somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ অনুভব !

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হালিম সাহেব হালিম রান্না করার জন্য রান্না-ঘরে ঢুকেছেন। তার হাতের মধ্যে একটা রান্না শেখার বই। বইয়ের নাম, ‘রান্না করা কতো সহজ!’ হালিম সাহেব হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন রান্না করা আসলেই কতো সহজ। তার হাড়ের ভেতরের ক্যালসিয়ামগুলো আগুণের উত্তাপে কিলবিল কিলবিল করছে। তিনি তারপরও ক্লান্তিহীনভাবে রান্না করছেন। হালিম রান্নায় যে এতো ঝামেলা এটা তাঁর জানা ছিল না। তিনি ভেবেছিলেন ডালের মধ্যে কয়েকটা মাংসের টুকরা ছেড়ে দিলেই হালিম হয়ে যাবে।

কলাবাগান ঢালীপাড়ায় হালিম সাহেবের বাড়ি। মামা হালিম গলির পাশের গলিটাই হলো ঢালী গলি। হালিম সাহেব ইচ্ছে করলেই সেখান থেকে হালিম কিনে আনতে পারতেন। কিন্তু তিনি কিনেন নি। তিনি হালিম রান্না করছেন তাঁর মায়ের জন্য। বিশেষ হালিম। তাঁর মা রুখসানা বেগম হালিম খেতে বড়ই ভালোবাসেন।

দুই ঘণ্টা অতিক্রান্ত হয়েছে হালিম সাহেব হালিম রেঁধেই চলেছেন। রান্না-ঘরে কাউকে ঢুকতে দিচ্ছেন না। তিন ঘণ্টার কাছাকাছিতে শুভ্রবসনা একজন বৃদ্ধা রমণী রান্না-ঘরে এসে ঢুকলেন। হালিম সাহেব তাঁকে বাঁধা দিতে পারলেন না। বৃদ্ধা তাঁর কাছে এসে বললেন, ‘হালিম তুই এসব কী পাগলামি করছিস?’

বৃদ্ধার বয়স ৭১ বছর। হালিম সাহেবের আনুমানিক পঞ্চাশ। তিনি হেসে বললেন, ‘তোমার জন্য স্পেশাল হালিম রান্না করছি মা।’

‘--তোর মাথার মধ্যে স্পেশাল হালিম রান্নার ভূত চাপলো কেনো?’

--‘এমনিতেই। তুমি যাও তো মা। এখানে অনেক গরম।’

হালিম সাহেব জোর করে রুখসানা বেগমকে তাঁর রুমের মধ্যে রেখে এলেন। বৃদ্ধা আনন্দে হাসতে লাগলেন। চার ঘণ্টা পর অবশেষে হালিম সাহেব হালিম রাঁধতে সফল হলেন। হালিম বড়ই সুস্বাদু হলো। হালিম সাহেবের স্ত্রীও হালিম মুখে দিয়ে মুগ্ধ হলেন। তিনি তাঁর শাশুড়িকে প্রশ্ন করলেন, ‘মা, হালিম আপনার প্রিয় জন্যই আপনার ছেলের নাম হালিম রেখেছিলেন তাই না?’

প্রশ্ন শুনে হালিম সাহেব ও রুখসানা বেগম দু’জনই হেসে উঠলেন। রুখসানা বেগম ছেলেকে খুশি করার জন্য হালিম একটু বেশিই খেয়ে ফেললেন। খেতে খেতে বললেন, ‘আমিই তো সব হালিম খেয়ে ফেললাম। খুকি কি খাবে? ও কোথায়? হালিম ওকে ডাক।’

খুকি হলো হালিম সাহেবের একমাত্র মেয়ে হৃদিতা। সে রুমের মধ্যে নির্জনে বসে কম্পিউটার টীপতেই পছন্দ করে বেশি। হালিম সাহেব তাকে ডাকলেন। হৃদিতা বাবার ডাক শুনে হালিমের জলসায় যোগ দিলো।

হালিম সাহেব বললেন, ‘মা মনে আছে ছোটবেলায় তুমি আমাকে স্কুলে যাওয়ার আগে জোর করে মাথায় তেল দিয়ে দিতে। এরপর চুল সিঁথি করে দিতে। স্কুলে আমাকে বন্ধুরা ঠাট্টা করে দিলিপ কুমার বলে ডাকতো। হাঃ হাঃ হাঃ । তুমি আজ আমার মাথায় তেল দিয়ে দেবে। এই যে আমি তেল নিয়ে এসেছি।’

হালিম সাহেব পকেট থেকে নারিকেল তেলের একটা ছোট ক্যান বের করলেন। ছেলের কর্মকাণ্ড দেখে রুখসানা বেগমের চোখে জল এসে গেলো। তিনি চোখের জল সংবরণ করে বললেন, ‘তুই এখনো ছোটই আছিস হালিম!’

হালিম হৃদিতারও বেশ ভালো লাগলো। সে মুখে দিয়েই বললো, ‘ওয়াও!’ খাওয়া শেষে চলে যাওয়ার সময় সে তার মা’কে বললো, ‘আম্মু তুমি আজ ফেসবুকে বসোনি?’

হালিম সাহেবের স্ত্রী বললেন, না।

‘-- ফেসবুকে একবার ঢুকে দেখো।’

হৃদিতা কথাটা বলে চলে গেলো। খাওয়া শেষে হালিম সাহেব মায়ের কাছে বসলেন তেল নিয়ে এবং তার স্ত্রী বসলেন ফেসবুকে। ফেসবুকে ঢুকে দেখলেন হৃদিতা তাকে একটা ছবি ট্যাগ করে দিয়েছে। ছবির গায়ে লেখা, হ্যাপি মাদার’স ডে। ক্যাপশনে ছোট করে লেখা, আম্মু অ্যাই লাভ ইউ মোস্ট
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:১১
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×