কথিত-রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এমাজউদ্দিন কি এতোদিন গোরুবিজ্ঞানী ছিলেন?
সাইয়িদ রফিকুল হক
ঢাকা-বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য-নামধারী দেশের আত্মস্বীকৃত-পণ্ডিত ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ ইদানীং খুব দৌড়-ঝাঁপ-এর কাজ করছেন—দেশের কথিত-বিশদলীয়-জোট থেকে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীসংগঠন ‘জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান’কে বাদ দিতে। বর্তমানে তার হাবভাব দেখে মনে হয়: তিনি এব্যাপারে খুব আন্তরিক। আর দেশের স্বার্থে বুঝি এসব করছেন! আসলে, তা নয়! তিনি আগেও জাতির সামনে বহুবার এমনতর নাটক করেছেন, আর এখনও তা-ই করে যাচ্ছেন। আর তিনি এসব করছেন বিএনপি’র স্বার্থে। দেশের স্বার্থে তিনি বা তার মতো আত্মস্বীকৃত-পণ্ডিতরা সবসময় স্বাধীনতাবিরোধীদের তল্পিবাহক। আর এতে তাদের কোনোপ্রকার লজ্জা, দ্বিধা বা সংকোচ নেই।
আন্তর্জাতিক-বিশ্বে বিএনপি’র ভাবমূর্তি ষোলোআনাই মাটি হয়েছে। দুই-চারটি বাংলাদেশবিরোধীরাষ্ট্র ব্যতীত আর কেউই স্বাধীনতাবিরোধীদের প্ল্যাটফর্ম বিএনপিকে পছন্দ করছে না। এইসব বিপদ কাটিয়ে ওঠার জন্য অতিসম্প্রতি বিএনপি একাত্তরের চিহ্নিত-যুদ্ধাপরাধীসংগঠন ‘জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান’কে আমাদের দেশের ‘কথিত-বিশদলীয়বিষদলীয়-জোট’ থেকে বাদ দিতে চাইছে। মনে রাখবেন: বিএনপিরা দেশের স্বার্থে নয়—শুধু বিএনপি’র স্বার্থে জামায়াতকে আপাততঃ লোকদেখানোভাবে বাদ দিতে চাইছে। কিন্তু তাদের ভিতরগত ঐক্য ও সংহতি সবসময় অটুট ও অক্ষূণ্ন থাকবে। আর এব্যাপারে দেশের কথিত-আপসহীন-নেত্রী খালেদা জিয়া একেবারে আপসহীন! শুধু বাইরে এদের একটা তালাক-তালাক ভাব থাকবে। কিন্তু ভিতরে-ভিতরে তাদের সম্পর্ক আগের মতোই বহাল থাকবে। আর তাদের সম্পর্কের ‘কাবিননামা’ অক্ষত থাকবে। শুধু দেশের জনগণকে ধোঁকা দিতেই তাদের এই আপসহীন-উদ্যোগ! বিএনপি’রা এখন জঙ্গীনির্মূলে ‘জাতীয় ঐক্যে’র কথা বলছে! এজন্য বাইরে জামায়াতকে বাদ দেওয়ার নাটক করছে! আর এরই সূত্র ধরে বিএনপি’র চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিশ্বস্ত খাদেম ও উপদেষ্টা দেশের আত্মস্বীকৃত-পণ্ডিত ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেছেন: “জামায়াত ২০ দলের বোঝা, আর প্রয়োজন নেই।”—কী ভয়ানক কথা! এই জামায়াতকে না ছাড়ার জন্য বিএনপি’র পক্ষে একদিন এমাজউদ্দিনরাই জাতির সামনে কত যুক্তি দেখিয়েছে! এখন দেখছি ‘ভূতের মুখে রাম-নাম’!
আমাদের মনে রাখতে হবে: বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের উত্থান বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন চারদলীয়জোট নামক দেশবিরোধী অপশক্তির দুঃশাসনামলে। আর সেই সময় বাংলাদেশে ঘাঁটি গেড়েছিলো সিদ্দিকুল ইসলাম (কথিত-বাংলাভাই) আর বোমাসম্রাট শায়খ আব্দুর রহমানগং। আর এদের একমাত্র পৃষ্ঠপোষক ছিল বিএনপি-জামায়াত। আর দেশে এখনও যে-সব জঙ্গীতৎপরতা তার মূলেও এখন এই জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান ও তাদের অঙ্গসংগঠন ছাত্রশিবির। আর এদের একমাত্র আশ্রয়দাতা হলো বিএনপি। আর এর পক্ষে দালালি করার দায়িত্ব এমাজউদ্দিনগংদের।
জামায়াতকে এমাজউদ্দিনরা যদি সত্যি-সত্যি ত্যাগ করতে চায়—তাহলে, ভালো কথা। কিন্তু এই সত্য বুঝতে এমাজউদ্দিনদের ৪০-৪৫ বছর লেগে গেল! কারণ, বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানই তো স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানকে পুনর্জন্ম দিয়ে এর সঙ্গে চিরস্থায়ী মৈত্রীবন্ধন গড়ে তুলেছিলো। আর সেই সময় জামায়াতের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও হেড-আমির ছিল একজন রাজাকারপ্রেমিক জিয়াউর রহমান। আর সেই প্রেম কি এতো সহজে ভাঙ্গে? আর এই প্রেমের একজন নেপথ্য-কারিগর হলেন আজকের খালেদা জিয়ার ডানহাত এমাজউদ্দিন! এদের মুখে এখন জামায়াত-ত্যাগের কথা! আর এতোদিনে দেশের কথিত-রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এমাজউদ্দিন বুঝতে পারলেন—এখন জামায়াতকে ত্যাগ করার সময় এসেছে! তবে এতোদিন তিনি কী করেছিলেন? আর এতোদিন কি তিনি গোরুবিজ্ঞানী ছিলেন?
দেশের বিবেকবান যেকোনো মানুষই এর সঠিক জবাব দিতে পারবেন।
আজ আর নয়। সকলের জন্য শুভকামনা।
সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
০২/০৮/২০১৬
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:১৫