বেশী সুন্দরী।শুক্লার মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়।

সুব্রত যখন রসুলের মোড়ে তখনই শুক্লাদের আসতে দেখে।মেয়েদের দেখলে এমনিই ও নার্ভাস হয়ে যায় আর শুক্লাকে দেখলেতো কথাই নেই।বুকের মধ্যে ধড়পরানি বেড়ে যায়।শুক্লা ওর বাবার বন্ধুর মেয়ে।সুব্রতর বাবার মুদীর ব্যবসা।সে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে।শুক্লা ক্লাস নাইনে।ছোটবেলা হতেই শুক্লাকে দেখে আসছে।চোখের সামনে শুক্লা কত বড় হয়ে গেলো।এখন ওর সাথে কথা বলতেও সুব্রতর লজ্জা লাগে।

আগামীকাল হতে লীগ শুরু হবে।রিপনদের বাড়ির ছাদে সুব্রতরা সবাই বসেছে।প্রথম একাদশে কে কে খেলবে তা ঠিক করার জন্যে।ঘন্টাখানেক বাক বিতন্ডার পরে প্রথম একাদশ নির্ধারণ হয়।রিপন সুব্রতকে ছাদে থাকতে বলে সবাইকে নিয়ে নীচে চলে যায়। সুব্রত চুপচাপ বসে ছিল।রিমি ছাদে আসে।সুব্রত রিমিকে দেখেই চোখ নামিয়ে নেয়।রিপনের তিন বোন।তিন বোনই অসম্ভব সুন্দরী।রিমি সুব্রতকে দেখেও না দেখার ভান করে ছাদের এক কোনায় গিয়ে দাঁড়ায়।কিছুক্ষণ পর রিমিই কাছে আসে।
-সুব্রতদা,আগামীকাল হতে তোমাদের খেলা?
রিমি প্রশ্ন করে।
সুব্রত মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।রিমি ফ্রক পড়ে আছে।ওর সাদা ধবধবে পায়ের অনেকখানি সুব্রত দেখতে পাচ্ছে।জোড় করে সুব্রত চোখ সরিয়ে নেয়।রিমির দিকে তাকায়।রিমি ওর মুখের দিকেই চেয়েছিল।চোখাচোখি হতেই চোখ নামিয়ে নেয় সুব্রত।
-তুমি কোন পজিশনে খেলো?
-মাঝ মাঠে।
সুব্রত উত্তর করে।
রিপন উপরে উঠে আসে।
-তুই ছাদে কি করিস?
রিপন জানতে চায়।
-কাপড় নিতে এসেছি।
রিমি উত্তর দেয়।
-তো নিয়ে নীচে যা।
রিমি কাপড় নিয়ে নীচে চলে যায়।

শুক্লা আর রিমি ভোর ছয়টায় স্যারের বাড়িতে পড়তে যায়।পড়া শেষ করে ওরা রেস্টুরেন্টে ঢুকে নাস্তা করতে।
-গৌর কাকা পরোটা দাও।
রিমি বলে।
-পরোটার সাথে কি ডিম ভাজি দেবো?
গৌর প্রশ্ন করে।
-দাও।
গৌর খাবার দিয়ে যায়।
-কি শুক্লা তোর মুখটা আজকে কেমন অন্যরকম লাগছে?
-শরীর খারাপ।
শুক্লা উত্তর করে।
-আজ স্কুলে যাবিতো?
-যাবো।তোদের গেটে এসে ডাক দেবোনি।আচ্ছা গতকাল বিকেলে তোদের ছাদে তুই আর সুব্রতদা গল্প করছিলি?
-গতকাল?ও হ্যাঁ সুব্রতদাই উপর দিয়ে কথা বললো,তাই।
-সুব্রতদা কি বলছিল?
-তোকে বলবো কেন?

