somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ টান !!

০২ রা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘মতিন তুই কি জানিস?’

‘না ভাই জানি না।’

‘তুই হইলি একটা ম্যালেরিয়া।’

মতিন হলুদ দাঁত বের করে হাসতে লাগলো। সোহরাব আপত্তিকর কোন কথা বললেই তার এই হলুদ দন্ত উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। কথা যতোই কণ্টকপূর্ণ হোক মতিনকে তা বিদ্ধ করতে পারে না। সোহরাব তার এই অসীম ধৈর্য দেখে বিস্মিত। একদিন সে বললো, ‘মতিন, তুই হইলি একটা আজিব কিসিমের পিপীলিকা।’

মতিন দাঁত বের করে বললো, ‘ক্যান ভাই?’

‘পিপীলিকা কঠিন সুখের মুহূর্তেও হাসতে পারে না। কারণ কি জানিস? কারণ পিপীলিকার কোন দাঁত নাই। কিন্তু তোর দাঁত আছে। হলুদ দাঁত। তুই কঠিন দুঃখের মুহূর্তেও হাসতে পারিস।’

সোহরাবের এই অদ্ভুত কথা বলে অবজ্ঞা করার ব্যাপারটা মনে হয় মতিনকে আনন্দই দেয়। সে যথারীতি মুখ উজ্জ্বল করে বললো, ‘ভাই, আমি ম্যালেরিয়া হইলাম ক্যামনে?’

‘ম্যালেরিয়া মানে কি জানিস? ম্যালেরিয়া মানে হইলো দূষিত বাতাস। তুই যেখানে যাস বাতাস দূষিত হয়ে যায়। এজন্যই তুই একটা ম্যালেরিয়া।’

‘ভাই আমার তো পেট একদম পরিষ্কার। পেটের মইধ্যে কোন গণ্ডগোল নাই।’

‘পেট নারে বেকুব, তোর জিহবা। জিহবা একটু নিয়ন্ত্রণে রাখ। জিহ্বা নিয়ন্ত্রণ তো দুনিয়া নিয়ন্ত্রণ। হরিণের সবচেয়ে বড় শত্রু হইলো কি জানিস, তার আপন গায়ের মাংস, আর মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু হইলো তার জিহবা।’

সোহরাব কাঠের ব্যবসা করে। বয়স চল্লিশের কাছাকাছি। এখনো বিয়ে-সাদি করেনি। মতিন তার পাঁচ বছরের ছোট। তার বিয়ে হয়েছে এবং একটা বাচ্চাও আছে। আগে সে চালের মিলে কাজ করতো। সোহরাবের কাছে একদিন এসে বললো, ‘ভাই, আমি তোমার লগে কাজ করবো।’

সোহরাব বললো, ‘আমার লগে কাজ করে তোর সংসার চলবে কিভাবে? আমি তো নিজেই চলতে পারি না।
‘চলবে, তুমি আমারে লও। আমি অনেক কাজের লোক।’

মতিন অবশ্য কাজ ভালোই করে, তবে কথা বলে অতিরিক্ত। পাশের গ্রামের মোতাহার আলীর একটা বড় কড়ই গাছ কিনে রেখেছিল সোহরাব। আজ তারা সেই গাছ কাটতে গেছে। মতিন সেখানে একটা ঝামেলা বাঁধিয়ে দিয়েছে। কাজের ফাঁকে সে মোতাহার আলীকে বলেছে, ‘চাচা, আপনার মেয়ের বিয়া দিবেন না?’

মোতাহার আলী বললেন, ‘হ্যাঁ, মেয়ের তো বিয়া দিতে হবেই।’

‘পাত্র কি আছে নজরে?’

‘না, নজরে তেমন কেউ নাই।’

‘সোহরাব ভাই তো বিয়া করে নাই। তার লগে বিয়া দিয়া দ্যান।’

মোতাহার আলী গেছেন ক্ষেপে। তিনি মনে করেছেন সোহরাব মতিনকে দিয়ে এসব বলিয়েছে। তাঁর মেয়ে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। তার সাথে কি-না চল্লিশ বছরের একটা বুড়ো দামড়ার বিয়ে। মোতাহার আলীর সাথে আরেকটা গাছ ক্রয়ের কথা চলছিলো সোহরাবের। কিন্তু তিনি বেঁকে বসলেন। গাছ হাতছাড়া হয়ে গেলো।

রাতের বেলা মতিনকে তাই বাড়িতে ডেকেছে সোহরাব। মতিন বললো, ‘ভাই আমার জিহ্বা কি কোন দোষ করছে?’

‘তুই মোতাহার চাচাকে কি কইছিস?’

‘বিয়ার প্রস্তাব দিছি। বিয়া তো নেকের কাজ ভাই।’

‘তুই কালকে থেকে আমার কাছে আর আসবি না।’

মতিন যথারীতি হেসে মাথা দুলালো। হ্যাঁ-বোধক মাথা দুলানি। অর্থাৎ সে আর আগামীকাল থেকে তার কাছে আসবে না। সোহরাব বিস্মিত হলো। ছেলেটা কি মানুষ না-কি কাঠের গুঁড়ি। তার ভেতর কি কোন বোধশক্তি নেই। সে বিরক্ত হয়ে বললো, ‘আমার চোখের সামনে থেকে যা এখন।’

মতিন চলে যেতে লাগলো। সোহরাব তাকে থামালো, ‘অ্যাই মতিন দু’ দিন পরই তো ঈদ। কেনাকাটা করবি না। হাতে টাকা আছে?’

‘নাই।’

‘এই টাকাগুলো রাখ। আর শোন, কালকে থেকে খবরদার আমার কাছে আসবি না।‘

মতিন চলে যাওয়ার পর সোহরাবের মনটাও একটু খারাপ হয়ে গেলো। রাতে ঘুমও এলো দেরীতে। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে মতিন তার ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। তার হাতে করাত। সোহরাব ভেতরে ভেতরে খুশি হলো, কিন্তু ভেতরের খুশি গোপন রেখে মুখ গম্ভীর করে বললো, ‘কি রে তোরে না আসতে নিষেধ করছি?’

মতিন হলুদ দাঁত বের করে বললো, ‘ভাই আপনারে ছাইড়া আমি কই যামু! আইজ উত্তর পাড়ার তোফাজ্জলের বাড়িতে না গাছ কাটোনের কথা। চলেন যাই।’

সোহরাব মতিনের হলুদ দাঁতের সাথে কখনো দাঁত মেলায় না। আজ সে হেসে উঠলো। বললো, ‘মতিন তুই হইলি কি জানিস?’

‘কি ভাই?’

‘তুই হইলি এক বিরল ধাঁচের গ্লু। গ্লু মানে কি বুঝস, আঠা—আঠা।’

মতিন হেসে বললো, ‘হ ভাই আমি আঠা।’





সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:১৮
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×