somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

না বলা কথা (Sad love story)

১০ ই মে, ২০১৬ রাত ৮:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






মোবাইলের এলার্মটা বেজেই চলছে। তারপরও শুভ ঘুম থেকে উঠছে না। পাশের রুম থেকে মা এসে বলতেছে কিরে শুভ ঘুম থেকে উঠবি না। বেলা নয়টা বাজে । রাতে কি চুরি করতে গেছিলি নাকি। শুভ ঘুমের ঘোরেই বলতেছে প্লিজ মা তুমি এখান থেকে যাও তো ,আমাক একটু শান্তিতে ঘুমাতে দাও । শান্তিতে ঘুমাতে দিব মানে তুই না বলছিলি যে আজ তোর জাকির স্যারের ইমপরটেন্ট ক্লাস আছে । জাকির স্যারের কথা শুনে শুভ তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে জেগে উঠল । সত্যি তাই তো আজ আমাক জাকির স্যারকে এসাইনমেন্ট টা জমা দিতেই হবে। শুভ বিছানা ছেড়ে উঠে তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে প্যান্ট শার্ট পরে নিজের মুখ টা দেখার জন্য আয়নার সামনে দাড়ালো । আজ কেন জানি শুভ অন্যান্য দিনের চেয়ে আয়নায় বেশি সময় দিচ্ছে । বারবার চুলগুলো এদিক ওদিক করে দেখছে যাতে কিভাবে শুভকে সুন্দর লাগে । পাশের রুম থেকে মা ডাকছে
__এই শুভ সাজতে কত সময় লাগবে । মেয়ের মত ছেলেদের সাজতে হয় না ছেলেদের যোগ্যতাই ছেলেদেরকে সুন্দর করে ।
__যাচ্ছি মা ।আর দুমিনিট , চুলগুলো ঠিক করে আসতেছি । সবকিছু রেডি করো আমার সময় নেই কিন্তু ।
__ সময় নেই সেজন্যই তো ডাকতেছি । মা কি জন্য বলবে শুভ এসে হাজির ।শুভকে দেখে মা শুভর দিকে তাকিয়ে আছে ।
__মা এভাবে কি দেখছ ? বলছি না সময় নেই । জন্মের পর থেকে তো দেখেই আসছ আজ আবার এত সময় নিয়ে দেখার কি দরকার। -- জন্মের পর থেকে দেখছি এটা ঠিক কিন্তু আজ যেভাবে দেখতে পাচ্ছি তা একেবারেই অন্যান্য দিনের চেয়ে আলাদা। তাইতো ভাবতেছি আজ এত সময় লাগল কেন? শুভ চুল গুলো অন্যান্য দিনের মত আগে ঠিক করে আস তারপরই তোমাক খাইতে দিব । তুমি যে আজ চুলের মডেল করছ সেটা শিক্ষিত সমাজে মানায় না ।
__ মা তুমি কি আমাক সারাজিবন ছোট বাচ্চার মত করে দেখতে চাও ? একটু তো আধুনিক ফ্যাসানের সাথে তাল মেলে চলতে হবে তাই না ।
__বাবা মার কাছে ছেলে মেয়েরা সবসময় ছোটই থাকে । আমি ফ্যাসান ট্যাসান বুঝি না । আমি যা করতে বলছি সেটাই করো ।
__ আচ্ছা যাচ্ছি তুমি যখন বললে তোমার কথা কি আর না মানতে পারি ।
__দেখো এখন কত সুন্দর লাগছে আমার ছেলেকে । মায়ের কাছে অবশ্য শুভর সবকিছুই ভাল লেগেছে কিন্তু চুলের ক্ষেত্রে একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলছে শুভ। আজ তোকে যেকোন মেয়ে দেখলেই তোর প্রেমে পরে যাবে ।
__ মা কথা না বাড়িয়ে খাবার দাও তো । মায়ের মুখে এমন কথা শুনে শুভ সেই ফেসবুকের মেয়েটির কথা ভাবছে ।তার জন্যই তো আজ ঘুম থেকে এত দেরিতে উঠা । তার জন্যই তো আজ শুভ এত সেজেছে । ইস মা যেমন আজ বলল তোকে যেকোন মেয়ে দেখলেই প্রেমে পরে যাবে, আমি যদি আজ সেই অদেখা সেই দৃষ্টি নামের মেয়েটির সামনে দাড়াতে পাড়তাম তাহলে হয়ত অবশ্যই দৃষ্টি আমার প্রস্তাবটি না রেখে পারতো না। আমার এই প্রেম নিবেদন হয়ত দৃষ্টিও তার ভালবাসার হাত বাড়িয়ে দিয়ে দুজনের ভালবাসা এক হয়ে স্বপ্নের আকাশে মুক্ত গাঙ্গচিলের মত উড়ে বেড়াতো। এসব ভাবতে ভাবতে শুভ তার খাওয়া শেষ করে ফেলল। কলেজে এসে শুভ প্রথমেই তার বেস্ট ফ্রেন্ড রাকিবের প্রশ্নের সম্মুখিন হল। -- কিরে শুভ আজ তোকে অন্যরকম লাগছে যে। মেয়েদের মত বিউটিপার্লারে গেছিলি নাকি? সবকিছুই যেন হিরোর মত লাগছে । -- নারে দোস কি আর পরিবর্বতন হলাম ।