somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাইন্ড রিডিং

০৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(....আমি বা দিকে তাকিয়ে দেখি ঐ পাগল হাতে ইয়া মোটা এক লোহার পাইপ নিয়ে এই দিকেই তেড়ে আসছে। আমি এই দৃশ্য দেখেই দিলাম দৌড়। পাগলটা গিয়ে ধরল ক্যানভাসারকে, ‘আমি পাগল? ঐ, আমি পাগল?...)




একদিন ডি.আই.টি-তে গিয়েছিলাম ডাক্তার দেখাতে। ডাক্তার আসবে চারটায়, আমি চলে গিয়েছিলাম এক ঘন্টা আগে। এই এক ঘন্টা কী করব ভাবতে ভাবতে ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে পাঁচ টাকার বাদাম কিনলাম। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই বাদাম শেষ হয়ে গেল। পাশেই ছোলা বিক্রি হচ্ছে। আরও পাঁচ টাকার ছোলা কিনলাম। ছোলাও কিছুক্ষণের মধ্যে শেষ হয়ে গেল। মার্কেটের পাশে একটা খালি জায়গায় একটা ক্যানভাসারকে ঘিরে মানুষজন ভিড় করে আছে। আমি গিয়ে সেখানে উকি দিলাম। হ্যাংলা-পাতলা একজন লোক নানান মোশন নিয়ে কথা বলে যাচ্ছে। তার পাশে কিছু জিনিসপত্র। জিনিসপত্রের মধ্যে আছে ব্রিফকেসের মত একটা কেস। কেসের উপরের গ্লাসের ভিতর দিয়ে দেখা যাচ্ছে নানা রঙের, লাল, নীল, সবুজ রঙের পাথর। তার পাশে তোয়ালে দিয়ে উপরের অংশ ঢাকা একটা পুরনো আমলের বিশাল সাইজের ক্যাসেট প্লেয়ার। ক্যানভাসার ক্যাসেট প্লেয়ারকে সাউন্ড বক্স হিসেবে ব্যবহার করে হাতে ধরা মাইক্রোফোন দিয়ে কথা বলছে, ‘ ....এই মূল্যবান পাথর আপনেকে শনির গ্রাস, রাহুর গ্রাস থেকে রক্ষা করবে।....অতি মূল্যবান পাথর, যার হাতে বসবে সে হবে মহারাজ। এই যে আমার হাতে দেখতাছেন পাথর গুলা, এগুলিরে আমি যতœ করি, সম্মান করি আর আমারেও ভালবাইস্যা এরা কিছু ক্ষমতা দিছে....কী চলতাছে কার মনের ভিতরে...সেইটা জানার ক্ষমতা দিছে আমারে....এই যে ছোট ভাইয়া ( ক্যানভাসার ভিড়ের ভিতর থেকে কম বয়সী একটা ছেলেকে বের করে তার সামনে নিয়ে আসল), ছোট ভাইয়া বাড়ি থেইকা রাগ কইরা বাইর হইয়া আসছে। এখন তার ভিতরে চলতাছে নানান চিন্তার ঝড়। সে এখন কী করব, কীভাবে ফিরব বাড়িতে, কী করতাছে তার মা-বাপে....। কি ভাইয়া, ঠিক বলছি কি-না বলেন?’
ছেলেটি মাথা নিচু করে ফেলে, মাথা নাড়ল। চারদিকে সমানে হাততালি পড়ল।
ঠিক এই সময় কোথা থেকে যেন একটা পাগলাটে ধরনের লোক, তার গায়ে ময়লা, মলিন পোশাক, চেহারা উদভ্রান্ত, ভিড় ঠেলে ভিতরে ঢুকে গরম হয়ে বলল, ‘ ঐ কী শুরু করছস এইখানে? বন্ধ কর।’ বলে কিছুক্ষণ হুমহাম করে ভিড় ঠেলে বের হয়ে কোথায় যেন চলে গেল। পাগলের কারনে ক্যানভাসারের কার্যক্রম কিছুক্ষণের জন্য বাধা পড়েছিল। সে আবার শুরু করল। বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন অজানা কথা বলে আবার আসর জমিয়ে ফেলল।
ঠিক তখন সেই পাগলাটে লোকটা আবার এসে হাজির। লোকজনের ভিড় ঠেলে ভিতরে ঢুকে গিয়ে ক্যানভাসারের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘যাস নাই এহনও? ঐ......’। এবার মনে হয় ক্যানভাসারের রাগ হল। সে বলল, ‘ এই কী চাস তুই? চিনস আমারে? চিনস? পাগলামি করনের জায়গা পাছ না? হু? তুই যে কেমনে পাগল হইলি সেইটা কী আমি জানি না? কমু? কমু সকল ভাইসবরে?’
লোকজন বলতে শুরু করল, ‘বলেন ভাই, বলেন, বলেন।’
‘ অয় পাগল হইছে অর ভাই-বইনের কারণে। অর ভাই-বোন অর সকল সম্পত্তি আত্মসাৎ করছে। অরে কিছু দেয় নাই। সেই দুঃখে অয় আজকা পাগল হইয়া রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে।’
আমি লক্ষ্য করছিলাম পাগলটাকে। সে হঠাৎ যেন ঠান্ডা মেরে গেল। মাথাও কিছুটা নিচু করে ফেলেছে। এক ফাকে আস্তে করে ভিড় গলে চোরের মত মাথা নিচু করে বের হয়ে সরে পড়ল। ব্যাপারটা আমি বুঝতে পারলাম না। ঘটনা কী? ক্যানভাসারের কথা কি সত্য? পাগলটা এমন করল কেন?
কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ দেখি ভিড় করা লোকজন ‘আ আ’ করে চিৎকার দিয়ে এদিক সেদিক ছুটে পালাচ্ছে। ব্যাপার কী? আমি বা দিকে তাকিয়ে দেখি ঐ পাগল হাতে ইয়া মোটা এক লোহার পাইপ নিয়ে এই দিকেই তেড়ে আসছে। আমি এই দৃশ্য দেখেই দিলাম দৌড়। পাগলটা গিয়ে ধরল ক্যানভাসারকে, ‘আমি পাগল? ঐ, আমি পাগল? ....আমার ভাই-বইনে আমার সম্পত্তি মাইরা দিছে, তুই জানলি কেমনে? হ্যা? ....তরে আমি আজকা মাইরালামু.....ইয়া......।’
আমার আর সেখানে থাকার সাহস হল না। পাগল মানুষ, কার রাগ শেষে কার উপর ঝাড়ে। আমি গিয়ে সোজা ডাক্তারের চেম্বারে ুঢকে পড়লাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ১১:১৫
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×