somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাপের মৌলিক কণা কি?

২৮ শে মে, ২০২০ রাত ১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা মরতে চাইবোনা এটাই স্বাভাবিক। স্বয়ং মূসা (আঃ) নবী মৃত্যুর ফেরেশতাকে দেখে হুংকার ছেড়েছিলো।

যেহেতু একদমই চাই না, তাই এই অপার সত্যটা আমরা এড়িয়ে চলি সবসময়। আপনি বিশ্বাসী হোন, কিংবা অবিশ্বাসী, এই ভয়াবহ সত্যটা আমরা মাথায় রাখতেই চাই না।
নিজেদের অমর ভেবে আমরা অপ্রতিরোদ্ধ হিটলার হয়ে উঠি, আমরা চূড়ান্ত দাম্ভিক ট্রাম্প হয়ে উঠি, ফেরাউন হয়ে উঠি, বুশ-ব্লেয়ার হয়ে যাই। একটাই মাত্র কারণ, আমরা ভেবে নেই আমরা একাউন্টেবল না কারো কাছে। মরেও যদি যাই, এরপর শূন্যতা। এই শূন্যতার ধারনা নেওয়াটাও কিন্তু জ্ঞানের অহমিকা। যেই মানব জ্ঞান, মানব সৃষ্টির লক্ষ বছর পরেও সামান্য সৌরজগতের মাত্রা পার হতে পারলোনা, সেই সীমিত জ্ঞান দিয়ে সিদ্ধান্তে আসা যে, এই জগতের কাজের কোনো কন্সিকোয়েন্স থাকবেনা, এটি-ই আমাদের পরিবর্তন করে দেয়।

সিভিলাইজড সোসাইটি এই গ্যাপের পর পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে, এটা ভাবা একদমই অমুলক। সব স্বাভাবিক হওয়ার পর ঢাকার বাতাস ঠিকই আবার দূষিত হয়ে যাবে, পাব্লিক বাসে আবার মেয়েদের জামা নিয়ে টানাটানি হবে... স্বয়ং প্রভু বিভিন্ন সমাজ-সভ্যতার উপর সরাসরি আজাব দেওয়ার কয়েক বছর, দশকের মাঝেই যেই লাউ সেই কদু হয়ে গিয়েছিলো। সেই তুলনায় অস্ট্রেলিয়া-ক্যালিফর্নিয়ার দাবানল, আকাশ কালো করে আসা পঙ্গপাল, কিংবা করোনা- কোনো কিছুই আমাদের ব্রহ্মপুত্রের মতোন ঘুরিয়ে দিবেনা, এটা মেনে রাখুন।

কিন্তু দু-একটা ব্যাপার তো ধ্রব সত্য হয়ে দেখা দিলো। এই যেমন,

১. কেউ-ই আপনার আপন নয় এক্সট্রিম মোমেন্টে। মৃত্যু ভয়ে মা কে ফেলে যায়, লাশে আগুন দেওয়ার কেউ থাকেনা, জানাজা দিতে দেয় না গ্রামবাসী, যে সেবা করবে তাকেই এলাকা ছাড়া করা হয়। বিপরীত উদাহরণ'ও আছে। ইসরাফিলের সিংগায় ফুঁ দেওয়ার সময় হয়তো কোন মা তার বাচ্চাকে কোলে গুঁজে নিবে। কিন্তু এটা সত্য, নিয়ামক যখন চূড়ান্ত থাকবে তখন ইয়া নাফসী বলেই চিল্লাবে সবাই।

২. স্পেনের প্রিন্সেস, এস আলম গ্রুপের ভাতৃদ্বয়, সানিড্যালের প্রিন্সিপাল- এদের কারো কি কোনো কিছুর কমতি ছিলো? অঢেল টাকা, অনেক ক্ষমতা, কিছুই কি আপনাকে বাঁচাতে পারবে?ইউনাইটেড হসপিটালে যে মানুষ গুলো আগুনে মরলো, তারা কি ভেবেছিলো এভাবে তাদের মৃত্যু আসবে?

