somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

????? গল্প

১৬ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডাকাতের হাতে আমার বাবার মৃত্যুর পর প্রথম যিনি অকুল পাথারে পড়লেন তিনি আমার মা । সবে পয়ত্রিশে পা দেওয়া এই গ্রাম্য মহিলার প্রতি পদক্ষেপে বিপদ আসতে লাগলো । বাবার রেখে যাওয়া ব্যাংক ঋণ মরার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে আমার মায়ের উপর যুক্ত হল । আগে যে মা আমাদের রাতে ঘুম পাড়িয়ে দিতে গিয়ে নিজেই সারাদিনের কর্মক্লান্ততায় চোখ বুজে ঘুমিয়ে পড়তেন , বাবার মৃত্যুর পর সেই মা সারারাত বারান্দায় পায়চারি করতেন । বারান্দায় এককোণে একটা ছোট শামিয়ানা টানানো থাকতো ,এখনো আছে । বাবা এই শামিয়ানার নিছে খাটের উপর বসে আমাদের সাথে সকালের খাবার খেতেন । মার সেদিকে নজর যেতেই তিনি হু হু করে কেঁদে উঠেন ।

আমার বাবা গ্রামের স্কুলের মাস্টার । সবার বড় মাস্টার । ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা বাবা কে এই নামে ডাকতো । আমি আর ছোট বোন টগর যে কত তাকে এই নামে ডেকেছি তার শেষ নেই । আমরা দু ভাইবোনে তার স্কুলে পড়তাম । সবার বড় মাষ্টার ডাক শুনে সত্যি ই আমরা বিভ্রান্তিতে পড়ে জেতাম । দুরান্ত থেকে একবার বাবার খালাত ভাই এসেছিল আমাদের বাসায় । আমি উঠানে মাটির লাঙ্গল নিয়ে খেলতে খেলতে অতিথির প্রশ্নের জবাবে বলেছিলাম যে এটা বড় মাস্টারের বাড়ি । উনুন থেকে মা হন্তদন্ত হয়ে বিড়াম্বনায় পড়ে গেল তার ভাসুর কে দেখে । আমার অনিচ্ছাকৃত ভুল সেদিন আমার মা এবং আমাকে লজ্জায় ফেলেছিল । আমি দৌড়ে পালিয়েছিলাম ।

মফস্বল থেকে সাত কিলোমিটার দূরে এই গ্রাম । চারদিকে সবুজ ধান খেত পরিবেষ্টিত এই গ্রামে সাবের মাস্টারকে চেনে না এমন কেউ নেই । অন্য দশ জন মানুষের চেয়ে অবস্থা সম্পন্ন এই মানুষটা সারা জীবন অন্য মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করে গেছেন। যেদিন মারা গেলেন সে দিন ও তিনি গ্রামের অন্য প্রান্তে বসবাসরত অতসী পিসীর মেয়ের বিয়ের জন্য নিজের বিয়ের আংটিটা হাত থেকে খুলে দিলেন । মা খুব রাগ করেছিলো । মা বলেছিল বিয়ের আংটি অন্য কে দিলে অমঙ্গল হয় । বাবা হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলেছিল আমি মরে যাবার সময় গ্রামের সবাই আমাকে জমের কাছ থেকে কেড়ে নেবে দেখো । মা আর কিছু বলে নি শুধু বাবার পাতে আরেক চামচ ডাল তুলে দিয়েছিল । বাবার প্রিয় মুগ ডাল । বাবা তার শেষ খাওয়া কেমন খেয়েছিল তা আমার জানা নেই , আমার মনে শুধু মায়ের কথাগুলো বারবার ঝঙ্কার তুলছিল "বিয়ের আংটি অন্য কে দিলে অমঙ্গল হয়, বিয়ের আংটি অন্য কে দিলে অমঙ্গল হয় । "


বাবা তার খাওয়া শেষ করে আমার দাদির পাশে গেলেন । বাবা সাধারণত এই সময়টুকুই দাদিকে দেন । সারাদিনের কর্মময়তার বর্ণনা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দাদি শোনেন । কখনো বাবার আজগুবি কাজ শুনে প্রাণ খুলে হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেন । আমার আশ্চর্য লাগতো আমার আম্মু যেভাবে আমাকে আর টগর কে আদর করেন , দাদি ও ঠিক বুকে টেনে , মাথায় হাত বুলিয়ে বাবাকে আদর করেন । মা বলতেন তোমার দাদির আহ্লাদের শেষ নেই , বুড়ো খোকাকে এখনো আদর করতে হচ্ছে । দাদি হেসে হেসে বলতেন ,তোমার মানিক আর টগর কি তোমার কাছে কখনো বুড়ো হবে ,আমার সাবের ও তেমনি এখনো ছোট আছে ।

আজ বাবা দাদির সাথে খুব কথা বললেন না । দাদির পানের ডালাটা এগিয়ে নিলেন । বাবা পান পেশাদার পানখোর না, শুধু দাদির পাশে যখন থাকেন তখন ই পান খান । বাইরে যখন কেউ বাবাকে পান খেতে দেন তখন দেখেছি পান খান না বলে বিনম্রভাবে এড়িয়ে যেতেন । আজ ছোট এক খিলি পান দাদির হাত থেকে নিয়ে নিজের মুখে পুরে বললেন , "আজ অতসীর মেয়ের বিয়েতে কিছুই দিতে পারলাম না মা । কোথায় যেন একটু খটকা লেগে আছে । তাছাড়া তোমার বউমা রাগ করছে আংটিটা দিলাম বলে । তুমি বল, ঠিক করেছি না । " দাদি হাসলেন , তিনি জানেন তার এই পাগল ছেলেটা আর যায় হোক কোন খারাপ কাজ করতে পারেনা । দাদি শুধু বললেন কোন এক সময় তাদের জন্য বড় কিছু করতে ।

অতসী পিসীর মেয়ের জন্য বাবা আর কিছু ই করতে পারেন নি । তখন রাত অনেক । মধ্যরাত পেরিয়ে গেছে অনেক আগে ই । বাবা আজ আমাদের সাথে শোন নি । পাশের ঘরের সাথে টানা বারান্দায় শুয়ে ছিলেন একা একা । আমি আর টগর মায়ের সাথে ।দাদি তার ঘরে ।বাইরের দরোজায় খট খট শব্দ শুনে দাদি জেগে গেলেন । আম্মুর দরজার কড়া নেড়ে জানতে চেয়েছিলেন বাবা কোথায় । ততখনে বাবা জেগে আলো জ্বালিয়েছেন । প্রায় ই এই রকম আমাদের বাড়িতে মাঝরাতে কেউ না কেউ আসে । গ্রামের যে কোন ভালো বা মন্দ খবর প্রথমেই আমরা জানতে পারি । তেমনি ভেবে বাবা বাইরের দরোজায় গেলেন , পিছু পিছু আমার মা । আমি আর টগর দাদির সাথে । এর মাঝে আমি টগরের সাথে বাজি ধরে ফেলেছি ,খবর খারাপ হবে । দশ টাকার বাজি । সুতরাং খবর খারাপ হতেই হবে ।আমি মনে প্রাণে প্রার্থনা করছি খবর যেন খারাপ হয় ...............
............


(চলবে)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×