রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ 11 দফার ভিত্তিতে নিরপেক্ষতা প্রমাণে 14 দলের দেয়া আলটিমেটামের আজ শেষদিন। একই সঙ্গে 8 দফার ভিত্তিতে এলডিপিও সময় বেঁধে দিয়েছে। আওয়ামী লীগসহ তাদের মিত্রশক্তির দাবি পূরণ ও নিরপেক্ষতা প্রমাণ দূরে থাক, উল্টো রাষ্ট্রপতির বৃহস্পতিবারের বক্তব্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। 14 দল বলেছে, তার বক্তব্য ইমপিচমেন্টযোগ্য অপরাধ। রাষ্ট্রপতি সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং সুশীল সমাজের কাঠগড়ায় এখন সংবিধান লংঘনের দায়ে বিতর্কিত ও অভিযুক্ত। এতদিন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন 14 দল, এলডিপিসহ প্রধান রাজনৈতিক শক্তির প্রতিপক্ষ ছিল বিএনপি জোট ও আজিজের নির্বাচন কমিশন, সেখানে আজ সব আড়াল করে রাষ্ট্রপতি নিজেই দাঁড়িয়েছেন তাদের মুখোমুখি। 14 দল বলছে, তাদের সামনে এখন আর কোন পথ খোলা নেই। যা হবার হবে, রোববার থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন- লাগাতার অবরোধ। সব প্রস'তি চূড়ান-। দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিচার্ড বাউচার আজ ঢাকায় এসে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করবেন। বাউচার যদি আশার আলো জাগাতে পারেন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের নিশ্চয়তা দিয়ে আলটিমেটাম বাড়ানোর সময় চান তাহলে 14 দল চিন-াভাবনা করতে পারে। তবে জাতিকে অবহিত করেই তারা সব করবে। না হয় 14 দল কাল থেকে কঠোর লাগাতার অবরোধ কর্মসূচিই পালন করবে। 14 দলের নেতারা বলছেন, রাষ্ট্রপতি প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিরপেক্ষতার প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি বৃহস্পতিবার তার বিএনপির দলীয় চরিত্র উন্মোচন করেছেন, যা শুধু সংবিধান লংঘন নয়, রীতিমতো সংবিধানের বাইরে। নিরপেক্ষ থাকার বদলে দলীয় এজেন্ডা বাস-বায়নে প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন রাষ্ট্রপতির শাসন জারির চেষ্টা করছেন_ এমন অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন 14 দল কাল রোববার থেকে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে রাজপথ উত্তাল করতে নামছে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 24 ঘণ্টার মধ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে দেশবাসীকে শান-িপূর্ণভাবে রাজপথে নেমে 12 নভেম্বর থেকে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি পালন করতে হবে। তিনি রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করে বলেন, এখনও সময় আছে, পদক্ষেপ নিন। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মানুষ যাতে আপনাকে বিএনপিদলীয় নয়, নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ মনে করে। অন্যথায় রাজপথ ছাড়া অন্য কোন পথ থাকবে না।
শুক্রবার ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের থানা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। সন্ধ্যায় ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় শেখ হাসিনা দলীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, 28 অক্টোবরের মতো বিএনপি-জামায়াত নানা ষড়যন্ত্র করছে। শোনা যাচ্ছে পুলিশের ওপর গুলি চালিয়ে ওরা আওয়ামী লীগ ও 14 দলের ওপর দোষ চাপাতে চায়। এজেন্ট প্রবেশ করিয়ে নানা ঘটনা ঘটাতে চায়। তারপর মিথ্যাচারে লিপ্ত হতে চায়। তাই সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনে ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে এসে ছবি তুলে রাখতে হবে।
