somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাইয়িদ রফিকুল হক
আমি মানুষ। আমি ত্বরীকতপন্থী-মুসলমান। আমি মানুষ বলে আমার ভুলত্রুটি হতেই পারে। বইপড়তে আমার ভালো লাগে। সাহিত্য ভালোবাসি। লেখালেখি আমার খুব শখের বিষয়। বাংলাদেশরাষ্ট্র ও গণমানুষের জন্য আমি লেখনিশক্তিধারণ করেছি।

ঘুষ ও ঘুষি

২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঘুষ ও ঘুষি
সাইয়িদ রফিকুল হক

সমাজে-রাষ্ট্রে এখন সাধু-সজ্জন ব্যক্তির দাম একেবারে কমে গেছে। এদের দাম পড়তে শুরু করেছে সেই আশির দশক থেকে। ভালোমানুষের এই দরপতনের অমানুষিক খেলা এখন আরও বেশি প্রকট। ভালোমানুষগুলো এখন সমাজে-রাষ্ট্রে সংখ্যালঘু। এখন পাশবিকতার চিরঅনুসারী আর এই পথের সম্রাটদের বিরাট পসার ও মর্যাদা। এরাই আজকালকার সমাজে-রাষ্ট্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ। এদের পতনের কোনো সম্ভাবনা নাই। এদের দরবৃদ্ধির পথ আরও সুগম হচ্ছে। এইজাতীয় প্রাণিদের সংখ্যা দিন-দিন বাড়ছে এবং তা আরও বৃদ্ধি পাবে। তার কারণ, মানুষের মতো দেখতে একশ্রেণীর লোভী-ইতর এদের ঘোরতর সমর্থক ও পদলেহনকারী।

সমাজে-রাষ্ট্রে এখন ঘুষ ও ঘুষির জয়জয়কার। এখানে, যে ঘুষ খেতে পারে আর ঘুষ দিতে জানে তার মর্যাদা খুব বেশি। আর যে যত ঘুষ দিতে পারে আর ঘুষ খেতে পারে—তার তত বেশি দাম। একই সঙ্গে যে বা যারা যেকাউকে অতিসহজেই নিজের প্রভাব খাটিয়ে ঘুষি দিতে পারে—সমাজে-রাষ্ট্রে আজ তারা তত বেশি প্রভাবশালী! এদের মর্যাদা সবার উপরে! সবাই এদের খুব ভয় পায়, মান্য করে, ভক্তিশ্রদ্ধাসহকারে একেবারে মাথায় তুলে রাখে! সমাজে-রাষ্ট্রে মাস্তান, পাতিমাস্তান, গুণ্ডাপাণ্ডা, দাপুটে লোক, ষণ্ডাপ্রকৃতির লোক, আর পেশীশক্তির অধিকারী অমানুষদের বিরাট আশ্রয়প্রশ্রয় ও সম্ভাবনা রয়েছে। এখন ঘুষ ও ঘুষি অনেকেরই বেঁচে থাকা আর টিকে থাকার প্রধান হাতিয়ার।

ঘুষদাতা-ঘুষখোর আর পেশীশক্তির অধিকারী প্রাণিগুলোর দাপট সমাজে-রাষ্ট্রে এখন সবচেয়ে বেশি। এদের সঙ্গে কেউ পারে না। এদের গতি অপ্রতিরোধ্য! এরা দুর্বারগতিতে এগিয়ে চলেছে এদের অভীষ্ট ধ্বংসাত্মক লক্ষ্যে। এদের আছে অর্থবল, জনবল, সরকারি বল, প্রভাবশালীদের সমর্থন-বল আর দেশের সর্বস্তরের নেতিবাচক মিডিয়া ও অসভ্য পত্রিকাগোষ্ঠীর মদদ। দেশের অসভ্য-ইতর ও বর্বর ইলেকট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়া সবসময় এদের পদলেহনে ব্যস্ত। সুতরাং, এদের গতি কে-কীভাবে রুখবে? সাধারণ মানুষের সামান্য প্রতিবাদ এদের গায়ের একটা লোমও ছিঁড়তে পারে না। আর পারবেও না কখনো। এর জন্য চাই সর্বাত্মক প্রতিরোধ ব্যবস্থা। আর এদের বিরুদ্ধে এই মহাব্যবস্থাপনা রাষ্ট্রকেই করতে হবে।

আজকাল আমাদের সমাজে-রাষ্ট্রে একশ্রেণীর অর্থলোভী-কুকুরের জন্ম হচ্ছে নিয়মিতভাবে। এদের কোনো হিতাহিতজ্ঞান নাই। এরা অর্থ পেলে যেকাউকে সমর্থন বা যেকারও পক্ষাবলম্বন করতে সামান্য কুণ্ঠাবোধও করে না। এদের পিতা, উপাস্য, আদর্শ ও পথপ্রদর্শক হলো একমাত্র অর্থ তথা অর্থদাতা। এরা চিরকাল অর্থপূজারী। দেশের ইলেকট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার বাকসর্বস্ব সুশীল-ভেকরা এতোটাই অর্থলোভী যে, এরা অর্থগন্ধে পাগল হয়ে একটা ‘গোলাম আযমে’র গুণকীর্তন করতেও ন্যূনতম লজ্জা বা দ্বিধাবোধ করে না। সমাজের তথা রাষ্ট্রের অতিনিকৃষ্ট প্রাণিগুলোর পক্ষে এরা দাঁড়াতেও সামান্য লজ্জাবোধ করে না। এরা অর্থপূজারী বলেই আজ নিজেদের হস্তগত করা ইলেকট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়াকে মানুষ ও মানবতার শত্রুদের পক্ষে গুণগান গাইতে সদাব্যস্ত রেখেছে।

