somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাউথ কোরিয়ান ছবি মুসা ও সৌরভকে লেখা একটি চিঠি

১৩ ই নভেম্বর, ২০১২ ভোর ৫:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় সৌরভ, আন্তরিক প্রত্যাশা, ভাল আছো তুমি।
আজ তোমার সাথে সিনেমা নিয়ে কথা বার্তায় মুসা-সিনেমাটির কথা বলবো। কেন বলবো সেটা আগে বলি। সাউথ কোরিয়ান ছবি মুসা বা দ্য ওয়ারিয়র কে সেরা সাউথ কোরিয়ান ছবির তালিকার ১ নম্বরে রাখে অনেকেই।


মুসা-র পোস্টার

সাউথ কোরিয়ান ছবির একজন ফ্যান হিসাবে খুব তাই খুব আগ্রহ ছিল ছবিটা নিয়ে। ছবিটা দেখে হতাশ হইনি তবে ১ নম্বর টাইপের কিছু মনেও হয়নি। সেটা যুদ্ধের বীভৎসতা আমার ভাল লাগেনা শুধু এই কারণে তা না। অন্য কোরিয়ান ছবির সাথে তুলনা করলে আমার র‌্যাংকিং এ অনেক ছবিই এই ছবির উপরে থাকবে। তারপরেও মুসা-য় এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যেগুলো ছবিটিকে সব সময়ই সেরা ১০ কোরিয়ান ছবির তালিকার উপরের রো তে রেখেছে। সেই বৈশিষ্ট্যগুলো নিয়ে কথা বলার আগে ছবিটা সম্পর্কে তোমাকে কিছু জানাই।


মুসার-র একটি শটে জুং উ-সুং

২০০১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রিলিজ হওয়া মুসার ডিরেক্টর সুং-সু কীম – এর জন্ম ১৯৬১ সালে। তার অ্ন্যান্য বিখ্যাত ছবিগুলো হচ্ছে প্লিজ টিচ মি ইংলিশ (২০০৩), বিট (১৯৯৭), টেয়েংগুন এওডা (১৯৯৯) ইত্যাদি। মুসা-র চিত্রনাট্যও সুং-সু কীম এর লেখা। সুং-সু কীমকে বলা হয় কোরিয়ান এপিক ফিল্ম ডিরেকটর। ছবিটিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রসমূহে অভিনয় করেছেন জুং উ সুং, আন সুং-কি, জুন জিন মো এবং চীনা অভিনেত্রী ঝ্যাং জিই। কোরিয়ান এই সব নাম বলতে ও লিখতে আমার অনেক অস্থির লাগে। কিম কি দুক আর জুন হু বোং –এর নাম মনে রেখেছি কত কষ্টে। অথচ তাদের ছবিগুলো চাইলেও ভুলতে পারবো না সারা জীবন।


মুসা-য় জুন জিন মো ও ঝ্যাং জিই

চল, আবার মুসা-র প্রসঙ্গে আসি। ১৫৮ মিনিট রান টাইমের এই ছবি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ৮ মিলিয়ন ইউ এস ডলার বা প্রায় ৬৫ কোটি টাকা। ছবিটি ইউরোপ সহ অ্ন্যান্য দেশে দ্য ওয়ারিয়র ও দ্য আলটিমেট ওয়ারিয়স দুটো নামেই রিলিজ হয়েছিল। ১৩৭৫ সালের ঘটনা নিয়ে নির্মিত সেমি-হিস্টোরিক এই ছবির বেশির ভাগ শ্যুটিং হয়েছিল মরুভূমিতে। মঙ্গোলিয়ান সৈন্য বাহিনীর হাত থেকে মিং রাজকন্যাকে বাঁচানোর জন্য ৯ জন কোরিয়ান যোদ্ধার জীবন মরণ যুদ্ধ নিয়ে এই ছবির গল্প আবর্তিত হয়েছে। দেখেছ, ছবির বিষয়-বস্তু নির্বাচনে ব্যয়বুহল ছবি হচ্ছে এই বিষয়টি কিন্ত পরিচালকের মাথায় ছিল।


মুসা-র নায়িকা ঝ্যাং জিই ( এত সুন্দর মেযের এমন একটা নাম, কিমুনটা লাগে বল)

