বর্তমানে যে তিনটা বিষয় নিয়ে অনলাইন সরগরম তার মধ্যে তনু হত্যা প্রসঙ্গটি উল্লেখযোগ্য। কোন অস্বাভাবিক হত্যাকান্ড কখনই সমর্থনযোগ্য নয়। সেটা যে কারো ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তবে ইনিয়ে বিনিয়ে খুন, হত্যা,ধর্ষণকে হ্যাসট্যাগ দিয়ে বৈধ বানানোর জন্য চেষ্টা এদেশের অপামার জনসাধারণ খুব ভালই পারে। তবে তনু হিজাবি হওয়ায় অবশ্য এখানে পোষাকের দোষ দিয়ে হ্যাসট্যাগ দেওয়ার মত কোন মুমিন বান্দা এখনও খুজে পাওয়া যায় নি । তারপরও কিছুটা কিন্তু থেকেই যায়। কেননা অনেকের শব্দের চয়নকৃত বাক্যগুলো এরকম "হিজাবকৃত একটা মেয়ে কেন ধর্ষণ হবে?" তারমানে তারা পরোক্ষভাবে এটাই বলতে চাচ্ছে যে, তনু হিজাবি না হলে ধর্ষনটা গ্রগনযোগ্য হত। যাইহোক এতকিছু বাকবিতম্বার ভীরেও যেভাবে প্রতিবাদী সুর ব্যাপক অাকারে ব্যাপ্তি লাভ করেছে সেটা নিঃসন্দেহে অামাদের মনে অাশার অালো সঞ্চার করে। অাজকে প্রথম অালো পত্রিকা মারফত জানতে পারলাম ক্যান্টনমেন্টরই এক সৈনিক নাকি তনুকে বিরক্ত করত। এখনও কেউই অামরা সুনিশ্চত নই যে, এই জঘণ্য অপরাধটি কে বা কারা করছে। তবে এটা সত্য যে প্রত্যেকটি অপরাধি প্রথমে সন্দেহভাজন হিসেবে বিবেচিত হয়ে পরে অপরাধী হিসেবে শনাক্ত হয়। এই মুহুর্তে অামার সন্দেহের তীর ক্যান্টনমেন্টের সৈনিকের দিকেই। যেকারণে সৈনিকদের দিকেই অামার সন্দেহ -------
→ ক্যান্টনমেন্টের মত একটা নিরাপদ বেষ্টনি এলাকায় এইরকম জঘন্য অপরাধ করার দুঃসাহস কার হতে পারে?
→ক্যান্টনমেন্টের সিসিটিভি ক্যামেরা ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজগুলো কোথায় গেল? সেগুলো কেন চেক করে দেখানো হচ্ছে না?
→অামাদের সেনাবাহিনীর এই ব্যাপারে তেমন তদাকরি না করা কিসের ইঙ্গিত বহন করে? প্রসাসনের এত নীরব ভূমিকা কেন? তাছাড়া অামি অামার ব্যাক্তিগত অভিঙ্গতা থেকেই বলছি ক্যান্টনমেন্টে ঢুকতে যতগুলো ইনফর্মেশন দিয়ে ঢুকতে হয় তাতে বাইরের কারোরই এমন অপরাধ করার সুযোগ নেই। ইদানিং কালে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী যেভাবে পাহাড়ি মেয়ে, নারীদের উপর জুলুম নির্যাতন,ধর্ষন করতেছে তাতে দু ফোটা বীর্য বিসর্জনের জন্য তনুর মত মেয়েকে ধর্ষন করে হত্যা করে নিজের বিকৃত যৌন ক্ষুধা মেটানোটা তাদের জন্য অস্বাভাবিক কিছু নয়।বর্তমানে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী পাহাড়িদের উপর যেসব কর্মকান্ড করে অাসছে তাতে তারা পাকবাহিনীকেও(কুত্তাবাহিনী) ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত স্যাটেলার বাঙ্গালী দ্বারা পাহাড়িরা ধর্ষন হচ্ছে, ঝোপে ঝাড়ে তাদের রক্তাত লাশ খুজে পাওয়া যাচ্ছে, অথচ এর বিরুদ্ধে কোন প্রতিরোধ তো করছেই না সেনাবাহিনী বরং তারাও পাহাড়িদের ছাড় দিচ্ছে না। তারাও একই অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে। এইতো কিছুদিন অাগে ক্লাস টেন পড়ুয়া নমিতা নামের মেয়েটিকে তারা ধরে নিয়ে যায়। ক্লাস টেন পড়ুয়া একটা মেয়ে কি বা এমন অপরাধ করতে পারে? কল্পনার কথা হয়ত অাপনারা ভুলেই গেছেন। অনেকে হয়ত জানেনই না কল্পনা নামে কোন এক পাহাড়ী মেয়ে ছিল। জানবেনই বা কেমন