একবার এক ভিক্ষুকের সাথে আমার
বন্ধুত্ব হয়েছিল। ভিক্ষুকের নাম
মোহাম্মদ সোবহান। সে খুলনার
'পিটিআই' মোড়ে বসে ভিক্ষা করে।
বন্ধুত্বের সুচনাটা ছিল অদ্ভুত। তখন আমার
ভার্সিটি অ্যাডমিশন কোচিং চলছে।
একদিন কোচিং থেকে ফিরছি। হঠাৎ
প্রায় আমার বয়সী একটা ছেলে পেছন
থেকে বলল, "ভাইজান, একটা টাকা
দেবেন..?"
ছেলেটার একটা হাত নেই। পরনে
নোংরা একটা প্যান্ট আর
জোড়াতালি দেয়া একটা হাফশার্ট।
দেখে আমার কেমন যেনো মায়া
লাগলো। আহারে, বেচারা...! আমার
নিজেরও তো এমন অবস্থা হতে
পারতো..!
ছেলেটাকে বললাম, "তোমার নাম
কি...?"
"মোহাম্মদ সোবহান।"
"ও আচ্ছা।"
তারপর কি মনে করে ওকে দশটা টাকা
দিয়ে দিলাম।
কয়েকদিন পরের কথা। ভোর সাতটায়
কোচিং। সেদিন ঘুম থেকে উঠলাম
সাড়ে ছয়টায়। সর্বোনাশ। পিকুল স্যার
আজ অ্যানালিটিকালের উপর একটা
ক্লাস নেবেন বলেছিলেন। ক্লাসটা
বুঝি মিসই হয়ে গেলো।
দ্রুত হাত-মুখ ধুয়ে কোচিং এ রওনা
হলাম। প্রতিদিন অটোতে করে যেতাম।
আজ অটো থেকে নেমে দেখলাম,
সর্বোনাশ হয়ে গেছে। তাড়াহুড়া করে
আসতে গিয়ে বাসায় মানিব্যাগ
ফেলে এসেছি।
অটোওয়ালাকে বললাম, "ভাই, টাকা
দিতে পারছি না।"
"কেনো..?"
"ম্যানিব্যাগ বাসায় ফেলে এসেছি।"
"আমি এতকিছু বুঝি না। অটোতে উঠছেন,
এখন টাকা দেন।"
কি অস্বস্তিকর অবস্থা...! এমন সময় দেখি
আমার পাশে সোবহান দাড়িয়ে।
"ভাইজান, কেমন আছেন..?"
"সোবহান, পাঁচটা টাকা দাও তো।"
অটোওয়ালাকে বিদায় করে মমতা
ভরা দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ সোবহানের
দিকে তাকিয়ে রইলাম।
সোবহানের সাথে অনেকদিন দেখা হয়
না। তবু প্রায়ই ওর কথা মনে হয়। আগে যখনই
দেখা হতো, তখনই মুখভর্তি একগাল
হাসি নিয়ে বলতো, "ভাইজান, কেমন
আছেন..?"
মনে হতো ওঁ পৃথিবীর সবচে সুখি
মানুষদের একজন। অথচ ওঁর একটা হাত নেই।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:৫৮