একদিকে করোনায় শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের উপরে অন্যদিকে ঘোষিত পনের দিনের লক ডাউনের দশ দিনের মাথায় কারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত! এরপরে কি কেউ আর এই সব লক ডাউন মানবে? মানা কি সম্ভব? দিনের পর দিন মাসের পর মাস ব্যবসা বাণিজ্য, কাজ কর্ম ছাড়া কি করে বাঁচবে মানুষ। সরকার যদি চাইত একটানা একুশ দিন ১৪৪ ধারা দিয়ে মানুষকে ঘরে আঁটকে রাখতে পারত। কষ্ট হলেও মানুষ সেটা সামলে নিতে পারত। কিন্তু এভাবে দুদিন পর পর লক ডাউন দিয়ে মাসের পর মাস মানুষকে কর্মহীন করে রাখা মোটেই সু বিবেচিত নয়।
সরকার যদি শতভাগ মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে চেষ্টা করত, পারত। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব প্রদান, প্রশাসনের কঠোর নজরদারী। প্রচারণা জেল জরিমানা যা কিছু প্রয়োজন সব কিছুই করা যেত। আর সে সব মানুষ মেনেও নিত। মেনে না নিলে বাধ্য করা যেত। সরকার সেটা না করে লক ডাউনের পথ বেছে নিলো। আবার সে ক্ষেত্রেও শিল্পোদ্যোক্তাদের সুবিধা অসুবিধা বিবেচনা করেই কেবল লক ডাউন দেয়া হয়, উঠিয়ে নেয়া হয়। অথচ শিল্প কারখানা গুলো চলে যে মানুষগুলোর শ্রম ঘামে। তাদের সুরক্ষার বিষয়টি থাকে কথা মালার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এটা কি দায়িত্বশীলতার পরিচয়?
উক্ত দুই শ্রেণী ছারাও এ দেশের জনসংখ্যার সব থেকে বড় অংশই হল। যারা না সরকার না শিল্পপতি কারো দিকেই না তাকিয়ে থেকে নিজেরাই ব্যবসা বাণিজ্য, ছোট ছোট শিল্প কারখানা, কুটির শিল্প গড়ে তোলে নিজেরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি অজস্র কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। সম্ভবত এরাই এ দেশে সবথেকে বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। আপনারা যাদের খোজই রাখেন না। সেই সব কর্ম উদ্যোক্তারা প্রায় পথে বসেছে। মাসের পর মাস এই লক ডাউনের মধ্যে পরে।
ঈদের আগে চোদ্দ দিনের লক ডাউন শেষে সব ছেরে দিলেন। অজুহাত ব্যবসা, ঈদে বাড়ী যাওয়া। এটাই যদি করবেন তাহলে ঈদের আগে লক ডাউন কেন দিলেন? ঐ সময়টায় মানুষ কিছু কাজ করতে পারত। লাভের লাভ তো কিছু হলই না মাঝখান দিয়ে মানুষগুলো নিঃস্ব হল। অনেক ঢাক ঢোল পেটালেন ঈদের পরে 'কঠোর' লক ডাউন। চলবে পনের দিন। আমরা ভাবলাম যাক এবার বুঝি সত্যিই সংক্রমণের সেকলটা ভাঙ্গবে। কিসের 'কঠোর' লক ডাউন। শহরে কিছুটা যাও বা মানুষ মানল গ্রামে একেবারেই মানল না। ফলাফল সংক্রমণের হার ত্রিশের কোটায় আঁটকে রইল। এই যখন অবস্থা তখন আবার সেই শিল্পপতিদের কাছে সরকার মাথা নোয়াল। দশ দিনের মাথায় কারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। মানুষ জীবনের মায়া ত্যাগ করে স্রোতের মত ছুটে আসছে ঢাকায়। তাঁরা সাথে করে নিয়ে আসছে জীবাণু। এতদিন ধরে ঢাকায় আক্রান্তের হার কিছুটা কম ছিল এবার সেটা সমান হবে! কদিন পরে যখন আক্রান্তের হার চল্লিশের কোটায় গিয়ে ঠেকবে, তখন আবার লক ডাউন ঘোষণা করবেন। এভাবে চলতে পারে না। সত্যিই এভাবে চলতে পারে না।
সৃষ্টিকর্তার কাছে মানুষ অসহায় তাই সে প্রতিবাদ করে না বরং চেষ্টা করে সরকারের সাথে মিলে সকল বিপর্যয় থেকে উত্তরণের। কিন্তু সেই বিপর্যয় যখন আমাদের ভুল সিদ্ধান্তে আরও বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয় তখন তো তার প্রতিবাদ হবেই। একটার পর একটা হঠকারী সিদ্ধান্তের ফলে একের পর এক লক ডাউনের স্বীকার হতে হয়েছে। লাভটা কি হল? সব কিছুর তো একটা সীমা থাকে। এরপরে মানুষ যদি বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তখন কি হবে? তখন তো স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি অনেক কিছুই ভেঙ্গে পরবে। সামাল দিতে পারবেন?
করোনার এই মহামারি থেকে আমাদের যেমন বাচতে হবে তেমনি ব্যবসা বাণিজ্য কাজ কর্ম সচল রেখে জীবন যাপন করতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে শিল্পপতি নয় স্বল্প আয়ের এবং স্বল্প আয়োজনের উদ্যোক্তাদের স্বার্থটাই আগে দেখতে হবে। নয়ত বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। দিতে বাধ্য। করোনার টিকা দান কর্মসূচী আরও জোরদার করুন। লক ডাউন নয় এবার শতভাগ মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করুন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বাধ্য করুন নিজ নিজ এলাকায় শতভাগ মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে। সাধারণ মানুষকে স্বাভাবিক কাজ কর্ম করার সুযোগ দিন। আর যদি একান্তই মানুষকে ঘরে আঁটকে রাখতে চান তাহলে শতভাগ আঁটকে রাখার ব্যবস্থা করুন।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০২১ রাত ৮:২৪