শেখ হাসিনা হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, চক্রান--ষড়যন্ত্র করে জনগণের ওপর আঘাত এলে দেশবাসী বসে থাকবে না। তিনি '96-এর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশে বলেন, জনগণের ওপর আঘাত এলে কি হয়_ তা 15 ফেব্রুয়ারির নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিন। সাবেক বিরোধী দলের নেতা বলেন, আগামীকালের অবরোধ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র হবে। এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেই অবরোধ সফল করতে হবে। তিনি বলেন, জনতার শক্তিই সবচেয়ে বড় শক্তি। তাই দাবি আদায়ের মাধ্যমে দেশে একটি অবাধ, সূষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। জনগণ বিএনপি-জামায়াত জোটের জবাব ভোটের মাধ্যমেই দেবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক বক্তৃতার উদ্ধৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির নেত্রীর কথাবার্তায় মনে হয় যেন চোরের মার বড় গলা। তিনি হুমকি-ধামকি দিয়ে জনগণের কণ্ঠ স-ব্ধ করতে চান। মনে করছেন তার হুমকি-ধামকিতে জনগণ দমে যাবে। তার উদ্দেশ্য এভাবে জনগণকে দমিয়ে ভোট চুরি করবেন। কিন' জনগণ জানে চোরের মার বড় গলার আওয়াজ কীভাবে বন্ধ করে দিতে হয়। তাই হুমকি-ধামকি দিয়ে জনগণের কণ্ঠস্বর স-ব্ধ করা যাবে না।
14 দল অভিযোগ করেছে, বৃহস্পতিবার সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে দেয়া ভাষণে মনে হয়েছে রাষ্ট্রপতি প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ, বিএনপি ও আজিজের নির্বাচন কমিশন একই সূত্রে গাঁথা। উপদেষ্টা পরিষদ নিষ্ক্রিয় করে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হয় বিএনপির সাজানো প্রশাসন বা নির্বাচনী ছকের বাগান রক্ষা করে একতরফা নির্বাচন নতুবা নির্বাচন ভণ্ডুল করতে তৎপর হয়েছেন। 14 দলের নেতারা বলছেন, তাদের সামনে এখন জনগণের কাছে যাওয়া ছাড়া কোন পথ নেই। যা হবার হবে, তারা কঠিন আন্দোলন শুরু করছেন। এবার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন- লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার হওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে 14 দলের সঙ্গে এলডিপি যুগপৎ আন্দোলনের ধারায় রাজপথে নামবে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল এলডিপির সঙ্গে নিয়মিত যেগাযোগ রক্ষা করছেন। এলডিপির নির্বাহী সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদও দাবি আদায়ে 12 নভেম্বর থেকে রাজপথে নেমে আসার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। 14 দল নেতারা বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ 11 দফার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন ঢেলে সাজানোসহ নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে পারেননি। বরং বৃহস্পতিবার সচিবদের সভায় দেয়া বক্তব্যে তার প্রতি সবার অবিশ্বাস অনেক উঁচুতে জায়গা নিয়েছে। তার প্রতি সবার শেষ আস্থাটুকু হারিয়ে যায়। 14 দলের নেতারা বলেন, বঙ্গভবনের স্টাফদের ব্যাপারে তারা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে বলেছিলেন পরিবর্তন করতে। এছাড়া 11 দফার ভিত্তিতে তারা 3 নভেম্বর পর্যন- আলটিমেটাম দেয়ার পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা সুধা সদনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রতিনিধি পাঠিয়ে সময় চেয়েছিলেন। একই সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতও সময় বাড়াতে অনুরোধ করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা পল্টনের মহাসমাবেশ থেকে 7 দিন সময় বাড়িয়ে 12 নভেম্বরের মধ্যে দাবি আদায় না হলে লাগাতার অবরোধের ঘোষণা দেন। কিন' এ সময়ে রাষ্ট্রপতি তাদের আস্থা অর্জনের জন্য কোন পদক্ষেপ নেননি। বরং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থানের প্রতি সায় দিয়ে রাষ্ট্রপতি, সিইসি ও নির্বাচন কমিশন অনড় অবস্থান নেয়। এমনকি বেগম খালেদা জিয়া উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে নির্বাচন কমিশন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি