somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুঁজিবাদ সমাজে নারীদের মুক্তি

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এমন একটা সময় ছিল যখন নারীদের সৌন্দর্য বলতে তাকে ফর্সা হতে হবে, কালো টানা টানা চোখ, দীঘল কালো চুল , একটু চওড়া হতে হবে এইরকমই একটা নারীর সৌন্দর্য বর্ণনা দেওয়া হত । কিন্তু বর্তমান সময়ে সেটা অনেকটাই বদলে গেছে । এখন নারীর সৌন্দর্য বলতে তাকে সুন্দরী হতেই হবে ,তার চেহারা স্লিম হতে হবে, শরীরের ত্বক একদম মসৃন হতে হবে, যথাস্থানে যথাসম্ভব মাংসলপেশী থাকতে হবে এবং মাস্ট বি তাকে সেক্সি হতে হবে । কোন মেয়ের সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে তার মধ্যে সেক্স অ্যাপিল টা সবচেয়ে বেশি এখনকার সময়ে গুরুত্বপূর্ণ,খুবই জরুরি এবং স্বাভাবিক একটা বিষয় । যে যতটা বেশি সেক্সি সে ততো বেশি সুন্দর এবং তার পিছনে ঘুরা ছেলের সংখ্যাও বেশি । প্রত্যেকটা মেয়েই চায় তার পিছনে আট দশটা ছেলে অল্টাইম ঘুরুক আর এজন্য সে দিন দিন নিজের শারীরিক সৌন্দর্যকে কিভাবে বাড়ানো যায় এবং সেক্স অ্যাপিল টাকে দিন দিন বড় করে দেখানোই যেন তার দৈনন্দিক জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দ্বারায় । অবশ্য এজন্য আমাদের পুঁজিবাদের এই সমাজব্যাবস্থাই দায়ী ।

আপনারা একটা বিষয় খেয়াল করলে দেখবেন যে, যেসব মেয়েরা মডেলিং করছে তাদের মডেলিং এর জন্য যেসব শর্ত বেধে দেওয়া হচ্ছে প্রথমত তাকে সুন্দরী, স্লিম এবং সেক্সি হতে হবে । এসবের কোন একটা যদি তার মাঝে অনুপস্থিতি থাকে তো তাহলে সে প্রাথমিক নির্বাচনেই অনির্বাচিত হয় যদিও তার মাঝে অন্য কোন প্রতিভা থাকুক না কেনো । বাংলায় একটা প্রবাদ আছে না , আগে তার দর্শনধারী পরে তার গুণবিচারী । ব্যাপারটা ঠিক সেরকমই । এমনকি বর্তমান সময়ে যেসব আমি টিভি চ্যানেলগুলো দেখি সেই সব চ্যানেলে যেসব মেয়েরা খবর প্রচার করে থাকে খেয়াল করলে দেখবেন প্রত্যেকটা মেয়েই কিন্তু সুন্দর । মনে হয় যেন দেশে প্রতিভাবান মেয়ে বলতে সুন্দরী মেয়েরাই । কাজেই একটা মেয়ে যখন সমাজে তার নিজের একটা অবস্থান করে নিতে চাচ্ছে তখন সে তার মধ্যে লুকিয়ে থাকা যেসব প্রতিভা আছে সেটার ডিভিলোপ না করে সে শারীরিক সৌন্দর্যটাই ডিভিলোপ করার জন্য বেশি ঝুকে পরছে ।

মেয়েদের মধ্যে সৌন্দর্য সচেতনতা শুধু যে বড় হয়ে দেখা যায় , এমনটা নয় কিন্তু । একটা কন্যা শিশু বাচ্চা যখন জন্মায় ,তখন থেকেই তার মধ্যে খুব স্বাভাবিকভাবেই সৌন্দর্য সচেতনতা ঢুকিয়ে দেওয়া হয় । ছোটবেলায় তার খেলার সামগ্রী হিসেবে যে বারবি ডল পুতুল টা খেলতে দেওয়া হয়, ঠিক তাকেও বারবি ডলের মতই সুন্দরী হতে হবে এটাও খুব স্বাভাবিক ভাবে মেয়েটা একটা সময় বুজতে পারে । সুন্দরতার একটা যে বীজ তার মধ্যে বপন করে দেওয়া হয় , ধীরে ধীরে সেটা বড় হয়ে আরও প্রকট আকার ধারন করে । অধিকাংশ মেয়েদের এভাবে বেড়ে উঠাটা, যাদের শারীরিক সৌন্দর্য কেই ঘিরে সকল চিন্তা কল্পনার বিষয় সেটা কতটা আপনাদের কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হয় ?
২১ শতকের বর্তমান মেয়েরা যেভাবে নিজের শারীরিক সৌন্দর্যের মধ্যে আবদ্ধ করে রেখেছে তা ভবিষ্যতে নারীকে কতটা মুল্যায়িত করা হবে সেটাকে অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ করবে কোন না কোন এক সময় । প্রকৃতিগতভাবে মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় শারীরিক ক্ষেত্রে দুর্বল, কিন্তু তাই বলে কি মেধায় মেয়েরা দুর্বল ? আগেরকার দিনে পেসি,তলোয়ার দিয়ে যুদ্ধ হলেও এখনকার দিনে তো মেধা দিয়ে যুদ্ধ হয় । কম্পিউটার এর কিবোর্ড চাপতে তো আর পেশী শক্তি লাগে না । যেখানে মেয়েরা সব ক্ষেত্রেই নিজের যোগ্যতা দিয়ে এগিয়ে যেতে পারছে,নিজের প্রতিভা কাজে লাগাতে পারছে , সেখানে শারীরিক সৌন্দর্যকে পুঁজি করে এগিয়ে যেতে হবে কেন ?

