somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিছু শৈশব !

২৯ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি যৌথ পরিবারে বড় হয়েছি।
মনে আছে ছোট বেলায় আমাদের বাসায় মুরগী রান্না হতো কালে ভাদ্রে, বাসায় মেহমান আসলে বা কোন মুরগী হটাৎ অসুস্থ হয়ে গেলে তখনই কেবল মুরগী জবাই হতো। সেই একটা মুরগী দিয়ে আমরা পুরা পরিবারের লোকজন তৃপ্তি নিয়ে ভাত খেতাম। লাল রঙের বোরো চালের ভাত।


শনিবারে শীবরামপুর হাটে সাপ্তাহের বাজার করতে যেতাম, আমার দাদী ৫ টাকা করে দিতো খরচ করার জন্য। ৩ টাকা দিয়ে এক বাটি হালিম খেতাম আর দুই টাকায় জয়পারা চানাচুর। হালিমের দোকানটাতে দুই ধরনের বাটি ছিল ছোট আর বড়। বড় বাটির দাম ছিল ৫ টাকা, সেই বাটিতে বিশাল একটা নলির হাড় থাকতো। খুব ইচ্ছে করতো ৫ টাকা দিয়ে বড় নলির হাড় খাবো, কিন্তু তাহলে চানাচুর বাদ পরে যায়। তবুও সেই অতৃপ্তি নিয়েই সারা সপ্তাহ অপেক্ষায় থাকতাম কবে শনিবার আসবে?
আমাদের বাসায় একটা ২০ ইঞ্চি ন্যাশনাল টিভি ছিল, ব্যাটারীতে চলতো। সাপ্তাহের দুইটা নাটক আর সিনেমা ছাড়া বাকি অনুষ্ঠান দেখা হতোনা। এমনকি বিজ্ঞাপনের সময় প্লাগ খুলে রাখা হতো। কারন ব্যাটারী চার্জ করাতে হতো অনেক দূরে নিয়ে গিয়ে। ম্যাকগাইভার দেখার জন্য কাদতাম। মাঝে মাঝে হয়তো দেখার সুযোগ মিলতো, বেশীর ভাগ সময়ই পারতাম না।

আমার ছোটবেলার অতৃপ্তি নিয়ে বেড়ে উঠা সেই জীবনটাকেই আজকাল কেনো যেন খুব অর্থপূর্ণ মনে হয় !



আমার এখনকার জীবনটা রোবটের মতো যান্ত্রিক। এখানে সামনে যাওয়ার জন্য বেচে থাকতে হয়। মনের চাওয়াটাকে কখনো প্রাধান্য দিতে পারিনা। দেখতে দেখতে এবারের বর্ষাটাও চলে এলো, অথচ জানি বৃষ্টিতে ভিজে একটা কদমও ছুয়ে দেখা হবেনা ! যেমন পারিনি গত শীতে উনুনের পাশে বসে গরম ভাপা পিঠার ঘ্রাণ নিতে।

অথচ আমার শৈশব জুড়ে ছিল বৃষ্টি বিলাস। বর্ষার পানিতে বিলে গিয়ে মাছ ধরা আর শাপলা তুলা ছিল প্রাত্যহিক কাজ। বৃষ্টিতে কাদায় মাখামাখি হয়ে ফুটবল খেলতাম, নদীতে ঘন্টার পর ঘন্টা গোসল করতাম। সামনে দিগন্ত কিংবা অনন্ত থাকার কথা ছিল অথচ কিছুদুর গিয়ে দেখি কানা গলি তাই আবারও কিছু শৈশব উকি দেয় মনের কোনে, যেখানে শীতের ভারী কুয়াশা ভেদ করে গায়ে নিতাম রোদের আদর আর মাইলের পর মাইল হেটে যেতাম বক ধরার জন্য।



আজ স্মৃতির শুন্যতা জুড়ে দীর্ঘশ্বাস। ঠিক যেন ডিপ ফ্রিজে হিমায়িত কষ্টের পাশেই "টাকিলা"। সুন্দর লুকিয়ে থাকে সব মানুষের নিজেরই আড়ালে, ১৩ বছরের কিশোর সেটা দেখেনা, সে খোজে ভ্রমর কিংবা দিগন্তে, মেঘের সংসারে। আজ ঢাকার রাস্তায় যানজটে আর তীব্র গরমে লোনা ঘাম নিয়ে ছুটে চলা মানুষ গুলো জানেনা, তাদের মনের পকেটে রাখা গোলাপটি, ভালবাসার অভাবে কখন শুকিয়ে গেছে ! এত ভুল কেন হয় যোগ আর বিয়োগে ? চেয়েছিলাম জীবনটা, গোটা একটা জীবন হয়ে, জীবন্ত হোক !



সারাদিন কর্পোরেটে কাজ করা বেস্ত মানুষ গুলোর সামনে শৈশবের সেই সুখ গুলো স্মৃতির ভির ঠেলে সামনে এসে দাড়াতে পারেনা। কফিশপে, সহকর্মীদের সাথে সন্ধাকালীন আড্ডায় তখন জীবনের মানে খুজতে হয়। মাঝ রাতে নির্ঘুম চোখে বারান্দায় বসে থাকি, দেখি চিলেকোঠায় বাস করা গদ্য গুলো আস্তে আস্তে ভোরের আলোকে স্পর্শ করতে চাচ্ছে। আমার দ্বৈত স্বত্তাকে শব্দরা তাদের প্রতিবিম্ব দেখাবে বলেছিল যদিও আমি পাইনি কোনো প্রার্থিত শব্দ, উদ্ব্ভাসিত প্রতিবিম্ব। তবুও আমি আশা করে থাকি প্রেম তার গোপন প্রতিমূর্তি আমাকে দেখাবে ! একটাইতো কবিতা, লিখতে হবে, লিখে যাচ্ছি, সারাজীবন ধরে.......



আজ সকাল থেকেই আকাশটা মেঘলা, কেমন যেন গুমোট একটা ভাব। অফিসে হেটে আসতে আসতে মনে হলো বৃষ্টিতে ভেজা হয়না অনেকদিন। একসময় মুষল ধারের বৃষ্টিতে কাক ভেজা হয়ে হেটে যেতাম শহরের রাজ পথ ধরে, গন্তব্য তোমার হলের গেইট । তুমি বারান্দায় দাড়িয়ে মুখ কালো করে বিরক্তি প্রকাশ করতে, পরক্ষনেই ছুটে এসে আমার হাত ধরে বলতে, "চল আমিও ভিজি তোমার সাথে"। তারপর ভিজতে ভিজতে টিএসসি । সময় কি দ্রুত বদলে যায় ! এখন রাতে বৃষ্টি আসলে দ্রুত জানালা বন্ধ করি বৃষ্টির ফোটা গায়ে লাগবে বলে। ছাদে গিয়ে বৃষ্টিতে ভেজার কথা মাথায় আসেনা। দুজনেরই পরের দিন অফিস, সীমাহীন বেস্ততা, বৃষ্টিতে ভিজে অসুখে পরা চলবেনা। আসলে সময় তার আগের মতই চলে, বৃষ্টিও তার আগের মতই ঝড়ে, বদলে যায় মানুষ। প্রকিতি তার শূন্যস্থান পূরণ করে নতুন কোনো প্রেমিকের হাত ধরে.......

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×