somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাপাই-এর গল্প

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাড়ে তিন বছরের পাপাই। অনেক কিছুই বুঝতে শিখেছে। বিশেষ করে আদর। আদর জিনিসটি ভালো করে বোঝে।
কয়েক দিন ধরেই ব্যাপারটি সে লক্ষ করছিল। কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারেনি। তার দিকে বাবার কোনোই খেয়াল নেই। খেয়াল যতটুকু সবটুকু মায়ের দিকে।
একদিন সহ্য বা ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করল তার।
বাসায় মেহমান এসেছে।
একজন পাপাইকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করল, ‘আব্বু কি তোমাকে অনেক আদর করে; না আম্মু বেশি করে?’
পাপাইর রাগ হলো, দুঃখও হলো।
বলে, ‘আব্বু তো শুধু আম্মুকে আদর করে, আমাকে তো চোখেই দেখে না।’
ড্রয়িংরুমে মেহমানেরা বসে ছিল। সেখানে হাসির রোল পড়ে গেল। ভেতরে রান্নাঘরে ছিলেন পাপাইর মা। তিনি ট্রে হাতে দ্রুত পায়ে ঘরে ঢুকলেন।
‘কী হয়েছে, আপা, এত হাসি?’
আপা তার স্বামীর দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসলেন। স্বামীও হাসলেন। পাপাইর মা আবার জানতে চাইলেন, ‘হাসির ব্যাপারটা কী বলুন না। আমিও আপনাদের সঙ্গে যোগ দিই।’
স্বামী ভদ্রলোক মুনির বলেন, ‘পাপাইর বাবা আসুক, তারপর বলি। আমরা একসঙ্গে হাসব।’
পাপাইর মা ভেতরের ঘরে গেলেন। বললেন, ‘ঠিক আছে, তা-ই হোক।’
মুনির সাহেব বললেন, ‘পাপাই, আম্মু তোমাকে কেমন আদর করে?’
‘আম্মুও আমাকে অল্প আদর করে।’
আবার হাসির রোল ড্রয়িংরুমে। হাসি শেষ হতে না হতেই দরজায় কলবেল।
বাসায় প্রবেশ করলেন পাপাইর বাবা রাজিক।
‘আরে, তোমরা এসেছ! আমি তো আকাশের চাঁদ পেলাম।’
মুনির হাত বাড়িয়ে দিলেন, ‘তাহলে চাঁদটা ধরো।’ রাজিক হ্যান্ডশেক করলেন। মুনিরের স্ত্রী তাবাসসুমও হাত বাড়িয়ে দিলেন। তাঁর সঙ্গেও হাত মেলালেন তিনি।
পাপাই তার আব্বুর দিকে তাকিয়ে বলে, ‘আমি কিন্তু আম্মুকে বলে দেব।’
‘কী বলবে, বাবা?’
‘তুমি আন্টির হাত ধরেছ।’
আবার হাসি মুনির দম্পতির। কিন্তু রাজিক কিছুতেই হাসতে পারলেন না। চা নিয়ে এলেন পাপাইর মা সাদিয়া।
‘এবার কিন্তু বলতেই হবে, কী নিয়ে হাসলেন আপনারা।’
মুনির বলে, ‘না না, তেমন কিছু না। পাপাইর মজার মজার কথা শুনে হাসছিলাম।’
‘ও, তাই। আমি ভাবছিলাম না জানি কী।’
তাবাসসুম জানতে চান। ‘পাপাই, তুমি কাকে ভালোবাসো?’
পাপাই বলে, ‘আব্বু-আম্মু চলে গেলে বলব।’
‘কোথায় গেলে বলবে?’
