somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধুতরা, বাংলাদেশের বনৌষধি

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ধুতরা
বাংলাদেশের বনৌষধি

তৈয়ব খান

সাভারের ভাগলপুর এলাকার বংশাই নদীর পাড় ধরে হাঁটছিলাম। বাংলাদেশের আর সব নদীর মতোই বংশাইও মরে আসছে। খুব কষ্ট হয় নদীর মৃত্যু দেখলে। মরা নদীর পাড় ধরে হাঁটছিলাম। সাথে আমার স্ত্রী। বিকেলে আমরা প্রায়ই এমন বেড়াতে বেরুই। কুয়াশা পড়েছে চারিধারে, আঁধার হয়ে আসছে। মাগরেবের আজান হবে। আমরা ফেরার উদ্যোগ করতেই এক কৃষকের সীমের জাংলার নিচে চোখ আটকে গেল। এ গাছটাকে আমি চিনি। ধুতরা। কিন্তু এর ফুল সাদার বদলে কালো কেন? আর কেনই বা এমন ঘণ্টার মতো? কৌতুহল জাগলো। কাছে গিয়ে ছবি তুললাম। আমার স্ত্রীর চোখে কৌতুহল। ‘কী ব্যাপার, ধুতরার ছবি তুলছো কেন?’ ওর প্রশ্নের জবাবে আমি বললাম, এটি একটি কালো রঙের ধুতরা গাছ। সহজে চোখে পড়ে না। এমনিতেই আমাদের দেশে যত্রতত্র গাছপালা আর ঝোপঝাড় কেটে মানুষ সাবাড় করছে নিজের প্রয়োজনে। তাই এমন এমন ঔষধি গাছ হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশ থেকে। কৌতুক মাখা কণ্ঠে ও’ জানতে চাইলো- ‘কী হয় এ গাছ থেকে?’ আমিও পাল্টা বললাম- ‘কী হয় না তাই বলো! এটি একটি প্রথম শ্রেণির বিষাক্ত গাছ। কিন্তু মানুষের অনেক প্রয়োজনে পুরো গাছটাই মানে এর মূল, কা-, পাতা, ফুল ও ফল ব্যবহৃত হয়।
‘-তাই নাকি! এ গাছ তো আমাদের গ্রামে অনেক ছিল, এখন আর তেমন দেখা যায় না’ আমার কথার ফাঁকে কথা বলে আমার স্ত্রী।
আমি বললাম, ‘শোন তবে, এ গাছটি সম্পর্কে আমি ইন্টারনেটে পড়েছি। লেখাটি আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টচার্য লিখেছেন তার চিরঞ্জীব বনৌষধী নামের বইতে। তিনি যা লিখেছেন তার মর্মার্থ হচ্ছে, এটি একটি গুল্ম জাতীয় গাছ। এটি চার-পাঁচ বছর প্রায় বেঁচে থাকে। সাদা ফুলের গাছই সচারাচর দেখা যায। বর্ষাকালে ঘন্টার আকারে ফুল ফোটে। নাডুর মত গোল ফলের চারিদিকে ছোট ছোট কাঁটা আছে। বিষের কারণে কোন পশুপক্ষ এর পাতা বা ফুল খায় না। এর ফল পাকলে ফেটে যায়। এই যে দেখো, এটি কালো ধুতরা। এর পাতার শিরা, বোটা, গাছের ও ফুলের রং বেগুনি রঙের। কিন্তু এরা একই জাতের গাছ। এই গাছের ঔষধি গুণাগুণ হলো, যদি কাউকে পাগলা কুকুরে কামড়ায় তাহলে এ গাছের এক থেকে আধগ্রাম মূল পূনর্নবা নামের আরেকটি ভেষজ গাছের পাঁচ গ্রাম কাঁচা মূলের সাথে বেটে ঠাণ্ডা পানি বা ঠাণ্ডা দুধের সাথে খাওয়াতে হবে। তাহলে জলাতঙ্ক রোগ হবে না। আবার উন্মাদ রোগ সারাতে ধুতরার মুলের খুব সরু যে শিকড (মুল শিকড বাদ) কাঁচা এক গ্রাম শিলে বেটে তা আধসের পানিতে মিশিয়ে সেই পানি পঞ্চাশ গ্রাম আন্দাজ পুরানো চাল, আধসের দুধ ও প্রয়োজন মত চিনি দিয়ে পায়েশ বানিয়ে সকালে এবং বিকালে খাওয়াতে হবে। তবে রোগীর শারীরিক সক্ষমতা ও বয়স বিচার করে ঔষধ দিতে হবে। তবে অভিজ্ঞ হেকিম ছাড়া এটি সাধারণত ব্যবহার করা ঠিক না।