দুটো চোখ,দুটো কান ,দুটা হাত দুটা পা, একটা মুখ সবই তো ঠিক আছে । কেন তুই কি একটু অন্য রকম দেখতেছিস নাকি। আসলে মনে হয় তোর একটু চোখের প্রবলেম হয়েছে। শুভ অবশ্য বুঝতে পারছে যে কেন তার বন্ধু এসব কথা বলছে কেননা তার মা ই তো আজ বাসায় এসব কথা বলেছিল । বুঝতে পেরে শুভ এমনভাবে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছে যাতে তাকে আর যেন এবেপারে কোন প্রশ্ন করার চেষ্টা না করে । জানি দোস এমন কথা বলবি যাতে আর আমি তোকে কিছু বলতে না পারি । তবে যাই বল দোস তোকে কিন্তু আজ হেব্বি লাগছে ।
__মে বি।
চল এখন ক্লাসে যাই। জাকির স্যারের এসাইনমেন্ট টা নিয়ে আসছিস। __ হুম। দোস ইদানিং তোকে ফেসবুকে সবসময় দেখি যে।
__কি আর করব ।বসে বসে একটু ফেসবুকে আড্ডা দেই এই আর কি। আর ফেসবুক থেকেও কিন্তু অনেক ভাল কিছু শেখার আছে । আমার টাইমলাইনে কখনও এমন কিছু পোস্ট চোখে পরে তা পড়ে মনে হয় আমি কোন কবি সাহিত্যিকের লেখা পড়ছি।
আসল সত্তিটা শুভ তার বন্ধুর কাছে লুকাচ্ছে কেননা এখনও দৃষ্টির বেপারে শুভ এগোতে পারে নি । তাই শুভ চাচ্ছে না যে রাকিব এ বেপারে জানুক । বেস্ট ফ্রেন্ডে হিসেবে শুভ অবশ্য রাকিবের কাছে সব কথাই শেয়ার করে থাকে । রাকিব, শুভ ক্লাসে এসে সবার পেছনের সিটে বসল।
__ শুভ তুই না প্রতিদিন সামনের সিটে বসতিস। আজ আবার পেছনে এলি যে ।
__যাক বাবা, শুধু কি আমি একাই এসে বসলাম তুইও তো এসে বসলি ।
__আরে তুই এসে বসলি সেজন্যই তো আমি তোর সাথে বসলাম । আচ্ছা তোকে ছাড়া আমি কখনও বসেছি বলতে পাবি?
শুভ কিছু বলবে এমন সময়ই স্যার ক্লাসে এসে উপস্থিত । স্যার ক্লাসে এসেই তার আপন মনে লেকচার দিয়ে যাচ্ছে। শুভ স্যারের কথা না শুনে ফেসবুক ই চালাচ্ছে শুধু। হঠাৎ স্যার শুভকে বলল শুভ তোমাক দেখছি তুমি শুধু মাথা নিচ করে মোবাইলের দিকেই তাকিয়ে আছো। ব্যাপারটা কি বলোতো । ক্লাসে এত অমনোযোগী কেন ? আজ আমি একটা ইমপরটেন্ট জিনিস তোমাদের শেখাচ্ছি।
__না মানে স্যার একটু মোবাইলে সময় দেখছিলাম ।
__ হাতে তাহলে ঘরি কি জন্য রাখছ?
__স্যার ঘরি যে হাতেই ছিল সেটা লক্ষ্য করি নি ।
__ওকে , আর অজুহাত দেখাতে হবে না । এখন ক্লাসে মন দাও । শুভ কলেজ থেকে এসে বাসায় এসে পৌছল । এসেই ফেসবুকে লগ ইন করল । ধুর তেরি দৃষ্টি তো অনলাইনে ই নেই।কখন যে মেয়য়েটা অনলাইনে আসবে শুভ মনে মনে ভাবতেছে ।
মিলার জন্য শুভর মনের মধ্যে যে অস্থিরতা বোধ হচ্ছে তা কেবল শুধু শুভই বুঝতে পারছে। অশান্ত মন টাকে শান্ত করার জন্য শুভ বিকেলে লেকের ধারের উপর এখানে চলে আসে। শহরের কর্মব্যস্ততায় গুটিকয়েক লোক এখানে আসত শুভর মত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে। নীল আকাশ আর মোবাইলের দিকে তাকাতে তাকাতে কোন একসময়ে প্রকৃতির পরিবেশ শীতল হয়ে আসে। সবাই কর্মক্ষেত্র ছেড়ে ঘরে ফিরে আসে। শুভ ও তাই তার নিজ রুমে ফিরে আসে। রাতে একটু পড়াশোনা করে রাতের খাবার খেয়ে শুভ বিছানায় শুয়ে পড়ে। শুভর দুচোখে কিছুতেই ঘুম আসছে না। তাই মোবাইল টা নিয়ে আবারও ফেসবুকে ঢুকে। যার জন্য এত অস্থিরতা হয়ত তাকে পেয়ে শুভর কিছুটা হলেও স্বস্তি আসবে। ফেসবুকে ঢুকেই শুভ দৃষ্টিকে দেখতে পায়। খুব আগ্রহের সহিত শুভ দৃষ্টিকে ম্যাসেজ করে
