পৃথিবীর সর্বত্র কি পুলিশ এমন ! ইতিহাসে দেখা যায় সর্বযুগে সর্বখানে পুলিশের নির্মম পেষনে পিষ্ট হয়েছে মানুষ ।
আমরা যদি ভারতের নকশাল আন্দোলন দেখি, তাহলে দেখব সমাজ বদলে দেয়ার শপথে মাও সে তুং, মার্কস, লেনিনদের মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে উৎসাহিত হয়ে কতগুলো তরুন এক আন্দোলন সূচনা করেছিল । হয়তো তারা অবুঝ ছিল, হয়তো তারা অপরিপক্ক ছিল, হয়তো নিজেদের সামর্থ্য সম্পর্কে তাদের জ্ঞান ছিল দূর্বল । কিন্তু সেই তাদের সেই সমাজ বদলানোর আন্দোলনকে শাসকগোষ্ঠীর প্ররোচনায় পুলিশের নির্মম অত্যাচারে বোতলবন্দী করা হল ।
শত শত তরুনকে পাখির মত গুলি করে মারা হল । হাজার হাজার তরুনকে বিকলাঙ্গ, পঙ্গু, মানসিক বিকারগ্রস্থ করে দেয়া হল । লাখ লাখ মানুষ হল গৃহহীন, সমাজ ছাড়া ।
জারের শাসনামলেও একই ভুমিকা নিয়েছিল সে সময়ের রাশিয়ার জারের পেটোয়া বাহিনী, তথা পুলিশ । বিনা বিচারে আন্দোলনের সমস্ত পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিল ক্ষমতালোভী শাসিতের উস্কানিতে ঐ পুলিশ ।
ম্যাক্সিম গোর্কী তার কালজয়ী উপন্যাস মা প্রবন্ধে এই পুলিশদের নিয়ে চমৎকার বর্ননা দিয়েছিলেন,
"ওরা(পুলিশরা) আমাদের মতোই মানুষ । বরং বুদ্ধি নেই বলে ও আরো দুর্ভাগা, বঞ্চিত । পুলিশ-গোয়েন্দারা আমাদের শত্রু । ভাইকে দিয়ে ভাইকে ঠ্যাঙ্গাচ্ছে রক্তচোষারা । রক্ত শুষে শুষে খাচ্ছে ওদেরও । ওদের(অত্যাচারী শাসক) হাতে কাঠ, পাথর যা ওরাও তা । বন্দুক, লাঠি ইত্যাদি দিয়ে ওদেরকে ভাইয়ের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে ওরা । জাঁক করে বলছে ওই নাকি রাষ্ট্র ।"
এমন ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে ভুরি ভুরি পাওয়া যায় । এটা শাসকগোষ্ঠীর 'বিভাজন পদ্ধতি' । ক্ষমতার মসনদ পাকাপোক্ত করার জন্য অত্যাচারের ষ্টীমরোলার চালিয়ে বিপর্যস্ত করে তোলে জনজীবন । একজনের হাতে অস্ত্র-শস্ত্র দিয়ে অপরজনকে দমিয়ে রাখার কৌশল । ফলে যখন বিপদ ঘনিয়ে আসে, যখন শাসকের বিদায় ঘন্টা বেজে উঠে তখন পলায়নপর শাসক হয়তো রক্ষা পেয়ে যায় । কিন্তু ঐ ব্যবহৃত পেটোয়া বাহিনী আর রক্ষা পায় না ।
এটাই নির্মম সত্য ।
আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায়ও একই ঘটনার প্রতিফলন চোখে পড়ে । ভিন্ন মতবাদ, ভিন্ন মতাদর্শের বলি হয়ে আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরন করছে অগনিত তরুন । অসংখ্যা পরিবারে নেমে আসছে শোকের ছায়া । গগনবিদারী আহাজারীতে ভারী হচ্ছে চারপাশ ।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে তরুন-যুবক-কিশোরদের জন্যই অধিক শোকগ্রস্ত হই । অনাবিল আগামী কোন অধিকার বলে তার থেকে কেড়ে নিয়ে তাকে সমাজের আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে ফেলা হয় ?
তার নির্মল বেঁচে থাকাকে কোন অধিকারে এমন বিরক্তিকর করে তোলা । যখন দাপিয়ে পুরো পৃথিবী চষে বেড়ানোর কথা তখন কেন তাকে বিছানার এক কোনে গুটিশুটি মেরে পড়ে থাকতে হয় ? কেন তাকে অকালে পরগাছার মত পরের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকতে হবে ?
কেন বাবার কাঁধে লাশ হয়ে তার যেতে হবে ? কেন নববধুর মেহেদি শুকানোর আগেই তার স্বামীকে জেল থেকে ছাড়ানোর জন্য উকিলের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াতে হবে ? কেন নবজাতক তার রাজবন্দী বাবার সমাজবিরোধীর ছেলে তিলক লেপে দুনিয়ায় আসবে ? কেন ? কেন ? কেন ?
পুলিশের এই নির্মম, হৃদয়হীন, পিশাচতুল, হিংস্র অত্যাচারের বলি আমি না হলেও আমার আত্মীয়, আমার স্বজন, আমার প্রতিবেশী, আমার পাড়াতো ভাই কেউ না কেউ অহর্নিশ হচ্ছে ।
আমি আজ না হলেও কাল যে হব না তার নিশ্চয়তা কি !
পুলিশের কি এত কঠোর না হলেই নয় ! তাদের কি মা-বাবা, ভাই-বোন নাই ! তাদের হৃদয়ে কি স্নেহ-প্রীতি-মমতা নাই !
কে জানে !
যদি সমাজের কখনো মনে হয় যে এ দল বিপথগামী, এই তরুনরা অবুঝ । তাহলে তাদের বুঝিয়ে, যুক্তির নিরিখে তাদের কি ফিরিয়ে আনা যায় না !
অবশ্যই যায় । কিন্তু অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠী ভুলেও কখনো এ কাজ করবে না । কারন, তাদের উদ্দেশ্য কখনো সমাজের ভালো করা নয় । ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে সমাজকে নিয়ন্ত্রন করে তার থেকে ফায়দা লুন্ঠন করা ।
আর এজন্য তারা ব্যবহার করে হাতিয়ার স্বরুপ লাঠিয়াল পেটোয়া বাহিনী । যারা শিক্ষায়-দীক্ষায় সমরশস্ত্রে সুসজ্জিত । যাদের আমরা বলি জনগনের বন্ধু পুলিশ !!!
যাদের নিজের ভাইয়ের রক্তে নিজ হাত রঞ্জিত করতে কখনো হাত কাঁপেনি, কাঁপবেও না । আজো কাঁপছে না ।
__________####_________