somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিহাস-৫

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“গোয়েন্দা সংস্থা”
আমাবস্যার রাত। ঘুরঘুট্টি অন্ধকার। চারদিক নিস্তব্দ। ফক্স সাহেব একা রাত জেগে বই পড়ছেন। হঠাৎ খুট করে একটা শব্দ হতেই তিনি ঘাড় বাঁকিয়ে পেছন দিকে তাকালেন। আর তাকাতেই ভয়ে বিস্ময়ে স্থির হয়ে গেল তার চোখের তারা । গগনভেদী আর্তনাদ ভেসে এল তার ঘর থেকে। সেই আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল সবার । দুদ্দাড় করে ছুটে এল বাড়ির লোকজন। কিন্তু ততণে সব শেষ। বেচারার মাথাটা একদিকে কাত হয়ে আছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে ঘর। তার দেহে আর প্রাণ নেই।
রাত দুপুরেই শুরু হয়ে গেল ছুটাছুটি। পুলিশ এল, এল গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। কিন্তু অপরাধী বা অপরাধীদের কোন চিহ্নই পাওয়া গেল না। তবে কি মুহূর্তের মধ্যেই হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে তারা। এরপর শুরু হয়ে গেল গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা। হন্যে হয়ে খুঁজতে শুরু করল তারা অপরাধের সূত্র। গোয়েন্দাদের অব্যাহত তৎপরতায় অবশেয়ে উদঘাটিত হলো ফক্স হত্যা রহস্য।
এধরনের অনেক ঘটনাই আমরা খবরের কাগজের পাতায় এবং গোয়েন্দা কাহিনীগুলোতে পড়েছি। রোমর্হষক এসব কাহিনী পড়ার সময় সৃষ্টি হয় শ্বাসসুদ্ধকর উত্তেজনার। গোয়েন্দাদের কাজকারবারই আলাদা। তারা এমন রহস্যেরও জট খুলতে পারে যার কোন সূত্রই সাধারণ মানুষের চোখে ধরা পড়ে না। এত যে গোয়েন্দা আর গোযেন্দা সংস্থা এর গোড়াটা কোথায় তা কি জানতে ইচ্ছে করে? নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে হয় আধুনিক পৃথিবীতে প্রথম গোয়েন্দা সংস্থার সৃষ্টি হয়েছিল কি করে?
ব্যাপারটা ঘটেছিল অনেকটা কাকতালীয়ভাবেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে প্রথিবীর প্রথম গোয়েন্দা সংস্থাটির জন্ম দিয়েছিলেন অ্যালান পিঙ্কারটন। ভদ্রলোকের জন্ম হয়েছিল ১৮১৯ সালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে। সেখান থেকে ১৮৪২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে পাড়ি জমান। পরের বছর তিনি ড্যানডিতে গিয়ে সেখানকার ক্যান কাউন্টিতে কাঠের ব্যবসা শুরু করে দিলেন। ব্যবসাও জমল ভালই। তবে হঠাৎ করেই শহরে একটা সমস্যা দেখা দিল। প্রায়ই বাজারঘাটে আসতে লাগল জাল টাকা। ওই শহরের শেরিফ ছিলেন ইয়েটস। তার কানেও পৌছে গেল ব্যাপারটা। কারা বাজারে জাল টাকা ছাড়ছে তা উদ্ধার করার বহু চেষ্টাই তিনি করলেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। বিষয়টা জানলেন পিঙ্কারটনও।