যখন আমরা দম্ভ করে বলি, অমুক-তমুক আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছে, তখন আমরা ভুলে যাই, তারা চেষ্টা করেছে মাত্র। ্বেঁচে থাকার পূর্ন নিশ্চয়তা বিজ্ঞানের হায়েস্ট পিনাকলে পৌছলেও কেউ দিতে পারবেনা। তাহলে ৬ মাস বেঁচে থাকার কথা যেই ক্যান্সার রোগীর, সে দিব্যি আরো দশ বছর বেঁচে থাকতে পারতো না। আর যেই মানুষটা আরো ৫০ বছর বাঁচবে ধরে রেখেছিলাম, সেই মানুষ হুট করে রোড এক্সিডেন্টে কিংবা ঝড়ে মাথায় গাছ পড়ে মরে যেত না।

কে কোথায় কখন কিভাবে মরবে- এই জ্ঞান আমাদের কারো নেই। তারপরেও এই নিয়ে কেন এতো দেমাগ আমাদের?

৩. যদি মৃত্যূর পরের শুন্যতায় এতো বিশ্বাস, তাহলে বেঁচে থাকার এতো আকুতি কেন আমাদের? কেন অমর হতে চাওয়ার এতো চেষ্টা? অজানার ভয় থেকে? এই অজানা কি- সেটা ভাবতে চাই না আমরা, প্যারা লাগে। জীবন অন্যদিকে মোড় নেয় যা আমরা চাই না। চাইনা দেখেই পরীক্ষার পত্রে এই শূন্যস্থান খালি রেখে আসি, অথবা আন্দাজে উত্তর দিয়ে আসি।

-------------------------------------------------------------
এতো কথা বলেছি, কারন জীবন খুব বেশি অনিশ্চিত। জীবনকে মিনিংফুল করতে গিয়ে নিজেদের ঈশ্বর ভাবা শুরু করে দেই আমরা। নিজেদের ক্ষুদ্রতা আমাদের প্যারা দেয় খুব। আমাদের প্রকান্ড সূর্যের মতোন জায়ান্ট থেকেও লক্ষ লক্ষ গুণ বড় আজ পর্যন্ত জানা সব চাইতে বড় সূর্য। আর এমন কতো সূর্য আছে এই মহা বিশ্বে তা-ও আমাদের জানা নাই। মহাবিশ্বই বা কয়টি আছে তা-ও জানা নাই।

এতো প্রকান্ড সৃষ্টির এতো নগণ্য একটি অংশ হয়ে আমরা এতো দাম্ভিক হয়ে উঠি কেন? কার সাথে আমাদের এই দাম্ভিকতা? কিসের গুণে? কি ক্ষমতাবলে আমরা চেলেঞ্জ ছুড়ে দেই? কেন আমরা ভেবে নেই আমরা অনেক বেশি কিছু জানি?

পাপ শুরু হয়েছে কিভাবে জানেন তো? জ্ঞান নিয়ে ইবলিসের অহমিকা থেকে। পাপের মৌলিক কণা হলো জ্ঞানের এই অহংকার। সৃষ্টিজগতের সাথে নিজেকে তুলনা করে যখন আপনার মাথা ধীরে ধীরে নত হওয়া শুরু করবে, তখনই বুঝে নিবেন আপনি আর আগের মানুষটি নেই। এতে আপনি ইনফেরিওটিতে ভুগিবেন না, আপনি তখন Contact (which is by the no.1 movie in my list) মুভির কথা গুলো আওড়াবেনঃ

“I was given something wonderful, something that changed me forever... A vision of the universe that tells us, undeniably, how tiny, and insignificant and how... rare, and precious we all are! A vision that tells us that we belong to something that is greater than ourselves, that we are not... that none of us are alone!”
“All I'm asking is for you to just have the tiniest bit of vision. You know, to just sit back for one minute and look at the big picture. To take a chance on something that just might end up being the most profoundly impactful moment for humanity, for the history... of history.”
“Is the world fundamentally a better place because of science and technology? We shop at home, we surf the Web... at the same time, we feel emptier, lonelier and more cut off from each other than at any other time in human history.”

পরিবর্তনের জন্য করোনা লাগেনা, বিগার পিকচার দেখার সামর্থ্য লাগে, নিজের কম্পফোর্ট থেকে বের হয়ে আসা লাগে, আর মৌলিকতায় ফিরে আসা লাগে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০২০ রাত ১২:৫১
১৩টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×