না করার যে হুকুম দিয়েছেন তার সঙ্গেই যেন রাষ্ট্রপতি ও সিইসি তাল দিয়ে চলছেন। নেতারা বলছেন, বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির ভাষণের পর আর জাতির মনে উৎকণ্ঠা থাকার কথা নয়। বিএনপি জোটও অবরোধের সময় রাজপথে থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। উভয় পক্ষ যদি রাজপথে নামে কাল রোববার থেকে দেশ সংঘাতময় হয়ে উঠতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। সিইসি আজিজকে বিদায় করে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের ঘোষণা না দিলে এ অবরোধ বন্ধ হওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়ে দিয়েছে 14 দল। মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রেসিয়া এ বিউটেনিস বুধবার আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে আরও সময় দিতে বলেছিলেন। শেখ হাসিনা তাকে বলেছেন, 11 তারিখ পর্যন- রাষ্ট্রপতির ভূমিকা দেখে তিনি সিদ্ধান- নেবেন। আজ রাতে শেখ হাসিনার সঙ্গে 14 দল নেতাদের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন' বৃহস্পতিবারই রাষ্ট্রপতির ভাষণে তার প্রতি শেষ আশাটুকুও তলিয়ে যাওয়ায় ওই রাতেই আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সঙ্গে তার দলের সিনিয়র নেতারা কথা বলে চূড়ান- আন্দোলনের সিদ্ধান- নেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগরীর ওয়ার্ড ও থানা নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড বৈঠক করেছে। রাতে অনুষ্ঠিত হয়েছে দলের ওয়ার্কিং কমিটির সভা। 14 দলের নেতারা শুক্রবার দিনভর নানা সভা-সমাবেশ করেছেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বিভিন্ন এলাকায় নেতাকমর্ীদের নির্দেশ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার দেখা করতে গেলে তিনি বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার রিমোট কন্ট্রোলে কাজ করছেন রাষ্ট্রপতি।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল বলেছেন, রাষ্ট্রপতি যে বক্তব্য দিয়েছেন এজন্য তাকে ইমপিচমেন্ট করা যায়। তিনি একদলীয় কায়দায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার চালাবেন, আমরা বসে থাকব_ তা হবে না। যে কোন পরিস্থিতির জন্য রাষ্ট্রপতিই দায়-দায়িত্ব বহন করবেন। আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে যাচ্ছে। আজিজকে বিদায় করে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন না করা হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। 28 অক্টোবর অবরোধ প্রত্যাহার হয়েছিল। এবার শুরু হলে প্রত্যাহার হবে না।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, পরিস্থিতি রাষ্ট্রপতি আরও কঠিন করলেন। তিনি রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করার চেষ্টা করছেন। রাষ্ট্রপতি, খালেদা জিয়া ও সিইসি একই সূত্রে গাঁথা। আমাদের সামনে আন্দোলন ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই।
আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, রাষ্ট্রপতি সংবিধান লংঘন করে এখন সংবিধানের বাইরে অবস্থান নিয়ে কথা বলছেন। আমাদের সামনেও জনগণের শক্তি ছাড়া কোন পথ খোলা নেই। যা হবার হবে। রাজপথেই ফয়সালা হবে।
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, রাষ্ট্রপতি উপদেষ্টা কাউন্সিলকে পাশ কাটিয়ে সংবিধান বহিভর্ূতভাবে দেশ পরিচালনায় অগ্রসর হয়েছেন। বিএনপি-জামায়াতের দলবাজির প্রশাসনের প্রতি আস্থা স্থাপন করেছেন। তার বিএনপিদলীয় চরিত্র 12 দিন পর উন্মোচন করেছেন। আজিজ-জাকারিয়াদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি আজ গণতন্ত্র ও নির্বাচনের পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তিনি হয় একতরফা পাতানো নির্বাচন চান, না হয় নির্বাচন ভণ্ডুল করতে চান।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