‘অন্য ঘরে গেলে বলব।’
মুনির সাহেব বললেন, ‘আপনারা একটু ভেতরের ঘরে যান তো ভাবি।’ পাপাইর মা-বাবা ভেতরের ঘরে যাওয়ার পর পাপাই বলে, ‘নুশরাতকে বেশি ভালোবাসি।’
ড্রয়িংরুমের পর্দা তুলে সে নুশরাতদের বাসা দেখিয়ে দিল। জোরে ডাকল, ‘নু শ রা ত।’
ডাক শুনে নুশরাত একটি পুতুল হাতে তাদের জানালার সামনে এসে দাঁড়াল। বয়স দুই বছর হবে।
মুনির সাহেব আর তাঁর স্ত্রী হেসে গড়িয়ে পড়েন আরকি। ভেতরের ঘর থেকে রাজিক বলেন, ‘আমরা কি এখন আসতে পারি?’
বাবার কথা শুনে পাপাই টান দিয়ে পর্দা ফেলে দেয়। আর পর্দা ফেলা দেখে পাশের বাসার নুশরাত চিৎকার করে কান্না জুড়ে দিল। সেই কান্না শুনে মুনির সাহেব আর তাবাসসুমের আবার হাসি।
পাপাই মুনিরের বসা সোফার ওপর দাঁড়িয়ে তাঁর মুখে হাত চেপে বলল, ‘আব্বু-আম্মুকে কিন্তু কিছু বলবে না।’
‘ঠিক আছে চাচা, বলব না।’
ঘরে এলেন পাপাইর মা-বাবা।
তাবাসসুম বলেন, ‘ভাবি, সবকিছু দেখি আপনি করছেন। কাজের মেয়েটা, কুলসুম কই?’
‘কুলসুম তো আমার ভাইয়ের ড্রাইভারকে বিয়ে করেছে। এখন আমার ভাইয়ের বাসাতেই আছে। নতুন একজন এসেছে। ওর নাম হাসনা।’ তাবাসসুম বলেন, ‘ওকে ডাকুন না, একটু ঠান্ডা পানি নিয়ে আসুক।’
‘আমি যাই। ও তো কান্নাকাটি করছে।’
‘নিশ্চয় বাড়ি যাওয়ার জন্য।’
সাদিয়া বলেন, ‘না না, ওসব কিছু না। হিন্দি সিরিয়ালের কোনো এক চরিত্রের মৃত্যু হয়েছে। সে জন্য কাঁদছে। বাস্তবে মরেনি। সিরিয়ালেই মারা গেছে। কিছুতেই ওর কান্না থামছে না।’
মুনির দম্পতির আবার হাসি।
কিন্তু রাজিক দম্পতি ভীষণ বিরক্তি প্রকাশ করলেন।
বললেন, ‘সারা দিনই সিরিয়াল নিয়ে বসে থাকে। আর রান্নাঘরে ভাত পুড়ে যায়। তরকারি পুড়ে যায়।’
মুনির উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘দোস্ত, হাসতে হাসতে অনেক রাত হয়েছে, এবার আসি।’
সেই সময়েই ঘুরে ঢুকলেন পাশের বাসার ভদ্রমহিলা। কোলে ছোট্ট নুশরাত। ফুটফুটে মেয়েটির দুচোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
ভদ্রমহিলা বললেন, ‘ভাবি, অনেক রাতে চলে এলাম। নুশরাত আপনাদের বাসায় আসার জন্য কান্না জুড়ে দিয়েছে।’
সাদিয়া বলেন, ‘ভালো করেছেন। আপনি তো আসেনই না।’
নুশরাতকে দেখে হয়তো লজ্জায় পাপাই দৌড়ে অন্য ঘরে চলে গেল।
নুশরাত মায়ের কোল থেকে হাত উঁচু করে পাপাইর চলে যাওয়ার দিকে দেখাল—সে-ও ওদিকে যাবে।
সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে মুনির দম্পতির আবার হাসি। রাজিক জানতে চান, ‘তোদের হয়েছে কী বল তো?’
মুনির বলেন, ‘অনেক কিছু হয়েছে। যা হয়েছে সবটুকু মজার। আমি আরেক দিন বলব।’

লিখেছেন: দন্ত্যস রওশন | তারিখ: ১৪-০২-২০১১
ভালবাস দিবসে আমার পাগলামি- ডাইরেক্ট কপি পেস্ট ফ্রম রস+আলো!!
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×