স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির অনন্য নাম কমিউনিটি ক্লিনিক কে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার কিছু নেই।বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিক গ্রামীণ তৃণমূল মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় উন্নয়নশীল বিশ্বে মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এশিয়া, আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকার উন্নয়নশীল দেশসমূহে গ্রামীণ জনপদের মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় গড়ে তোলা হচ্ছে বাংলাদেশের আদলে কমিউনিটি ক্লিনিক। বাস্তবিক ক্ষেত্রে গ্রামীণ তৃণমূল মানুষের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক যে কতো অপরিহার্য তা তার পরিসংখ্যানের দিকে লক্ষ্য করলেই বোঝা যায়। কমিউনিট ক্লিনিক থেকে প্রতিমাসে ৮০ থেকে ৯০ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছেন। ১৩/২/২০১৬ তারিখে বৈশাখী টেলিভিশনের এক প্রতিবেদনে প্রকল্প পরিচালক জানান এপর্যন্ত ১৯৬৫০০ জন রোগী কে প্রসূতি সেবা দেওয়া হয়েছে। RCHCIB থেকে প্রকাশিত 'কমিউনিটি ক্লিনিক নিউজ লেটার ' এপ্রিল-২০১৫ সংখ্যায় উল্লেখ করা হয় যে '২০০৯ থেকে ২০১৪' সাল পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে স্বাস্থ্যসেবা নেন ৩৫.৬ কোটি লোক। প্রতিদিন গড়ে ৩৮ জন লোক সেবা নেন। রেফার করা হয় ৭০ লক্ষ রোগী কে। স্বাভাবিক প্রসব সম্পন্ন হয় ১৪৪০৪ টি। ৮৯৪ টি ক্লিনিকে স্বাভাবিক প্রসব সেবা অনুষ্টিত হচ্ছে। আর কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাভাবিক প্রসব পরিচালনা, স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান ও সেবাদানের যাবতীয় কার্যক্রম যিনি পরিচালনা করেন তিনি হচ্ছেন 'কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার' (সিএইচসিপি)। কমিউনিটি ক্লিনিক কে যদি একটি ফুল গাছের সাথে তুলনা করা হয় তাহলে সেই গাছের পরিচর্যা করে সাফল্যের ফুল ফোটাচ্ছেন এইসব 'কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার' (সিএইচসিপি)। কিন্তু বার বার আশ্বস্ত করলে ও এদের চাকুরি এখনো জাতীয়করণ করা হয় নি।
নৈতিকতার বিচারে ও 'কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার' (সিএইচসিপি) দের চাকুরী জাতীয়করণ বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনার দাবিদার। কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত ১৪০০০ কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার' (সিএইচসিপি) দের উপর নির্ভর করছে ১৪০০০পরিবার । এদের মধ্যে রয়েছে ৪৫০০ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপি দের মধ্যে ৫২ শতাংশ ই নারী। এদের মধ্যে বেশিরভাগ সিএইচসিপির সরকারি চাকরির বয়স শেষ হয়ে গেছে।সরকার দু’মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ১৪ হাজার কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)নিয়োগ প্রদান করে।২০১৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর প্রকল্প কার্যালয় থেকে চিঠি দিয়ে চাকরি জাতীকরণের নিশ্চয়তা দেয়া হয় ফলে অনেক সিএইচসিপি অন্যত্র চাকরী পাওয়া সত্তেও মানবসেবা মুলক এই চাকরী তে থেকে যান।সরকার দু’মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ১৪ হাজার কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)নিয়োগ প্রদান করে। কিন্তু ২০১৪ সালের ৩০ জুন এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষে প্রায় দু’বছর পেরোলেও হেল্থ প্রোভাইডারদের চাকরি জাতীয়করণের কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। কতৃপক্ষের এমন আচরনে হতাশ হয়ে অনেক সিএইচসিপি অন্য চাকুরিতে যোগ দিয়েছেন আবার অনেকে পাড়ি দিয়েছেন বিদেশে। এসব যোগ্য প্রশিক্ষিত সিএইচসিপি চলে যাওয়ায় শূন্য পদে আবার লোক নিয়োগ দিতে হচ্ছে ফলে সরকারের নষ্ট হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। আবার এইসব সিএইচসিপি দের চাকুরীর ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশ হওয়ায় কর্মক্ষেত্রে ও তার প্রভাব পড়ছে। কারণ একজন সিএইচসিপি যদি মানুষিক ভাবে উদ্ভিগ্ন থাকেন তবে কিভাবে তিনি সতস্ফূর্ত ভাবে সেবা প্রদান করবেন। উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করলে কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার' (সিএইচসিপি) দের চাকুরী জাতীয়করণের দাবী টি গুরুত্বপূর্ন নয় কী?
লেখকঃ সৈয়দ খায়রুল আমীন
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৩