__ হায়
দুমিনিট পার হয়ে গেল কোন রেসপন্স নেই
__ আবারো একটু বিরক্তের সাথে হ্যালো
__ মিলা ম্যাসেজ করল হায়
__ কি ব্যাপার এত দেরি কেন? রিপ্লে দিতে
__মোবাইল টা রেখে একটু বাহিরে গেছিলাম।
__ও । কেমন আছো ?
__ভাল । আপনি?
__ বেশি ভাল নেই।
__ কেন?
__ তবে এখন ভাল লাগছে
__ এখনই বললে তো ভাল নেই। আবার এখনই ভাল!
__ তোমার সাথে চ্যাট করতেছি তাই ভাল লাগতেছে ।
__ ও আচ্চা ।
__ হুম। ডিনার করলে ?
__ হুম করছি । আপনি ?
__ এই শোন আমাক আপনি বলবে না । এর চেয়ে যদি তুমি আমাক নাম ধরে ডাক এতেই বেশি খুশি থাকব বুজলে ।
__ আমি যে অপরিচিত কাউকে নাম ধরে ডাকতে পাব না ।
__ আরে বাবা, অপরিচিত মানে , দশ দিন হয়ে গেল তোমার সাথে ফেসবুকে বন্ধুত্ব হওয়ার । এর আগে অবশ্য শুভ দৃষ্টি দুজনই ভালভাবে পরিচিত হয়েছে।কোথায় বাসা, কোথায় লেখাপড়া করে দুজন দুজনেরই সব ডিটেইলস ভালভাবে জানে ।
__ না সেটা বলি নি । আমরা তো দুজনেই শুধু ফেসবুকের বন্ধু । তাই তো তোমাক ভাল করে জানি না ।
__
__ আচ্চা তুমি কি আমাক এখনও অবিশ্বাস করতেছ যে আমি তোমাক আমার সম্পর্কে যা বলছি তা মিথ্যে। তুমি যদি চাও আমি তোমার ওখানে গিয়ে তোমার সাথে দেখা করে আসব।
__ এত দুর থেকে আসতে পাবা । আচ্চা এখন আসতে হবে না। আমার যখন বিয়ে হবে তখন তোমাক ইনভাইট করব তখন আসিও।
__ মনে মনে শুভ ভাবতেছে বিয়ে তো তোমাকেই করব। আমাকে কি আর ইনভাইট করা লাগবে । আচ্ছা কবে বিয়ে করছ তাহলে ।
__ বাবা মা আমাক যখন বিয়ে দিবে তখন বিয়ে করব।
__ ও আচ্ছা ।
__ হুম। ডিনার করলে না করলে সেটার তো উত্তর দিলে না ।
__ হুম আমিও অনেক আগেই ডিনার করেছি ।
দুজনেই ফেসবুকে আড্ডা দিতে দিতে ঘড়ির কাটাটা যেন নিষ্ঠুর গতিতে রাত 12 টার কাটা অতিক্রম করেছে ।
__ দৃষ্টি ম্যসেজ করল ঘুমাবে কখন ?
__ তুমি ফেসবুকে আছো তাই ঘুম আসছে না ।
__ আমার কিন্তু প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে ।
__ আর একটু দেরিতে ঘুমাতে গেলে হয় না
__ না । আমি এখন ঘুমিয়ে পরব । okk gd ni8, bye
__ okk gd ni8 & have a nice sweet dream .
শুভ একটু টাইমলাইন থেকে ঘুরে এসে আবারও দৃষ্টির ম্যাসেজ অপসন এ গেল । ততক্ষনে দৃষ্টি অনলাইন থেকে বের হয়ে ঘুমিয়ে পরছে । শুভ ও গভীর রাত হয়েছে ভেবে ঘুমিয়ে পড়ল । এরপর থেকে দুজন দুজনের সাথে অনেক রাত জেগে ফেসবুকে চ্যাট করত। তাদের দুজনের মধ্যে খুবই ঘনিষ্ট সম্পর্ক শুরু হয়। শুভ তার মনের অব্যাক্ত কথাটা বলতে চেয়ে ও বলতে পারে নি শুধুমাত্র যদি কোন কারণে দৃষ্টি তাকে ভুল বোঝে। তাই বার বার বলতে গিয়ে বলতে চেয়ে অনেক স্বপ্নের বুনিয়াদ দিয়ে তার লেখাগুলো তার লেখার মাঝে লুকায়িত স্বপ্নগুলো শুধুমাত্র এক নিমিষেই শেষ করছে কী বোর্ড এর ব্যাক স্পেস বাটন চাপ দিয়ে । এমনিভাবে তার মনের ভিতরে জমে থাকা কথাগুলো যেন নিষ্টুর কি বোর্ড এর ব্যাকস্পেস বাটন শেষ করে দিতে না পারে তাই শুভ তার হৃদয়ের সেই ভালোলাগা অনুভুতি গুলো সে তার সুন্দর বাধানো সেই ডাইরিটাতে মনের অব্যাক্ত কথাগুলো প্রতিদিন জমা করে রাখত আর অপেক্ষায় প্রহর গুণত। এভাবেই চলতে থাকে শুভর দিনকাল। লেকের ধারে শুভ ঠিক আগের মত