শুক্লা আর কথা বাড়ায়না।ওর মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়।বাড়ি ফিরে সে মাকে জানিয়ে দেয় আজ সে স্কুলে যাবেনা।শুক্লার মা কিছু বলেনা।বিকেলে শুক্লা মাকে জানায় যে সে বিভাদির কাছে যাবে,- নোট আনতে।শুক্লার মা শুধু বলে,-তাড়াতাড়ি আসবি।বিভার বাড়িতে গিয়ে বিভাকে পায়না শুক্লা।আর সে জানতোও বিভা এই সময় পড়তে যায়।বিভার মা শুক্লাকে দেখে খুব খুশি হয়।
-কি শুক্লামা,আজকাল তুমি খুব একটা আসোনা যে?ছোটবেলায় তোমার বাবা আমাদের বাড়ি হতে তোমাকে নিয়ে যেতে খুব বেগ পেতো।
কাকির কথায় শুক্লা মিষ্টি করে হাসে।
-তা মা তুমি একটু বস।আমি আসছি।
এই কথা বলে বেনু বেরিয়ে যায়।
কাদামাখা শরীর নিয়ে সুব্রত বাড়িতে আসে।শুক্লাকে দেখে একটু অবাক হয়।শুক্লা আর আগের মত আসেনা।
-আজ খেলা ছিল?
শুক্লা বলে।
-হ্যাঁ।
-জিতেছো?
-না।হেরে গিয়েছি।তুই বস আমি ফ্রেস হয়ে আসি।
শুক্লাকে বসতে বলে সুব্রত বাড়ির ভেতরে চলে যায়।ফিরে এসে দেখে শুক্লা চলে গিয়েছে।রাতে পড়তে বসে ইংরেজী বই খুলে সুব্রত একটা চিরকুট পায়।তাতে লেখা-এখন আমি বড় হয়েছি।আমাকে তুমি বলতে পারোনা?সুব্রত শুক্লার মোবাইলে ম্যাসেজ পাঠায়-তুমি বলতে হবে?উত্তর আসে-হ্যাঁ।সুব্রত উত্তর পাঠায়-ঠিক আছে।ম্যাসেজ পাঠিয়ে সুব্রত অবাক হয় ওর নিজের আচরণে।

রাত্রে এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে শুক্লা।সুব্রত হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে।পেছন হতে শুক্লা ডাকছে।সুব্রত শুনতে পাচ্ছেনা।ঘুম ভেঙ্গে যায় ওর।খুব কান্না পায়।পরদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে বাবার উচ্চ স্বরে ডাকাডাকিতে।ব্রজেনকাকু মারা গিয়েছে।শুক্লারা সবাই মিলে সুব্রতদের বাড়িতে যায়।সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য।কাকিমা বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন।শুক্লা মনে মনে সুব্রতর খোঁজ করে।বাহিরের বারান্দায় তাকে পায়।শান্তভাবে দাঁড়িয়ে আছে সুব্রত।চোখে একফোঁটা জল নেই।সুব্রতর চারপাশে ওর বন্ধুরা দাঁড়িয়ে আছে।

দুই
এইচ এসসিতে উঠে সুব্রতর সাথে শুক্লার ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।তাদের ঘনিষ্ঠতার মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায় বিভা।বিভা শুক্লার চেয়ে এক ক্লাস উপরে পড়ে।আর অসম্ভব ভালো ছাত্রী।বিভার কাছে আসবার নাম করে সে যখন তখন সুব্রতদের বাড়ি চলে আসে।বিভাও ব্যপারটা কখনও টের পায়নি।ওরা সবাই টের পায় যখন শুক্লাকে নিয়ে সুব্রত পালিয়ে যায়।সুসান্ত ঘোষ তার ছোট মেয়ের এই কাজ মেনে নেয়না।সে বাড়িতে বলে দেয় ওই মেয়ে যেন কোনদিন এ বাড়ির চৌকাঠ না মারায়।
পালিয়ে যাওয়ার একমাস পর সুব্রত আর শুক্লা ফিরে আসে।সুব্রতর মা শুক্লার বাবার সাথে মধ্যস্থতা করার জন্য চেষ্টা চালায়।কিন্ত কোন লাভ হয়না।সুব্রত পড়াশুনা ছেড়ে দেয়।শুক্লা অনেক চেষ্টা করে যাতে সুব্রত পড়াশুনা না ছাড়ে।কিন্তু সুব্রত ব্যবসার অজুহাত দেখিয়ে শুক্লাকে নিবৃত করে। তবে শুক্লা পড়াশুনা চালিয়ে যায়।সুব্রতর মা এ ব্যপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।ফলে কয়েক বছরের ব্যবধানে বিভা আর শুক্লা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।

