দিনকাল মনে নাই। হবে। টুয়েন্টি-টুয়েন্টির সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে। হঠাৎ স্থান পরিবর্তনের ডাক পড়ল কালো কুকিলের। চলেও আসল। স্টেশনে কুলির কাজ আঞ্জাম দেওয়ার পাশাপাশি বিনা বকশিসে 'কালো কুকিল' ডাক নামটাও তাকে বহন করতে হতো সেখানে। কালো বলে সুন্দরি মাইয়্যালোক তাকে ডাকত না। কাজ দেওয়া তো বহুত দূর—কা বাত। সে যেচে যেত প্রায়সময়। তারা তার সামনেই অন্য কুলির কাঁধে তুলে দিত। সেখানে হেরে যেত তার আকুতি, করুন চাহনি, শক্তপোক্ত শরীর। তাছাড়া, যাদের কাজ করার সুযোগ পেত তারাও প্রাপ্য থেকে কম দেওয়ার চেষ্টা করত। ভালো লাগত না এসব। তবু তাকে করতেই হতো। এভাবে কাটিয়ে দেওয়া দিনগুলোর পরিবর্তনের আশায় সে এসেছিল এখানে। কোম্পানিতে।
নতুন কোম্পানিতে জয়েন নিতে তার কোন অ্যাপয়েন্টমেন্ট লাগেনি। এককালে ঠাকুরদা ছিলেন কোম্পানির পূর্বপুরুষের কুলি। সে সুনাম ভিজিয়ে তার ব্যবস্থা হয়ে গেল। ভালোই হলো। তবু নামকাওয়াস্তে ইন্টারভিউ'র খোলসে কিছু শারীরিক জোর তাকে প্রদর্শন করতে হলো। সেও কম যায় না। যখন বুঝল চাকরি কনফার্ম তখনই নিজেকে সেয়ানা প্রমাণে কোম্পানি থেকে সময় নিল। পরবর্তীতে জানাবে, চাকরি করবে কিনা!
ঠিক ঐ মূহুর্তে তার সাথে আমার পরিচয়। দেখতে বাঁশপাতার সেপাইর মতো। মেধাবী বলা যায় না। আবার মেধাহীনও বলা যায় না। কী বলা যায় তাহলে? মোটামুটি? হ্যাঁ। তাই বলা যায়। মোটামুটি। কালো মানুষের মন সাদা থাকে বলেই হয়তো তার মনটা ধবধবে সাদা। তবে তাকে কেন আমার সেয়ানা বলে মনে হলো তা পরে একবার বলব। সময়ে। সুযোগে। তাড়াহুড়ায় সে বড্ড অভ্যস্ত বলেই মনে হলো। তার ভেতর অসংখ্য সত্যের মধ্যে একটি সত্য ছিল ব্যতিক্রম। আপন দুঃখ-কষ্ট কাউকে না বলা। এই ব্যাথাতুর সময়ে তার একটি বদভ্যাসও ছিল। প্রিয়জনদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া। একবার হলো কী, হঠাৎ সে লাপাত্তা! কোম্পানিতে গেলাম তার খোঁজে। পেলাম না। ফোনে তো মিললই না। কত মারপফতে যোগাযোগ করলাম, তাতেও ব্যার্থ হলাম। পরবর্তীতে একবার উদ্ধার করলাম এর রহস্য; এটা ছিল তার ব্যাথাতুর সময়ের বদ অভ্যাস। সে নিজ কালো পাকাপোক্ত চামড়া লুকিয়ে রাখতে সাদা কাপড় পড়ত কি না, জানি না। তবে তার পছন্দ ছিল সাদা কাপড়। কালো তার শত্রু ছিল। যেমন অন্ধকার।
(চলবে?)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০২৩ বিকাল ৩:৩৭