মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কট বিষয়ে আলোচনার শুরুটা প্রয়োজন মধ্যপ্রাচ্যের ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের ইতিহাস পর্যালোচনার মাধ্যমে। ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের ইতিহাস এই ব্লগ পোস্ট থেকে জেনে নিতে পারেন। ইতিহাস জানার পর সরাসরি আজকের মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কট নিয়ে আলোচনা করা যায়।
হামাস কর্তৃক ৭ই অক্টোবরের আক্রমণকে ক্রমবর্ধমান ইসরাইলী আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়া বললে আর প্রশ্ন উঠানো যায় না। এছাড়াও ইসরাইল সম্প্রতি সৌদি সহ আরব দেশগুলোর সাথে বিভিন্ন চুক্তির যে কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তা বস্তবায়ন হলে ফিলিস্তিনের অধিকারের যে দাবী তা আর আরব বিশ্বে কোন মূল্যই রাখবে না। এহেন অবস্থায় হামাসের ৭তারিখের আক্রমণ অযৌক্তিক মনে না হওয়া স্বাভাবিক।
এই পোস্টে ইসরাইল ফেরত একজন ব্রিটিশ মুসলিমের কথা প্রকাশ করতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে। যেহেতু বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন মুসলিম প্রধান দেশ ইসরাইল ভ্রমণকে নীতিবহির্ভূত মনে করে সেহেতু এসকল পাসপোর্টধারী কারো ইসরাইলে ভ্রমণ করা সম্ভব হয় না, যদিও তা বায়তুল মাকদিস দেখার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে। সম্প্রতি বাংলাদেশের পাসপোর্টে সংশোধন এসেছে। আমি যে ব্রিটিশ মুসলিমের কথা বলছি তা অনেক পূর্বের। আমার যতদূর মনে পরে, তার কথাগুলো ছিল এরকম, "বায়তুল মাকদিস ভ্রমনকালে আমি দেখলাম, ফিলিস্তিনের আওতাধীন এলাকার বিভিন্ন জায়গায় ইসরাইলীরা ডেরা গেরে বসেছে। এরা দিনের বেলা এখানে আসে আর সন্ধায় চলে যায়। এভাবে দীর্ঘ সময় ডেরাগুলোতে অবস্থানের পর এক সময় এই এলাকায় ইসরাইলী ডেরাধারী লোকজন গৃহ নির্মানের মাধ্যমে নিজেদের বস্তি স্থাপন করে ফেলে। আর বস্তি স্থাপনের পর ইসরাইলী সৈন্যরা এদেরকে নিরাপত্তা দেওয়ার নামে সেখানে অবস্থান শুরু করে। এভাবে ধীরে ধীরে এক একটি ফিলিস্তিনি এলাকা ইসরাইলীদের দখলে চলে যায়।"
এই ব্রিটিশ মুসলিমের কথাগুলোকে অবিশ্বাস করলেও আমাদেরকে স্বীকার করতে হচ্ছে ইসরাইল ক্রমাগত ফিলিস্তিনি এলাকা গ্রাস করে চলেছে। যা বাস্তবেই ঘটছে। এখন এমন অবস্থায় বিবেচনা করতে পারি আমাদের মাতৃভাষার উপর আক্রমণের দিকটি। যেখানে আমরা আমাদের মাতৃভাষা ও অধিকারের উপর পাকিস্থানীদেরকে আমরা সহ্য করতে পারিনি সেখানে তারা কিভাবে পারবে নিজেদের জন্মভুমি ও অধিকার হরনকারীদের সহ্য করবে?
আশা করা যায়, নিজ ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞাত একজন বাঙালি হিসেবে আমাদের অনুভব করার কথা ফিলিস্তিনিদের কষ্ট।
পশ্চিম তীর সহ ফিলিস্তিনের বিভিন্ন এলাকায় ইজরাইলীদের অবৈধ বসতি স্থাপন বন্ধের পাশাপাশি ফিলিস্তিনকে তাদের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দিয়ে ফিলিস্তিন ছেড়ে ইসরাইলী সৈন্যদের প্রত্যাবর্তনই একমাত্র শান্তির পথ। কিন্তু ইসরাইলী সরকার এরকমটা কখনো চায় না। এমন অবস্থায় কীভাবে শান্তি স্থাপন হতে পারে?