সময় দিলেও আর এখন খুব কম সংখ্যক লোকই আসত এখানে । কেননা প্রকৃতির পরিবেশটা অনেক পাল্টে গেছে। লেকের ধার টা হয়ত আর আগের মত সৌন্দর্য দেখায় না তাই যান্ত্রিক সভ্যতার স্বার্থপর মানুষ গুলো এখন আর আসে না । সবাই চায় সুন্দরের পূজা করতে । কিন্তু কখনও তারা এটা ভাবে না যে অসুন্দর আছে বলেই তো আজ সুন্দরের এত কদর । আর তাই শুভ অন্য সব লোকের মত স্বার্থপর হতে পারে নি বলেই এখন লেকের ধারে নিয়মিত আসে । প্রতিদিন বিকেলে এখানে এসে আড্ডা দিত । আজও শুভ এখানে এসেছে । আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখনও দু একটা গাঙ্গচিল এর দেখা হয় সেই দৃশ্য সত্তি শুভকে অনেক আনন্দ দেয় । কিন্তু এই আনন্দ মনে হয় বেশিদিন স্থায়িত্ব হয় না । হঠাৎ একদিন শুভ দৃষ্টির সাথে চ্যাট করতে করতে কোন এক সময় কথা প্রসঙ্গে দৃষ্টি বলে ফেলে যে তার বি এফ আছে । দৃষ্টির কাছ থেকে এমন কথা শুনে শুভ কিছুতেই যেন মেনে নিতে পারছে না । আজ শুভ দৃষ্টির কাছ থেকে যে কথা শুনতে পেল তাতে শুভর মনের অব্যাক্ত কথা গুলো চিরদিনের জন্য যেন তার হৃদয়ে এবং তার ডাইরিতে দু মোলাটের মাঝখানেই আবদ্ধ হয়ে পড়ল । শুভ নিজেকে কি ভেবে সান্তনা দিবে বুজে উঠতে পারছে না। যাকে নিয়ে তার এত ভাবনা ,এত কল্পনা,এত স্বপ্ন ছিল সেটা হয়ত তার শুধু কল্পনার গন্ডিতেই আটকা পরে গেল।
শুভ দৃষ্টিকে মন থেকে ভুলে যাওয়ার জন্য তাকে আনফ্রেন্ড করে দেওয়ার সিন্ধান্ত নেয়। কিন্তু আনফ্রেন্ড করে দিলেই তো আর সে দৃষ্টিকে ভুলতে পাবে না কারণ শুভ তো দৃষ্টিকে তার হৃদয়ে জায়গা করে দিয়েছে।
আর শুভর হৃদয় থেকে তাড়াবেই বা কি করে? কারণ হৃদয় যে শুধু আশ্রয় দিতে জানে , তাড়াতে জানে না। তাই শুভ এক কঠিন সিন্ধান্ত নেয়। সে ভাবতে থাকে গোলাপ কে মানুষ যদি সত্তিকার অর্থে ভালবেসে থাকে তাহলে মানুষ কখনও গোলাপকে গাছ থেকে ছিড়ে এনে নিজের হাতে শোভা বর্ধন করবে না। কেননা গোলাপটা তো কিছুকক্ষণের মধ্যে হাতে শুকিয়ে যাবে। তাই যারা সত্তিকার অর্থে গোলাপকে ভালবাসে তারা অবশ্যই চাইবে না গোলাপটা ঝরে পরে যাক । আর যারা ভালবাসার নামে গোলাপকে গাছ থেকে ছিড়ে নিয়ে আসে এটা মুলত তাদের একান্তই ভাললাগা ,ভালবাসা না। তাই শুভ এটা ভাবল যে ভালবাসা মানে তো কাউকে কাছে পাওয়া না কিংবা কাউকে আবেগে আই লাভ ইউ বলে জড়িয়ে ধরা নয়। তাছাড়া ভালবাসার সবচেয়ে ভাল উপায় হল প্রতিদান পাওয়ার আশা না করে সারজীবন ভালবেসে যাওয়া। এভাবেই দেখতে দেখতে কেটে যায় শুভর দুটি বছর। তার ডাইরির পাতাগুলো ও ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এর মধ্যে দুজনই দুজনের মেবাইল নাম্বার নিয়ে ও অনেক কথা বলে। প্রতিটি কথাই দৃষ্টিকে নিয়ে তার প্রতিটি ভাবনাই জমা করে রাখত ডাইরিতে। কোন এক পড়ন্ত বিকেলে শুভ আজও বসে আছে সেই লেকের ধারে । এখন আর শুভ ফেসবুকে ততটা সময় দেয় না। এখন শুভ নির্জনে একাই বসে গান শোনা আর ঐ মাথার উপরে সেই বিশাল নিল আকাশ দেখেই তার সময় অতিবাহিত হয়। হঠাৎ কোন এক সময়ে মোবাইলের রিংটোন টা বেজে উঠে ।শুভ মোবাইলের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় দৃষ্টির ফোন ।
