somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবরি মসজিদে ১ম আঘাতকারীর ইসলাম গ্রহণ ৪র্থ পর্ব

১০ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফলে একজন দু’জনের কান থেকে গোটা এলাকায় একথা ছড়িয়ে পড়ল। হিন্দুদের কান পর্যন্ত পৌঁছে যায়। ফলে এলাকার প্রভাবশালী হিন্দুদের এ নিয়ে মিটিং হয় এবং সিদ্ধান্ত হয় যে, তাদের দু’জনকেই রাতের বেলা মেরে ফেলতে হবে। অন্যথায় তাঁরা অনেক লোকের ধর্ম নষ্ট করে দেবে। তাদের এই মিটিংয়ে একজন ধর্মত্যাগী উপস্থিত ছিল। সে ইমাম সাহেবকে গোপনে তাদের চক্রান্তের কথা জানিয়ে দেয়। ফলে আল্লাহর মেহেরবানিতে রাতের অন্ধকারে তাদেরকে গ্রাম থেকে বের করে দেয়া হয়। তারা ফুলাত গিয়ে পৌঁছেন। পরে তাদেরকে ৪০ দিনের জন্য তাবলিগ জামায়াতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরপর আমীর সাহেবের পরামর্শে যোগীন্দর (ওমর) তিন চিল্লাও দেয়। পরে যোগীন্দরের মা-ও মুসলমান হয়ে যায়।

এরপর মুহাম্মদ ওমরের (যোগিন্দর) বিয়ে হয় দিল্লীর এক ভালো মুসলিম পরিবারে। এখন তারা বেশ আনন্দের সঙ্গেই দিল্লিতে সপরিবারে বসবাস করছেন। গ্রামের জায়গা-জমি, ঘর-বাড়ি সব বিক্রি করে তারা দিল্লীতে একটি কারখানা দিয়েছেন।

প্রশ্ন : মাস্টার সাহেব! আমি আপনাকে আপনার ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে প্রশ্ন করেছিলাম। আমি জানতে চেয়েছিলাম আপনি কিভাবে মুসলমান হলেন? আপনি যোগীন্দরের ও তার পরিবারের (মুসলমান হবার) কাহিনী শোনালেন। যদিও তা খুবই চমকপ্রদ ও বিস্ময়কর, কিন্তু আমি তো আপনার ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে জানতে চাই, কিভাবে আপনি ইসলাম গ্রহণ করলেন সে সম্পর্কে।

উত্তর : প্রিয় ভাইটি আমার! আসলে আমার ইসলাম গ্রহণের কাহিনী এর থেকে আলাদা করা সম্ভব নয়। এজন্য আমি এর প্রথম অংশ শোনালাম। এখন দ্বিতীয় অংশ শুনুন।

১৯৯৩ সালের ৯ মার্চ আমার বাবা হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বাবরি মসজিদ ভেঙে দেয়া এবং তাতে আমার অংশ গ্রহণ তাকে খুবই আঘাত দিয়েছিল। তিনি প্রায়ই আমার মাকে বলতেন, মালিক আমাকে মুসলমানদের মধ্যে জন্ম দিলেন না কেন? আমি যদি মুসলমানদের ঘরে জন্ম নিতাম তাহলে অন্তত জুলুম-নিপীড়ন সহ্যকারীদের তালিকায় আমার নাম থাকত। তিনি আমার পরিবারের সদস্যদের বলে গিয়েছিলেন, আমি মারা গেলে আমার লাশের কাছে যেন বলবীর না আসে, প্রথা ও রেওয়াজ মাফিক আগুনে যেন পোড়ানো না হয়। হিন্দুদের শ্মশানে যেন না নেয়া হয়। পরিবারের লোকেরা তার অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ি সব কিছু করে। আট দিন পর আমি আমার বাবার মৃত্যু সংবাদ পাই। এত আমার মন ভেঙে যায়। তার মৃত্যুর পর বাবরি মসজিদ ভাঙা আমার কাছে জুলুম মনে হতে থাকে এবং গর্বের বদলে আফসোস হতে থাকে। আমার অন্তর যেন হঠাৎ দ্প কের নিভে যায়। আমি বাড়ি গেলে মা আমার বাবার কথা স্মরণ করে কাঁদতে থাকেন এবং বলতে থাকেন এমন একজন ভালো মানুষকে তুই কষ্ট দিয়ে মেরে ফেললি! তুই কতটা নিচ ও হীন জাতের মানুষ। মায়ের এ ধরনের আচারণের কারণে আমি বাড়ি যাওয়া বন্ধ করে দেই।