করে? অামাদের দেশের হলুদ মিডিয়া, সাংবাদিক, গণমাধ্যমকর্মী তারা জানে কোন খবর এদেশে বেশি হিট পায়। কোন খবর বাংলাদেশে ছড়িয়ে বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা লাভজনক হবে। বাঙ্গালিরা কোন খবর বেশি গ্রহন করবে। তাইতো অামরা অাখলাক, অায়েলান কুর্দীর কথা কমবেশি সবাই জানলেও নমিতা, কল্পনারা কিন্তু অামাদের কল্পনার গন্ডিতেই অাবদ্ধ। অাজকে তনুকে নিয়ে অনলাইন জগৎ যেভাবে সরগরম হয়ে উঠেছে, তনু যদি কোন বিলুপ্তপ্রজাতি সংখ্যালঘু ঘরের মেয়ে কিংবা পাহাড়ি মেয়ে হত তাহলে হয়ত এত প্রতিবাদ এত মিছিল না হওয়ারই কথা ছিল। অাপনারা হয়ত ভাবছেন অামি এই কথা বলে তনু হত্যা প্রসঙ্গকে পশ্নবিদ্ধ করছি? মোটেও না। অামার এমন ভাবাটাই স্বাভাবিক। কেননা এজন্য অামাক বেশিদিন দুরে ফিরে যেতে হবে না। গত সাতদিন অাগেরই কথা। পাবনার এওয়ার্ড কলেজের সংখ্যালঘু পরিবারের মেয়ে গণধর্ষনের স্বীকার। কয়টা অফলাইনে এই খবর অাইছে একটু বলবেন? অনলাইনের নিউজফিন্ড এ নিয়ে কতটা ভরে গেছে একটু বলবেন? কোথায় কখন কিভাবে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়ছে একটু বলবেন? না,,, এসবের কিছুই হয় নি। ওহ সরি ভুলেই গেছিলাম, সংখ্যালঘু মালু পরিবারের মেয়ে বলে কথা(!) সেতো গণিমতের মাল। সে অাবার কোন প্রাণী নাকি। যাইহোক অাপনারা যারা এতদিন ঘুমিয়ে ছিলেন, কিংবা জেগেও ঘুমিয়ে থাকার ভান করেছেন তারা তনু হত্যা প্রসঙ্গে যেভাবে জাগরণের সঞ্চার করেছেন এজন্য অামি অনেকটাই অাশাবাদী। অাপনাদের এই জাগরণ হোক সবার জন্য সার্বজনীন। মানবতা হোক সার্বজনীন। মানবতা যেন কোন ব্যাক্তবিশেষ বা নির্দিষ্ট কোন ব্যাক্তি,সম্প্রদায় গোষ্ঠির জন্য না হয়। অামিও অাপনাদের এই জাগরণে একাত্মতা পোষন করছি। অবিলম্বে তনুর হত্যাকারীদের খুজে বের করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির জোড় দাবি জানাচ্ছি। অামাদের জাগরনের এই ধারা অব্যাহত থাকুক। অার যেন কোন সবিতা, নমিতা, শিউলি, কল্পনা অামাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গেলে তাদের কল্পনা করে যেন মনের মধ্যে কল্পনাদের অাকতে না হয়। অামি চাই প্রত্যেকটা অপরাধই যেন অামাদের চোখে ধুলা দিয়ে পার পেয়ে যেতে না পারে। অামাদের এজন্য এই জাগরনের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। নতুবা চেতনাবাদী হলে সারাজীবন এই সমাজ, এই দেশ, এই জাতী থেকে অাবারও তনুদের হারাতে হবে। অামি চাই না অার কোন তনু হারিয়ে যাক। গতকাল মানবজমিনে দেখলাম সংখ্যালঘু পরিবারের অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া এক মেয়েকে বাবা মাকে জিম্বি করে দুজন দুবৃত্ত ধর্ষন করে। দেখাযাক এটা নিয়ে অফলাইন,অনলাইন, নিউজপোর্টালে কতটা অালোচ্য বিষয় হয়। এখন পর্যন্ত তেমন কোন নিউজপোর্টালে খবরটা দেখলাম না। তারপরও অাশা রাখি, তনুর মত এই বিলুপ্তপ্রজাতী সংখ্যালঘু পরিবারের মেয়েটির খবর সমান অাকারে গুরত্ব পাবে। অামার এই অাশাবাদ ব্যাক্ত রেখে, কতটা সফল হবে অামার অাশা সেটার উপর নির্ভর করেই বুঝব অাপনারা কতটা মানবতাবাদী??? না চেতনাবাদী??????
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১:৪৮