ফোনটা রিচিভ করেই শুনতে পায় দৃষ্টির কন্ঠস্বর
__ কি ব্যাপার শুভ এফ বি তে দেখি না যে।
__ এখন আর বেশি ভাল লাগে না তাই এফ বি তে থাকি না।
__ কেন? তুমি যাকে ভালবাস তার সাথে কিছু হয়েছে নাকি?
এর আগে অবশ্য শুভ দৃষ্টিকে বলছিল সে এক মেয়েকে খুবই ভালবাসে। তার সাথে প্রতিনিয়ত কথা বলে । কিন্তু সেই মেয়েটিই যে দৃষ্টি সেটা কিন্তু শুভ দৃষ্টিকে কখনো বলে নি।
__ না । ওর সাথে কি আর হবে । ওকে তো আমি নিজেই শুধু ভালবাসি । ও তো আমাকে ভালবাসে না ।
__ আচ্চা তুমি যে মেয়েটাকে ভালবাস তাকে কি কখনও বলেছ তুমি ওকে ভালবাস ।
__ না বলি নি ।
__ তোমার কথা শুনে হাসব না কাদব ভেবে উঠে পাইতেছি না । তুমি এত বোকা কেন? তুমি যদি ওকে তোমার ভালবাসার কথা নাই জানাও তাহলে ও বুজবে কেমন করে ।
__ মুখ দিয়ে ভালবাসি বললেই যে ভালবাসা প্রকাশ পায় সেটা তো না । ভালবাসি শব্দটা অনুভুতি দিয়ে বোঝাতে হয় বুজলে । আর আমি এটাও জানি যে যাকে আমি ভালবাসি সে অন্যএকজনকে ভালবাসে । আমি ওকে কাছে পাওয়ার জন্য কিভাবে ওর ভালবাসাকে গলা টিপে মারি বল । তাছাড়া আমি ভালবাসা বলতে কাউকে কাছে পাওয়াকে বুঝি না।
__ বুঝলাম । তোমার মত ছেলেই হয় না। তোমার কথা শুনে বুঝতেছি তুমি মারা যাবার পর তোমার ভালবাসার মানুষটা হয়ত জানতে পাবে যে তুমি ওকে ভালবেসেছিলে ।
__ মে বি। হুম আমি মারা যাওয়ার পর জানলেই ভাল হবে।
__ আচ্ছা এখন আমি তোমাক যেজন্য ফোন দিলাম, একটা খুশির খবর আছে।
__ কি খুশির খবর?
__ সামনে রবিবার আমার বিয়ে। বাবা মা এর সম্মতিতে বিয়ে হচ্ছে ।
শুভ কিছু না বলেই কি যেন ভাবনা গুলো মাথায় এসে ঘোরপাক খাচ্ছে ।
__ কি ব্যাপার কিছু বলছ না যে । ভাবছিলাম আমার এই খুশির খবর টা শুনে তুমিও অনেক খুশি হবে ।
__ খুশি হব না মানে । আমার তো আনন্দে নাচতে মন চাচ্ছে । শুভ একটু কন্ঠস্বর টা নিম্ন করে বলতেছে বিয়ের জন্য কংগ্রেস।
__ আরে বোকা কংগ্রেস না । কংগ্রাচুলেসন ।
__ সেটা যাই হোক। তুমি তো বুঝছ তাই না ।
__ হুম। তো আমাদের বাসায় আসছ কবে?
__ মানে আমার একটু... কি যেন বলার আগেই দৃষ্টি বলতেছে
__ আমি কোন মানে শুনতে চাই না । তোমাক আসতে হবে ব্যাস ।
__ দৃষ্টি বোঝার চেষ্টা কর
__ দেখো তোমার মনে আছে কিনা । তুমি তো একদিন বলছিলে যে আমার সাথে দেখা করতে আসবে । আমি তখন তোমাক বলছিলাম আমার বিয়েতে তোমাক ইনভাইট করব তখন আসিও । তাহলে এখন এভাবে বলছ কেন?
__ যখন বলছিলাম তখন একদম ফ্রি ছিলাম বাট এখন একটু বেশি ব্যাস্ত থাকি।
__ তার মানে তুমি আসবা না। বিশ্বাস কর দুজনের বন্ধুত্ব ফেসবুক থেকে মোবাইলে কথার মাধ্যমে হলেও অন্যসব বন্ধুর চেয়ে আমি তোমাক খুব কাছের ভাবছিলাম । তাই আমার জীবনের খুশির মুহুর্তে আমি তোমাক সামনাসামনি দেখেই আমার শ্বশুর বাড়ির মাটিতে পা ফেলতে চাই। যাক সব কিছুই চাইলেই তো আর পাওয়া যায় না। তোমার সাথে বন্ধুত্ব হওয়ার পর আমার এতটুকু আত্মবিশ্বাস ছিল যে তুমি আমার কথা অবশ্যই রাখবা।
__ দৃষ্টির মুখে এমন কথা শুনে শুভ আর না করতে পারল না । আচ্চা বাবা আমি যাব । ওকে
__ শুভর মুখ থেকে এমন কথা শুনে দৃষ্টি একটু খুশির স্বরে বলল তুমি সত্যি আসবা । প্রমিস।
__ হুম প্রমিস করলাম সত্তি যাব।
__ দুজনের ফোনে কথা বলতে বলতে সন্ধাও নেমে আসছে প্রায়।
__ শুভ বলল অনেক কথা বললাম বাই তাহলে।
__ ওকে বাই ভাল থেকো ।
শুভ দৃষ্টিকে কথা দিয়েছে তাকে তো অবশ্যই দৃষ্টির বিবাহে উপস্থিত থাকতে হবে । এ নিয়ে কেন জানি তার মনে একটা বাড়তি চাপ কাজ করতেছে । বেশি সে এটা নিয়ে চিন্তিত যে কি করে নিজে দাড়িয়ে থেকে তার বিবাহ দেখবে । ভালবাসা মানে কাউকে কাছে পাওয়া নয় এটা শুভ উপলব্ধি করলেও সে কি পারবে যাকে সে ভালবাসে তাকে নিজের চোখের সামনে হতে অন্য কারো হয়ে চলে যেতে । এসব কঠিন সত্য বাস্তব গুলোকে সে কিভাবে মেনে নিবে ।