ছবিটি ২০০১ এর সেরা দশটি ব্যবসা সফল ছবির মধ্যে অষ্টম স্থানে ছিল। আই এম ডি বি – তে এই ছবির রেটিং ৭.২। ছবিটি ১৫৮ মিনিটের হলেও হংকং-এ ছবিটির ১২৯ মিনিটের ভার্সন ও ইউ কে তে ১৩২ মিনিটের ভার্সন মুক্তি পেয়েছিল।


মুসা-র অন্য একটি পোস্টার

ছবিটা নিয়ে সবার আগ্রহের বিষয়গুলো তোমাকে বলি এইবার। শুরু থেকেই ছবিটি নিয়ে সবার ব্যপক আগ্রহ ছিল কারণ এটিকে বলা হয় সাউথ কোরিয়ার বিগেস্ট মোশন পিকচার। কোরিয়ান ছবির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বাজেট, গ্রাফিক্স, অ্যারেঞ্জমেন্ট, আন্তর্জাতিক মানের নির্মাণশৈলী ও সিনেমাটোগ্রাফির কারণে ছবিটি শুরু থেকেই সবার আলোচনায় ছিল। ভাষার ক্ষেত্রেও ছিল একটি অভিনবত্ব। অনেকগুলো নেটিভ ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে ছবিটিতে, একটি বহুভাষীর চরিত্রও ছিল। মুসা-য় ইউন সাম্রাজ্য ও মিং সাম্রাজ্যের দ্বন্দে কোরিয়ান যোদ্ধাদের ভূমিকার বিষয়টি উঠে এসেছে। তা সঙ্গত কারণেই একাধিক ভাষার ব্যবহার হয়েছে ছবিতে।


মুসা-র ভিলেন ইউ রংগুয়াং

ছবিটির নির্মান শৈলী ব্রেভহার্ট এর কথা মনে করিয়ে দেয় যেন। কোরিয়ান ছবির কারিগরি উৎকর্ষতায় পৌঁছানোর যাত্রায় এ্ই ছবিই একাই অনেকটা পথ এগিয়ে দিয়েছে। অন্যান্য শিল্পমান সম্পন্ন কোরিয়ান ছবির মত এই ছবিতেও হিরো’স জার্ণির একটি অন্য রকমের রূপ দেখা যায়।


মুসা-র আরেকটি পোস্টার

ছবির দুই হিরো ইও সোল (জুং উ-সুং) আর চই-জুং (জুন জিন মো) এর মধ্যে দ্বন্দ ও সহ যোদ্ধার ভূমিকা দর্শকের মধ্যে নানা প্রত্যাশা তৈরী করলেও সেই পথে হাঁটেননি পরিচালক-চিত্রনাট্যকার সুং-সু কীম। বরং ছবির শেষে যেন দর্শকের আগ্রহের কেন্দ্রুবিন্দু হয় মাঝবয়সী দুর্দান্ত তীরন্দাজ দে-জুং(আন সুং-কি)।আবার সেই কোরিয়ান নাম, উফ্। কোরিয়ান সেরা ছবিগুলোতে একটা কমন বৈশিষ্ট দেখা যায় তা হলো ছবির ঘটনা প্রবাহ দর্শকের মনে নানা প্রত্যাশা তৈরী করলেও পরিচালক যেন তার লক্ষ্যেই অনড় থাকেন যে, ভাই আমি যা ঠিক করসি তাই দেখাব, তোমার আগে থেকে কিছু ভাইবা লাভ নাই।


মুসা-র আরেকটি লুক

ফিল্মার্স, সব মিলিয়ে ছবিটি তোমার ভাল লাগবে বলেই মনে হয়। ও আরেকটি ব্যাপার মঞ্জুরুল হক মঞ্জুকে ধন্যবাদ না জানালে এই ছবি নিয়ে কথা-বার্তা সম্পূর্ণ হবে না। কারণ ছবিটিও মঞ্জুই আমাকে দেখতে দিয়েছিল। ছবিটি দেখ, ছবিটি দেখার পরে তোমার অনূভূতি জানার অপেক্ষা আমার মধ্যে কাজ করছে। ভাল থেকো।

দীপংকর দীপন
১৩/১১/২০১২ : রাত ২ টা
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১২ ভোর ৫:২২
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×