somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঠক শো

১১ ই মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেকেলেরা যাকে বলে ‘টক শো’ ইংলিশ মিডিয়ামের ছেলেমেয়েরা ইংরেজদের মত উচ্চারণে সেটাকে বলে ‘ঠক শো’। বর্তমানে রাজনৈতিক মাঠ ভয়ংকর রকম উত্তপ্ত। সূর্যের চেয়ে বালি গরমের মত ঠক শো গুলো তার চেয়েও বেশি উত্তপ্ত। প্রতি রাতেই ঠক শোগুলোর কারণে টেলিভিশন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আয়োজকরা দর্শকদের উত্তাপ চাহিদার কথা বিবেচনা করে একজন রেফারি দিয়ে দুই পক্ষের দুইজন অতিথিকে ঠক শোতে এনে তাপ আরও উস্কে দেন। মাঝখানে রেফারি আর দুই পাশে দুই প্রতিপক্ষকে নিয়ে পুরো অনুষ্ঠানটি হয়ে ওঠে কুস্তাকুস্তি খেলার রিংয়ের মত। তবে ব্যতিক্রম এখানে লড়াই চলে মুখে মুখে। সেই রিংয়ে মাঝে মাঝে যখন প্রতিপক্ষের কান কামড়ে ছিড়ে ফেলা মাইক টাইসনের মত বেপরোয়া পক্ষ এসে আরেক পক্ষকে বলে,‘ তুই চুপ থাক। চুপ থাক, বেয়াদব। নইলে তোর চোখ তুলে নেব।’ তখন দর্শকরা নাড়াচাড়া দিয়ে ওঠেন । অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে জমজমাট। টিআরপি রেট পর্বত চুড়ায়।
ঠক শোতে এসে কেউ কেউ বেফাস কথা বলে দলের বিপদ ডেকে আনে দেখে কোন কোন দল ঠক শো’র জন্য গোবেচারা ধরনের কিছু প্রতিনিধি নির্দিষ্ট করে দেয়। ঘুরে ফিরে বার বার বিভিন্ন চ্যানেলে শুধু এদেরই দেখা যায়। এরা পরিপাটি হয়ে ঠক শোতে আসে। স্যুট-ব্যুট, মাথায় নারকেল তেলে ‘চুবচুব’ পাট করে আচড়ানো চুল। হাতে রুমাল, সেটা দিয়ে কিছুক্ষণ পর পর কায়দা করে মোছে, যদিও ঘরটি এয়ারকন্ডিশন্ড। মুখে মিষ্টি হাসি। প্রতিপক্ষ যখন তাকে তুলোধুনো করছে তখন তার চেহারা দেখলে মনে যে এর চেয়ে মধুর কথা তিনি জীবনে আগে কখনও শোনেন নি। রেফারি যখন তাকে প্রতিউত্তর দেয়ার অনুরোধ করে তখন তিনি এমন এক প্রসঙ্গ শুরু করবেন যে তিনি বধির হওয়ার কারণে এতক্ষণ তার প্রতিপক্ষ কি প্রসঙ্গ তুলেছেন তার কিছুই শুনতে পান নি। আর ভাসা ভাসা যে দুয়েকটা কথা শুনে ফেলেছেন তার উত্তর দিতে গিয়ে বলবেন,‘ আমার প্রতিপক্ষ যে অভিযোগের কথা বললেন আমি কসম খেয়ে বলতে পারি আমার দল এরকম কিছু করে নি।’ শৈশবে অনেকেরই খেলার সাথীদের সাথে কসম কাটার স্মৃতি রয়েছে। ঠক শো দেখতে দেখতে দর্শকদের মধ্যে সেই মধুর স্মৃতি ফিরে আসছে।
কখনও কখনও আয়োজকরা অসম লড়াইয়ের জন্য কোনো চুনোপুটি পক্ষের সাথে হেভিওয়েট পক্ষকে আনেন। সেখানে চুনোপুটি যখন হেভিওয়েটের দলের বদনাম করতে থাকে তখন পাশের সোফায় বসে হেভিওয়েট এমন সব ভঙ্গি করতে থাকেন যে মনে হয় এক্ষুনি চুনোপুটিকে সে কাচা খেয়ে ফেলবে। চুনোপুটির কথা শুনতে শুনতে সে বড় বড় করে তাকিয়ে চোখ পাকাতে থাকে। কখনও কখনও যখন শার্টের হাতা গুটিয়ে বুক চেতিয়ে ওঠে। তখন রেফারির সাথে সাথে দর্শকরাও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এই ভেবে যে, শেষ পর্যন্ত না জানি একটা কেলেংকারি হয়ে যায়।
ঠক শো’র একটি অংশ হচ্ছে ফোনে সরাসরি দর্শকদের প্রশ্ন করা। নানান শ্রেণির দর্শকরা প্রশ্ন করেন। অতিথিরা তখন খিচে থাকে, না জানি দর্শকরা মানইজ্জত যাওয়া কোন প্রশ্ন করে ফেলে। কিছু কিছু দর্শক আছে প্রশ্ন করতে গিয়ে নিজেই জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেয়া শুরু করে। অতিথিদের যদি তরুণ কেউ থাকে তখন শুধু মেয়েদের ফোন আসতে থাকে। দেখা যায় অনুষ্ঠানে তরুণ দলীয় প্রতিনিধিরা বাকবিতন্ডার চরমে উঠে গেছে। এক একজন হাফাচ্ছে। চোখ রক্ত বর্ণ। এমন সময় মহিলা দর্শকের ফোন আসল,‘ ‘--’ ভাইয়াকে আজকে খুব সুন্দর লাগছে। আচ্ছা ভাইয়া, আপনি শার্টটা কোন শপ থেকে কিনেছেন?‘ রেফারি তখন বলল,‘ দর্শক আপনি আপনার প্রশ্নটি করুন।’ ওপাশ কিন্নর কণ্ঠী বলল, ‘হ্যা। পাশের ভাইয়াটিও এত সুন্দর করে কথা বলেন না! শুধু শুনতেই ইচ্ছা করে। আচ্ছা ভাইয়া আপনার কন্ট্যাক্ট নাম্বারটি কি দেয়া যাবে?’ অতিথিরা হতভম্ব আর রেফারি অসহায়।
ঠক শোগুলোর আসল উদ্দেশ্য কী সেটা বোঝা কঠিন। যদি উদ্দেশ্য হয় দর্শকদের বিনোদন দেয়া তাহলে বলতে হবে তারা সফল। কারণ প্রতিদিন তারা দেশের এই অশান্ত পরিবেশে ঘুমানোর আগে তারা সত্যিকার অর্থেই দর্শকদের বিমলানন্দ দিয়ে যাচ্ছেন এবং ফলশ্রুতিতে রাতে ভাল ঘুম হচ্ছে।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×