ভাবতে ভাবতে দৃষ্টির বিয়ের দিনও ঘনিয়ে আসতে লাগল। দৃষ্টিকে তো শুভ কথা দিয়েছে তার বিয়েতে অবশ্যই যাবে। তাই হাজারো বাস্তবতায় মোকাবিলা করে শুভ দৃষ্টির বিয়েতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে তাকে ভাল একটা গিফট দেওয়ার জন্য ভাল চেয়ে একটা শাড়ি কিনে নিয়ে আসে। পরের দিন শুভ দৃষ্টির বিয়েতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে সেই দৃষ্টির জন্য কেনা শাড়িটা এবং তার জীবনের না বলা কথাগুলো জমে রাখা ডাইরিটা এবং প্রয়োজনীয় কাপড় নিয়ে দৃষ্টির বাসার উদ্দেশ্যে বের হয়। শুভ তার মাকে বিদায় জানিয়ে দৃষ্টির বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসে রহনা হয়।শুভর মা সবসময়ই শুভকে বলত দেখেশুনে যাবি আর সোমবারেই বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হবি কিন্তু । আচ্ছা মা ঠিক আছে আমি দৃষ্টির বিয়ের পরের দিনেই ওখান থেকে চলে আসব , তুমি কোন টেনশন কর না আমার জন্য । শুভ বাসে বসেই দৃষ্টিকে নিয়ে তার কল্পনাগুলোকে নিয়ে ভাবছে । কাল হয়ত দৃষ্টি অন্য কারো ঘরে চলে যাবে ।
এসব ভাবতে ভাবতে কোন এক সময়ে শুভ বাসের সিটেই ঘুমিয়ে পরে। দিন শেষে সন্ধা পেরিয়ে ঘরির কাটা 10 টায় গিয়ে পৌছে । বিষন্ন মনে শুভর চোখ এখনও বন্ধ হয়ে আছে ।ঘুমের ঘোরে বিভর শুভ হয়ত এটাই তার জীবনের শেষ ঘুম ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে পরিণত হয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতায় হঠাৎ কোথাও থেকে মানুষরুপি দৈত্যগুলো এসে চলন্ত বাসে পেট্রলবোমা ছোড়তে থাকে । সেই প্রেটল বোমার আঘাতে চলন্ত বাসে আগুন ধরে যায়। বাসের নীরব যাত্রী দের মুহুর্তের মধ্যেই তাদের শরীর হিংস্র আগুনের লোহিত শিখায় দগ্ধ হয়ে যায়। অসহায় যাত্রীদের চিৎকারে আকাশের বাতাস ভারি হয়ে ওঠে । শুভ জানালার পাশে বসায় তার পুরো শরীর দগ্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফায়ার সার্ভিস দলের লোকজন এসে আগুন নিভিয়ে বাসের যাত্রীদের মেডিকেলে নিয়ে আসে । শুভর শরীর দগ্ধ হয়ে গেলেও না বলা কথা ডায়রিটা এবং দৃষ্টির জন্য তার কেনা পছন্দের শাড়িটার জন্যই সে তার ব্যাগটাকে আগলে ধরে রেখেছিল । ব্যাগটার একপাশে অবশ্য একটু পুড়ে গিয়েছিল। সেই পোড়া ব্যাগটিকে জীবন মরণের মাঝামাঝি সময়েও সে আগলে ধরে রেখে মেডিকেলে ব্যাগটিকে সাথে করে নিয়ে এসেছিল । ডাক্তার শুভকে ট্রিটমেন্ট করার জন্য আসলে শুভ প্রথমেই ডাক্টরকে তার ব্যাগটি দেখিয়ে দিয়ে ব্যাগের ভিতর রাখা শাড়িটা যেন দৃষ্টিকে পৌছে দেয় সেটা ডাক্তারকে অনুরোধ করে। ডক্টর কার কাছে দিতে হবে জানতে চাইলে মৃত্যু যন্ত্রনাকাতর অবস্থায় শুভ মৃদ্রু স্বরে ব্যাগের মধ্যে রাখা ডাইরিটার কথা বলে । আকাশটা অনেক কালো অন্ধকারে ছেয়ে গেছে । মেঘের মধ্যে চাঁদ টাও কোথায় যেন হারিয়ে গেছে । মাঝে মাঝে বিশাল আকাশে দুএকটা তারার দেখা মিলে । আকাশের সেই তারাগুলো না জ্বলে বিশাল আকাশটাকে সুন্দর না করলেও চৌধুরী সাহেব তার একমাত্র মেয়ে দৃষ্টির বিয়েতে বিজলি বাতি দিয়ে বাড়িটাকে কিন্তু খুবই সুন্দরভাবে সাজিয়েছে । দৃষ্টি বারবার শুভকে ফোনে ট্রাই করতেছে কিন্তু শুধু বন্ধ দেখাচ্ছে । এদিকে শুভ দগ্ধ শরীরে মৃত্যু যন্ত্রনায় কাতরাতে কাতরাতে ডক্টরকে ডাইরিটার ব্যাপারে বলার কিছুক্ষণ পরেই মানুষরূপী পশুদের প্রতিহিংসার আগুনে দগ্ধ হয়ে চিরদিনের জন্য চলে গেছে না ফেরার দেশে । ডক্টরকে ডাইরিটার ব্যাপারে বললেও তৎক্ষণাৎ বিষয়টি ডক্টর দৃষ্টিকে জানাতে পারে নি কারণ ইতিমধ্যে অনেক লোক দগ্ধ শরীরে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে । তাই ব্যস্ততার কারণে ডক্টর ব্যাগটি খুলেও দেখার সময় পায় নি । এদিকে দৃষ্টি পরদিন সকাল পর্যন্ত অন্ত্যতপক্ষে 100 বার শুভকে ফোন দিয়ে বিরক্ত হয়ে মনমরা হয়ে বসে আছে । দৃষ্টি ভাবতেছে শুভ হয়ত আসবে না সে কারণেই সে ফোনের সুইচ অফ করে রাখছে । এতক্ষনে ডক্টর শুভর ব্যাগটি খুলে দেখার একটু সুযোগ পায়। ব্যাগের ভিতরে সুন্দর গিফট পেপার দিয়ে সাজানো একটি সেটা শাড়ি হবে ডক্টর বুঝতে পেয়েছে। কেননা শুভ মারা যাওয়ার আগে সেই শাড়িটার কথা বলেছিল । আর একটা সুন্দর ডাইরি আর কিছু কাপড় ছিল। ডক্টর ডাইরির প্রথম পাতা খুলেই সেখানে দৃষ্টি নামটি সুন্দরকরে বড় করে লেখা দেখতে পেল ।তার নিচে একটা মোবাইল নাম্বার ছিল । ডক্টর মোবাইল নাম্বার দেখে ভাবল এটাই হয়ত দৃষ্টি নামের মেয়েটির মোবাইল নাম্বার হবে । ডক্টর মোবাইল নাম্বারটি তার মোবাইলে উঠায় নাম্বারটিতে ফোন দিল । এদিকে দৃষ্টি শুভর ফোনের সুইচ অফ থাকায় বিরক্তবোধ করে বসে আছে । হঠাৎ আননোয়েন নাম্বার থেকে ফোন আসায় বিরক্ত বোধ করে কলটি কেটে দিল । এক এক করে ডক্টর তিনবার ফোন দিল । চতুর্থবারের বেলায় দৃষ্টি ফোন রিচিভ করে বলল
__ হ্যালো কে ?
__ আপনার নাম কি দৃষ্টি?
__ হ্যা । আমার নাম দৃষ্টি । কে আপনি ?
__ আমি সিলেট মেডিকেল কলেজ হসপিটাল থেকে বলতেছি । আপনি কি শুভ নামে কাউকে চিনেন ?
__ হ্যা চিনি ।কেন কি হয়েছে ওর । ওর তো আজকে আমাদের বাসায় আসার কথা ছিল ।
__ ডক্টর মৃত্যুর সংবাদটা মোবাইলে দিতে চাই নি । শুভর মৃত্যুর বিষয়টি না বলে দৃষ্টিকে হসপিটালে আসতে বলল ।
__ দৃষ্টি খুবই আতঙ্কের সাথে কি যেন বলবে তার আগেই ডক্টর ফোনটা কেটে দিয়েছিল।
এতক্ষণ শুভর ফোন বন্ধ থাকায় মিলা বিরক্তবোধ করছিল । কিন্তু এখন ডক্টরের কাছে কথা বলায় দৃষ্টি শুভর জন্য খুবই আতঙ্কবোধ করছে।দৃষ্টির আতঙ্কবোধ দুর করার জন্য সে মেডিকেল কলেজে চলে আসে। এর আগে কিন্তু দৃষ্টি শুভ কখনই সামনাসমনি দেখা করে নি। আজই তাদের প্রথম দেখা হবে। দৃষ্টি মেডিকেলের ভিতরে ঢুকেই সে বুঝতে পারে যে গতকাল রাতে বাসের মধ্যে প্রেট্রল বোমা হামলা হয়েছে তারই স্বীকার দগ্ধ মানুষগুলো হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে । অনেকে এখনও মৃত্যুর সাথে লড়াই করতেছে আবার অনেকে চিরদিনের জন্য পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে চলে যেয়ে তার নিথর দেহটি হসপিটালের বেডের উপর পরে আছে ।