somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপেক্ষা (গল্প)

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঈদের পূর্বরাত দু’টার সময় হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো। দেখি রাসুর চায়ের দোকানটা তখনও খোলা। দোকানে ২৫ পাওয়ারের একটা রুগ্ন বাল্ব মিটমিট করে জ্বলছে। বাল্বের অপর্যাপ্ত আলোয় একটা অতিপরিচিত অবয়ব ভেসে এলো অস্পষ্ট। গায়ে সেই চিরচেনা সবুজ পাঞ্জাবী। মুখে লেগে আছে ততোধিক চেনা সেই হাসিটা। দরজা খুলে তড়িঘড়ি দোকানে ছুটলাম। দোকানে গিয়ে দেখি সবুজ মূর্তি উধাও। রাসু বসে বসে ঝিমাচ্ছে। আমাকে দেখতে পেয়ে তার মুখ প্রসন্ন হয়ে উঠলো। একটা কাস্টমার অন্তত জুটলো। বললো, ভাইয়া চা খাবেন?

আমি বললাম, রাসু তোর দোকানে এইমাত্র যে সবুজ পাঞ্জাবী পরা একজন মানুষকে দেখলাম তিনি কোথায় গেলেন?

রাসু আমার কথা শুনে আফসোস করতে লাগলো, কি বলেন ভাইয়া? কাস্টমার আইছিলো? হায়! হায়! দেখলেন আমার কাণ্ড। কাস্টমার আইসা ফেরত যায় আর আলো জ্বালাইয়া আমি বইসা বইসা ঘুমাই।

কথা শেষেই সে চা প্রস্তুতিতে মনোযোগ দিলো। আমি তার আফসোসের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিয়ে দোকান ছেড়ে সামনের দিকে হাঁটতে লাগলাম। রাসু দোকান থেকে চিল্লাতে লাগলো, ভাইয়া চা রেডি হইয়া গেছে। চা না খাইয়া কই যান?

-- রাখ এসে খাচ্ছি।
-- সবুজ পাঞ্জাবীর মানুষ কে ভাইয়া?
-- মুসা ভাই।
-- মুসা ভাইটা আবার কে?
-- তুই চিনবি না। গত বছর মেঘনায় হারিয়ে গেছেন লঞ্চ দুর্ঘটনায়। অনেক ভালো একজন মানুষ। মানুষকে ভালোবাসতেন। দুঃস্থ মানবতার কল্যাণে ছুটতেন অহর্নিশি অক্লান্ত...

ইতোমধ্যে হাঁটতে হাঁটতে আমি দোকান ছেড়ে বেশ দূরে চলে এসেছি। রাসু কি জানি বললো আবার। তার কথার আওয়াজ আমার কর্ণকুহরে ঢুকলো না স্পষ্ট। আমি হাঁটতেই লাগলাম। রাতের শরীরে লেপটে আছে পরিপক্ক আঁধার। চিকণ চাঁদ সেই আঁধারের আধিক্যে অসহায় হয়ে আকাশের কোণে ঘাপটি মেরে বসে আছে মুখ লুকিয়ে। সজলদের বাড়ির পেছনের নিম গাছটির ডালে একটা পেঁচা বসে আছে। গাঢ় আঁধারে তার চোখদুটি জ্বলজ্বল করছে, চিকণ চাঁদের চেয়ে ধারালো। কেমন শান্ত নিরীহ পাখি। মানুষ কেনো যে এই পাখিটাকে অলক্ষণের প্রতীক ভাবে?

নিম গাছ ফেলে আরও একটু এগিয়ে গেলাম। সবুজ মূর্তির দেখা পেলাম না। ফিরে এলাম ব্যর্থ মনোরথে। ফিরে এসে দেখি রাসুর চায়ের দোকান বন্ধ। দোকানের বাইরের বেঞ্চে একটা চায়ের কাপ রাখা। আমি চায়ের কাপ হাতে রুমের ভেতর গেলাম।
ঈদের দিন সকালে রাতের এই ব্যাপারটা পুরোপুরি ভুলে গেলাম। ঈদের নামাযে যাওয়ার পথে সবুজ পাঞ্জাবী পরিহিত একজন মানুষকে দেখে ব্যাপারটা মনে পড়লো হঠাৎ। নামাজ শেষে রাসুর সাথে দেখাও হয়ে গেলো। রাসুর সাথে কোলাকুলি করার সময় বললাম, কিরে গাধা কালকে চা বাইরে রেখে দোকান বন্ধ করলি ক্যান?

রাসু অবাক হয়ে বললো, কখন?

-- কখন মানে? কালকে রাত দু’টার সময়?

রাসু এবার আরও বেশি অবাক হলো। বললো, কাইলকে তো রাত দশটার সময়ই দোকান বন্ধ কইরা ফালাইছি। দুইটার সময় আপনারে আমি চা দিমু ক্যামনে?

আমি রাসুর সাথে আর কথা বাড়ালাম না। ঈদগা থেকে তড়িঘড়ি বাড়িতে ফিরে আগে রুমের ভেতর ঢুকলাম। দেখি রুমে ঠিকই গতকাল রাতের সেই চায়ের কাপটা টেবিলের পীঠে বসে আছে ঠিকঠাক। ব্যাপারটার কোন কূলকিনারা খুঁজে পেলাম না। কূলকিনারা খুঁজার চেষ্টাও করলাম না। পৃথিবীতে এমন অনেক ঘটনা ঘটে যেগুলোর কোন কূলকিনারা খুঁজে পাওয়া যায় না। হয়তো এভাবেই একদিন সত্যি সত্যি মুসা ভাইয়ের দেখা পেয়ে যাবো। কোন এক প্রশান্ত সন্ধ্যায় ছবির হাঁটে গিয়ে দেখবো মুসা ভাই বসে আছে বই হাতে। চোখে চোখ পড়তেই তাঁর মুখ প্রফুল্ল হয়ে উঠবে শব্দহীন মায়াবী হাসিতে। কিংবা কোন এক বিষণ্ণ রাতে আমার কমদামী মোবাইলটা বেজে উঠবে। মোবাইলের আয়নায় চোখ রেখে দেখবো মুসা ভাই। তড়িঘড়ি ফোন রিসিভ করে ‘হ্যালো’ বলতে ভুলে যাবো। শুধুমাত্র একটা পরিচিত কণ্ঠের স্পর্শের অপেক্ষায়...
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:১১
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×