একদিন ব্যবসার কাজে কাঠ যোগাড় করার জন্যে পিঙ্কারটন উপস্থিত হলেন এক নদীর চরে। অবশ্য নদীটা ছিল শহরের পাশেই। জনমানবশূন্য সেই চরে হঠাৎ করেই তার নজরে পড়ল লোক চলাচলের আলামত। তিনি বুঝে ফেললেন, সকলের অগোচরে কেউ না কেউ এই চরে আসা-যাওয়া করে। ভাবলেন, সেই টাকা জাল করার দলের কেউ এখানে আসে না তো? তিনি ছিলেন পুলিস সার্জেন্টের ছেলে। তাই সন্দেহটা তার মাথায় একটু বেশি করেই দোলা দিল। শহরে ফিরে গিয়ে শেরিফ ইয়েটস- এর সাথে ব্যাপারটা নিয়ে আলাপ করলেন তিনি। শেরিফের উৎসাহে রহস্যের জট খুলতে দু’জন মিলে একদিন চুপিচুপি ওই চরে গিয়ে গাছপালার আড়ালে লুকিয়ে রইলেন। অধীর আগ্রহে তারা অপো করতে লাগলেন আগন্তুকের আশায়।
একদিন দু’দিন করে চার চারটি দিন পেরিয়ে গেল। কিন্তু কিছুতেই দেখা পাওয়া গেল না কোন মানুষের। তবুও হাল না ছেড়ে দিয়ে পঞ্চম দিনের মত তারা ওত পেতে রইলেন। কিন্তু সারা দিনেও সেখানে কোন আগন্তুকই এল না। দিনের শেষে সন্ধে নেমে এল । ঘন জঙ্গলে ঢাকা চরটায় অন্ধকার জাঁকিয়ে বসল খুব তাড়াতাড়ি। সেই নিকষ কালো অন্ধকারেই হঠাৎ জ্বলে উঠল র্টচ। সজাগ হয়ে উঠলেন শেরিফ আর পিঙ্কারটন । টর্চের আলোর পেছনে যে মানুষগুলো ছিল তারা একটু এগুতেই গর্জে উঠল পিঙ্কারটনের হাতের শটগান। শূন্যে গুলি ছুঁড়ে হতভম্ব করে দিলেন তারা ওদেরকে। এই সুযোগে ১২ জন দুর্বৃত্তকে ধরে ফেললেন তারা। এরপর পিঙ্কারটন তাদের দলনেতাকেও বুদ্ধি খাটিয়ে ধরে ফেললেন। অপরাধীরা স্বীকার করল যে তারাই করত জাল টাকার কারবার ।
এঘটনায় পিঙ্কারটনের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। ১৮৪৬ সালেই তাকে করা হলো সেখানকার ডেপুটি শেরিফ। এরপর আরও কিছু রহস্যের জট খুললেন তিনি। ফলে গোয়েন্দাগিরিতে তার অভিজ্ঞতাও হলো বেশ। এসব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ১৮৫০ সালের দিকে তিনি নিজেই একটা গোয়েন্দা সংস্থা খুলে বসলেন। সেটার নাম দিলেন ‘ন্যাশনাল ডিটেকটিভ এজেন্সি’। আমেরিকার গৃহযুদ্ধ চলাকালে ১৮৬১ সালে তার নেতৃত্বাধীন গোয়েন্দা সংস্থা দেিণর সামরিক বিভাগের গোপন তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করে। এবছরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিঙ্কন-এর নিরাপত্তার দায়িত্ব পান ‘ন্যাশনাল ডিটেকটিভ এজেন্সি’ । তারা লিঙ্কনকে হত্যারও একটি ষড়যন্ত্র উদঘাটন করে। এই সংস্থাটিই ছিল আধুনিক বিশ্বের প্রথম গোয়েন্দা সংস্থা। সংস্থাটির মনোগ্রাম ছিল একটি চোখ এবং তাদের শ্লোগান ছিল ‘আমরা কখনও ঘুমাই না’। সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় ছিল শিকাগো শহরে। ৬৫ বছর বয়সে অত্যন্ত সাহসী ও করিৎকর্মা পিঙ্কারটন যখন মারা যান তখন সবাই তার দুঃসাহসী সব অভিযানের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেছিল। আজও দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা হিসেবে রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষের মনে তিনি জ্বলছেন জ্বলজ্বল করে।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×