somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিহাস-৪

২৩ শে আগস্ট, ২০০৮ বিকাল ৩:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ ”
প্রাচীনকালে বেচে থাকার তাগিদে মানুষ প্রতিমুর্হুতে লড়াই করেছে বিরুপ পরিবেশের সাথে। হিংস্র জীবজন' থেকে শুরু করে খাদ্যের খোঁজে জঙ্গলে জঙ্গলে বিচরণ,গুহায় বসবাস এসব করেছে শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্য।
পরর্বতীতে মানুষের জীবনধারা বদলে যেতে শুরু করে। গুহা ছেড়ে ইচ্ছেমত গড়ে নেয় মাথা গোজার আস-ানা। খাদ্যের প্রয়োজন মোটাতে শুরু করে চাষাবাদ,পশুপালন। এসময় আর প্রতিমুর্হুতে সংগ্রামের প্রয়োজন ছিল না। মানুষের হাতে ছিল অফুরন- সময়। আর সময় কাটাতে শুরু হলো আমোদ-প্রমোদ। চিন-া চেতনার বহিঃপ্রকাশ আর আমোদ-প্রমোদের সমন্বয় মিলে উদ্ভব হলো খেলাধুলার। গোড়ার দিকে খেলাধুলা বলতে ছিল দৌড়, ঝাঁপ, কুসি- ......... এসবই। এরপর দিন যত এগিয়েছে মানুষ ততই সভ্য হয়ে উঠেছে। কালের স্রোতে বদলে গেছে মানুষের জীবনধারা। এরই সাথে তাল মিলিয়ে সৃষ্টি হয়েছে হাজারো রকম খেলাধূলা।
খেলাধূলার ইতিহাসে প্রাচীন বৃহৎ ক্রীড়া অনুষ্ঠান হিসেবে একমাত্র অলিম্পিককেই চিহ্নিত করা হয়। আর বর্তমানে অলিম্পিককে “গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ ” নামে অভিহিত করা হয়। অলিম্পিয়া শব্দের উৎপত্তি অলিম্পাস হতে। যার অর্থ দেবতাদের আবাসভুমি বা স্বর্গ। গ্রীসের দক্ষিনভাগের পেলোপলিস ও ম্যাসিডোনীয়ার মধ্যবর্তী কয়েকটি ছোট ছোট পাহাড় নিয়ে অলিম্পিয়া পর্বতমালা গঠিত। খ্রীষ্টের জন্মের প্রায় ২ হাজার থেকে ৩ হাজার বছর আগে এ পর্বতমালার পাদদেশে অলিম্পিক খেলার প্রচলন ছিল। গ্রীকদের মতে, দেবতা জিউসের সম্মানার্থে এ খেলার আয়োজন করা হত। প্রাচীন গ্রীসে চার বছর পর পর টানা ১২শ’ বছর ধরে চলেছিল এ প্রতিযিোগিতা। আর এসময়কে অলিম্পিয়াও বলা হয়।
ইতিহাসের পাতায় ৭৭৬ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দকে অলিম্পিকের প্রথম ক্রীড়া অনুষ্ঠানের সাল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অলিম্পিকের প্রথম খেলায় শুধুমাত্র দৌড়ের আসর বসে।খেলায় বহু সংখ্যক প্রতিযোগি অংশগ্রহণ করে। আর এদের মাঝ থেকে শেষ পর্যন- কোরয়েবাস (Coroebus) নামের এক ব্যক্তি বিজয়ী হয়। পেশায় সে রাধুনী ছিল।
পরের অলিম্পিকে আরও কয়েক রকম খেলা অনর্-ভূক্ত করা হয় । আর শৃংখলার জন্য জুড়ে দেয়া হয় কতকগুলো নিয়ম কানুন। প্রাচীন অলিম্পিক পাঁচ দিন ধরে চলত। অলিম্পিক মশাল জ্বালিয়ে খেলার সুচনা করা হত। র্বতমান অলিম্পিকেও প্রাচীন ঐতিহ্য অনুসরন করা হয় । খেলার প্রথম দিনে শপথ গ্রহণ, কুচকাওয়াজ ও উদ্বোধনী ভাষণ। দ্বিতীয় দিনে রথ চালনা ও পেন্টাথলন। তৃতীয় দিনের সকালে মিছিল ও পূজা, বিকালে ছোট ছোট ছেলেদের দৌড়, মুষ্টিযুদ্ধ ও কুসি-। চর্তুথ দিন সকালে বিভিন্ন দৌড় প্রতিযোগিতা। বিকালে মুষ্টিযুদ্ধ ও কুসি-। পঞ্চম দিনে ভোজ, পরস্পর মেলামেশা, গানবাজনা এবং শেষ র্পযায়ে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ ।