সমাজের প্রায় প্রতিটি মানুষ এখন নিজেকে খুব পণ্ডিত আর বুদ্ধিমান ভাবে। আজকাল সদুপদেশ কেউ গ্রহণ করতে চায় না। ভাবখানা এমন যে, সে নিউটন কিংবা আইনস্টাইনের চেয়েও বেশি জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান! মূর্খতা যে এদের প্রধান সম্পদ—তা আমাদের বুঝতে আর বাকি নাই। এই নিম্নশ্রেণীর আত্মসর্বস্ব জীবগুলো নিয়মিত ঘুষ ও ঘুষির চক্করে পড়ে নিজের জীবনটা রসাতলে পাঠানোর পাশাপাশি আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রকেও জাহান্নামের পথে ঠেলে দিতে সামান্য কার্পণ্য করছে না। এরা অর্থের পূজারী আর লোভ ও লাভের সেবাদাস। এই নরপশুগুলোর প্রাণে একটুখানি বিবেকবোধ জাগাতে না পারলে সম্মিলিতভাবে আমাদের শান্তিতে বসবাস করা আর বেঁচে থাকার কোনো সম্ভাবনা নাই।

মানুষের বিবেক আজ এতোটাই নিচে নেমে গেছে যে, এদের কাছে মানুষ আর অমানুষ এখন সমান বিষয়! এই বিবেকহীন মানুষগুলোকে সামান্যদরে ক্রয় করতে ঘুষ ও ঘুষির অধিকারী ব্যক্তিবর্গের তেমন-কোনো বেগ পেতে হয় না। সামান্য অর্থের বিনিময়ে এখন দেদারসে বিক্রয় হচ্ছে মানুষের অমূল্য বিবেক! অর্থলোভে মরীয়া হয়ে মানুষ এখন রাতারাতি অমানুষে পরিণত হচ্ছে। আর সবখানে এদের নিয়ন্ত্রণ করছে ঘুষ ও ঘুষি!

যেখানে অর্থে কাজ হয় সেখানে অসৎ প্রাণিগুলো ঘুষ দিয়ে মানুষকে কিনে নিচ্ছে—আবার যেখানে ঘুষিতে কাজ হয় সেখানে খুব সহজেই তারা সামান্য ঘুষিতে মানুষের বিবেক দখল করে নিচ্ছে! অনেকেই এখন খুব ভীতসন্ত্রস্ত প্রাণি। এরা নিজের স্ত্রীকে ভয় পায়, একটু গরিব হতে ভয় পায়, কিছুটা অসচ্ছল মানুষ হতে ভয় পায়, অর্থবলে কারও চেয়ে সামান্য ছোট হতে ভয় পায়, আর সবসময় সুখপ্রাচুর্য হারাতে খুব ভয় পায়। এমনকি এরা আজকাল একজন সৎ ও আদর্শবান মানুষ হতেও ভয় পায়! এই অমানুষগুলোকে ঘুষ ও ঘুষিতে পরাস্ত করা এখন খুব সহজ। এই অর্থলোভী-পশুদের কারণে আজ আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র একেবারে রসাতলে যেতে বসেছে। কে রুখবে আজ এই পশুদের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা?

সমাজে-রাষ্ট্রে নষ্টমানুষের সংখ্যা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ-নামধারী একশ্রেণীর জীব দিনে-দিনে ভয়ংকর অমানুষে পরিণত হচ্ছে। অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয়সহ সকল ক্ষেত্রে আজ ভণ্ড ও অমানুষের ছড়াছড়ি। এভাবে সর্বক্ষেত্রে লোভী ও ইতরশ্রেণীর গণবিস্ফোরণ হলে একদিন আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র একেবারে মুখথুবড়ে পড়বে। সেদিন আমাদের পাশে দাঁড়াবার মতো আর-কেউ থাকবে না। তাই, নিজের পায়ে কুড়াল মারার আগেই আমাদের সজাগ ও সতর্ক হতে হবে।

সমাজ ও রাষ্ট্রকে বাঁচাতে চাইলে সর্বাগ্রে এই আগ্রাসী ও সর্বগ্রাসী ঘুষ ও ঘুষি কঠোরভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। মানুষকে এখনই জেগে উঠতে হবে। আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হওয়ার আগেই চাই সর্বাত্মক গণপ্রতিরোধব্যবস্থা।



সাইয়িদ রফিকুল হক
২১/০১/২০২০
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৬
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×