উৎসর্গঃ শ্রদ্ধেয় ব্লগার চাঁদগাজী ও তাঁর মত ট্যাগকারীদের প্রতি; সোহবতান লেখাটি প্রত্যেক ব্লগারদের উদ্দেশ্যেই।
এখন যারা কবি আল মাহমুদকে রাজাকার বলছেন, তারা কিছুদিন পর তাকে খুব সুন্দরভাবে ব্যবহার করবেন। বাঙ্গালীদের ইতিহাসে এমন অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। কাজী নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে এক সময় বাংলার মুসলমানেরা কাফির বলে স্লোগান দিত। আর এখন হারদম তাকে ব্যবহার করে চলেছে।
আমাদের সিনিয়র ব্লগার জনাব চাঁদগাজী সাহেবকে আমি যথেষ্ট সম্মান করি, কখনো উনি সেটাকে কমিয়ে দিতে চাইলে আমি তাকে তাঁর পূর্বের জায়গায় ফিরিয়ে নেই। আল মাহমুদ সম্পর্কে উনার জ্ঞানের স্বল্পতা দেখে আমি মোটেও অবাক হইনি। কিন্তু এটা দেখে আমার কাছে খারাপ লেগেছে যে, যারা আল মাহমুদের পক্ষে লেখেছেন বা লেখার চেষ্টা করেছেন তাদেরকে উনি এক প্রকার ট্যাগ দিতে চেষ্টা করছেন; যেমনটা অধিকাংশ দলান্ধরা করে থাকেন। একসময় এই কাজে ব্যস্ত দিন কাটিয়েছেন জামাত, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির দলান্ধরা এখন এদায়িত্ব এসে পড়েছে অন্য দলান্ধদের উপর। চাঁদগাজী ভাই প্রায়ই এদের বিরুদ্ধে কথা বলেন কিন্তু মাঝেমধ্যে উনাকে এদের মত ট্যাগিং পদ্ধতি অবলম্বন করতে দেখলে খারাপ লাগে।
আনাতোল ফাঁস কথা প্রসঙ্গে একবার বলেছিলেন, "আমার মনের চোখ তো মাত্র একটি কিংবা দুটি নয়। মনের চোখ বাড়ানো-কমানো তো সম্পূর্ণ আমার হাতে। নানা জ্ঞানবিজ্ঞান যতই আমি আয়ত্ত করতে থাকি, ততই এক-একটা করে আমার মনের চোখ ফুটতে থাকে।"
এই জ্ঞানবিজ্ঞান আয়ত্ত করতে হলে আমাদেরকে বই পড়তে হবে। অর্থাৎ মনের চোখ বৃদ্ধি করতে হলে আমাদের বই পাঠ বাড়াতে হবে কিন্তু আমরা বাঙালিরা বই না পড়েই মনের চোখ বাড়ানোতে উন্মাদ হয়ে আছি। কারো সম্পর্কে ধারণা না নিয়েই তার উপর নিজের ক্রোধ নিষ্কাশনের চেষ্টা করি। এই বই পাঠে পিছিয়ে থাকার কারণেই আমরা এরকম একগুঁয়েমি ও একচোখা নীতি থেকে বেড়িয়ে আসতে পারি না। কাউকে সঠিকভাবে বিচার করতে পারি না।
ইউনিয়ন ভিত্তিক চেয়ারম্যান-মেম্বার নির্বাচন পক্রিয়ায় আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি হস্তক্ষেপ শুরু করেছে বেশিদিন হয়নি। হয়ত কিছুকাল পর সাহিত্যাঙ্গনও পুরোদমে বিভাজনের শিকার হবে। আমাদের দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেকেই সরকারী দলের পক্ষে সবসময় থাকতে চায়।বিষয়টার সাথে জড়িত ব্যক্তিগত স্বার্থ। সত্যি বলতে গেলে বলতে হয় যে এরা প্রতিভাবান ঠিকই তবে নীতি নৈতিকতাহীন। কবি আল মাহমুদও এর ব্যক্তিক্রম নয়। এই দেশে যখন বিএনপি/ জামাত ক্ষমতায় ছিল, তিনি তখন জামাতের পক্ষে গীত গেয়েছেন। একারনেই তিনি বর্তমানে রোষের শিকার হয়েছেন।আজকে যারা জনগনের ভোটাধিকার হরনকারী স্বৈরাচরী সরকারের পক্ষ নিচ্ছে , ক্ষমতার পালা বদল হলে সেই আসাদুজ্জামানুর, তারানা হালিম, সুবর্না মুস্তাফা, জাফর ইকবালকেও একদিন হয়ত সেই একই অবস্থার শিকার হতে হবে। অনেক সুশীলেরা নিজেদের ভবিষ্যৎ না ভেবে সাময়িক স্বার্থোদ্বারের জন্য সুকৌশলে সেদিকে এগুচ্ছেন। আর অনেকে না বুঝে নিজ নিজ জাতীয় নেতাকে সম্মান দিতে গিয়ে সেই সুশীলদের কুটচালের শিকার হচ্ছেন; অথচ তারা বুঝতেই পারছেন না; তারা কী করছেন। সত্যি যদি এমনটা হয়, তবে সেটা হবে বাঙালিদের জন্য সর্বনিকৃষ্ট ও ঘৃণ্যতম এক ইতিহাস ।
অনুরোধঃ দয়া করে কারো সম্পর্কে কিছু বলার আগে তার সম্পর্কে জানুন। মনের চোখ বাড়ান, চিন্তার পরিধি বৃদ্ধি করুন। জানতে, মনের চোখ বাড়াতে, চিন্তার পরিধি বৃদ্ধি করতে প্রয়োজন বই পড়া। আর বই পড়তে গেলে লাগে বই কেনা। তাই বইমেলায় আসুন, বেশি করে বই কিনুন, পড়ুন চিন্তার পরিধি বৃদ্ধি করুন।
সহযোগিতায়ঃ ব্লগারগণ
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:৪৫