বিজয়ীদের মাথায় উপহার স্বরুপ পরিয়ে দেওয়া হত অলিভ (জলপাই) গাছের পাতার তৈরি মুকুট। এসময় অলিভ মুকুটই ছিল সবচেয়ে বড় সম্মান। ধীরে ধীরে অলিম্পিকের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। কিন' খেলায় অখেলোয়াড়চিত আচরণকে কেন্দ্র করে দলা-দলি, দাঙ্গা-হাঙ্গামায় দেশে অশানি- বেড়ে যায়। এজন্য রোমান রাজা প্রথম থিওডোসিয়াস ৩৯৪ খ্রীষ্টাব্দে অলিম্পিক বন্ধ করে দেন।
অলিম্পিক বন্ধ হওয়ার প্রায় ১৫শো’ বছর পর প্রত্নতাত্ত্বিকরা মাটি খনন করার সময় অলিম্পিক সমন্ধীয় অনেক নির্দশনাদি আবিষ্কার করেন। আবিষ্কারের পর থেকে ইউরোপ, আমেরিকায় অলিম্পিক বিষয়ে একটা আন্দোলন গড়ে ওঠে। এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন ফরাসী মণীষী ব্যারন পিয়ারে দ্য কুর্বাতা (Barron Pierre de Coubertin) ১৮৬৩-১৯৩৭।
তার অক্লান- পরিশ্রম আর আন-রিক প্রচেষ্টায় ১৮৯৬ খ্রীষ্টাব্দে গ্রীসের এথেন্সে আধুনিক যুগের র্সবপ্রথম অলিম্পিক খেলা শুরু হয়। বিজয়ীদের জন্য সোনা,রুপা ও ব্রোঞ্জের পদক র্নিধারণ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র, গ্রীস, অস্ট্রিয়া, গ্রেট ব্রিটেন, ডেনর্মাক, ফ্রান্স সহ মোট ১৩টি দেশের ২৮৫ জন প্রতিযোগী এ অলিম্পিকে দৌড় ও নিক্ষেপ, শূটিং, অসি সঞ্চালনের কৌশল, সাতার মটেনিস, সাইকেল চালনা, কুসি-, জিমন্যাসটিকস - এই আটটি বিষয়ে প্রতিযোগিতা অনুষ্টিত হয়।
গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের পাশাপাশি ১৯২৪ সাল থেকে শীতকালীন অলিম্পিক চালু করা হয়। আর ১৯৯২ সাল থেকে শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক পৃথক পৃথক বছর অনুষ্ঠিত হয়।
প্রাচীনকালে অলিম্পিকে মেয়েদের যোগদান তো দুরের কথা, তাদের দেখতে র্পযন- দেয়া হত না। কেউ দেখতে গেলে তার জন্য তাকে শাসি- পেতে হত। বহু বছর পর এ ক্রীড়ায় মেয়েরাও অধিকার র্অজন করে। মেয়েদের মধ্যে প্রথম অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন বেলিসিকা (Belisicha)। রথ চালনায় তিনি প্রথম স'ান লাভ করেন। বেসরকারী ভাবে ১৯১২ খ্রীষ্টাব্দে থেকে মহিলারা অলিম্পিকে অংশগ্রহন করে। আমস্টারডামে অনুষ্ঠিত ১৯২৮ সালের অলিম্পিক থেকে মহিলারা সরকারী ভাবে খেলায় অংশগ্রহন করেন।
১৯১৩ সালে ব্যারন পিয়ারে দ্যা কুর্বাতার পরার্মশে “অলিম্পিক এসোসিয়েশন” সাদা সিল্ক কাপড়ের উপর পরস্পর সংযুক্ত পাাঁচ রঙের পাঁচটি বৃত্ত দ্বারা অলিম্পিক পতাকা তৈরি করা হয়। পতাকার পাঁচটি রিং দ্বারা পাঁচটি উপমহাদেশকে বোঝানো হয়। নীল রিং দ্বারা ইউরোপ, হলুদ রিং দ্বারা এশিয়া, কালো রিং দ্বারা আফ্রিকা, লাল রিং দ্বারা আমেরিকা এবং সবুজ রিং দ্বারা ওশেনিয়া মহাদেশকে বোঝানো হয়।
ব্যারন পিয়ারে দ্যা কুর্বাতা হয়তো বা অলিম্পিক পতাকার মধ্য দিয়ে গোটা বিশ্বকে একই মিলনসূত্রে বাঁধতে চেয়েছিলেন, যেন পরস্পর সংঘাতে লিপ্ত না হয়। কিন' র্নিমম পরিহাস এ সংঘাতের কারনেই ১৯১৬, ১৯৪০, এবং ১৯৪৪ সালের তিনটি অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হয়নি।
গোটা বিশ্ব যদি “গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ ”- এর রিঙের মত পরস্পরকে আঁকড়ে ধরে তবেই সম্ভব আনুমানিক ৬০০ কোটি মানুষের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী গড়া।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×