এর পাতা আবার টাক রোগ সারানোর ক্ষমতা রাখে। এ ক্ষেত্রে ধুতরা পাতার রস মাথার যেখানে টাক হয়েছে সেখানে লাগাতে হবে। তবে সমস্ত মাথায় এই রোগ হলে, সেক্ষেত্রে পাতার রস একদিন মাথার একপাশ আবার পরের দিন মাথার অন্যপাশ করে লাগাতে হবে। তবে দিনে একবারের বেশি লাগানো উচিত নয়, আর এক দিন বাদ এক দিন লাগালেই ভাল এবং মাথায় কোন যন্ত্রণা হলে এটি লাগানো ঠিক নয়।
অন্যদিকে ক্রিমি হলে ধুতরা পাতার রস দুই তিন ফোঁটা করে দুধের সঙ্গে খাওয়াতে হবে। মেয়েদের স্তনের ব্যথায়ও এটি ব্যবহৃত হয়। সেক্ষেত্রে ধুতরা পাতার রস তৈরি করে তাকে আগুনে জ্বাল দিয়ে মধুর মত ঘন করতে হবে। তার সেই ম- তুলি দিয়ে ব্যথার জায়গায় লাগাতে হবে। এতে ফোলাও কমে যাবে ব্যথার সাথে। এর সাথে যদি একটু আফিং মেলানো যায়- তবে তা আরও দ্রুত কাজ করে।
আবার কারো যদি ঘাড়ে বা পিঠে তীব্র ব্যথা করে, সেক্ষেত্রে ধুতরার পাতা ও চুন এক সঙ্গে রগড়ে রস বের করে সেই রসটা লাগালে ঐ ব্যথা কমে যায়। এটি অন্ততঃ দিনে তিন বার চার-পাঁচ ঘণ্টা পরপর লাগাতে হবে।
ধুতরা পাতার তেল খুব কাজে লাগে। বিশেষত পায়ের গোড়ালি ফেটে গেলে। সেক্ষেত্রে এক লিটার সরষের তেল, ধুতরোর পাতা ডাটাসহ নিয়ে রস বানাতে হবে দুই লিটারের মতো। আর শুধু পাতা বাটা নিতে হবে একশ’ গ্রামের মতো। তারপর সরিষার তেল আগুনে জ্বাল দিয়ে ফেনা মরে যাবার পর ধোঁয়া উঠা অবস্থায় নামিয়ে নিয়ে ঠা-া করতে হবে। এরপর একটু ঠান্ডা হলে ঐ রসটা এবং ঐ পাতা বাটা অল্প অল্প করে মেশাতে হবে। মিনিট পনের পরে আন্দাজ দুই লিটার পানি মিশিয়ে আবার তাকে জ্বাল দিতে হবে। আগুনে জ্বালের ফলে পানি শুকিয়ে গেলে নামিয়ে ঐ তেলটাকে ছেকে নিতে হবে। এখন এ তেল দিয়ে ছুলি রোগ, কানের যন্ত্রণায় ব্যবহার করা যায়।
কানে, কপালে (শ্লেষ্মার কারণে) যন্ত্রণা হলে, কানে এই তেলের ফোঁটা দেওয়া যায় আর কপালের যন্ত্রণায় একটু তেল কপালে মালিশ করতে হয়।
আবার বাতের ব্যথায় ধুতরা পাতার রসের সাথে সরষের তেল মিশিয়ে গরম করে মালিশ করলে কমে যায়। কারো ফোঁড়া হলে ধুতরার পাতার রসের সাথে সামান্য একটু গাওযা ঘি মিশিয়ে প্রলেপ দিলে ফোঁড়া পেকে যায়। তবে প্রতিটি ব্যবহারে সাবধানতা দরকার। কেননা, এই গাছটি খুবই বিষাক্ত, তাই সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হবে। খুব অভিজ্ঞতা না থাকলে ব্যবহার না করাই ভাল।
বাংলাদেশের বনৌষধিতে পরিপূর্ণ একটি দেশ। এখনো কাঁশি হলে গ্রামের মুরুব্বিরা তুলসি বা বাসক পাতা ব্যবহার করে। যেমন কোথায় কেটে গেলে ব্যবহার করে গাঁদাফুলের পাতার রস। রক্ত পড়া বন্ধ হয় তাতে। কিংবা দাঁতের যন্ত্রণায় গরম পানির সাথে লবণ মিশিয়ে ব্যবহার করে কঁচি পেয়ারার পাতা। তাতে কাজও হয়। তাই বলছি- কোন গাছ কেটে নিপাত করার আগে একবার ভাবুন, এটি আপনার কত উপকারে লাগছে।

লেখক পরিচিতি
কবি, লেখক ও প্রকাশক
অরুণালোক প্রকাশনী
গে-া, সাভার, ঢাকা।
মোবাইল ঃ ০১৯৪২-৮৪৭-২০৭
ই-মেইল ঃ

২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×