সিলেট অঞ্চলের অন্যতম প্রচলিত এক লোক সাংস্কৃতি ধামাইল গান। বিশেষ ধরনের এই সঙ্গীতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিশেষ ভঙ্গিমার নৃত্য পরিবেশনের রীতি রয়েছে সিলেট অঞ্চলে।
বাংলাদেশের সিলেট এলাকার পাশাপাশি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তরাঞ্চল, আসামের কাছাড়, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দিসহ দক্ষিণ আসাম ও উজান আসামের যে সব অঞ্চলে সিলেটি মানুষের বসবাস সেসব এলাকায় ধামাইলের প্রচলন রয়েছে।
ধামাইলের ইতিহাস নিয়ে নানা জনের নানা মত। অনেকের মতে ধামা শব্দ থেকে ধামাইল কথাটির উৎপত্তি, আবার আসামের কাছাড়ের দিকে হাসি-ঠাট্টাকে ধেমালি বলা হয়। আবার ধামাইলের অনেক গানে মজা কৌতুকের কথা থাকে, গান গাওয়ার সময় এক দল অন্য দলকে কৌতুকের ছলে গান গেয়ে ব্যাঙ্গ করে তখন অপর দল আবার গান গেয়ে পাল্টা উত্তর দেয়। এ থেকে ধামাইল নামের উৎপত্তি বলে অনেকে মনে করেন। আবার অনেকের মতে বাড়ির উঠানে এর আয়োজন করা হয় বলে একে ধামাইল বলে।
ধামাইলের প্রায় গানের কলিতে ‘বাইবে রাধারমণ’ শব্দবন্দের উল্লেখ রয়েছে। তাই রাধারমণ দত্তকে ধামাইল গানের মূল রচয়িতা বা জনক বলা হয়।
বিশেষ অঙ্গভঙ্গিতে বৃত্তাকারভাবে নেচে নেচে ধামাইল গান গাওয়া হয়। আবার গানের তালের সঙ্গে সঙ্গে নৃত্যের ভঙ্গিমা ও গতি বদল হয়। ধামাইল গানের ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ বাদ্যযন্ত্র ঢোল। প্রথমে একজন গানের কলি গেয়ে শুরু করেন তারপর সঙ্গী অন্যান্য নারীরা গেয়ে ওঠেন। প্রথমে গান কিছুটা ধীর গতিতে শুরু হলেও আস্তে আস্তে নৃত্যগীতের গতি বাড়তে থাকে।
অনেক সময় দেখা যায় বয়স্ক মহিলা বা শিশুকে মধ্যে বসিয়ে মহিলারা ঘুরে ঘুরে ধামাইল নৃত্য পরিবেশন করেন। এর কারণ, যে সব বয়স্ক মহিলা অন্য মহিলাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নৃত্য করতে পারেন না তারা বসে বসে গান করেন। দীর্ঘকাল এভাবে চলে আসায় তা এক প্রকার রীতিতে দাঁড়িয়েছে।
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধামাইল গান তার ঐতিহ্য হারাচ্ছে। একটা সময় ছিল সিলেটি মানুষের বাড়িতে কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে ধামাইল গান হবে না তা ভাবাই যেতো না।
আগে যেখানে ধামাইল গানে শুধু হাত তালি, ঢোল ও কাসা বাদ্যযন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হত, এখন সেখানে অন্যান্য যন্ত্রও ব্যবহৃত হচ্ছে। পাল্টে দেওয়া হচ্ছে গানের সুর ও কথা, এই সব কারণে ধামাইল গান তার নিজস্ব স্বকীয়তা হারাচ্ছে এবং দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে সিলেটের গ্রামীণ বা হাওরাঞ্চলের এই লোক সংস্কৃতিটি।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ৩:১২