কিছুক্ষণ আগে বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের উইকেটরক্ষক Litton Kumer Das একটি স্ক্রিন শট দিয়ে বলেছে, তার পেইজে দূর্গা পূজা সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করা হয়েছে। লিটন নিজেই বলেছে-
“দুঃখ্য জনক হলে ও সত্যি যে আমদের বাংলাদেশ এ জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি হলেও মনুষ্যত্ব ১৭ হাজার মানুষ এর ও নাই।আমি সেই সব মানুষদের বলছি যাদের সকালে ঘুম থেকে উঠার উদ্দেশ্য থাকে মানুষ কে বাজে মন্তব্য করা! গত কালের ১টি পোস্ট ছিল যেখানে সকল কে পুজার শুভেচ্ছা জানিয়েছিলাম,কিন্তু আপনাদের কিছু কিছু মন্তব্য সত্যি অনেক বেদনাদায়ক। আমার সব থেকে বড় পরিচয় আমি একজন বাংলাদেশী,এখানে ধর্ম আমদের বিভেদ করতে পারে না। যারা এখনও এই সব বিষয় এ বাড়াবাড়ি করেন আমি তাদের বলছি দয়া করে আমার কোন পোস্ট এ মন্তব্য করবেন না।” (https://goo.gl/FvTW6L)
সত্যিই বলতে, লিটন দাস এ স্ট্যাটাস দিয়ে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী নয়, বরং নিজেই একটা সাম্প্রদায়িক ও সংকীর্ণমনা সেটাই প্রমাণ করেছেন।
হয়ত বলতে পারেন, লিটন দাস নিজেই তো সাম্প্রদায়িক আক্রমণের শিকার হলো, আপনি কেন উল্টো তাকে দোষারোপ করছেন ?
এর উত্তরে বলতে হয়-
১) ফেসবুক জগৎ সম্পর্কে যারা ধারণা রাখেন, তারা জানেন ফেসবুক আম-জনতার জন্য উন্মুক্ত হওয়ায় প্রত্যেকে তার নিজ মনোভাব কমেন্টের মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকে। এজন্য আইডির ক্ষেত্রে কমেন্টে পাবলিক/ফ্রেন্ড/ফ্রেন্ডস অব ফ্রেন্ড অপশন থাকে, যেন সবাই কমেন্ট করতে না পারে। পেইজে যদি সবাইকে কমেন্ট করার সুযোগ দেওয়া হয়, তবে এ ধরনের কমেন্ট অস্বাভাবিক নয়। এ ক্ষেত্রে হয় এডমিনকে বিষয়টি ইগনোর করতে হয়, অথবা মুছে দিয়ে ইউজারকে ব্যান করতে হয়। কিন্তু জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটারের ভেরিভাই পেইজে ঐ কমেন্ট স্ক্রিনশটসহ তুলে দেওয়া সত্যিই বিষ্ময়কর ! এবং উল্টো সাম্প্রদায়িকতা ছড়ি দেওয়ার কারণ বটে।
২) যেহেতু মিথুনের কমেন্টের প্রতিউত্তর কমেন্টে অনেক মুসলমানই দিয়েছে, তাই সেটার স্ক্রিনশট নিয়ে আলাদা করে স্ট্যাটাস দেওয়া এবং ‘১৭ হাজার মানুষের মনুষত্ব নাই’ এ ধরনের বক্তব্য দেয়া বিশেষ ইঙ্গিত বহন করে।
৩) বাংলাদেশের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম তার কুরবানী নিয়ে ছবি সরিয়ে দেওয়ার পর আরেকটি পোস্ট দিয়েছিলো, যেখানে সে বলেছিলো- অনেকের ধর্মীয় অনুভূতির কথা চিন্তা করে সে পোস্টটি সরিয়ে দিয়েছে। ঐ পোস্টে Arya Kumar Judah নামক একটি আইডি থেকে ‘শোভন কুমার রায়’ নামক এক হিন্দু মুসলমাদের নবীকে নিয়ে যাচ্ছেতাই গালাগালি করেছিলো (এ নিয়ে একটি পোস্ট - https://goo.gl/SD97iE)। মুশফিকুর রহিম যদি Arya Kumar Judah গালাগালি সমৃদ্ধ কমেন্টগুলো দিয়ে একটা পোস্ট দিতো, তবে নির্ঘাত বাংলাদেশে বড় ধরনের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লেগে যেতো। কিন্তু মুশফিকুর রহিম সেই কাজ করেনি।