এমনই কিছু দৃশ্য দেখে দৃষ্টি আতঙ্কে শুভকে খুজে বেড়াচ্ছে। বিভিন্ন বেডে শুয়ে থাকা মারা যাওয়া মানুষগুলোর সাদা কাপড় তুলে মুখগুলো দেখছে । হঠাৎ দৃষ্টি একটি বেডে একটি যুবক ছেলের পা দুটো শুধু দেখা যাচ্ছে সেই বেডটার কাছে গেল। খুব ভয়ে ভয়ে মুখ থেকে সাদা কাপড়টি তুলতেই সেই ছেলেটির মুখটি দেখে তার আর বুঝতে বাকি রইল না। শুভ দৃষ্টিকে ফেসবুকের ইনবক্সেও ছবি দিয়েছিল । যাকে কখনও সে সামনাসামনি দেখে নি আর আজ যখন দৃষ্টি শুভকে সামনাসামনি দেখতে পেল ঠিক পৃথিবী থেকে শুভ বিদায় নিয়ে চলে যাবার পর ।দৃষ্টি শুভর পৃথিবী থেকে চলে যাওয়াটাকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। সে পাগলের মত করে কাঁদতে লাগল। কিছুক্ষণ পরেই ঐ ডক্টরটি এসে দৃষ্টিকে জিঙ্গেস করল আপনি কি দৃষ্টি? দৃষ্টি কান্নাস্বর কন্ঠেই হ্যা সুচক উত্তর দিল । তারপর ডক্টর পুড়ে যাওয়া ব্যাগটি থেকে দৃষ্টির জন্য কেনা সেই শুভর শাড়িটা দৃষ্টিকে দিয়ে বলল শুভ মারা যাওয়ার আগে আমাকে বলছিল এই শাড়িটা আপনাকে দিতে। শাড়িটা নিয়ে দৃষ্টি আরও বেশি করে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে লাগল । তারপর ডক্টর দৃষ্টিকে বলল শুভর ব্যাগে একটা ডাইরি ছিল সেখানেই আপনার নাম্বারটা পেয়েছিলাম । ডক্টর কি যেন বলবে তার আগেই দৃষ্টি ডাইরিটা কোথায় আছে জানতে চাইল । ডক্টর তখন দৃষ্টিকে ব্যাগটি দিয়ে বলল শুভর সাথে যা কিছু ছিল সব এখানেই আছে । দৃষ্টি ব্যাগ থেকে ডাইরিটা বের করেই ডাইরীর প্রথম পাতা উল্টাতেই তার নামটি সুন্দরভাবে লেখাছিল । পরে ডাইরির পাতাগুলোন আরও উল্টাতে উল্টাতে দেখতে পেল শুভ যেই মেয়েটিকে ভালবাসত সে আর কেউ ই নয় দৃষ্টি নিজেই । দৃষ্টি আজ এই মুহুর্তেই জানতে পারল যে শুভ তাকে প্রচন্ড ভালবাসত । পুরো ডাইরীর পাতাগুলোই শুধুমাত্র দৃষ্টিকে নিয়েই লেখা । শুভর না বলা কথাগুলো আজ দৃষ্টি যখন জানতে পারল কিন্তু কোন উত্তর দিতে পারল না । শুভর না বলা কথাগুলো যেমন শুভ তার হৃদয়েই জমা করে রেখেছিল আজ মিলা তার না বলা কথাগুলোর উত্তর দিতে চেয়েও দিতে পারে নি, কারণ যাকে দিবে সেই তো আজ পৃথবী থেকে চলে গেছে । দৃষ্টি পাগলের মত কাদতে কাদতে বলতে লাগল শুভ তুমি আমাক এত ভালবেসেছিলে কেন আগে বলো নি। আজ কেন তুমি আমাক স্বার্থপরের মত করে রেখে চলে গেলে । শুভ তুমি মারা যাও নি। দৃষ্টি ডক্টরকে চিল্লায় বলতে লাগল আমার শুভকে ওষুধ খেয়ে দিন । ও মারা যায় নি ,ও আমার সাথে অভিনয় করে ঘুমিয়ে আছে । শুভ প্লিজ তুমি ঘুম থেকে উঠ আমি বাকিটা জীবন তোমার সাথেই কাটাতে চাই। দৃষ্টি হসপিটালের মেঝেতে বসে পাগলের মত প্রলাপ বকতেছে আর কাদতেছে । সে এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না যে শুভ পৃথবী থেকে চলে গেছে । কিন্তু দৃষ্টিকে আজ এই পৃথিবীর স্বার্থপর বিধান টা যে মেনে নিতেই হবে । শুভ যে আর কখনও পৃথিবীতে ফিরে আসবে না । পৃথিবীটা বড়ই নিষ্টুর তার চেয়ে বেশী নিষ্টুর পৃথিবীর স্বার্থপর মানুষগুলো । সুন্দরের পুজারি সেই স্বার্থপর মানুষগুলো লেকের ধারটাতে আজও ভীড় জমায় । কারণ লেকের ধারটা আজ কাশবনের ফুলে আরও অনেক সুন্দর হয়ে উঠেছে । মুক্তনীল আকাশে আজও অনেক গাঙ্গচিল উড়ে বেড়ায় । লেকের ধারটাতে এখন অনেক মানুষের সমাগম ঘটে । শুধু এখন দেখা যায় না সেই প্রকৃতির রুপভোগবিলাসি সেই ছেলেটি যে প্রতিনিয়ত হাজারো ব্যস্ততার সুন্দর-অসুন্দর এর মাঝে সবসময়ই এখানে এসে বিকেলে আড্ডা দিত।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১৬ রাত ১১:০৬
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×