গতকাল খবরে দেখলাম একসময়ের জনপ্রিয় বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, বর্তমানে হলিউড অভিনেত্রী উনি নাকি বিশ্বের ১০০ জন ক্ষমতাধর ব্যাক্তির মধ্যে জায়গা পেয়েছেন । বেস ভাল তো ! বলিউডে ৭ ইঞ্চি প্যান্ট পরে জনপ্রিয় হয়ে হলিউডে ২ ইঞ্চি পেন্টি পরে যদি অভিনয় করে ক্ষমতাধর ব্যাক্তির আসনে নিজের জায়গা করে নেওয়া যায় ,সেটা একজন মেয়ে হিসেবে তার কাছে অনেক বড় পাওয়া । কিন্তু এই পাওয়াটা পাইতে গিয়ে তাকে কতটা নিচে নামতে হয়েছে , কতটা পুরুষের কাছে নিজেকে ব্যাবহ্রত হতে হয়েছে সেটার হিসেব কষবে কে ? যাইহোক এটা যেই করছে এবং যারা করাচ্ছে সেটা তাদের পারসোনালিটি । এর বিনিময়ে তারা কিছু যেমন পাচ্ছে এবং যারা দেখছে তাদেরও একটা কার্য হাসিল হচ্ছে, তাহলে যে যার অবস্থান থেকে শালীনতা বজায় রেখে যতটুকু দেখাতে পারে , সে দেখাতেই পারে ।সত্যি বলতে কি নারীদের, নারী স্বাধীনতার মাধ্যমেও মুক্তি আজো মিলে নি ।পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষতান্ত্রিকতার থাবা এমনভাবে সুকৌশলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে যেটাকে আমরা নারী স্বাধীনতা হিসেবে ভাবছি এবং নারীরাও মেনে নিচ্ছে আদৌ সেটা নারী স্বাধীনতা নয় । পুরুষদের কাছে নারীরা পণ্য হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে ।
ধর্ম যেমন নারীকে ভোগের, পুরুষের যৌনচাহিদা মেটানোর বস্তু বলেই তাকে ঢেকে রাখতে বলছে ঠিক তেমনি এই পুঁজিবাদ সমাজ নারীকে একটা প্রডাক্ট এর মতই ব্যাবহার করে তাকে খোলামেলা ভাবে প্রকাশ করে টাকা কামাচ্ছে । পার্থক্য কেবল কেউ কাপড় খুলছে, কেউ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখছে ।আসলে এর থেকে নারীদের পরিত্রানের সঠিক উপায় কি সেটা আমারও জানা নেই । মেয়েরা চাইলেই এ বিষয়ে একটু সচেতন হতে পারে ।মেধার চর্চা করে তারাও প্রতিষ্ঠিত হয়ে নিজের একটা ভাল অবস্থান করে নিতে পারে ।যেমনভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন সুফিয়া কামাল,বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন আরও অনেক মহীয়সী নারী ।কিন্তু খুব হতাস হয়ে যাই কিছু কিছু তনা নারীবাদীদের কার্যকারবার দেখে । আমার ফেসবুক ফটোতে লাইক কমেন্ট পেতেই হবে, এজন্য আমি আমার বুকের ফাঁক আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড দের দেখাতেই পারি । আমি কি করবো না করবো , কি পোশাক পরব সেটা আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার । তনাবাদিরা তো নারী স্বাধীনতার নামে পোশাক খুলা নিয়েই ব্যাস্ত । আরে ম্যাড্যামেরা সিনেমায় না হয় ব্যাবসায়িক স্বার্থে মেয়েরা পোশাক খুলে । ফেসবুকে বুকের ফাঁক দেখানোর হেতুটা কি ? আপনার কি এতে মান মর্যাদা বেড়ে যাবে ? না এর বিনিময়ে কিছু পাচ্ছেন ? পুঁজিবাদী এই সমাজ ব্যাবস্থায় মানুষ এমনকি আল্লাহ, ভগবানকেও পুঁজি করে ব্যাবসা করছে । সেখানে মেয়েদের শরীর পুঁজি করে ব্যাবসা করাটা খুব একটা অস্বাভাবিক কিছু নয় বর্তমান প্রেক্ষাপটে । কেননা মেয়েরা সৌন্দর্যের প্রতিক । সৌন্দর্যতা শিল্পেরই একটা অংশ । কিন্তু তাই বলে কারনে অকারণেই নিজেকে পণ্য হিসেবে উপস্থ্যাপন করার মধ্যে কোন মহত্ত আমি দেখি না,বরং এতে নিজেরেই আত্মমানমর্যাদার হানি ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ২:২০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×