জুন মাসে মুহাম্মদ ওমর (যোগিন্দর) তাবলিগ জামায়াত থেকে ফিরে এলো। সে পানিপথে আমার সঙ্গে দেখা করল এবং তার পুরো ঘটনা আমাকে বলল। বিগত দু’মাস থেকে আমার মন সব সময় ভীত-সন্ত্রস্ত থাকত, না জানি কোনো আসমানি বালা-মুসবিত আমার ওপর এসে পড়ে। বাবার দুঃখ ও মনোকষ্ট এবং বাবরি মসজিদ ভাঙার দরুন আমার মন সব সময় খারাপ থাকত। মুহাম্মদ ওমরের কথা শুনে আমি আরও বেশি চিন্তিত হয়ে পড়লাম।

ওমর ভাই আমাকে বললেন, আমি যেন ২৩ জুন সোনিপথে মাওলানা সাহেবের সাথে গিয়ে অবশ্যই দেখা করি। আরো ভালো হয় যদি তার সঙ্গে আমি কিছু দিন থাকি। আমি প্রোগ্রাম বানালাম। কিন্তু পৌঁছতে আমার কিছুটা দেরি হয়। ওমর ভাই আমার আগেই পৌঁছে গিয়েছিল এবং মাওলানা সাহেবকে আমার অবস্থা সম্পর্কে সব বলেছিল। আমি সেখানে গেলে মাওলানা সাহেব আমাকে কাছে টেনে নিলেন এবং বললেন, যোগিন্দরের সঙ্গে সর্বময় মালিক যা করেছেন আপনার সঙ্গেও একই রূপ ব্যবহার করা হতে পারে। আর মালিক যদি এই জগতে শাস্তি নাও দেন তাহলে মৃত্যুর পর চিরস্থায়ী জীবনে যেই শাস্তি মিলবে আপনি তা কল্পনাও করতে পারবেন না।

এক ঘন্টা মাওলানা সাহেবের সাথে থাকার পর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আসমানি বালার হাত থেকে বাঁচতে হলে আমাকে অবশ্যই মুসলমান হতে হবে । মাওলানা সাহেব দু’দিনের জন্য বাইরে কোনো সফরে যাচ্ছিলেন। আমি তার সাথে যেতে চাইলাম। তিনি খুব খুশি হয়েই অনুমতি দিলেন।
একদিন হরিয়ানা, এরপর দিল্লী ও খোর্জার সফর ছিল। দু’দিন পর তিনি ফুলাত ফিরে এলেন। এ দু’দিন আমার মন ইসলাম গ্রহণের জন্য তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আমি ওমর ভাইকে আমার ইচ্ছার কথা বললাম। সে খুব খুশি হয়ে মাওলানা সাহেবকে তা জানাল। আলহামদুলিল্লাহ! ২৫ জুন ১৯৯৩ যোহর নামাযের পর আমি ইসলাম কবুল করি। মাওলানা সাহেব আমার নাম রাখেন মুহাম্মদ আমের। ইসলাম সম্পর্কে পড়াশোনা এবং নামাযের নিয়ম-কানুন ও দরকারি মাসলা-মাসায়েল শেখার জন্য তিনি আমাকে কিছুদিন ফুলাত থাকার পরামর্শ দিলেন। আমি আমার স্ত্রী ও ছোট বাচ্চাদের সমস্যার কথা বললে তিনি বাড়ির ব্যবস্থা করে দিলেন। আমি কয়েক মাস ফুলাত এসে থাকলাম এবং আমার স্ত্রীর ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে কাজ করতে থাকি। তিন মাস পর আলহামদুলিল্লাহ! আমার স্ত্রীও মুসলমান হয়ে যায়।

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৫৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×