প্রতিদিন সন্ধ্যায় সুব্রত রিপনের বাড়িতে আসে।তাসের আড্ডা বসে।মাঝে মাঝে রিমির সাথে কথা হয় সুব্রতর।রিমি জানতে চায় শুক্লা কবে আসবে।কেমন আছে?রিমি স্থানীয় মহিলা কলেজে ভর্তি হয়েছে।আর এ ভাবেই চলছিল দিন।একদিন তাসের আসরে এসে কাউকে পায়না সুব্রত।রিপন জরুরী কাজে কাউকে না বলেই পাবনায় গিয়েছে।আজ আর ফিরবেনা।সুব্রত চলে যাবার জন্যে তৈরি হচ্ছিল।এমন সময় দোতালায় রিমি আসে।

-চলে যাবে?
সুব্রতকে রিমি প্রশ্ন করে।
-যাই।কেউতো আর আসবেনা?
-আমার সাথে গল্প করা যায়না?
-কেন যাবেনা?
রিমি এসে সুব্রতর পাশে বসে।সুব্রত রিমির শরীরের স্পর্শ পায়।
-জানো,তোমরা যে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে এইটা কেউ ধারণা করতে পারিনি।
-কেন?
-তোমরা প্রেম করলে কোন সময়?
রিমির কথায় সুব্রত হেসে ফেলে।রিমি সুব্রতর আর একটু শরীর ঘেঁসে বসে।
-খুব ছোট থাকতেই আমি একজনকে ভালোবাসতাম।কিন্তু কি ভাগ্য দেখো তাকে বলাই হয়নি কোনদিন আমার ভালোবাসার কথা।আর বলাও হবেনা কোনদিন।
রিমি খুব নরম স্বরে বলে।
-আমাকে কি বলা যাবে কে সে?
-লাভ?
-ক্ষতি হবেনা এইটা নিশ্চিত।
রিমি চুপ করে থাকে।পা দোলায়।
-ছেলেটাকে কি আমি চিনি?
-চিনবেনা কেন?
-তো নাম বলতে ক্ষতি কি?
রিমি সুব্রতর দিকে তাকায়।জড়িয়ে ধরে ওকে।
-আমি যে তোমাকে ভালোবাসি তুমি কি কোনদিনই বুঝতে পারোনি?
সুব্রতর শুক্লার কথা মনে পড়ে।কিন্তু রিমির শারীরীক জোয়ারে হারিয়ে ফেলে নিজেকে।উন্মুক্ত ছাদে দুই নর-নারী চির প্রাচীন খেলায় মত্ত হয়।

-তোর এত দেরী হলো যে?
-তাস খেলতে গিয়ে দেরী হয়ে গেলো।
মায়ের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সুব্রত নিজের ঘরে চলে যায়।ঘরে ঢুকতেই ফোন বেজে উঠে।রিমির কল।
-জানো,আজকে খুব বড় সংবাদ অপেক্ষা করছে তোমার জন্যে।
-কি সংবাদ?
-তুমি বাবা হতে চলেছো।

একটি নিদ্রাহীন রাত সুব্রতর অপেক্ষায় বসে ছিল।

০৭/০৪/২০১৯
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১০:৪৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×