জন্মের পর আমাদের মুখ দিয়ে একটা শব্দ স্পন্দিত হয়, তা হলো মাতৃভাষা আমার মায়ের মুখের ভাষা যার জন্য রক্ত জড়িয়ে ছিল সালাম রফিক,বরকত সহ নাম না জানা অনেকেই।... এভাবেই বক্তব্য দিয়ে শেষ করল ৯ম শ্রেণীর ছাত্র রফিকুন্নাবী।
.
স্কুলের মাস্টার মশাই ডাক দিলেন এবার বক্তব্য দেবে ১০ম শ্রেণীর ছাত্র জিহাদি জাহিদ।
আসসালামুআলাইকুম,
সম্মানিত আজকের সভার সভাপতি ও আমার প্রাণ প্রিয় শিক্ষক মহোদয়গণ ছাড়াও উপস্হিত ছাত্রছাত্রী ভাই বোনেরা।
আমি আমার বক্তব্য ততোটা দীর্ঘ করব না মাত্র কয়েকটা কথা বলেই ইতি টানব। আজকের এই দিনটা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সেটা আমরা সবাই জানি। এর পূর্ব ইতিহাস সম্পর্কেও মোটামুটি সবারই ধারণা আছে। ১৯৫২সালের এই দিনে ভাষা রক্ষার জন্য মারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সালাম।,বরকক সহ অনেকেই। তারা যদি মাতৃভাষা বাংলা ভাষার জন্য লড়াই না করত, প্রাণ না দিত তাহলে আজ আমরা নিজের মায়ের ভাষা কথা বলতে পারতাম না পেতাম না মায়ের ভাষার সক্রিয় স্বাধীনতা।
কিন্তু ভাবিয়ে তুলে আমাকে কখন জানেন, যখন দেখি আমাদের কাছেই আমাদের ভাষার মূল্যটা অনেক কম,যখন দেখি সাড়াবছর যারা এই ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন তাদের কোনো নাম গন্ধ পর্যন্ত কারো মুখে আসে না কিন্তু একটা নির্দিষ্ট দিবস আসলেই দেখা যায় ভাষাপ্রেমীদের অভাব নাই। হাতে হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে পায়ের স্যান্ডেল খুলে শ্রদ্ধাঞ্জলী জানানোর মানুষের অভাব হয় না।
.
বড্ড খারাপ লাগে যখন দেখি ১০০% কথার মধ্যে ৪০%কথাই বিন্দেশী ভাষায় বলে। কষ্ট লাগে কোথায় জানেন এদেশের মেয়ে হয়েও যখন বাংলিশ ভাষা কথা বলে শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে পারে না! সমাজে কিছু মানুষ তৈরী হয়েছে যারা বলে বেড়ায় বাংলা ভাষার পাশাপাশি অন্য ভাষা মিশ্রিত করে কথা না বলতে পারলে নাকি ক্ষ্যাত ক্ষ্যাত লাগে। আরো অবাক হই যখন দেখি পিসি,মোবাইল ফোন পুরাই লোড করা তাকে বিন্দশীয় গানে। জাতির যুবসমাজের কাছে প্রশ্ন শ্রদ্ধাটা আমরা একটু বেশীই জানাচ্ছি না?
- তারপর রাস্তাঘাটে বিয়ে শাদীতে ফোল সাউন্ডে বৈদেশী গান বাজানোটাই না হয় নাই বললাম, ফেসবুকের প্রিয় রাইটারদের, রিডিও জকিদের কথা মালা সহ আরো অনেক কিছু তো বললামই না থাক!!!!! বলতে চাইলে বলে শেষ করা যাবে না।
.
শুধু একটা কথাই বলি ভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছিল তাদের শ্রদ্ধা জানিয়ে লাভ কি যদি বাস্তবে সেই ভাষার মর্যাদা দিতে পারলে না। আমরা তো আজকাল তাদের শ্রদ্ধা করি না অপমান করি।
আরেকটা কথা বলি তাদের কে শহীদ মিনারে গিয়ে ফুলের তোড়া দিয়ে শ্রদ্ধা জানালেই কি তারা শ্রদ্ধা পায়/?
একটি মূহুর্ত কি তাদের জন্য উপরওয়ালার কাছে প্রার্থনা জানিয়েছেন ? একটিবার?
এক বন্ধু এসে বলল দোস্ত চল ফুলের তোড়া দিয়ে শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। আমি যখন না করলাম তখন সে বলল সালা তুই রাজাকার তুই পাকিস্তানের দালাল দেশের প্রেম ভাষা প্রেম বলতে কিছু নেই তর মাঝে। অবাক হয়ে রই শুধু বলতে চাই জানতে চাই অন্তর দিয়ে শ্রদ্ধা আর স্রস্টার কাছে দু হাত তুলে তাদের আত্মার জন্য প্রার্থনা করলে কি সেটা দেশ প্রেম হয় না, ভাষা প্রেম হয় না,শহীদদের প্রতি ভালোবাসা হয় না।
.
আমি আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করলাম বলে জাহিদ বক্তব্যের ইতি এখানে টানল। মনে মনে ভাবে সমস্ত প্যান্ডেল জুড়ে এতো নিরবতা কেনো ভুল কিছু বলি নাই তো আবার। মাত্র কয়েক মুহূর্ত নিরবতার পর পেছন থেকে একটা হাত তালির মাধ্যমে সমস্ত প্যান্ডেল জুড়ে বয়ে যায় হাত তালির জয়ধ্বনি বোধহয় মাত্র জন্ম নেয়া শিশু হঠাৎ করেই পৃথিবীর আলো দেখে হু হু করে কেঁদে উঠেছে।
-সোহাগ আল এহসান।