৪) লিটন বলেছে- “আমার সব থেকে বড় পরিচয় আমি একজন বাংলাদেশী, এখানে ধর্ম আমদের বিভেদ করতে পারে না।” অথচ লিটনের এ স্ট্যাটাস’র উদ্দেশ্য ছিলো মূলত পাবলিককে সাইকোলোজিক্যালী প্রোভোক করা। সাংবাদিকতার ভাষায় একে বলে provocative journalism। এই স্ট্যাটাসের কারণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি তো নয়, বরং সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দেওয়া হলো। বিশ্বাস না হয় দেখুন, অনেক হিন্দু ছেলে ঐ স্ট্যাটাসে গিয়ে মুসলমানদের গালিগালাজ করছে, হিন্দু-মুসলিম বিভেদ বাড়িয়ে তুলছে। লিটন যদি নিজেই নিরপেক্ষ হয় তার তো উচিত হবে, ঐ ইসলাম বিরোধী স্ক্রিনশট নিয়েও স্ট্যাটাস দেওয়া।
৫) লিটন জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটার হয়ে ‘মুহম্মদ মিথুন’ নামক এক অখ্যাত কিশোর ছেলের কমেন্ট ভেরিভাই পেইজে জনসম্মুখে তুলে দিয়ে মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ করেননি। বরং কৌশলে পুরো মুসলিম সমাজকে হেয় প্রতিপন্ন করেছে। তার বোঝা উচিত ছিলো, এ পেইজে তার অনেক মুসলিম ফ্যান রয়েছে। ক্রিকেটার হিসেবে সকলকেই ভালোবাসে বাংলাদেশীরা, হিন্দু-মুসলিম এখানে কোন বিভেদ নাই। লিটনের এমন কিছু করা উচিত হয়নি যেন মুসলিম ফ্যানরা ধর্মীয়ভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয় এবং হিন্দু ফ্যানরা মুসলমানদের গালাগালি করার সুযোগ পায়। আপনি হয়ত বলতে পারেন, ‘কেন এর আগেও তো অনেক ক্রিকেটার তার বিরুদ্ধে লেখার জবাব দিয়েছে, নাসির তার বোনের সাথে ছবি নিয়ে প্রতিবাদ করেছে। আমি বলবো, দিয়েছে সেটা ঠিক। কিন্তু সেটা ঐ কমেন্টকারীর ব্যক্তিগত পরিচয়, সেখানে ধর্মীয় কোন ইস্যু ছিলো না। ধর্মীয় ইস্যুতে ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করে জাতীয় দলের ক্রিকেটারের ভেরিভাই পেইজে স্ট্যাটাস দেওয়া খুব ছোটখাটো সাম্প্রদায়িক মনোভাবের লক্ষণ নয়।
শেষে এসে আবার বলছি, বাংলাদেশের মুসলিম ক্রিকেটাররা নিজেদের যতই উদার প্রমাণ করতে চাক, অসাম্প্রদায়িক দাবি করতে চাক, হিন্দুদের কথা চিন্তা করে গরু জবাইয়ের ছবি সরিয়ে দিক, হিন্দুদের মধ্যে কিন্তু সেই অসাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ছোয়া নেই, হোক না সে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার। সুযোগ পেলেই সে কোপ মারবে, জাতীয় দলের ক্রিকেটার হয়েও সাধারণ কিশোরের সাথে ঠোকাঠুকি লাগাবে, লালকালী দিয়ে চিহ্নিত করে ৫৭ ধারার ফাঁদে ফেলতে চাইবে সাধারণ কিশোরকে, প্রকাশ করে দিবে নিজের মনের গোপন সাম্প্রদায়িকতা। মনে রাখবেন, ‘ইট ইজ অলয়েজ ডিফিক্যাল্ট টু হাইড ইয়োর ল্যাঞ্জা’, মানে- নিজেই যখন সাম্প্রদায়িকতার গোডাউন হবেন, তখন অসাম্প্রদায়িকতার ছদ্মাবরণে সাম্প্রদায়িকতার প্রকাশ লুকানো আসলেই কঠিন।
সবাইকে ধন্যবাদ।