ফিলিস্তিনের অধীকার আদায়ে আরব বিশ্বের ঐক্যবদ্ধভাবে দাবী উত্তাপনের এখনো কোন সংবাদ জানা যায় নি। এপর্যন্ত যেসব রাস্ট্র ফিলিস্তিনের পাশে থাকার আশ্বাস দিচ্ছে তা কেবল মৌখিক সীমাবদ্ধতায় আক্রান্ত। লেবাননের হিজবুল্লাহ তাদের সীমানায় সৈন্য মোতায়েনের মাধ্যমে ইসরাইলকে সীমান্তে ব্যস্ত রাখার চেষ্টার বাহিরে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে আর কেউ তেমন কিছু করছে না। বিপরীতে আমেরিকা ইসরাইলের পক্ষে অবস্থান নিশ্চিত করার পাশাপাশি নৌযান পাঠিয়ে দিয়েছে বলে শুনা যাচ্ছে।
একজন ব্লগার হিসেবে স্বরণ থাকার কথা বাংলাদেশ পাকিস্তান যুদ্ধের সময় আমেরিকা পাকিস্থানিদের সমর্থন দেওয়ার পাশাপাশি কী পরিমাণ হৈ-হুল্লোড় করেছে। খুদ প্রেসিডেন্ট নিক্সন, হেনরি কিসিঞ্জার সহ আরো অনেক নেতৃস্থানীয় পাণ্ডাগুলো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কীরকম চেচামেচিটাই না করেছে। কিন্তু দিন শেষে মাটি যার সেই তার স্বাদ উপভোগ করতে পারে। অবশ্য মধ্য পথে রক্তের বন্যার প্রয়োজন হয়। আর ফিলিস্তিনিরা সেই রক্তের সময়টা অতিক্রম করছে।
১৯৭১ সময়ের ছাত্রলীগ যুদ্ধের যে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল, যেভাবে বিভিন্ন অঞ্চলে পাকিস্থানীদের উপর গেরিলা আক্রমণ করছিল তা আজও প্রশংসনীয়। কিন্তু সেই সময়ে অনেকেই তাদের আক্রমনকে খারাপ চোখে দেখেছেন। কারণ তাদের আক্রমণের পর পাকিস্তানি সৈন্যরা সাধারণ নাগরিকদের উপর ঝাপিয়ে পরতো। বাস্তবে এটা মুক্তিবাহিনীর কারণে ছিল না, পাকিস্তানি সৈন্যরা যুদ্ধ নীতির বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেদের কাপুরুষোচিত ঘৃণিত আচরণেরই প্রমাণ দিচ্ছিলো। এই সহজ বিষয়টি ধরতে না পেরে তৎকালীন অবস্থায় যারা উলটা মুক্তিবাহিনীকে দোষারোপ করেছিল। আজও সেই শ্রেণির একদল লোক মুক্তিকামী হামাসকে সেই বুদ্ধিমত্তায় বিবেচনা করছেন।
বাংলাদেশের পাশে যেভাবে ভারত এসে দাঁড়িয়েছিল, সোভিয়েত ইউনিয়ন সহ যেসকল রাস্ট্র সক্রিয় হয়েছিল তেমনি যদি ফিলিস্তিনের পাশে আরব বা তাদের আশপাশের রাস্ট্রগুলো সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে এবং ফিলিস্তিনিরা মুক্তি লাভ করে, তাহলে আজ যারা তাদের পক্ষে লড়ছে তাদেরকে আপনারা কী বলবেন? পারবেন তখনো সন্ত্রাসী বলতে? পারবেন না।
ছবি: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ভিটেমাটিহীন সাধারণ মানুষের।
বি:দ্র: যুদ্ধ কখনো শান্তি নিয়ে আসে না। নিজ মাতৃভূমি রক্ষায় যারা সক্রিয় তাদেরকে সন্ত্রাসী বলা যুক্তিসঙ্গত নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৮:৪৮